স্পেনে বাংলাদেশি চায়ের ব্র্যান্ড জনপ্রিয় ও বাজার সম্প্রসারণে সেমিনার অনুষ্ঠিত

মাদ্রিদের বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে মাদ্রিদ চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সার্ভিসেস ভবনে গতকাল মঙ্গলবার স্পেন-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক সম্প্রসারণ: স্পেনে বাংলাদেশের উচ্চ মানসম্পন্ন চা রপ্তানি ও বাজারজাতকরণের সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্বনামধন্য স্পেনীয় বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বিশিষ্ট ব্যক্তি, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কূটনীতিক, মাদ্রিদ চেম্বারের সভাপতি আনখেল আসেনসিও ও চেম্বারের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো এবং লন্ডন টি এক্সচেঞ্জের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলিউর রহমান, ওবিই অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশি রপ্তানিপণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণের ওপর সরকারের যথোচিত গুরুত্বারোপের পরিপ্রেক্ষিতে স্পেনের সঙ্গে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুসংহতকরণ এবং স্পেনের জনপরিসরে বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরা ও দেশটির ভোক্তাবাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত গুণগত মানসম্পন্ন চায়ের ব্র্যান্ডগুলোকে পরিচিত ও জনপ্রিয় করে তোলার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে সেমিনারটি আয়োজিত হয়।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ বলেন, সবাই জানেন, চীনের পরই বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। কিন্তু গতানুগতিক তৈরি পোশাক ছাড়াও চা, পাট ও পাটজাত সামগ্রী, চামড়া, ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষিপণ্য, হিমায়িত মৎস্য, সিরামিক, তথ্যপ্রযুক্তির পণ্য এবং হালকা প্রকৌশল শিল্পে বাংলাদেশের যে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ও অমিত সম্ভাবনা রয়েছে, সেই বিষয়ে ইউরোপের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও অংশীজন ততটা অবহিত নন। তিনি এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম সেরা, স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় ও উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চায়ের অনেক ব্র্যান্ডই বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। চা বাংলাদেশের স্থানীয় সামাজিক সংস্কৃতি ও প্রাত্যহিক জীবনচর্যার অন্যতম উপচার। পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্য-সচেতন উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং দীর্ঘকালের সযত্ন প্রয়াস ও কঠোর অধ্যবসায় বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধমান চা–শিল্পকে আজকের অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা চায়ের বেশ কয়েকটি প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড বিশ্ববাজারে প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই বাজারকে আরও সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন।

স্পেনের উদ্যোক্তা, রপ্তানিকারক ও বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সফর করে অপরিমেয় বাণিজ্য সুবিধার সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ। তিনি আশ্বস্ত করেন, এ বিষয়ে দূতাবাস সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবে।

সেমিনারে দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর রেদোয়ান আহমেদ বাংলাদেশে বিদ্যমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার তথ্যসমৃদ্ধ সচিত্র ব্রিফিং সবার সামনে তুলে ধরেন।

সম্ভাবনাময় বিভিন্ন খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ নিশ্চিত করতে সরকারঘোষিত বিবিধ আকর্ষণীয় প্রণোদনা প্যাকেজের বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কূটনীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর সরকার সমধিক আগ্রাধিকার আরোপ করেছে। বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য সমগ্র বিশ্বেই বাংলাদেশ এখন অন্যতম নিরাপদ, ব্যবসা-বান্ধব ও আকর্ষণীয় গন্তব্য।

শুভেচ্ছা বক্তব্য মাদ্রিদ চেম্বারের সভাপতি আনখেল আসেনসিও বাংলাদেশে বিদ্যমান বিপুল বাণিজ্য সম্ভাবনার সুযোগ গ্রহণের জন্য স্পেনীয় উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। দুই দেশের ব্যক্তি খাতের মধ্যে পারস্পরিক নিবিড় ও সক্রিয় সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সেমিনারে লন্ডন টি এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলিউর রহমান বাংলাদেশি চা–শিল্পের বিবর্তন, বিকাশ, উন্নয়ন, গুণগত সমৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতার ওপর বিশদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি চায়ের বাজার সম্প্রসারণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভের লক্ষ্যে সব অংশীজনের সুপরিকল্পিত প্রয়াস ও সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

সেমিনার শেষে অতিথিদের বাংলাদেশি চা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। তাঁদের বাংলাদেশের প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের দৃষ্টিনন্দন চা উপহার প্রদান করা হয়। বিজ্ঞপ্তি