আয়ারল্যান্ডে জুলাই রক্তাক্ত ঘটনার স্মরণসভা অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশে জুলাইয়ের রক্তাক্ত ঘটনার স্মরণে আয়ারল্যান্ডে এক সভা আয়োজন করা হয়েছিল। দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি সচেতন নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণে ডাবলিনের Scientology Community Centre-এ অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানের যার মূল উদ্দেশ্য ছিল এ স্মৃতি যেন মুছে না যায় এবং বাংলাদেশে যেন এমন ঘটনা আর কখনো না ঘটে।
রক্তাক্ত জুলাইয়ে বেশির ভাগ হতাহত ছিল কম বয়সী ছাত্র ও শিশু। এমন মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতি কিছুটা ফিকে হতে শুরু করায় এই স্মরণসভার আয়োজনের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডের বাংলাদেশিরা হতাহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগী হন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আয়োজক রন্টি চৌধুরী উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা জুলাইয়ের ঘটনাটি ভুলতে পারি না এবং আমাদের দায়িত্ব হলো নিশ্চিত করা যে বাংলাদেশে এমন কিছু আর কখনো না ঘটে।’ এরপর তিনি কেন এ অনুষ্ঠানের প্রয়োজন, তা ব্যাখ্যা করেন।
একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়, যা জুলাইয়ের গণহত্যার ঘটনার চিত্র তুলে ধরে। প্রামাণ্যচিত্র চলাকালে অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং অনেকের চোখে অশ্রু দেখা যায়। প্রামাণ্যচিত্রের পর অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাগরিক সমাজের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি তাঁদের অভিজ্ঞতা ও মতামত প্রকাশ করেন। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন আবদুল হামিদ রনি, মেহেদী হাসান, তানভীর শরীফ, বদরুজ্জামান মাসুম, আবদুল জলিল, ছাত্র প্রতিনিধি মুজাহিদ, হাবিবুর রহমান, দিদারুল আলম, মাহমুদুল হান্নান জুনুন ও অন্যরা। তাঁরা বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন নজির নেই যেখানে নিজের দেশের সরকার তার দেশের মানুষের বুকে গুলি করে, যেমনটা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। দেশে এমন যাতে আর কোনো দিন না হয়, কখনো যাতে ফ্যাসিবাদ আর ফিরতে না পারে, এ জন্য বাংলাদেশে ও প্রবাসে আমাদের সবার সচেষ্ট হতে হবে। হত্যাকারী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে দেশের সিস্টেমের এমন ক্ষতি কেউ না করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
এরপর ইউনাইটেড ফর হিউম্যান রাইটসের মুখপাত্র এশিয়া কুজমা ৩০টি মৌলিক মানবাধিকারের বিষয়ে বক্তব্য দেন এবং কীভাবে সেগুলো কার্যকর করা যেতে পারে, তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই মানবাধিকারের বিষয়গুলো বোঝা ও প্রয়োগ করা ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধের চাবিকাঠি।
এই স্মরণসভা কেবল হতাহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন নয়; বরং রক্তাক্ত ঘটনার ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মানবাধিকারের প্রতি সচেতন থাকার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে। অনুষ্ঠানটি আয়ারল্যান্ডের বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে যে তারা জুলাইয়ের রক্তাক্ত স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখবে এবং একটি ভবিষ্যৎ গড়তে কাজ করবে, যেখানে এ ধরনের নৃশংসতার আর কোনো স্থান থাকবে না।
*লেখক: আরশি মাহসানাত, ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।