আমি ও রিয়া জলদি তৈরি হয়ে বের হয়ে গেলাম টেমস নদীর ওপর নির্মিত একটা কাঠের ব্রিজ দেখতে। ব্রিজটির নাম মার্শ লক। এটি হেনলি শহরে। লন্ডন থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৩০ মাইল। আমরা থাকি রিডিং শহরে, আর রিডিং শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১২ মাইল, গাড়িতে সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট।
মূল ব্রিজটিতে যাওয়ার আগে আমাদের চোখ আটকে গেল হেনলি শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক বিভিন্ন নিদর্শন দেখে। শহরজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে ছোট–বড় অসংখ্য ফুলের টব, দেখে মনে হবে এ যেন ফুলের শহর। রাজা দ্বিতীয় হেনরির এ শহরে সেন্ট মেরিস চার্চ, টাউন হল, মার্কেট স্কয়ার আর ছোট ছোট দোকানগুলোর সামনে দিয়ে যতই হাটছি, ততই ইংরেজ ইতিহাস আর ঐতিহ্য চোখের সামনে ফুটে উঠছে।
হেনলি শহর ঘোরাঘুরির পর আমরা এসে পৌঁছালাম মার্শ লক ব্রিজে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর কাঠের নির্মিত ব্রিজটির নির্মাণশৈলী দেখে আমরা বেশ পুলকিত হই। যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রিজটি এখনো কত শক্ত আর মজবুত, তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। যেন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যখন দেখলাম ব্রিজটির নির্মাণের সাল ১৭৭৩, আমি বেশ অবাক হলাম। ভাবতে লাগলাম প্রায় আড়াই শত বছর আগের একটা কাঠের ব্রিজ এখনো কীভাবে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। অবশ্য ১৯১৩ সালে ব্রিজে কিছু সংস্কারকাজ করা হয়েছিল।
আমি যখন নদীর স্রোত, বাঁধ বেয়ে পড়তে থাকা পানির গর্জন আর ব্রিজটির অপরূপ শৈলী দেখায় লিপ্ত, পাশ থেকে রিয়া বলে উঠল, আমাদের দেশে ইট, রড আর সিমেন্টের ব্রিজ নির্মাণের কয়েক বছর পর ভেঙে যায় আর এখানে কাঠের তৈরি একটি ব্রিজ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে শত শত বছর ধরে।
সত্যিই তাই, ইংরেজদের নির্মাণ টেকসই, তাদের চিন্তা মানবতার জন্য। তারা ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করতে ভালোবাসে। তাই তো ২৪৮ বছর আগে নির্মিত একটি কাঠের ব্রিজ এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকে জানান দিয়ে যাচ্ছে কাজে তারা কতটা সৎ আর পরিশ্রমী আর চিন্তায় কতটা সুদূরপ্রসারী।
প্রতিদিন ব্রিজটি দেখতে দূরদুরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ আবার ব্রিজটি নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত! কেউ পড়ন্ত পানির গর্জন শুনছেন আবার কেউ পানিতে নেমে নৌকা বাইছেন। ব্রিজটি পরিদর্শনে কোনো ফি দিতে হয় না। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য রয়েছে সুবিশাল গাড়ি পার্কিং, যা একদম ফ্রি।
একটি সুন্দর দিনে মার্শ লক ব্রিজ ঘুরতে এসে সত্যিই আমাদের আনন্দঘন একটি দিন পার হলো। যেমন ছিল দিনের আবহাওয়া, তেমনি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাদের দিনকে আরও সুন্দর করে তুলল। ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে এমন সুন্দর জায়গায় ভ্রমণ করলে একদিকে যেমন পারিবারিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়, তেমনি নিজের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ করা যায় অপার তৃপ্ততায়।