পাখির চোখে বাংলাদেশ
সকালে বড় মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে ছোট মেয়ে যখন ঘুমিয়ে থাকে, সেই নির্জনতার মধ্যে একটু হালকা ব্যায়াম করার চেষ্টা করি। খুব উৎসাহ নিয়ে শরীরচর্চা করে—এমন মানুষের সংখ্যা এই পৃথিবীতে নগণ্য, আবার এমনও একদল আছে, যারা নিরুপায় হয়ে ব্যায়াম করে; হয়তো চিকিৎসক বাধ্য করে, নয়তো শরীর। নানান অজুহাতে আমরা শরীরচর্চাকে দূরে রেখে অলস বসে কাটাতে বা অন্তর্জালে ডুবে থাকতেই বেশি পছন্দ করি। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। মাঝেমধ্যে খানিকটা আগ্রহের সঙ্গে শরীরচর্চায় লেগে যাই, কিন্তু বেশির ভাগ দিনেই ফাঁকি দেওয়ার জন্য পাঁয়তারা করতে থাকি। যদিও খুব বেশি কসরত করি না, নিতান্তই যা করি ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ অথবা ইয়োগা। নিজগৃহে ট্রেডমিল থাকা সত্ত্বেও আমার ওঠা হয় না, যেকোনো যন্ত্র থেকে বরাবরই দূরে থাকার চেষ্টা করি। ট্রেডমিলে হাঁটার চেয়ে গাছগাছালির মধ্যে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ শুনে হাঁটাই শ্রেয়।
মনে হতে পারে, শরীরচর্চার মতো এমন ক্লান্তিকর বিষয় নিয়ে এত লিখছি কেন? কারণ, আজকে আমার লেখার উৎস এ শরীরচর্চা থেকেই। ওই যে একটু আগে বললাম, নানান অজুহাতে শরীরচর্চা না করে ফাঁকি দিতে চাই। এমনটা যাতে না হয়, তার জন্য নিজের সঙ্গেই নিজে একটু চালাকি করি। চালাকিটা হলো, টিভি খুলে ইউটিউবে ফোরকে সিনিক রিল্যাক্সেশন ভিডিও বা ট্রাভেল-সম্পর্কিত ভিডিও ছেড়ে দিই। যেহেতু ঘুরে বেড়ানোর ‘রোগ’ আছে, তাই নিজেকে পুরোদস্তুর হারিয়ে ফেলি ওই ভিডিওগুলোর মধ্যে; আবার অনেকটা মেডিটেশনেও হয়ে যায়। হালকা ধারাবাহিক সুরের মূর্ছনা যেমন মনকে শান্ত রাখে তেমনি নজরকাড়া দৃশ্যগুলো চোখে প্রশান্তি এনে দেয়।
আরেকটা বড় প্রাপ্তি হলো, পৃথিবীর সব দর্শনীয় স্থান এক জীবনে ঘুরে দেখা বাস্তবিক অর্থে সম্ভব নয়। তাই নিজের ছোট পরিসরে বিশাল অজানা পৃথিবীকে জানার বা দেখার খুব সহজ সুযোগ। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের পুরো জীবন একটা গণ্ডির ভেতরেই শেষ হয়ে যায়, পৃথিবীর অনেক কিছুই অদেখা রয়ে যায়। প্রযুক্তির সুবাদে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা আজ পৃথিবীটাকে হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছি। যদিও ব্যাপারটা অনেকটা, দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মতো, তারপরও বলব মন্দ নয়।
ভিডিওগুলো চলার ফাঁকে আমার প্রতিদিনকার ধরাবাঁধা ব্যায়ামগুলো ধরণির সুন্দর রূপ দেখতে দেখতে অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে যায়। মনটাও সজীব থাকে, সেই সঙ্গে শরীরটার জন্যও কিছু করা হয়। আমরা শরীরটাকেই বেশি অবহেলা বা অবিচার করে থাকি। নাকি মনের? জানা নেই।
ইউটিউবে সিনিক রিল্যাক্সেশন ভিডিও বা ট্রাভেল-সম্পর্কিত ভিডিওতে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা বা উন্নত কোনো দেশের ভিডিওগুলোই দেখা হয়। প্রায়ই কাজটি করি, তাই ইউটিউব হোম পেজে সে-সম্পর্কিত ভিডিওগুলো প্রথম সারিতেই এসে যায়।
প্রযুক্তি এতটাই স্মার্ট হয়ে গেছে যে আপনি কী খুঁজছেন, সহজেই আপনার সামনে নিয়ে আসে এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় চোখের সামনে ভাসতে থাকে। আপনাকে শুধু ক্লিক করতে হবে, ব্যস হয়ে গেল। প্রযুক্তি যেন এক মনপাঠক (মাইন্ড রিডার) হয়ে উঠেছে! কী সাংঘাতিক ব্যাপার বলুন তো! লুকানোর কিছু থাকবে না, দিনকে দিন আপনি আপনার মনের ইচ্ছার রাজত্ব হারাচ্ছেন। নীরবে আপনার গতিবিধি নজরদারি করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত; যা-ই হোক।
সে সূত্র ধরেই আজ সকালে ইউটিউব হোমপেইজে দেখতে পেলাম বাংলাদেশ ফোরকে সিনিক রিল্যাক্সেশন ভিডিও! সম্প্রতি পাবলিশড হয়েছে। আশ্চর্যমিশ্রিত একটা ধাক্কা পেলাম। যে প্রশ্নটা প্রথমেই মাথায় এসেছে, বাংলাদেশ ও রিলাক্সেশন দুইটা ব্যাপার কি একসঙ্গে যায়? প্রতিদিন এত নেতিবাচক সংবাদ বাংলাদেশকে নিয়ে উঠে আসে যে আমরা ইতিবাচক কিছু ভাবতে পারি না। প্রথমেই নেতিবাচক মানসিকতার প্রমাণ দিয়ে থাকি। আমাদের এমন ভাবাটা অনুচিত বলেই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।
আমি বুঁদ হয়ে ভিডিওটি দেখতে লাগলাম, সেই সঙ্গে শরীরচর্চা চলছিল, যদিও অতি আগ্রহের কারণে মাঝেমধ্যেই স্থির হয়ে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল বাংলাদেশটাকে আমার ছোট বৈঠকখানায় তুলে নিয়ে এসেছি। ভিডিওটি দেখেই কেন যেন কিছু একটা লিখতে ইচ্ছা হলো। ভিডিওতে ধারণকৃত বাংলাদেশকে এক বাক্য অতি সুন্দর একটি দেশ বলা যায়। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল, কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, সুন্দরবন, সিলেটের চা-বাগান, মাধবপুর লেক উল্লেখযোগ্য। দৃশ্যগুলো আপনার নজর কাড়বেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলার নয়নাভিরাম ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম হাওরের রাস্তা। ড্রোনের সঙ্গে হাওরের রাস্তায় চলতে চলতে মনে হচ্ছিল, আমি আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কি ওয়েস্টের পথ ধরে চলছি। হাওরের রাস্তার দুপাশে বিশাল জলরাশি তারই মাঝে ছোট ছোট গ্রাম। আর বঙ্গ ইন্টারসেকশন যেন কোনো উন্নত দেশের এক্সপ্রেসওয়ে! পদ্মা সেতু ও বিভিন্ন ফ্লাইওভার বা হাইওয়ে দেখলে সাদাচোখে মনে হতেই পারে দেশে উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। সেই সঙ্গে আরও দেখা মিলবে নদীমাতৃক বাংলাদেশের চিরচেনা রূপ; দিগন্তজোড়া সবুজ ফসলের মাঠ, গ্রামবাংলার মানুষের জীবন-জীবিকা, গ্রামীণ হাটবাজার ও বুক চিরে বয়ে যাওয়া নদীগুলোয় ভাসমান নৌকার বহর। বান্দরবানের ল্যাংলক খুমিয়া ওয়াটারফল বা লিলুক জলপ্রপাত যেন সুইজারল্যান্ডের লাউটারব্রুনেন ভ্যালির কোনো একটি জলপ্রপাত, যদিও তার পাদদেশে ছবির মতো সাজানো কোনো বসতবাড়ি ও জলপ্রপাতটি ঘিরে কোনো হাঁটার পথ নেই। অন্যদিকে, সারি সারি নারকেলগাছবেষ্টিত সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পাহাড় ও সাগরের মিলনমেলায় টেকনাফও কোনো অংশে কম নয়। কিছুদিন আগে বিলাসতরিযোগে মেক্সিকোর কজুমেল নামে একটি দ্বীপ ঘুরে এসেছি। মনে হলো, বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন তার চেয়েও বেশি কিছু হতে পারত।
ভিডিওটির কোথাও নারকেলগাছের ভেতর দিয়ে সাগর ও আকাশের চিত্র এমনভাবে ধারণ করা হয়েছে যে হঠাৎ হাওয়াইয়ের সৈকত বলে মনে হতে পারে। প্রকৃতিপ্রদত্ত সব আয়োজন রয়েছে সেখানে, কিন্তু আমরা তুলে ধরতে পারছি না, বরং যা আছে তা হেলায় বিনাশ হচ্ছে। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা, মানসম্মত সুযোগ-সুবিধা ও সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা বহাল থাকলে ওই স্থানগুলোতে সহজেই বিদেশি পর্যটকদের সমাবেশ ঘটবে। বেশ কয়েক মাস আগে কোনো এক সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছিল কক্সবাজারকে পর্যটন অঞ্চল করার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রজেক্টের কাজ চলছে। বেশ আশার কথা।
বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব, বগুড়ার জামাই মেলা, চট্টগ্রামে জব্বারের বলীখেলা, নৌকাবাইচ, যাত্রাপালা, পুথিপাঠ, ঋতুবরণ ইত্যাদির পাশাপাশি আজকাল নতুন কিছু সংস্কৃতি যোগ হয়েছে। যেমন সুনামগঞ্জের শিমুলবাগান, নওগাঁর তালগাছ সড়ক, যশোরের খেজুর রস সংগ্রহ, হাটহাজারীর সুপারিগাছ সড়ক, নারায়ণগঞ্জের পদ্ম-শাপলা বিল, বিরুলিয়া গোলাপগ্রাম, শরৎ ও হেমন্তের মেঘমুক্ত আকাশে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দর্শন, কাশবনে ঘোরাঘুরি—এসব ছোটখাটো বিষয়কে ঘিরে মানুষের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। বেশ ভালো লাগে এই আচার-অনুষ্ঠানগুলো। এখানে আমেরিকায় শরৎকালে যখন ফসল কাটার সময় হয়, তখন বড় বড় বিভিন্ন শস্য ও ফলের খামারিরা তাঁদের বাগান উন্মুক্ত করে দেয় সর্বসাধারণের জন্য। এতে মানুষ সরাসরি খামার উপভোগ করার সুযোগ পায়, অন্যদিকে খামারিরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়। অক্টোবর মাসে হ্যালোইনকে সামনে রেখে খামারিরা নানান প্রজাতির ও আকারের মিষ্টিকুমড়াকে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন পসরা সাজিয়ে বসে, যা ছোট-বড় সবার কাছে আনন্দদায়ক। ভাবতে পারেন, সামান্য মিষ্টিকুমড়া নিয়ে কী বিশাল ব্যবসা!
ভিডিওটিতে বাংলাদেশের সৌন্দর্য আপনাকে অবশ্যই মুগ্ধ করবে। কিন্তু পাশাপাশি অপরিকল্পিত নগরায়ণ, যত্রতত্র আবর্জনা বা আবর্জনার স্তূপ, বুড়িগঙ্গা নদীর করুণ দশা, শত শত ইটের ভাটা, রেল ও লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, সর্বোপরি যানজট ও ড্রোন পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া গাড়ির চড়া হর্নের আওয়াজ আপনার অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের ওপর আরও কিছু সিনিক রিল্যাক্সেশন ভিডিওতে শহরাঞ্চলকে, বিশেষ করে ঢাকাকে বাইরে রাখা হয়েছে। ওই ভিডিওগুলো আপনাকে ষোলো আনা স্বস্তি দেবে। আবার অন্য একটা ভিডিওতে লক্ষ্যে করলাম, লেক মোমোর মতো একটি স্থান জুড়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের দৃশ্যের সঙ্গে, জানি না এই কপটতার পেছনে কী কারণ!
এ তো গেল পাখির চোখে বাংলাদেশকে দেখা, আর তা শুধু উপরিভাগের চিত্রটাই তুলে ধরা, যা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। কিন্তু তার নিচের চিত্রটা আমাদের কারও কাছেই কাম্য নয়। বাস্তবচিত্র হচ্ছে, এখানে দুর্নীতি-অনিয়ম, কলুষিত তন্ত্র, ইচ্ছেঘুড়ি রাজনীতি, হানাহানি, নিরাপত্তাহীনতা, দখলদারি, বায়ুদূষণ, যানজট, মৃত্যুপুরীসম সড়ক ও নদীপথ, বেহাল যোগাযোগব্যবস্থা, সর্বক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা, অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত বাজারব্যবস্থা ও ভেজাল খাদ্য বিরাজমান। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো সৌন্দর্যমণ্ডিত পার্বত্য অঞ্চল বর্তমানে ইয়াবার রাজত্ব এবং কাঠ চোরাই কারবারি, জঙ্গি, অবৈধ অস্ত্রের কারিগরদের অভয়ারণ্য পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি নতুন উৎপাত সীমান্তে গোলাবর্ষণ, এরই মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
ভাবতেই কষ্ট লাগে। বাবার চাকরির সুবাদে আমার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে। স্বাভাবিকভাবেই পাহাড় ও সমুদ্রের সংস্পর্শে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতি আমাকে অনেক টানে, বিশেষ করে পাহাড়। সমুদ্রের বিশালতার চেয়ে সুউচ্চ পাহাড়ের নীরব দম্ভতায় মুগ্ধ হই বেশি। সে অন্য কথা।
দেশ নিয়ে যেসব নেতিবাচক কথা উঠে এসেছে, তা সবারই মোটামুটি জানা, অজানা কিছু নয়। অথচ দেশটিতে কঠোর হস্তে আইনের শাসন বজায় রেখে, পাশাপাশি সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ করে দিয়ে, সুপরিকল্পিত অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করে বাধাহীন যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে দেশটির মূল চিত্রে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা যেত। আফসোসের বিষয়, সেই রবিনহুডের দেখা বাংলাদেশের ভাগ্যে আদৌ জুটবে কি না! তবে একটা বিষয় সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, কৃষির সব কটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চোখে পড়ার মতো উন্নতি সাধন করেছে। ছাদ ও আঙিনার কৃষিসংস্কৃতি কৃষিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।
আমরা প্রবাসীরা দেশ থেকে ঘুরে এসে হাজারটা অভিযোগের মালা সাজিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকি। কারও কারও বক্তব্যে ও মন্তব্যে এমন ভাবের প্রকাশ পায় যে বাংলাদেশ নামক কোনো দেশে কখনো বাস করেননি। আবার এমনও কিছু পণ্ডিতমনা ব্যক্তিবর্গ আছেন, এক বৈঠকে বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধান দিয়ে দেশটাকে উদ্ধার করে ফেলেন। আমাদের এই ধরনের মানসিকতা বা ঢালাওভাবে মন্তব্য করা ঠিক নয়। এই মানসিকতা পরিহার করা উচিত। ঢাকা শহর যেমন সম্পূর্ণ বাংলাদেশ না আবার নয়নাভিরাম দৃশ্যসংবলিত স্থানসমূহও পুরো দেশকে উপস্থাপন করে না। ভালো-মন্দ সব জায়গায় বর্তমান, বাংলাদেশে না হয় মন্দের মাত্রাটাই বেশি।
পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত বাচ্চাটা কিন্তু তার মা–বাবার কাছে সবচেয়ে সুন্দর বাচ্চা। নিজ দেশটাও আমাদের কাছে তা–ই। যদিও আমরা একটি সুন্দর দেশে জন্মেছি, অসুন্দর হচ্ছে সচেতনতার অভাবে। সচেতনতা, শিক্ষা, সভ্যতা নামক শব্দগুলোর সঙ্গে আমাদের বিশেষভাবে পরিচিত হওয়া প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। আবার শুধু শিক্ষাই সবকিছু না, তার জ্বলন্ত প্রমাণ শ্রীলঙ্কা। প্রায় শতভাগ শিক্ষিত একটি রাষ্ট্র দেউলিয়া হয়ে গেছে।
আমরা যারা প্রবাসী, তাদের অনেকেরই সন্তান জানে না, বাংলাদেশ দেখতে কেমন? বিভিন্ন কারণে অনেকেরই দেশে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমার বড় মেয়ে ভিডিওটি দেখে বলল, ‘মা, বাংলাদেশ ইজ প্রিটি।’ তার ছোট একটি কথায় অনেক গর্ববোধ করেছি। আপনারাও পরের প্রজন্মকে এ–জাতীয় ভিডিওগুলো দেখাতে পারেন। দেশটির ভেতরের চিত্র যা–ই থাকুক, ওপরের চিত্রটা মিথ্যা নয়।
প্রবাসীদের একটি সুখবর দিয়ে আমার লেখার ইতি টানব। আর সেটা হলো গত ২৮ অক্টোবর টিভি সংবাদমাধ্যমে জানতে পারলাম, ঢাকা বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক বিমানের আরোহীরা বিমান থেকে নামার সময় বা কিছুক্ষণের মধ্যেই বেল্টে এসে লাগেজ পেয়ে যাচ্ছেন। খোদ প্রবাসীদের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে। সত্যিই অবিশ্বাস্য! যাক বাবা, আমাদের অভিযোগগুলো বিমানবন্দরের লাগেজপ্রাপ্তি ও মশা থেকেই শুরু হয়। উন্নতির এই ধারাবাহিকতা সর্বক্ষেত্রে বজায় থাকুক।