শৈল্পিক টেনিস থেকে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন: সময়ের দাবি
টেনিস এমন একটি খেলা, যার শুরুটা ছিল শৈল্পিক এবং অভিজাত। সাদা পোশাক পরা খেলোয়াড়েরা গলায় টাই বেঁধে, দক্ষতার সঙ্গে খেলার মাঠে নেমে আসতেন। প্রাচীনকালে রাজা-বাদশারা এই খেলার অংশগ্রহণ করতেন, সাধারণ মানুষের জন্য এটি ছিল স্বপ্নের মতো। কালের পরিবর্তনে টেনিসেও পরিবর্তন এসেছে। রাজা-বাদশারা হয়তো আর টেনিস খেলেন না, তবে তাঁরা সম্মানের চেয়ারে বসে খেলা উপভোগ করেন। উইম্বেলডন এখনো সেই পুরানো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে, যেখানে সাদা পোশাক, সাদা জুতা এবং মোজা পরতে হয়। কিন্তু খেলার ধরনে এসেছে বিশাল পরিবর্তন। এখন টেনিস আর শুধু বল হিট করা নয়, বরং এটি রীতিমত যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। শৈল্পিক ভাবমূর্তি হিংসাত্মক আঘাতে পরিণত হয়েছে। এতে কিন্তু টেনিসের মান কমেনি বরং বেড়েছে।
এই পরিবর্তন শিক্ষাব্যবস্থায়ও প্রয়োজন। শিক্ষার মধ্যেও যে মনোভাব বিদ্যমান, সেটাও ভাঙতে হবে। আমি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার ধরন, বরণ এবং পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। হয়তো কেউ ভাবতে পারেন, শুধু বাংলাদেশের গণমাধ্যমে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এবং আমার কাজের মাধ্যমে আমি এই পরিবর্তনে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, কেন এত দেরি করে এই কাজে হাত দিয়েছি? মিসাইল গর্ভাচেভের কথা মনে পড়ে? তিনি সোসালিজম ভেঙে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, তবে তা করতে তার জীবনের শেষ সময় লেগেছিল। আমার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ছোটবেলায় যা দেখেছি, সেটার পরিবর্তন তখন করতে সাহস ছিল, কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং খ্যাতনামা শিল্প কারখানায় কাজ করে, টেনিস এবং এর পুরোনো ট্রেডিশন পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন করাটা এখনই উপযুক্ত সময় বলে মনে করি।
ফিরে যাই ছোটবেলার স্মৃতিচারণায়। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাসে পরিচয় পর্বের সময় শিক্ষক সবাইকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার বাবা কি করেন? কেউ জবাব দেয়, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ডিসি, সচিব, মন্ত্রী। শিক্ষক তখন পুলকিত মনে বলেন, ও আচ্ছা! খুব ভালো, স্যারকে সালাম জানিও। যাদের বাবা সাধারণ কাজ করেন, তাদের পরিচয়ে কী হয়? মাথা নিচু করে উত্তর দেওয়া হয়, আমার বাবা কৃষক বা জেলে। শিক্ষক ভ্রু কুঁচকে জবাব দেন, ও আচ্ছা! বসো। জেলে বা কৃষক হওয়ায় সমাজের চোখে তাঁদের মর্যাদা কম। এই বৈষম্য থেকেই সমাজের বহু প্রতিভাবান সন্তান পিছিয়ে পড়ে।
শিক্ষকদের উচিত, যখন কেউ মাথা নিচু করে বলে সে জেলে বা কৃষকের সন্তান, তখন কষে একটি থাপ্পড় দিয়ে বলা, বোকা, মাথা নিচু করে কথা বলিস কেন? বাবার পরিশ্রমে তুই দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে পড়তে এসেছিস। গর্বের সঙ্গে বল, আমার বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাকে শিক্ষিত করেছেন।
একদিন সেই জেলের ছেলেটি হয়ে উঠবে জগৎবিখ্যাত অধ্যাপক। কৃষিক্ষেত থেকে উঠে আসা হাজারো দৃষ্টান্ত রয়েছে আমাদের দেশে। কাউকে ছোট করে দেখলেই সে ছোট হয়ে যায় না, বরং যে ছোট করে দেখে, সেই ছোট হয়ে যায়। দুর্নীতির টাকায় পকেট ভারী করার চেয়ে, মনের ব্যাসার্ধ বড় করাটা এখন সময়ের দাবি। কাউকে পেছনে রেখে কোনো জাতিই এগিয়ে যেতে পারেনি, পারবে না। সবাইকে নিয়েই এগোতে হবে। তবেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পদচিহ্ন অঙ্কিত হবে। সোনার বাংলা গড়ার আগে ভালো মন তৈরি করতে হবে, আর এই তৈরি শুরু থেকেই হওয়া উচিত।