দেখে এলাম আমার স্কুল!
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, চট্টগ্রাম শহরের বুকে এখনো প্রতিদিন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক কাজ সারছে। দীর্ঘদিন পর সুদূর আমেরিকা থেকে প্রিয় শহর চট্টগ্রামে গিয়ে কংক্রিটের উন্নয়নের ফাঁকে এ নির্মম বাস্তবতা দেখে কিছুটা থমকে দাঁড়ালাম। স্বজনদের অনেকে বললেন, ‘তোর চোখটা ভোঁতা হয়ে গেছে’।
আঙুল উঁচিয়ে দেখালেন—মেরিন ড্রাইভ সড়ক, বহদ্দার থেকে অনিন্দ্য সুন্দর টাইগারপাস পাহাড় ধ্বংস করে নগরীর একমাত্র মূল সড়ক ধরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর পর্যন্ত উড়ালসড়কের কাজ চলছে। যে মানুষ ১০ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম শহরে ঢুকবে, তাঁর কাছে মনে হতে পারে, প্রকৃতির মায়াবী এ শহরকে নিয়ে কেন এত খেলা। প্রকৌশলী না হয়েও সাদা চোখে যে কেউ বলে দিতে পারে—এবার একটু থামুন।
পাহাড়-নদী-সাগরের ঐকতানে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহর। ভ্রমণপিপাসু অনেকে বলেন, চট্টগ্রামের মধ্যে ইতালির রোম শহরের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। অথচ এ শহরের আগামী প্রজন্মের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার যেন কেউ নেই। নগরীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও নতুন কোনো সরকারি স্কুল-কলেজ গড়ে ওঠেনি। নগরীতে শিক্ষার উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন অবদান রাখলেও চসিক ওয়েবসাইটে শিক্ষাসংক্রান্ত কোনো বিভাগের উল্লেখ নেই। তাই চসিক পরিচালিত শতাধিক স্কুল-কলেজ কীভাবে চলছে, দেখভাল করার কেউ নেই বললে চলে। নগরীর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত ৪৮টি স্কুলের মধ্যে রেজাল্টের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানপ্রাপ্ত পোস্তারপাড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী প্রতিদিন খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক কাজ সারছে বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান।
জরাজীর্ণ বাঁশের চালার এ টয়লেটে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। দেশে গিয়ে আমার ছেলেবেলার স্কুলটি দেখে এলাম। ‘এল’ আকৃতির স্কুলটি ছিল আমার ছেলেবেলার প্রাথমিক স্কুল। সামনে ছিল বিশাল মাঠ ও স্বচ্ছ জলের বিল। ভরা বর্ষায় স্কুল শেষে এ বিলে মাছ ধরতাম। পাশে চট্টগ্রামের নারীশিক্ষার অগ্রদূত আছমা খাতুনের স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আছমা খাতুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। টিনশেডের প্রাইমারি স্কুলটি পরিত্যক্ত পড়ে রয়েছে। ক্লাসগুলো ফাঁকা।
ঘুরে দেখলাম। পরিত্যক্ত স্কুলটির সামনে মাঠের পশ্চিম পাশে দ্বিতল মাধ্যমিক স্কুলটি সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর আমলে তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে শিক্ষার্থীর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থীর জন্য মূল ভবনে কোনো টয়লেট নেই। তাই পুরোনো টিনশেডের প্রাথমিক স্কুল ভবনের এক কোণে ভাঙা চালের নিচে শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক কাজ সারে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, দীর্ঘদিনের পুরোনো ভবনে তাদের ক্লাস করতে কষ্ট হয়। মাঝেমধ্যে নিচে নেমে বারান্দায় ক্লাস করতে হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, ‘সিটি করপোরেশন অফিসে যেতে যেতে আমি ক্লান্ত। এখন লজ্জা হয়, শিক্ষার্থীদের কষ্ট আর আমাদের চাওয়ার আবেদন ফাইলটি লাল ফিতায় আটকানো করপোরেশন অফিসে।’
আমিও এ স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে দাবি করতে পারি, পরিত্যক্ত টিনশেডের স্কুলটিকে ছাত্রদের জন্য শ্রেণিকক্ষ এবং টয়লেটের ব্যবস্থা করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা অধিকার নিয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিন।
দূর পরবাসে লেখা পাঠাতে পারেন [email protected]এ