ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় এক অন্য রকম অনুভূতি

ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে আবু সাঈদ ও প্রিয়জিৎ দেবসরকারের লেখা কনসার্ট ফর বাংলাদেশ: দুই বন্ধু এক দেশ।
ছবি: সংগৃহীত

১৯ থেকে ২৩ অক্টোবর হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ বইমেলা। করোনার পর এবার বইমেলা ছিল অন্য রকমের। মেলায় অংশগ্রহণ করব—এ জন্য একজন লেখক হিসেবে ছিল ব্যাপক উত্তেজনা, আগ্রহ ও স্বপ্ন। বাংলাদেশ থেকে স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশনের প্রকাশক ও লেখক আবু সাঈদ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করি, স্বপ্ন ’৭১ প্রকাশনের একজন প্রতিনিধি ও লেখক হিসেবে মেলায় অংশ নেব। তারপর টিকিট করে ফেলি। অনেক খ্যাতিমান প্রকাশককে ই–মেইল করি। অনেক ই–মেইলের উত্তর পাই। খোঁজ পাই কলকাতার দীপ প্রকাশনীর প্রকাশক বন্ধু দীপ্তাংশু মন্ডলের। অনেক বছর পর বন্ধুর সঙ্গে দেখা হবে। এটাও যেন আরেক রকমের অনুভূতি।

দুবাইয়ের প্রকাশনী সংস্থা নলেজ ফাউন্ডেশনের কর্ণধার মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে লেখক।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বে জনমত গঠনের জন্য অবিস্মরণীয় অবদান রাখে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। এ আয়োজন নিয়ে আমার ও আবু সাঈদ ভাইয়ের যৌথ লেখা বই ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ: দুই বন্ধু এক দেশ’। বইটি বিশ্বের বৃহৎ বইমেলায় প্রদর্শিত হবে—কী যে এক আনন্দ! ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বইটি নিয়ে ২১ অক্টোবর রাতে জার্মানি থেকে বাংলা ভাষার পত্রিকা শুদ্ধস্বর ডটকম আয়োজন করে বিশেষ অনুষ্ঠান। সেখানে আমরা দুজন অনলাইনে অংশগ্রহণ করি। সঞ্চালনা করেন শুদ্ধস্বর ডটকমের প্রধান সম্পাদক হাবিব বাবুল।

ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসের স্টলে লেখক

অনুষ্ঠানের পর থেকে শুরু হয় মনের ভেতরের জল্পনা–কল্পনা। বইমেলায় কী কী করব। কোন কোন প্রকাশকের সঙ্গে দেখা করব। কীভাবে সময় পার করব, এমন অনেক পরিকল্পনা। বিমানে করে লন্ডন থেকে জার্মানিতে পাড়ি দিলাম। বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে মেলায় চলে এলাম। মেলায় প্রবেশ করে মনে হচ্ছে, একটা স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখলাম। এত প্রকাশনী ও প্রকাশক। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার প্রকাশনী এতে অংশ নিয়েছে। জানতে পারি, ৯৫টি দেশ থেকে ৪ হাজার পরিদর্শক, ৪ হাজার শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সাংবাদিক অংশ নেন ৭৪তম এই আসরে। অনুষ্ঠিত হয় দুই হাজার অনুষ্ঠান।

ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলা

আমাদের বইটি প্রদর্শনীর জন্য রাখা হলো দীপ প্রকাশনীর স্টলে। এখানে অনেকে এসে বইটি দেখছেন, অনেকে জানতে চাচ্ছেন, এটা কী ধরনের বই। কী নিয়ে লেখা। যখন বইটি সম্পর্কে বলি, সবাই অবাক হয়ে বলেন, এমন ঘটনা ঘটেছিল! ঘটনা জেনে তাঁদের ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়। বইটি নিয়ে আমি মেলা ঘুরে দেখেছি কত ভাষার প্রকাশক ও লেখকদের।

লন্ডন থেকে এসেছে বিখ্যাত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। তাঁদের ওখানে গেলে তাঁরা প্রদর্শনের জন্য কিছু সময় অনুমতি দেন। তাঁরা বইটি ইংরেজি ভাষান্তর করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। যোগাযোগ রাখার ব্যাপারে আন্তরিকতা দেখান। দুবাইয়ের প্রকাশনী সংস্থা নলেজ ফাউন্ডেশন। তার কর্ণধার মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুম। তিনি বইটি দেখে খুব আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তিনি বলেন বইটি আরবি ভাষান্তর করার জন্য। এমন অনেক প্রকাশক ও লেখকের সঙ্গে কথা হয়।

বইমেলার শেষ দিন

দিনটি ছিল মেলার শেষ দিন। তাই বারবার খুব আফসোস হচ্ছিল, কদিন আগে এলে আরও ভালো লাগত। অনেক প্রকাশক ও লেখকের সঙ্গে দেখা হতো, কথা হতো, তাঁদের অভিজ্ঞতা জানতে পারতাম। সত্যি, একজন লেখক হিসেবে প্রথমবার এখানে অংশ নিয়ে এত ভালো লাগল যে বুঝাতে পারব না। তবে একটু ব্যথিত হয়েছিলাম, যখন বাংলাদেশ থেকে একমাত্র স্টল এসেছে, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। সেখানে গিয়ে বইটি তাঁদের দেখানোর পর তাঁরা একদম আগ্রহ দেখাননি, যেটা বিদেশি প্রকাশকেরা দেখিয়েছেন। তবু এই ব্যথিত বুকে বইটি বিদেশি প্রকাশক, লেখক ও পাঠকদের আকর্ষণ এবং মেলা দেখার সৌভাগ্য ছিল সুখকর।

প্রিয়জিৎ দেবসরকার : লেখক ও গবেষক