বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সব শিক্ষক স্মরণে

বাংলাদেশসহ বিশ্বের শতাধিক দেশে ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। জ্ঞানের ফেরিওয়ালাদের নিয়ে লেখা প্রকাশিত হচ্ছে ‘দূর পরবাস’-এ।

অধ্যাপক মান্নান মৃধা
ছবি: লেখক

মায়ের চেয়ে বড় শিক্ষক আর কেউ আছে কি না সেটা জানি না, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন, তাঁদেরও আমাদের মনে রাখা দরকার। শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের শুরু যেমন হতে পারে, সেটা পুঁথিগত বিদ্যার ধরন ও করণের পরিবর্তন, বিদ্যাকে বইয়ের মধ্যে বন্দী না করে ডিজিটালাইজেশন করা, উন্মুক্ত করা প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে লার্নিং বাই ডুয়িং কনসেপ্টের আওতায় আনা এবং পড়ালেখায় মজা ধরাতে যুগোপযোগী ও চাহিদাভিত্তিক করে গড়ে তোলা; বিশেষ করে যার যেটা ভালো লাগে, যদি সে তা করার সুযোগ পায়। সে ক্ষেত্রে কোডিং শেখার জন্য কারও ওপর চাপ না দিয়ে বরং যদি কেউ রান্না পছন্দ করে, তবে তাকে রান্না শেখানোর সুযোগ করে দেওয়া, নাচতে ভালো লাগলে সেটাই করা। শুধু নিজেকে সেরা করতে যেটা ভালো লাগে, সেটা করতে সাহায্য করা, তবে সাফল্য আসবেই। যদিও চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ না হওয়ার কারণে শিল্প ও কলকারখানাগুলো ঠিকমতো যুগোপযোগী প্রযুক্তি তৈরি করতে পারছে না, কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পুরোনো পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা–প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। শিক্ষকেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢোকার পর রেগুলার পড়াশোনা বন্ধ করেছেন। তাঁদের ধারণা অনেকটা এ রকম, তাঁরা চার থেকে পাঁচ বছর যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা দিয়েই বাকি পঁচিশ বছর পার করে দেবেন। এ ধরনের মনমানসিকতার শিক্ষকেরা সমাজ ও দেশের শিক্ষাঙ্গনের জন্য ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে শুরু করেছেন। এ থেকে রেহাই পেতে হলে শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত পড়াশোনা করতে হবে, জানতে হবে নতুনত্বের খবরাখবর। একজন ভালো শিক্ষক হতে হলে তাঁকে একজন ভালো ছাত্র হতে হবে, মানে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চলছে তার নিজের গতিতে, যেখানে সব থাকতেও মনে হচ্ছে কিছুই নেই, থাকলেও হয়তোবা বছরে একবার কোনো রকম একটু অডিট হয় ‘জাস্ট ফর ফর্মালিটিজ’ রক্ষার্থে।

শিক্ষকদের এ স্লো মোশনের লাইফস্টাইলে তাঁরা দিব্যি সমাজের নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে সমাজে অনেক সময় অস্থিরতার সৃষ্টি করছেন। আমরা যারা সচরাচর বলে থাকি শিক্ষকেরা জাতির কারিগর, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কারিগর ঠিকই, তবে তা মানসম্মত সুশিক্ষার নয়, কুশিক্ষার। আর এর প্রতিফলন যা আমরা দেখছি, তা হলো দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার ইত্যাদি।

উন্নত মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকেরা শিক্ষা প্রদানের সঙ্গে রিসার্চ করছেন, নতুন চিন্তাধারার আবির্ভাব ঘটিয়ে প্রশিক্ষণকে নতুনত্বের সমন্বয়ে মানসম্মত সুশিক্ষা দিতে সক্ষম হচ্ছেন।

অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী যদি ডিমান্ড, সাপ্লাই ও ডেলিভারি না থাকে, যদি ভালো ম্যানেজমেন্ট না থাকে, যদি কাস্টমার খুশি না থাকে, তাহলে যেমন অর্থের অপচয় ঘটে, তেমন শিক্ষাঙ্গনের দুর্বল ম্যানেজমেন্টের কারণে জাতির অধঃপতন ঘটতে থাকে। যে দেশের সব সেক্টরই দুর্নীতিতে ভরা, সেখানকার শিক্ষকদের অবস্থা কী হতে পারে? ভেবে দেখা হয়েছে কি? নাকি শুধু পুলিশ বাহিনীর ওপর সব দোষ চাপিয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে শিক্ষকদের?

এখন প্রশ্ন, কে বা কারা জাতির প্রশিক্ষণের জন্য দায়ী? ছোটবেলা মা–বাবা, পরে সংযুক্ত করা হয়েছে শিক্ষকদের। ভালো মা–বাবা না হলে বা ভালো শিক্ষক না হলে কীভাবে পাব সুশিক্ষা? আমরা এখনো জানি না শিক্ষা এবং সুশিক্ষা কী? আমরা কী পড়াচ্ছি বা কীভাবে গড়ছি দেশে? কী শিক্ষা, কেন শিক্ষা, শিক্ষার উদ্দেশ্য কী এবং তা কীভাবে মনিটরিং করতে হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সচেতন থাকতে হবে।

শিশুদের ১ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যের সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানবতার ফরমে আনতে হলে তাদের মানসম্পন্ন পরিবেশের মধ্যে শিক্ষাদান করে গড়ে তুলতে হবে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরে পর্যায়ক্রমে গড়ে তুলতে হবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষকের সার্বিক অবকাঠামো, যেখানে থাকতে হবে জানা থেকে শেখা। দুর্নীতি বা অনিয়ম যেন কলুষিত করতে না পারে শিক্ষা প্রশাসনকে, শিক্ষাঙ্গনকে। একই সঙ্গে কড়া নজর রাখতে হবে, তাঁরা যেন গণতন্ত্রমনা ও সৃজনশীল নাগরিক হিসেবে নিরাপদে ও গর্বের সঙ্গে দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে ও মতামতের ভিন্নতা সত্ত্বেও খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সামাজিক ঐক্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হন।

এ ব্যাপারে শিক্ষকদের উদ্দেশে আমার প্রশ্ন—আছে কি বাংলাদেশের শিশুবিদ্যালয়ে এমন শিক্ষক বা শিক্ষাপদ্ধতি, যেখানে চর্চা হচ্ছে এমন মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা? সেভাবে তৈরি হচ্ছে কি তেমন শিক্ষক, যিনি ভবিষ্যতের এই শিক্ষাব্যবস্থাকে মোকাবিলা করতে পারবেন? আমরা যেভাবে আছি, ঠিক সেভাবেই থাকব? নাকি চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন প্রজন্মকে শুধু বাংলাদেশি নয় গোটা বিশ্বের নাগরিক করে গড়ে তুলব সুশিক্ষার মাধ্যমে? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাধারার একমাত্র বাহক শিক্ষকই যদি মজবুত না হন, শিক্ষার্থী অভিযাত্রীরা কি নির্বিঘ্নে শিক্ষা নামক বৈতরণি পাড়ি দিতে পারবে? এ প্রশ্ন এখন সব নাগরিকের, সব অভিভাবকের মাথায়।

আমরা জানি, শিক্ষকদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দরকার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ।

বাংলাদেশে সুশিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের পরবর্তী ফলোআপ খুবই জরুরি। কিন্তু দেশে তার জন্য পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে আলাদা আলাদাভাবে কিছু শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সেগুলো মানসম্পন্ন শিক্ষার বিস্তারে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ব্যবস্থাও নেই। আবার শিশুবিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বস্তরের শিক্ষকদের জন্যও প্রশিক্ষণের সঠিক ব্যবস্থা নেই। এ কারণে দেশে দিন দিন শিক্ষিত মানুষের হার বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষার মান। তাই দেশের জনশক্তিকে দ্রুত জনসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

বর্তমান যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা জানে না কী ধরনের শিক্ষা দেওয়া দরকার একজন শিশুবিদ্যালয়ের শিক্ষককে। পুরো শিক্ষাঙ্গন খুঁজলে খুবই কমসংখ্যক এমন গুণসম্পন্ন শিক্ষক, নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক পাওয়া যাবে। মানুষের মতো দেখতে হলেই মানুষ গড়ার কারিগর হওয়া যায় না, ঠিক শিক্ষক হলেই মনঃপূত শিক্ষক হওয়া যায় না, এর জন্য দরকার মিশন, ভিশন ও পলিসি। সঙ্গে ডেডিকেশন, প্যাশন, মোটিভেশন, গোলস ও অবজেকটিভস।

চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ মানসম্পন্ন প্রয়োজনীয় শিক্ষার মাধ্যমে তৈরি করতে হবে সুশিক্ষিত শিক্ষক। সচেতন জাতি খুঁজে বের করে সমাধান, অজুহাত নয়।

সুশিক্ষার কারিগর পেতে হলে এবং মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হলে দরকার সাবধানতার, কারণ সাবধানতাই একমাত্র সুশিক্ষার পথ। এখনো শিক্ষা বলতে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সনদভিত্তিক শিক্ষাকেই বুঝতে ও বোঝাতে চাই। একজন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় এক দশক পড়ালেখা করতে হয় ‘কী শিক্ষা, কেন শিক্ষা’ প্রশিক্ষণ নিতে। এই দীর্ঘ প্রশিক্ষণ একজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষিত শিক্ষক হিসেবে দক্ষ করে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর শিক্ষার্থীর শেখা ও শিক্ষিত হওয়া নির্ভর করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ সনদের মাধ্যমে তাঁর যোগ্যতার আশ্বাস দেয়। কিন্তু তিনি প্রকৃত শিক্ষায় কতটা শিক্ষিত হয়েছেন, সনদ সেই নিশ্চয়তা দিতে পারে কি?

মূলত, প্রকৃত শিক্ষা ও সনদভিত্তিক শিক্ষা—দুটোই আমাদের প্রয়োজন। আমরা শিখতে চাই না, কিন্তু শিক্ষিত হতে চাই। যার ফলে সৃজনশীল, সুশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত হতে পারছি না।

কারণ কী?

আমরা জন্মের শুরু থেকেই শিখছি। শিখতে শিখতে মস্ত বড় ডাকাত, দুর্নীতিবাজ, ধান্দাবাজ, ফাঁকিবাজ হয়ে জীবন যাপন করছি। প্রশ্ন, আমরা তাহলে কী শিখছি?

একটি দেশের পাঠ্যপুস্তকের গঠন, প্রশিক্ষণের ধরন, শিক্ষকের গুণগত মান এবং যোগ্যতা যদি লক্ষ্য করি, তবে জানা ও বোঝা যাবে কী শিক্ষা সেখানে হচ্ছে। জাতি হিসেবে আমাদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের পরিধিই–বা কোন স্তরে! তার আগে আসুন একজন সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত লোকের সম্পর্কে জানি।

একজন শিক্ষিত লোক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী যা শেখার সেগুলো শিখে মস্ত বড় শিক্ষিত হয়ে সমাজের গুরুদায়িত্ব পালন করা শুরু করলেন। যা শুরু করলেন, সেখানেও কিন্তু সিলেবাস অনুযায়ী কাজ করতে হবে; নইলে সেই গুরুদায়িত্বের শীর্ষে পৌঁছা সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে রুটিন অনুসরণ করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়।

আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, বর্তমান বিশ্বের শিক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তন করতে হবে, যদি আমরা শিক্ষাকে সর্বাঙ্গীণ সামনের দিকে নিতে চাই।

পৃথিবীর লোকসংখ্যার যে শ্রেণির বয়স ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে, সেই শ্রেণির মানুষের দিকে আমাদের বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, এ সময়ে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটতে থাকে। এ সময়ে যে রকম বীজ বপন করা হবে, ফলও সে রকম হবে। এই সময়ে শরীরের বিশাল পরিবর্তন দেখা দিতে শুরু করে। সময়টি দিকনির্দেশনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। যেমন কী বা কোন বিষয়ে শিক্ষা অর্জন হবে, এটি একটি দিক; প্রেম-ভালোবাসার জোয়ার শরীরে, তাকে নিয়ন্ত্রণ করা আরেকটি দিক। যদি শিক্ষায় আনন্দ না থাকে, তাহলে কী হবে? বেশির ভাগই শিক্ষা ছেড়ে অন্য পথ বেছে নেবে। শিক্ষাকে পরিবারের চাপে ধরে রাখবে পুঁথিগত বিদ্যা হিসেবে।

এমন একটি স্তরে দরকার দক্ষ শিক্ষক, দরকার মজবুত পরিকাঠামো, দরকার সৃজনশীল প্রশিক্ষণ। আছে কি বিশ্বের কোনো দেশ, যেখানে এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে শিক্ষাপদ্ধতিকে গড়ে তোলা হয়েছে? পুরোপুরি না থাকলেও কয়েকটি দেশে আছে। তার মধ্যে কানাডা, ফিনল্যান্ডের নাম আসতে পারে।

তবে সুইডেনের একজন শিক্ষককে আমি চিনি, যিনি দীর্ঘ সময় ধরে কাজটি করে আসছেন তাঁর মূল কর্মের পাশাপাশি। এখন তিনি অবসর সময় পার করবেন আনন্দ-ফুর্তির মধ্য দিয়ে। তিনি মূলত সময়টি পার করছেন সুইডিশ প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করে। তিনি অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান কীভাবে শিখতে হয়, তার ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। একই সঙ্গে যেসব শিক্ষক মূলত এ কাজগুলো করেন, তাঁদের মেন্টর হিসেবে তদারক করছেন।

এটি এরই মধ্যে সুইডেনের শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ সাড়া ফেলতে শুরু করেছে।

একজন ভালো শিক্ষক হতে হলে (জানি না সব সময় সঠিক কি না, তবে এটা প্রমাণিত হয়েছে আমার অভিজ্ঞতা থেকে) একজন ভালো ছাত্র হওয়া প্রয়োজন। ভালো ছাত্র মানে এই নয় যে তিনি ছাত্রজীবনে ভালো ফলের অধিকারী। বরং ভালো ছাত্রের অর্থ এই যে তিনি শিক্ষাদান পেশায় নিয়োজিত থাকলেও নিরন্তর অধ্যবসায়ের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন।

আমি আমার বিশেষায়িত শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের জন্য যেসব কোয়ালিটিপূর্ণ শিক্ষকদের কথা মনে ধরে রেখেছি, তাঁদের মধ্যে আমার বড় ভাই মান্নান মৃধাকে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিঃসন্দেহে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করি, যখনই শিক্ষা–প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষক নিয়ে লেখালেখি করি। আমার বড় ভাই অধ্যাপক মান্নান মৃধা সুইডেনের কে টি এইচ রয়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন শিক্ষক। বাংলাদেশে তাঁর মতো অনেক শিক্ষক রয়েছেন, তাই তো মনেপ্রাণে দোলা দিয়েছে, একজন আদর্শ এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত সুশিক্ষকই করতে পারে বাংলাকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে। এই স্বপ্নকে সত্য করতে হলে সব গুণসম্পন্ন শিক্ষকের সমন্বয় ঘটাতে হবে, সেই সঙ্গে দেশের পরিকাঠামোকে মজবুত করতে হবে। এ অবস্থায় শিশুশিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত নিবিড় নজরদারি চালু রাখতে হবে।

ভদ্রলোক আমার বড় ভাই অধ্যাপক মান্নান মৃধা। তিনি আজীবন বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করেছেন।

তাঁর শিক্ষাজীবন শেষ, এখন তাঁর অবসরের সময়। জীবনের এ সময় আর দশজনের মতো নাতি-নাতনির সঙ্গে খেলা বা ঘোরাফেরা করে সময় কাটাবেন। অথচ তিনি তা না করে করছেন প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা।

ইট তৈরি করতে যেমন ডাইস দরকার, ঠিক প্রকৃত শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা পেতে দরকার এই ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সের ছেলেমেয়ের মধ্যে শেখার জন্য শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া। শিক্ষার মধ্যেও যে চমৎকার মজা রয়েছে, সেটি ধরিয়ে দেওয়া তাদের মনপ্রাণ, চিন্তাভাবনা ও ধ্যানে। তিনি চেষ্টা করছেন, মুকুলেই যেন তরুণ প্রজন্ম ঝরে না যায়। তিনি শেখাচ্ছেন কীভাবে শিখতে হয়। যদি ড. মান্নান মৃধার প্রজেক্ট কৃতকার্য হয়, তবে ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষাধারী শিক্ষক খুঁজতে বিশ্ববিদ্যালয় নয়, যেতে হবে প্রাইমারি স্কুল লেভেলে।

কারণ, শিক্ষার শুরুটা ওখানেই। ভিত্তি যদি ভালো না হয়, তাহলে বিল্ডিং যত তলারই হোক না কেন, তা যেমন ভেঙে পড়বে; ঠিক যত উঁচু স্তরের শিক্ষিত শিক্ষক পরবর্তী স্তরে নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন, ভালো প্রোডাক্ট কখনো পাওয়া সম্ভব হয়নি, হবেও না।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জেলহাজত না বানিয়ে বরং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলুন, যেখানে পরস্পর জানবে, শিখবে ও শেখাবে। আমি মনেপ্রাণে লাখো তরুণ ও সৃজনশীল আদর্শ শিক্ষক দেখতে চাই সারা বাংলাদেশে, সেই সঙ্গে হাজার সালাম জানাই বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সব শিক্ষককে।

**লিখতে পারবেন আপনিও। লেখার শিরোনামের ওপর ‘শিক্ষক দিবসের লেখা’ শব্দটি লিখবেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা dp@prothomalo. com