এক অপ্রেমিকের আখ্যান

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

সুরঞ্জন তোমার কি জানা আছে, আসলেই আমাদের সম্পর্কটা কেন টিকল না?
কখনো ভেবেছো?
আমি প্রতীক্ষায় থাকতাম তোমার দিনের পর দিন। তোমার তা একবারও মনে হতো না। হয়তো তোমার কাছে সেটা আশা করাটাই ভুল ছিল।
আর অবহেলা? তার কথা আর নাই–বা বলি!
পুতুলেরও এত অবহেলা সয় না!
বিশ্বাস ছিল আমাদের মাঝে?
অবহেলা কী, তা আমার জানাই ছিল না।
শেখালে তুমি।
অবহেলা শেখালে, সঙ্গে অপমানও করলে।
অতটা সহ্য করার ক্ষমতা আমার ছিল না, জানো।
চেষ্টা করেছি অনেক সয়ে নিতে।
ভেবেছি; ঠিক হয়ে যাবে সময়ের সাথে সাথে…
কী ভীষণ হতাশা আর কষ্টে নীল হচ্ছিলাম দিন দিন, তোমার চোখে পড়েনি বলছো?
নাকি ভেবেছো তোমায় ভালোবাসার শাস্তি আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল?
অথবা ভেবেছিলে, তোমার হারানোর কিছু নেই।
হয়তো আসলেই তোমার হারানোর কিছুই ছিল না। আমাকে ভালোবেসেছিলে?
আমি তো হারাচ্ছিলাম, নিজেকে প্রতিদিন একটু একটু করে
পরের দিকে নিজেকেই আর চিনতাম না, জানো?
কি কঠিন ভীষণেরে ভালোবেসেছি ভেবে ভয় হতো। এমন কাউকে ভালোবেসেছিলাম, যার কাছে ভালোবাসাটা হয়তো খেলোই ছিল!
প্রতিদানের আশায় ভালোবাসিনি, ভালোবাসা পাবার আশায় বেসেছি
তোমার প্রতিদিনের মিথ্যে কথায়, মিষ্টি কথার জালে, ভাবতাম… একদিন ঠিক শুধরে নেবে।
একদিন হয়তো সত্যিকারের ভালোবাসবে;
সেদিন আর আসেনি কখনো। কোনো দিনও আসবে না!
ভাবতে, বোকা ছিলাম?
তোমার ছলচাতুরী কিছুই বুঝিনি?
পুরোটা বুঝেও বুঝতে চাইতাম না, জানো, বিশ্বাস করতে চাইতাম তোমায়!
কী ভয়ানক ভালোবাসায় বিশ্বাস করতে চাইতাম... চাইতাম তুমি আমায় আমার মতোই ভালোবাসো, যতটা বেসেছি আমি তোমায়!
চোখের জলে আর হতাশায় যেদিন বিশ্বাসটা পুরোপুরি চলে গেল… আমি আর আমি ছিলাম না, জানো?
আমি ভেঙেচুরে মাটিতে মিশে গিয়েছিলাম!
একদিকে ভালোই হয়েছিল, তোমার মিথ্যা প্রেমে আমায় আর ভুলতে হতো না।
হয়তো তোমারও মুক্তি মিলেছিল—ভালোবাসার হাত থেকে!
দুজনেরই হয়তো মুক্তি মিলেছিল এক অসম সম্পর্কের হাত থেকে।
তুমি জেনেছিলে, আমার ভার নেওয়ার ক্ষমতা তোমার ছিল না। আমিও জেনেছিলাম, কতটা কাপুরুষ হতে হয় অপ্রেমী হতে।
আমি আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনি সেদিনের পর। ভালোবাসা তো দূর!
মিথ্যা প্রেমে যে কটা দিন গেল আমার, তার পুরোটাই ফাঁকি ছিল জেনে ঠিক জানি না নিজের প্রতি মমতাই জেগেছিল হয়তো!
কি ভীষণ ঠকালে আমায়!
কেন ঠকালে?
জানি ওর উত্তর তোমার ঠোঁটের আগায়… খেলা ভেবেছিলে
মন নিয়ে এ কেমন নিষ্ঠুর খেলা তোমার?
সে খেলায় শরিক হওয়ার কোনো বাসনাই ছিল না আমার... অথচ খেলে গেলে তুমি কী দর্পভরে!
দোষ ছিল আমার অপাত্রে ভালোবাসায়।
দোষ ছিল আমার এক নপুংসককে ভালোবাসায়।
ক্ষমা করে দিয়েছি সুরঞ্জন তোমায়।
ভালোবেসেছিলাম যে!
ওর বেশি আর কিছু দেওয়ার নেই তোমায় আমার!
শুধু খেলো করার অপরাধটা মাঝেমধ্যে ক্ষমা করতে পারি না … হয়তো একদিন সেটুকুও ছেড়ে দেব!
যা আমার প্রাপ্য নয়, তার ভার মিছেমিছি বয়ে বেড়ানোর কোন মানে হয় না।
আমি না হয় বেঁচেই গেলাম এক বর্বর অপ্রেমিকের হাত থেকে!
তাই–বা কম কিসে?
মিছে মায়ায় আটকে থেকে কষ্ট বাড়ানোর কোনো মানে আছে বলো?
কখনো ছিলেই না আমার!
তোমায় যতই নিজের ভাবি, তুমি কোনো দিনও আমার ছিলে না জানি
সেটুকু সত্য নিয়েই বেঁচে থাকব অনন্তকাল।
এক অপ্রেমিক হয়ে সবার মধ্যে তুমি উদাহরণ হয়ে থেকে যাবে।

দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস: [email protected]