দক্ষিণ আফ্রিকায় ২৯ মে নির্বাচন, কী হতে পারে

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকায় আগামী বুধবার (২৯ মে) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ গোপন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করে থাকেন মেম্বার অব পার্লামেন্টের সদস্য। তারপর এসব সদস্যের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হবেন ৪০০ জন।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এবার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা অতি উজ্জ্বল বলে অনেকের ধারণা। তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বা এএনসি দলের প্রার্থী। এই এএনসি দলে থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা।

জ্যাকব জুমা দুর্নীতির কারণে কারাবন্দী হওয়ার পর দলের হাল ধরে প্রেসিডেন্ট হন সিরিল রামাফোসা। জ্যাকব জুমা জামিনে কারামুক্ত এখন। কিন্তু রামাফোসা কোনো অবস্থায় জুমাকে এএনসির ধারেকাছে আসতে দিলেন না। একপর্যায়ে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত জ্যাকব জুমা নতুন দল গঠন করলেন। দলের নাম দেওয়া হলো উমখুনটো উই সিজ এমকে। দলটি এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে জুমার এই নতুন দল এবারের নির্বাচনে ভোটারদের কাছ থেকে তেমন একটা সুবিধা আদায় করতে পারবে না বলে মনে হচ্ছে।

এএনসি অবস্থানগত বিবেচনায় সুবিধাজনক পর্যায়ে আছে বলে মনে হলেও জরিপে দেখা যাচ্ছে বিরোধী দল কিছুটা এগিয়ে। রামাফোসার সমর্থকেরা এই জরিপে থোড়াই কেয়ার করছে না। তাঁদের কথা, জরিপের কাগজ-কলম আর ভোটের মাঠ সম্পূর্ণ আলাদা

১৯৯৪ সালে বর্ণবাদব্যবস্থার অবসান হওয়ার পর থেকে ২৯ মে দেশটিতে হতে যাওয়া এ নির্বাচন হবে সপ্তমবারের মতো। নির্বাচনের ফলাফল গত নির্বাচনগুলোর মতোই হবে বলে অনেকের ধারণা। এএনসি সমর্থকদের মনোভাব এমনই যে জরিপকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারা আবার ক্ষমতায় আসবে।

জরিপে বিরোধী দল হিসেবে যে দলের নাম বলা হচ্ছে, সেটি হচ্ছে ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা ডিএ। এ দলের এখন নয়া নেতা তুখোড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব জন স্টিনহুইসেন। গত বছরের এপ্রিলে দলের দায়িত্ব নিয়ে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দলকে বেশ গুছিয়ে নিয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বর্ণবাদব্যবস্থা দূর হওয়ার পর থেকে একচ্ছত্রভাবে আধিপত্য বিস্তার করে আছে ক্ষমতাসীন এএনসি।

জন স্টিনহুইসেনের হাল ধরার কয়েক দিনের মধ্যেই এএনসির জনপ্রিয়তার মধ্যে সুই হয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন। তিনি এখন এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা এএনসিকে আগামী নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় আসা ঠেকিয়ে নিজ দল ডিএ-র ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর। এ ছাড়া ডিএ-র আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী আছে ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্স বা ইএফএফ। এই দলের নেতা জুলিয়াস মালিমা।

ইএফএফ এবং এএনসি সুবিধা আদায় করতে যেন জোট গঠন করতে না পারে সেদিকেও তীক্ষ্ণ নজর রেখেছেন জন স্টিনহুইসেন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গাছে বা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে প্রার্থীদের নাম ও দলীয় পরিচয়সংবলিত দেড় ফুট বাই এক ফুট সাইজের পোস্টার শোভা পাচ্ছে। তবে নির্বাচনী পোস্টার কোনো সরকারি বা বেসরকারি ভবনে টানানো আছে, এমন কিছু নজরে আসেনি। রাস্তায় রাস্তায় বা অলিগলিতে কোনো প্রকার নির্বাচনীয় মিছিল বা স্লোগানের অত্যাচার নেই। তবে কিছু ঘরোয়া বৈঠক নজরে এসেছে।

নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের মাতামাতি দেখা যায় না। গড়ে ওঠে না কোনো নির্বাচনী চা-স্টল। নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুনতে পাওয়া যায় না। কে জিতবে, কে হারবে, বা কে কাকে ভোট দেবে, তারও কোনো আলামত পাওয়া যায় না। এসব বিষয়ে কথাবার্তায় খুবই সতর্কতা অবলম্বন করেন ভোটাররা।

আলাপকালে জানতে পারলাম, অনেকেই ভোটকেন্দ্রে যেতে বেশ অনীহা। তাদের কথা হলো, ‘যিনি ক্ষমতায় আসুক না কেন, আমাদের কপাল পরিবর্তন হয় না। ভাগ্য পরিবর্তন হয় তাঁদের।’

*লেখক: মাহফুজার রহমান, কেপটাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা

*দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]