মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জমে উঠেছে, এবারও কি মিশিগান

মিশিগানে বাংলাদেশী আমেরিকান কমুউনিটি’র একটি সভাছবি : সংগৃহিত

আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জমে ওঠেছে। প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস—দুজনেরই জনপ্রিয়তার পারদ ওঠানামা করছে। যদিও ব্যবধান খুবই কম। কোথাওবা ১ শতাংশ কোথাও ২ শতাংশ। আজ যেখানে কমলা এগিয়ে, কাল সেখানে ট্রাম্প। এবারের নির্বাচন বিগত দিনের যেকোনো নির্বাচনের থেকে ভিন্ন। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পরিসরে। সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন এ নির্বাচনের দিকে। রাজনৈতিক অনেক বিশ্লেষকের  ধারণা, এবারের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্ব রাজনীতিতে বিরাট প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের গণহত্যা, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, বিশ্ব অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়। কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলে তিনি হবেন আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। মোট ৫৩৮টি ইলেকটরাল কলেজ ভোটের মধ্যে যিনি ২৭০টি ভোট পাবেন, তিনিই হবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। যিনি আগামী ৪ বছরের জন্য হবেন হোয়াইট হাউসের অধিকর্তা। জনমত জরিপে ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তা খুব কাছাকাছি, যা যেকোন সময় যে কারোরই পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে পারে।

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো জয় পরাজয় নির্ধারণ করবে বলে ইতিমধ্যেই সংবাদ শিরোনাম হয়েছে, দোদুল্যমান ৭টি অঙ্গরাজ্যে প্রার্থীরা একাধিকবার সভা–সমাবেশ করেছেন এবং আগামী কয়েক দিন এ অঙ্গরাজ্যগুলোতে ঝটিকা সফর করার কর্মসূচি রয়েছে। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো হচ্ছে মিশিগান, এরিজোনা, জর্জিয়া, নাভাদা, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন। এই ৭টি রাজ্যে রয়েছে ৯৩টি ইলেকটরাল কলেজ ভোট। এই ৭টি রাজ্যে যিনি জিতবেন, তিনিই হবেন আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।

ভোটাররা এবার নির্বাচনে যে বিষয়গুলোর ওপর বেশি গুরুত্ত্ব দিচ্ছেন, সেগুলো হচ্ছে অর্থনীতি, অভিবাসন, গণতন্ত্রের হুমকি, স্বাস্থ্য, হাউজিং, শিক্ষা, অপরাধ, গর্ভপাতবিষয়ক আইন। এ ছাড়াও মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও ভোটাররা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। ইসরায়েল নীতি অর্থাৎ গাজায় যুদ্ধ নিয়ে ভোটারদের মতামত এবারের নির্বাচনে প্রতিফলিত হবে বলে অনুমান করছেন অভিজ্ঞমহল। যাঁরা আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দেবেন, তাঁরা কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন, গত টার্মে যখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন সারা বিশ্বে কোন যুদ্ধ ছিল না, যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছেন। সে সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ভাল, কাজকর্মের সংস্থান ছিল, বর্ডার নিরাপদ ছিল, অবৈধ অভিবাসী আগমন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিল, দেশের বেকারের সংখ্যা ন্যূনতম ছিল। অন্যদিকে যাঁরা কমলাকে ভোট দেবেন, তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, ডেমোক্রেটরা সব সময়ই অভিবাসীদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। তা ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও কল্যাণমুখী কাজে অবদান রাখেন। তাই তাঁরা কমলা হ্যারিসকে ভোট দেবেন। তাঁদের বিশ্বাস আমরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হবেন কমলা হ্যারিস, তার নের্তৃত্বে বিশ্ব এক নতুন আমেরিকা দেখতে পাবে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও ডেমোক্রেট দলীয় নেতারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে ট্রাম্পকে ভোট না দেয়ার আহবান জানাচ্ছেন কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন ট্রাম্প গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। গতকাল মঙ্গলবার হ্যাম্পশায়ারে এক প্রচারাভিযানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্পকে রাজনৈতিকভাবে আটকাতে হবে। নতুবা আমেরিকার গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা হবে হুমকির সম্মুখীন। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, দ্রব্যমূল্য, বাসস্থান, বেকারত্ব, অভিবাসন সমস্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এর বিহিতের জন্য রিপাবলিকানদের ভোট দিতে হবে।

ভোটের বাকি মাত্র ২ সপ্তাহ কিন্তু রাস্তাঘাটে নেই কোনো জন সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, পোস্টারের ছড়াছড়ি, মানুষে মানুষে নেই ভোট নিয়ে তেমন কোন আলোচনা, দলাদলি, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, মাইকের আওয়াজ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে দল বেঁধে ভোট চাওয়া। আমেরিকানরা ভোটের চেয়ে খেলার খবর নিয়ে আলোচনায় থাকে বেশি সময়। ভোটের দিন একসময় গিয়ে ভোট দিয়ে চলে আসেন। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই অ্যাবসেন্টি ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিয়ে ফেলেছেন। এখানের ভোটের সমাবেশগুলো হয় বড় বড় হলে। পোস্টার, ব্যানার লাগানো হয় রাস্তার ইন্টারসেকশনগুলোর সামনে, বাড়ির সামনে। প্রতিদিন ডাকে (মেইল) আসে প্রার্থীদের ভোট দেয়ার আবেদনসহ বিভিন্ন ফ্ল্যায়ার। আসে ফোন কল, ভিডিও কল। টিভি, রেডিও, ফেসবুক, ইউটিউবে প্রার্থীদের ভোটের প্রচারণা সবচেয়ে বেশি। তা ছাড়া, প্রচারণার আরেকটি দিক হচ্ছে ছোট ছোট প্লেনে প্রার্থীদের বিশাল বিশাল ফ্ল্যায়ার, ব্যানার নিয়ে আকাশে জনবহুল এলাকাগুলোতে ঘুরে ঘুরে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এ দিনে ভোটাররা একি ব্যালেটে স্থানীয় নির্বাচনের বিভিন্ন প্রার্থীদেরও ভোট দেবেন।

তবে প্রবাসী বাঙালিরা এ ভোট নিয়ে বেশ উৎসব মেজাজে আছেন। কারণ, ভোট বাঙালির আরেক পার্বণ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে মিশিগানপ্রবাসী বাংলাদেশিরা সভা সমাবেশ ও প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মিশিগানের ১৫টি ইলেকটরাল কলেজ ভোট রয়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিগত ১২টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্যে ৯টিতে যে দল মিশিগানে জয়লাভ করেছে, তারাই হোয়াইট হাউস দখল করেছে। তাই দুই দলই কোমর বেঁধে লড়ছে মিশিগানে জিততে। সাধারণ ভোটারদের একটা ধারণা মিশিগানে যে জিতবে, সেই হবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। গত ১৩ অক্টোবর ওয়ারেন সিটির একটি রেস্তোরাঁ বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি কমলা হ্যারিস ও টিম ওয়ালজের পক্ষে এক নির্বাচনী সভার আয়োজন করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন ওয়ারেন সিটির মেয়র লরি স্টোন, হ্যামট্রাম্যাক সিটির সাবেক মেয়র ক্যারন ম্যাজস্কি, স্থানীয় নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলীয় বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। উপস্থিত ছিলেন হ্যামট্রাম্যাক সিটির কাউন্সিলম্যান মুহিত মাহমুদ, কাউন্সিলম্যান কামরুল হাসানসহ মিশিগানের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। বক্তারা ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থীদের ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।

গত ৬ অক্টোবর ওয়ারেন সিটির একটি রেস্তোরাঁ মিশিগান বাংলাদেশি–আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ককাসের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সাদেকুর রহমান সুমন। সভায় বক্তারা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে এবং স্টেট পর্যায়ের ডেমোক্রেট প্রার্থীদের ভোট দেয়া এবং প্রার্থীদের পক্ষে মাঠ পর্যায়ে সভা সমাবেশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানোর বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন মিশিগানপ্রবাসী বাংলাদেশি ট্রাম্পের ভক্তরা। তাঁরা ইতিমধ্যেই হ্যামট্রাম্যাক শহরের কনান্ট অ্যাভিনিউয়ে ট্রাম্পের পক্ষে একটি সভা করেছেন। বাঙালি পরিচালিত দোকানপাট, গ্রোসারি, কর্মক্ষেত্র, বিভিন্ন পার্টিতে ভোটের কথা আলোচনা হচ্ছে।