স্মৃতির আঙিনা

বন্ধু মোজাম্মেলের সঙ্গে লেখক
ছবি: সংগৃহীত

মেঘে মেঘে কত যে বেলা হলো! হঠাৎ টের পেলাম বুড়ো হয়ে গেছি। আমার দুরন্তপনা শৈশবের জায়গায় একটি গাছের ডালে বসে আছি। বিশ্বাস করেন, আমার নিজেকে বয়স্ক মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, কিছুদিন আগে বাবার সঙ্গে এই সাগরে মাছ ধরতে এসেছিলাম। সেদিন সাগর ছিল অনেক উত্তাল। বাবা জাল মারতেই উঠে আসছিল হরেক রকমের সাগরের ছোট মাছ। বাবা একটু উঁচু জায়গা থেকে জাল মারছিলেন।

আমি মাছ রাখার ডুলা (পাত্র) নিয়ে তাঁর পেছনে ছিলাম। জাল মারতে মারতে কখন যে জোয়ারের পানি আমাদের ঘিরে ফেলেছিল, টেরই পেলাম না। বাবা যখন খেয়াল করলেন আমাদের পানি ঘিরে ফেলেছে, সঙ্গে সঙ্গে আমাকে তাঁর কাঁধে নিয়ে সাগরের পাড়ে উঠে এসেছিলেন। সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনো ভয়ে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। বাবাকে সেই ভয়াল সন্ধ্যার কথা অনেকবার বর্ণনা করতে শুনেছি।
অনেক বছর পর এখানে এলাম।

ইলিশের মৌসুম জেলেরা জাল মেরামতের কাজে ব্যস্ত
ছবি: সংগৃহীত

শৈশবের কত স্মৃতি এই সাগরপাড়ে জমে আছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের বাড়ি ও সাগর পাড়ের দূরত্ব মাইল দুয়েক হবে। বাবা আমাকে একটি ছোট জাল কিনে দিয়েছিলেন। প্রায়ই সেই জাল নিয়ে এখানে মাছ ধরতে আসতাম। তখন এখানে প্রচুর তরমুজ ফলত। বন্ধুদের নিয়ে তরমুজ চুরি করতে আসতাম। একদিন তরমুজ চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়ে মারও খেয়েছি। এখন আর এখানে তরমুজ ফলে না। বালুমাটির সেই খেত আর নেই। সময়ের আবর্তে এখানে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার দোকান বসেছে। আজকাল এই সাগরিকা সাগরপাড়ে প্রচুর মানুষ আসে। এখন ইলিশের মৌসুম। এখানে ভালোই ইলিশ উঠেছে। মাছের আড়ত বসেছে। সাগর থেকে জেলেরা ইলিশ এনে আড়তে ডাকের মাধ্যমে বিক্রি করছেন। অনেক যুগলবন্দীকে দেখলাম গাছের আড়ালে বসে প্রেম করতে। কত পরিবর্তন হয়েছে এই সাগরপাড়ের! শুধু পরিবর্তন হয়নি, সাগরের জোয়ার-ভাটাও আমার মনের...