প্রিয়জনের গায়ের ঘ্রাণ ভুলে গেছেন অনেক প্রবাসী
দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি সাধারণ প্রবাসীদের জীবনযাত্রা কেমন কাটাচ্ছে তা নিয়ে কথা বলতে গেলে তাঁরা জানান, ভালো–মন্দ আর মোটামুটি অবস্থায় কেটে যাচ্ছে তাঁদের কারও কারও জীবন। মা-বাবা ও পরিবারের জন্যই শত কষ্ট, ভয় বুকে চেপে প্রবাসে কর্মজীবন পার করছেন, প্রিয়জন তাঁদের আয়ে ভালো থাকবেন বলে। তাঁরা জানান, প্রবাসজীবন যেমন অনেক কিছু দিয়েছে আবার কেড়েও নিয়েছে।
কিন্তু জীবন–মৃত্যু প্রকৃতির নিয়মে চলে, যা পাল্টানো যায় না। এত হিসেবে বাইরে মন তো আর মানে না। তারপরও কারও কারও কষ্ট বুকেই রয়ে যায়। নিয়ম আর কাগজপত্রের জটিলতায় পড়ে কেউ কেউ প্রবাসে একযুগের বেশি সময় হাজার হাজার কিলোমিটার দূরত্বে থাকার ফলে দেশ-সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। কেউ আবার মা-বাবা ও প্রিয়জনের গায়ের গন্ধও ভুলে গেছেন বলে জানান অনেক প্রবাসী।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের ফোডসবার্গে বাংলাদেশি খাবারের দোকান পরিচালনা করেন নোয়াখালী জেলার মাইজদীর কিবরিয়া (২৬)। তিনি বলেন, এগারো বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় কাটিয়ে দিয়েছি। শুধু কষ্ট একটাই, মা বেঁচে নেই। ভাবতে খারাপ লাগে। আমরা তিন ভাই কেউ মায়ের মৃত্যুর সময় পাশে থাকতে পারিনি, সবাই তো বিদেশে থাকি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বেশির ভাগ বাংলাদেশিরা অবৈধ পথে প্রবেশ করায় শরণার্থী স্ট্যাটাস নিয়ে থাকতে হয়। কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় অ্যাসাইলাম পারমিট নিয়ে নীতি ও শর্ত পরিবর্তন করায় প্রবাসী বৈধ কাগজপত্র হাতে পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। এতে দীর্ঘ বছর ধরে অবৈধ হয়ে প্রবাসজীবন পার করতে হচ্ছে, শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারছি না।
জোহানেসবার্গে বাংলাদেশি মালিকানাধীন একটি কাপড় সেলাইয়ের দোকানে কাজ করা মোহাম্মদ শাহজাহান (৪৫) বলেন, পরিবারকে নিয়ে মোটামুটি ভালো আছি। দক্ষিণ আফ্রিকা আসার পর অনেক কিছুর মুখোমুখি হয়েছি। এখন এসে ভালো আছি।
তারপরও সব ভুলে প্রবাসীরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন করে সন্তান ও পরিবারকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছেন, পরিকল্পনা করছেন। কেউ কেউ সবকিছুর মধ্যে ভালো আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা পেলে আরও নিরাপত্তার মধ্যে থেকে ভালো করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রবাসীরা।