সম্মিলিতভাবে দেশ গড়ার আহ্বান প্রবাসীদের
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিজয়কে প্রবাসীদের অভিনন্দন। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো শাসকই যে টিকতে পারেন না বাংলাদেশে, আবারও তা প্রমাণিত হলো।
যে সংস্কারের জন্য আন্দোলন হয়েছিল, এখন তার দিকে নজর দিতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনবান্ধব পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, পরিবর্তনের জন্য একটি শক্তিশালী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে—প্রবেশ করা পক্ষপাতকে চ্যালেঞ্জ করে এবং নীতি সংস্কারের দাবিতে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্ররা অসমতা ও সামাজিক অবিচারের বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ আনতে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত। আশা করি, তিনি তাঁর জ্ঞান ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন। সামাজিক উদ্যোক্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনে অবদানের জন্য বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে উচ্চ প্রত্যাশা রয়েছে আমাদের। ড. ইউনূসের নেতৃত্বের গুণাবলি, প্রজ্ঞা, সহানুভূতি ও নৈতিক নীতির প্রতি অঙ্গীকার দ্বারা চিহ্নিত, তাঁকে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য আশার আলোকবর্তিকা হিসেবে আমরা দেখি। এই মুহূর্তে জাতীয় নেতা হিসেবে ড. ইউনূসের প্রতি প্রান্তিক ও অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা আমাদের। উদ্ভাবনী সমাধান ও সহযোগিতামূলক পদ্ধতির ট্র্যাক রেকর্ড, সরকার এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি সুরেলা সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ভালো ইঙ্গিত দেয়। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ন্যায়বিচার, সমতা এবং টেকসই অগ্রগতির নীতি দ্বারা পরিচালিত ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদ জাগায়।
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির প্রধান দুটি ভিত্তি পোশাক খাত ও প্রবাসী আয়। তবে পোশাক খাতের মতো প্রবাসীদের মূল্যায়ন কোনো সরকারই তেমন করেনি। প্রবাসীরা অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখলেও তাঁরা আশানুরূপ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পোশাক খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, বিভিন্ন সুযোগ–সুবিধা ও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়; কিন্তু প্রবাসীদের নিয়ে কোনো সরকারই সেভাবে কিছু করেনি।
প্রবাসীরা কোনো অর্থ চান না, তাঁরা সরকারের সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত, সহযোগিতা, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা এবং শক্তিশালী কূটনৈতিক তৎপরতা চান, যাতে যেকোনো সমস্যায় তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান পেতে পারেন। প্রবাসীরা নিজেদের ভোগবিলাস বিসর্জন দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন; কিন্তু দেশে ফিরে এসে তাঁরা প্রতিদান হিসেবে বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বিভিন্ন হয়রানির সম্মুখীন হন।
দেশের সুন্দর ও সমৃদ্ধ অর্থনীতির কথা ভেবে সরকারের উচিত প্রবাসীদের জন্য এমন নীতিমালা প্রণয়ন করা, যাতে তাঁরা সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সুযোগ–সুবিধা ভোগ করতে পারেন এবং দেশের শক্ত অর্থনৈতিক ভিত তৈরিতে সর্বাধিক ভূমিকা রাখতে পারেন। এভাবে প্রবাসীদের যথাযথ সম্মান ও স্বীকৃতি দিলে তাঁরা আরও উৎসাহিত হবেন এবং দেশের উন্নয়নে তাঁদের অবদান আরও বাড়বে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আশা করি এসবের সঠিক ব্যবস্থাই নেবেন।
এখন আমরা চাই নতুন বাংলাদেশ। যেহেতু আমরা বাংলাদেশে একটি নতুন সরকার গঠনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা এমন ব্যক্তিদের বাছাইয়ে অগ্রাধিকার দিই, যাঁরা আমাদের দেশের একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য নিবেদিত। আমাদের অবশ্যই দলীয় অনুষঙ্গের বাইরে তাকাতে হবে এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলি ও দৃষ্টিভঙ্গি ধারণকারী নেতা নির্বাচনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
*দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]