যেতে যেতে পথে

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

বছর দুয়েক আগে ইতালি গিয়েছিলাম। ভ্রমণের উদ্দেশ্য একেকজনের কাছে একেক রকম। আমার কাছে ভ্রমণ বিনোদন। নতুন ও পুরাতনের মিশ্রণের সঙ্গে থাকবে জানা ও শোনার বিষয় এবং সর্বোপরি থাকবে দেখা ও শেখার সমন্বয়।

কিছু জানা বা শেখা, এটা কেমন যেন নেশায় পরিণত হয়েছে। সব সময় নতুন দৃষ্টিকোণে, ভিন্নভাবে দেখতে চেষ্টা করি এবং মনে হয় সবাইকে তা শেয়ার করি। জানা, শেখা, শেখানো, দেখা ও দেখানো—এ কিন্তু নতুন অভ্যাস নয়। আমি এ অভ্যাস গড়েছি ছোটবেলা থেকেই। ডিজিটাল যুগ, তাই হয়তো এর চর্চাটা এখন চোখে ধরা পড়ছে একটু বেশি।

ইতালি ভ্রমণের সময় অনেক ঘটনা ঘটেছে, অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়েছে। আমি আমার কাজ, আমার ঘোরাঘুরি সবকিছু কিন্তু আর দশজনের মতো করেও করতে পারতাম। ঘোরাঘুরি শুধু কি আমি একা করি? না। প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে অনেকে নানা কাজে বা বেড়াতে দেশ থেকে দেশান্তরে যাচ্ছে। পথে তারাও নানা ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে। তাদেরও মোবাইল ক্যামেরাতে ছবি উঠছে। কেউ তার কিছু অংশ ফেসবুকে বা ইনস্টাগ্রামে ছাড়ছে।

এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, কেন আমরা ঘোরাঘুরি করি? ছবি তুলি বা শেয়ার করি? কারণ, আমরা ভালোবাসি নতুন কিছু জানতে, দেখতে ও শিখতে। সর্বোপরি তা শেয়ার করে শেয়ারের একটি ভ্যালু তৈরি করি, যা মানবকল্যাণে নিঃসন্দেহে শিক্ষামূলক বার্তা বহন করে।

পাঠক, আজ আমি বইয়ের জগৎ আর আমার ভ্রমণের জগৎ নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করতে চাই। ইতালির সদ্য ভ্রমণে আমি আমার সময়ের দাম ধরিনি, তারপরও বাংলাদেশি মুদ্রায় লাখ টাকা পকেট থেকে খসেছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কী এমন শিক্ষা পেয়েছি এক লাখ টাকার বিনিময়ে? উত্তর যা আমি দেব তা হলো, জীবনের এমন একটি পর্যায়ে আমি এসে পৌঁছেছি, যেখানে নেওয়ার চেয়ে দেওয়া বা পেতে নয় দিতে হবে—এমন করে নিজেকে তৈরি করছি।

অতএব জানার সঙ্গে জানানোটাও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারপর আমি যেমন পিসা শহর এর আগে দেখিনি বিধায় নতুন কিছু দেখতে পেরেছি। তাতে মনে হলো জানা বা শেখার শেষ নেই। এদিকে আমরা এখন মা–বাবা হয়েছি। আমরাও কিন্তু আমাদের ব্যবহারে আমাদের মা–বাবার মতোই আচরণ করছি আমাদের ছেলেমেয়ের প্রতি। যেমন তাদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে সবকিছুতেই বেশ লেগে আছি। ছেলেমেয়ে কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, কী খাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা এখনো সেই পুঁথিগত বিদ্যার ওপর থেকে নজর সরাতে ভয় পাচ্ছি। মনে হচ্ছে ছেলেমেয়ে যদি ঠিকমতো লেখাপড়া না করে, তাহলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। আসলে কি তাই?

কী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে চার দেয়ালের মাঝে রেখে আজকের নতুন প্রজন্মকে? সকাল থেকে বিকাল, প্রতিদিন, তা–ও কমপক্ষে সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় দিন। একইভাবে একই ধরনে একই কাজ করা। তারপর বাড়িতে এসে ঘরের ভেতরে দিনের কাজগুলো রিপিট করা, তা–ও আবার কখনো শিক্ষকের সাহায্যে, কখনো মা–বাবার সাহায্যে, কখনো–বা নিজে নিজে। এ ধরনের শিক্ষার প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া চলছে শিশুর জন্মের শুরু থেকে কৈশোর, যৌবন, এমনকি বার্ধক্যের কিছু সময় পর্যন্ত। জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো যদি কেটে যায় জেলহাজতের মতো বদ্ধ ঘরে থেকে, আর চোখ দুটো শুধু চোখ বোলাতে থাকে বইয়ের পাতায়, জানি না কী হবে এর ফলাফল। বা কী আশা করতে পারি এমন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

আমার বিশ্বভ্রমণের সঙ্গে লেখালেখি আমাকে কিছুটা চিন্তায় ফেলেছে। তা হলো, যদি আমি সত্যি সত্যি একজন লেখক হতাম এবং এটাই যদি আমার পেশা হতো, তাহলে প্রশ্ন এক লাখ টাকা খরচ করে যে লেখাটি আমি তৈরি করেছি তা কি আমি বিক্রি করে খরচের পরে লাভ উঠিয়ে চলতে পারতাম? উত্তর, না। কারণ, আজকের এই ডিজিটাল যুগে শিক্ষায় নতুনত্ব আনতে হলে প্রচুর খাটতে হবে। তবে মজার ব্যাপার এই যে বর্তমান ডিজিটাল যুগে জানা বা শেখার যে পরিমাণ সুযোগ তৈরি হয়েছে, পৃথিবী সৃষ্টির পর এমন সুযোগ এর আগে কখনো আসেনি। যাদের আমার মতো সামর্থ্য নেই অর্থনৈতিক বা সামাজিকভাবে দেশ-বিদেশ ঘোরা, নতুন কিছু দেখা বা জানা, তাতে কিচ্ছু যায়–আসে না। বর্তমান ডিজিটাল যুগের কারণে দেশ-বিদেশ ঘুরতে না পারলেও দেখা, শোনা ও জানার সুযোগ রয়েছে যথেষ্ট। এমনকি শিক্ষার আলো ছড়াতে সংবাদপত্রের ভূমিকা রয়েছে প্রচুর। এর প্রমাণ প্রথম আলো। প্রথম আলোর মতো সংবাদপত্রগুলো প্রশিক্ষণকে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করছে অনলাইনের মাধ্যমে দশের এবং দেশের স্বার্থে। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে কারও চেষ্টার ত্রুটি নেই প্রশিক্ষণকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। তাই এ শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে প্রত্যেকের। আমি যদি সত্যিকারে পেশা হিসেবে আমার লেখাকে নিতাম তাহলে প্রতিটি লেখার জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে তা কখনো ওঠানো সম্ভব হতো না। তবু আমি চেষ্টা করছি এই ভেবে যে আমারও একটি দায়িত্ব এবং কর্তব্য রয়েছে দেশের প্রতি, বিশ্বের প্রতি। তাই আনন্দের সঙ্গে রেখে যেতে চাই আমার জীবনের অভিজ্ঞতার কিছু অংশ, যা মানবজাতির চলার পথে হবে নতুন কিছু জানা ও শেখার অনুষঙ্গ।

আমরা সবাই চেষ্টা করতে পারি নানাভাবে পৃথিবীর জন্য কিছু করার, যা আমি চেষ্টা করছি আমার মতো করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লিখে। একই সঙ্গে আমার ‘স্ট্রং মেসেজ টু অল’ তা হলো শুধু বদ্ধ ঘরের স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, উন্মুক্ত পরিবেশেও শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে বিশ্বভান্ডারের সমস্ত শিক্ষা ডিজিটাল যুগে গুগলে এবং এর থেকেও প্রশিক্ষণ নেওয়ার চেষ্টা করা দরকার।

মনে রাখতে হবে, ‘গাড়ির চাকা তৈরি করা আছে, নতুন করে তা তৈরি করার দরকার নেই, বরং দরকার সে চাকার সাহায্যে গাড়ি চালাতে শেখা।’ শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য যদি শুধু চাকরি করা হয় তাহলে কাজের সমন্বয়ে পড়াশোনা করাই ভালো। শিক্ষা যদি নতুনত্বের প্রভাব না দিতে পারে তাহলে সে শিক্ষা গ্রহণ করা আর নকল করার মধ্যে কী পার্থক্য থাকতে পারে, তা আমার জানা নেই। নকল করা বন্ধ করতে উঠেপড়ে না লেগে বরং নকল যাতে উন্নত ও মানসম্মত হয়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হোক। একজন ভালো শিক্ষক ভালো করেই জানেন তাঁর ক্লাসের কোন শিক্ষার্থী কেমন, তাই পরীক্ষার প্রশ্ন যেন পাঠ্যপুস্তকের বাইরে থেকে বা স্মার্ট ওয়েতে করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের থেকে উত্তর দিতে শেখে। সমস্যার পেছনে নয় বরং সমাধানের পেছনে সময় দেওয়া হোক শিক্ষার মূল লক্ষ্য। আজ লেখার মাঝে হাঁটতে গিয়ে নতুন একটি জিনিস শিখলাম, তা হলো অনেকেই কথায় কথায় বলে, ‘পানির মতো সহজ’। কিন্তু পৃথিবীর যত জিনিস আছে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পদার্থ পানি, তা কি সবাই জানি? যে শক্তি এই পানির মাঝে রয়েছে তা যেদিন মানবজাতি সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে, সেদিন হবে মানবজাতির সার্থকতা। তাই পানির মতো অনেক জিনিস আমাদের চারপাশে সহজভাবে বিরাজ করছে, তার মানে এই নয় যে তা সহজ। যাহোক অনেকের ধারণা, নকল একটি সহজ উপায় জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। কিছু নকল হয়তো সহজ হতে পারে, কিন্তু জীবনে অনেক কঠিন নকল রয়েছে, যা সারা জীবন চেষ্টা করেও অনেকে সফল হতে পারেনি।

ছবি: মাসুক হেলাল

নকল নকলই, তা কখনো আসল নয় বা হবে না, হতে পারে না। মোনালিসার লাখো ছবি রাস্তাঘাটে থাকতে পারে, তবে মোনালিসার যে ছবি প্যারিসের জাদুঘরে রয়েছে ওটাই মোনালিসার আসল ছবি। শিক্ষার আলো যেন নকল আলো না হয় এবং তা যেন অন্ধকারে পালিয়ে না যায়, এটা মনে রাখা দরকার। কারণ, বিপদে বা চাকরি খোঁজার সময় বা জীবন চলার পথে যদি সে আলো সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে দেয়, কী হবে সেই নকল আলো দিয়ে?

জানার জন্য শেখা এবং আসল আলো তৈরি করে নিজেকে এবং অন্যকে আলোকিত করার মতো প্রশিক্ষণ দেওয়া ও নেওয়া হোক আমাদের জীবন গড়ার এবং শিক্ষা প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য, এমনটি আশা আর বুক ভরা ভালোবাসা রইল পৃথিবীর সব শিক্ষার্থীর জন্য।

এখন ফিরে যায় লেখার শুরুতে। মার্কো পোলো এসেছিল ভেনিসে পানিপথে, আমরাও এসেছি; তবে সরাসরি তার মতো করে নয়, কিছুটা ভিন্নভাবে। সকাল দশটা বাজতেই ল্যান্ড করলাম ইতালি, ভেনিসের মার্কো পোলো বিমানবন্দরে। হোটেল নিয়েছি বিমানবন্দরের কাছে, তবে ভেনিস থেকে বেশ দূরে।

ট্রেনে করে ভেনিসে যেতে লাগবে ২০ মিনিটের মতো। মেশিনে টিকিট কিনে সেই টিকিট আবার ট্রেনে ঢোকার আগে ছোট্ট আরেকটি মেশিনে ঢুকিয়ে স্ট্যাম্পিং করতে হবে। অনেকে মনে করে টিকিট তো আছেই, দেখালেই হবে। কিন্তু না, হবে না; মেশিনে ঢুকিয়ে স্ট্যাম্প না মারলে ২০০ ইউরো জরিমানা। দেখতে দেখতে তিনটি স্টেশন পার হয়ে গেল। চতুর্থ স্টেশন পার হতে বেশ একটু সময় লেগে গেল। মনে হলো সাগরের মাঝখান দিয়ে চলছে এক ভাসমান ট্রেন। দুই ধারে শুধু পানি আর পানি। ট্রেন থামতেই হাজারও মানুষের ভিড়। দেখে মনে হলো সারা বিশ্বের মানুষের এক মিলনায়তন ভেনিসে। স্টেশন থেকে বের হতেই চোখ পড়ে গেল বড় খালের (Grand Canal) দিকে। আরে, এ তো দেখছি অনেক বাংলাদেশিও! কারও হাতে ট্রলি, কারও হাতে ফুল, কারও হাতে বেলুন, কারও হাতে অন্যের ব্যাগ, কারও হাতে নানা ধরনের ছোট ছোট শৌখিন স্যুভেনির। হাতটি বাড়িয়ে পরিচিত হতে বললাম বাংলাদেশি, বেশ লাজুকতা এবং জড়তা, কথা বলার অনিচ্ছাটি বেশি তাই দ্রুততার সঙ্গে সরে গেল আমাদের দেখে।

অলংকরণ: আরাফাত করিম

বিস্ময়কর মনে হলো! পরে জানতে পারলাম, ১৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা খরচ করে এসেছে এখানে। এ ধরনের কাজ করাটাকে খুব ভালো চোখে বাঙালিরা দেখতে না–ও পারে, তা ছাড়া আমরা অজানা–অচেনা, কী লাভ কথা বলে বা সময় নষ্ট করে! হয়তো তাদের কাছে ঘটনাটি স্বাভাবিক। আপনজন ফেলে দূর পরবাসে এসেছে পয়সা রোজগার করতে, গল্প করতে নয়। কেন যেন মনে হয়েছিল, তাই বলেছিলাম কয়েকজনকে। এমন সুন্দর জায়গায় বসবাস, হয়তো অর্থে গরিব কিন্তু মনে গরিব হওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না। হয়তো আপনাদের অনেক কিছু নেই। হয়তো প্রিয়জনকে ছেড়ে দূর পরবাসে বসবাস করছেন। তারপরও যা নেই তার দুঃখে যা রয়েছে তাকে বিসর্জন দেওয়া, মুখের হাসিকে কবর দেওয়া জানি না ঠিক কি না।

যাহোক এসেছি ভেনিসে, দেখতে হবে অনেক কিছু। গোন্ডোলা (চেকুন এবং লম্বা নৌকা), স্পিড বোট, লঞ্চ, বড় জাহাজ, ট্যাক্সি বোট এবং বাসে করে যেতে হবে এক গলি থেকে আরেক গলিতে। ভেনিস শহর গড়ে উঠেছে পানির মধ্যে। ছোট–বড় নানা ধরনের ব্রিজ। ব্রিজ না থাকলে নৌকা বা লঞ্চের ব্যবস্থা রয়েছে। অতএব চলার গতি থেমে নেই। মুগ্ধ হয়ে দেখছি। ছবি তুলছি। আবার মাঝেমধ্যে ছোট ছোট ভিডিও করছি। আমার মেয়ে জেসিকা ভিডিও করাটা খুব একটা পছন্দ করছে না।

জেসিকা বলছে, আজকাল ইউটিউবে সবই তো রয়েছে। যদি কারও জানার বা দেখার শখ হয় সেখান থেকে দেখতে পারবে। কিছুটা দ্বিমত পোষণ করলাম। কারণ, আমি মনে করি, আমি যেভাবে দেখছি ঠিক সেইভাবে বর্ণনা করছি। আমার মতো করে বর্ণনা না–ও থাকতে পারে ইউটিউবে। তা ছাড়া শেয়ার ভ্যালু আমার ভ্রমণের একটি অংশ, যা আমার ভালো লাগে শেয়ার করতে। ইতালির খাবার বিশ্বে বেশ পরিচিত এবং সবাই বেশ প্রশংসা করে। তবে আমি এদের খাবারে মজা হারিয়েছি অনেক বছর আগেই। বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য এরা দরদ দিয়ে রান্না করতে ভুলে গেছে। দামের বেলায় কিন্তু একটুও কৃপণতা নেই। তাই ভালো ইতালিয়ান খাবার খেতে নিজের হাতে রান্না করাটাই বেটার বলে মনে করি।

ভেনিস ও ভেরোনা; কী জাদু রয়েছে ইতালির এ দুই শহরের মধ্যে? ভেরোনায় ঘটেছে অপেরার (Opera) সমন্বয়, যা এক রোমান্টিক রাজকীয় মিউজিক্যাল বিনোদন। এখানে দুই তরুণ–তরুণী রোমিও–জুলিয়েটের মধ্যে মনের মিলন হয়েছিল; আজীবন ভালোবাসার কাহিনি। ভেরোনা সৈকতে রোমিওর সঙ্গে দেখা হয় জুলিয়েটের, যেখানে প্রথম দেখায় তাদের মধ্যে প্রেম হয়ে যায়। কিন্তু পারিবারিক শত্রুতা এই প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর কত কথা, কত ব্যথা, যা শেক্‌সপিয়ারের (Shakespeare) বর্ণনায় পড়েছে ধরা।

ভেরোনার সৈকত, রোমিও–জুলিয়েটের সেই বিখ্যাত বাড়ির ব্যালকনি ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ল্যাঞ্চে কিছুক্ষণ সময় কাটানো; যা ছিল হৃদয়ে অনেকক্ষণ। তারপর চমৎকার সেন্ট মার্কস স্কয়ার থেকে শুরু করে প্রাচীন স্থাপত্য এবং চার্চ শিল্প, খাদ্যে ভরা মার্জিত প্রাসাদ-ভেনিস একটি আবশ্যক! দেখে মনে হয় সব খালের ওপর গোন্ডোলার (ছোট নৌকার) শাসন। দর্শকের দর্শন কেড়েছে মার্কস গির্জা, কল্পনাপ্রসূত রিয়াল্টো সেতু, পিয়জা সান মার্কো এবং ভেনিসের বিখ্যাত ড্রয়িংরুম সান মার্কোর বিশাল মার্জিত বেসিলিকা। নারীর পরিদর্শক ক্যাসানোভা, গ্যালিলিও এবং লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির শহর ভেনিস। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কোনো এক সময়ে একটি পাইন কাঠের টুকরার ওপর মোনালিসার একখানা ছবি আঁকেন। চিত্রকলার ইতিহাসে এই চিত্রকর্মটির মতো আর কোনোটি এত আলোচিত ও বিখ্যাত হয়নি। এর একমাত্র কারণ, মোনালিসার সেই কৌতূহলোদ্দীপক হাসি, যা পরবর্তী সময়ে বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে এটি প্যারিস শহরের ল্যুভর জাদুঘরে রাখা আছে। এটি ছিল শিল্পীর সবচেয়ে প্রিয় ছবি এবং তিনি সব সময় এটিকে সঙ্গেই রাখতেন। তিনি নিজেই বলতেন, এটি হলো তাঁর সেরা শিল্পকর্ম। অবশ্য মোনালিসাকে নিয়ে অনেক ধারণা আছে। কিছু গবেষক মনে করেন, মোনালিসা হলো লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মা, আবার কেউ মনে করেন মোনালিসা হলো লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বান্ধবী। তবে সাম্প্রতিক এক কম্পিউটার পরীক্ষায় দেখা গেছে, মোনালিসার সঙ্গে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির কিছুটা মিল রয়েছে। তাই মনে করা হয়, হয়তো মোনালিসা চিত্রকর্মটি না ছেলে, না মেয়ে। মোনালিসা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে এবং মানুষের মনে নতুন রহস্য সৃষ্টি হয়েছে।

বেশ ভেবেছি, কেমন করে শেষ করব ভ্রমণের ইতিকথা। নতুন করে মনের অফিসে (হৃদয়ে) দেখতে শুরু করেছি ভেনিস, ভেরোনা, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এবং মোনালিসার ছবির মতো নিজের প্রিয়জনদের। অফিসে ঝুলন্ত অবস্থায় যদি মা–বাবা, সহধর্মিণী বা ছেলেমেয়ের ছবি থাকে তাহলে ভালো কিছু করার সম্ভবনাই বেশি। কারণ, কোনো সিদ্ধান্তে যদি ভালোবাসার ছোঁয়া এবং ছায়া থাকে, তাহলে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। ভালো কিছু করার মাঝে রয়েছে বেঁচে থাকার আনন্দ; যা শুধু ভালো লাগা আর ভালোবাসার আনন্দ, So listen to your heart there's nothing else you can do. If you don't know where you're going and why! still listen to your heart.

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন