ছুটির দিনে ভ্রমণ
ইস্টার হলিডে ২০২২। প্রতিবছর ইস্টার উপলক্ষে চার দিন ছুটি পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ায়। আমরা যাঁরা বিদেশে স্থায়ীভাবে থিতু, তাঁরা আগে ভাগেই ওই সময়ে পছন্দের ভ্রমণগন্তব্যে বুকিং দিয়ে রাখি, নয়তো হোটেল–মোটেল বা হলিডে হাউস কিছুই খালি পাওয়া যায় না। দুই বছর ধরে কোভিডের বিধিনিষেধ থাকায় বেড়ানো একদমই বন্ধ ছিল। এ বছর করোনার বিস্তার একটু কম বিধায় বিধিনিষেধ ছিল না। কিন্তু ইস্টার হলিডের ছুটি গিয়ে ঠেকল রোজার মাসে, তাই আর কোনো লম্বা হলিডে প্রোগ্রাম করা যায়নি।
এর মধ্যেই হঠাৎ করে অবাক করে দিয়ে সিডনি থেকে স্কুলের বন্ধুর সপরিবার আগমন আমাদের রোজার আনন্দকে বহু গুণে বাড়িয়ে দিল। ইস্টার হলিডে হওয়ায় আমরা দিনব্যাপী প্রোগ্রাম করে ফেললাম বন্ধুর পছন্দ ও সময়ের দিকে লক্ষ রেখে। প্রথম দিন ওরা বিমানবন্দর থেকে আসার পরে গেলাম ড্যানডেনং রেঞ্জেস ন্যাশনাল পার্কে।
মেলবোর্ন সিটি থেকে দক্ষিণ–পূর্বে অবস্থিত এই পাহাড়ের চূড়া সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখার জন্য খুবই সুন্দর একটা জায়গা। আমার বাসা থেকেও বেশ কাছে। এখানে রয়েছে ছোট ছোট কিছু পার্ক, বারবিকিউ করার ব্যবস্থাসহ বাচ্চাদের খেলার জায়গা, মেইজ গার্ডেন, ফাংশন সেন্টার। জায়গাটি অসাধারণ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঘেরা। রেঞ্জেসের একদম টপে আছে স্কাই হাই রেস্তোরাঁ, যেখানে কফি, স্ন্যাকস ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সুব্যবস্থা আছে। আছে জায়ান্ট চেয়ার এবং মেইজ ও উইশিং ওয়েল। কথিত আছে এক ভদ্রলোক তাঁর সন্তান হারিয়ে ফেলেছিলেন। এরপর খুঁজতে খুঁজতে এই উইশিং ওয়েলের কাছে এসে সন্তানের জন্য প্রার্থনা করার পর পাশেই একটা অনেক পুরোনো গাছের কোটরের মধ্য দিয়ে সন্তানকে খুঁজে পান। এর পর থেকে এই কুয়ার নাম হয়ে যায় উইশিং ওয়েল। অনেকেই কিছু মানত করে পয়সা ফেলে গেছেন কুয়ায়।
ভাবতে অবাক লাগে, এ ধরনের কিছু মিথ সব দেশেই রয়েছে।
বাচ্চারা খুচরা পয়সার জন্য আবদার করল, তারা কুয়ায় ফেলে নাকি উইশ করবে।
দিলাম....
ছোট ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলাম, কী উইশ করলে?
বলল, যেন সকালবেলা স্কুল যেতে না হয়!
হেসে ফেললাম, সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার বুঝে গেলাম, কেন উইশ করার পরও সবার উইশ পূরণ হয় না।
বাকিরা কী উইশ করেছিল জানতে সাহসই পেলাম না।
একটা শুনেই আমার অবস্থা খারাপ, এরা স্কুলে না গেলে আমি অফিসে যাব কীভাবে?
কোটরওয়ালা গাছেও উঠল বাচ্চারা...
বেশ কিছু ছবি ওঠানো হলো...
ছোট দিন, একটু পরই ইফতারের সময়। তাই তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে, নয়তো ড্যানডেনং ন্যাশনাল পার্কে দেখার আছে অনেক কিছুই, রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন এবং হাইকিং ও ওয়াকিং ট্রেইলের ব্যবস্থা। সময় থাকলে যাওয়া যেত অলিন্দা ফলস বা পাফিং বিলি। অলিন্দা ফলসে যেতে একটু হাঁটতে হয় গাড়ি থামিয়ে। ছোট্ট একটা ফলস কিন্তু এত গহিন জঙ্গলে যে নিঃশব্দের ভেতরে পানির কলকল শব্দে মন হারিয়ে যায় আর পাফিং বিলিতে আছে সেই পুরোনোকালের কয়লার ইঞ্জিনওয়ালা ট্রেন। রেইন ফরেস্টের ফার্ন গাছের ভেতর দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে একে–বেঁকে চলে সেই রেলগাড়ি, যেন রূপকথার জগৎ। এত সুন্দর যে লিখে বোঝানো কঠিন, কিছু সৌন্দর্য শুধু দুচোখ দিয়ে দেখা যায়, যত ভালো পিক্সেলের ক্যামেরা বা লেন্সই হোক, ছবিতে ধরা দেয় না।
বাগানে ঢোকার আগে দেখেছিলাম, মেইজ গার্ডেনের কাছে হাওয়াই মিঠাই পাওয়া যাচ্ছিল...
বাচ্চারা হাওয়াই মিঠাই খাওয়ার জন্য বায়না ধরল...,
আমার বান্ধবী কিনে দিল সব বাচ্চাদের...
যতটা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে খাওয়া শুরু করল, ততটা বিরক্তি নিয়েই হাত–মুখ আঠা বানিয়ে আর খাব না বলে হাত ধুয়ে ফেলতে ছুটল...
এবার ফেরার পালা
যদিও ইচ্ছা করে না ফিরতে, তবুও ফিরতে হয়...