বৈশ্বিক রাজনীতি: প্রসঙ্গ শ্রীলঙ্কা

অনূঢ়া কুমার দিশানায়েকেফাইল ছবি: রয়টার্স

গণবিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালানোর দুই বছরের বেশি সময় পর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পেল শ্রীলঙ্কা। গত শনিবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বামপন্থী অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। ভারতীয় উপমহাদেশে কোনো বামপন্থী মতাদর্শের রাষ্ট্রনায়ক ক্ষমতার মসনদে বসলেন এই প্রথম। অনূঢ়া কুমারার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষে পরিবারের টানা দেড় দশকের বেশি সময়ের একক আধিপত্যের অবসান ঘটল। অনেকটা আমাদের শেখ হাসিনা সরকারের মতোই বলা যায়।

অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে প্রেসিডেন্ট হওয়ায় উপমহাদেশের ভূরাজনীতিতে কিছু প্রশ্ন সামনে এসে যায়। যেমন দিশানায়েকেকে ক্ষমতায় বসাতে চীনের কতটা হাত রয়েছে?

অনেকে মনে করেন, চীনের সমর্থন ছাড়া দিশানায়েকে জিততে পারতেন না। তাহলে কি চীন ভারত উপসাগরে তার সাম্রাজ্য বৃদ্ধি করে যাচ্ছে?

উল্লেখ্য, মালদ্বীপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সময় ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান দিয়েছিলেন। মুইজ্জুকে চীনপন্থী নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাহলে কি বলা যায়, প্রতিবেশী রক্ষার রাজনীতিতে মোদি এবারও ব্যর্থ?

অধ্যাপক হর্ষ ভি পন্থ দিল্লির ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্টাডিজ অ্যান্ড ফরেন পলিসি’ বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান। তাঁর মতে, দিশানায়েকে ও জেভিপি (জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা) অতীতে কিছুটা ‘ভারতবিরোধী’ ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই নীতিতে পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। অধ্যাপক পন্থ বলেছেন, ‘তার দল জেভিপি ঐতিহ্যগতভাবে ভারতবিরোধী। শুরু থেকেই তারা সে দেশে ভারতের প্রভাবের বিরুদ্ধে। ইতিহাস ঘাঁটলে আপনি দেখতে পাবেন, ওরা বহুবার ভারতের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিবাদ করেছে।’ নির্বাচনের আগে দিশানায়েকে যেভাবে ভারতীয় ব্যবসায়ী আদানি গোষ্ঠী পরিচালিত বায়ুশক্তি প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিলেন, সেই প্রসঙ্গ স্মরণে রেখে তাঁর দলকে ‘ভারতবিরোধী’ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। সূত্র: বিবিসি

আরেকটি তথ্য দিয়ে রাখি, এই দিশানায়েকে একসময় সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠনের নেতা ছিলেন। তাঁরা একসময় ভারতবিরোধী আন্দোলন করেছেন। দিশানায়েকে পুরোনো রাজনৈতিক ধারার বাইরের নেতা।

দিশানায়েকের আরেকটি ভিন্নধর্মী বিষয় হচ্ছে তিনি খুব শক্তিশালী মার্ক্সবাদী বামপন্থী আদর্শবাদী নেতা। বংশপরম্পরায় রাজনীতি করা কোনো পরিবার থেকে তিনি আসেননি। দেশের পুরোনো শাসনের ধারার বাইরের একজন নেতা তিনি। অন্তত দেশের বেশির ভাগ মানুষ তাঁকে এভাবেই দেখেছেন।

দিশানায়েকে যে নীতিমালার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার মধ্যে আছে কঠোর দুর্নীতিবিরোধী আইন প্রণয়ন, এ–সংক্রান্ত উদ্যোগ বাস্তবায়ন, বড় ধরনের কল্যাণ প্রকল্প নেওয়া এবং করের বোঝা কমানো।

এত কিছু জানার পর কিছু আগামবার্তা বলা প্রয়োজন—

মোদির জন্য আগামী নির্বাচনে জেতা হবে খুবই কষ্টকর। বলতে গেলে এটাই মোদির শেষ ক্ষমতা।

আগামীতে এই উপমহাদেশে চীনের আধিপত্য আরও বাড়বে।

আমাদের বাংলাদেশে কি এমন নেতা জন্ম নেওয়া সম্ভব?

আমরা কি এমন কোনো দিশানায়েকেকে পাব? যিনি বাংলাদেশে নতুন ধারার রাজনীতি নিয়ে আসবেন।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে দিশানায়েকের জয় লাভের প্রভাব কিছুটা হলেও পড়বে বলে মনে হচ্ছে।

আমাদের মধ্যে থেকে কেউ না কেউ ‘অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে’ হতেও পারেন।

আগামী পর্বে লিখব, আমাদের দেশের বামপন্থী নেতারা কেন ও কীভাবে মূল জায়গা থেকে সরে যান।

*লেখক: শ্রাবণ রহমান

*দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]