‘সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ’

লেখক
ছবি: সংগৃহীত

যুগ বদলেছে দ্রুত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে অসংলগ্ন ব্যাপারগুলো জানা যাচ্ছে দ্রুত। এমনই একটি ঘটনা পড়লাম, চট্টগ্রামের রীমা আখতারের সঙ্গে মোর্শেদ নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার বিয়ে হয় গত রমজানে। অতিথির তালিকা ছোট করে টাকা নেওয়া হয় মেয়ের পরিবার থেকে। এরপর পুরো বাসার ফার্নিচার, টিভি ইত্যাদি ইত্যাদি দাবি করে খারাপ ব্যবহার করলে, মেয়েটি আত্মহত্যা করেন অপমান সহ্য করতে না পেরে। চিঠিতে লেখা ছিল ‘প্রিয় শখের পুরুষ...আমার পোস্টমর্টেম করে আমার সব যন্ত্রণা ধুয়েমুছে আমাকে কবরে শুইয়ে দিও।’ ২০২৪ সালে দেশে নারী নির্যাতনের জন্য যেমন শক্ত আইন হয়েছে, যৌতুকের বিরুদ্ধে আইন কতটা শক্ত? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’ গল্পের কত নতুন নতুন রূপ দেখলে এর শেষ হবে?

সামাজিক অবক্ষয়ের আরেক রূপ দেখছি এখন বহুবিবাহ। কিছু লোকজন আছে, টাকাপয়সা আছে সেই শক্তিতে ধর্মের দোহাই দিয়ে বহুবিবাহ করছেন। কিছু আছে ফকির থাকাকালে ভালবাসার গল্প ফেঁদে বিয়ে করেন, বছর কয়েক যেতেই টাকাপয়সা হয়ে গেলে পুরোনো বউ পছন্দ না বলে নতুন কিছুর খোঁজ করেন। এতটুকু পর্যন্ত থামলে কথা ছিল না। নিজস্ব জীবন, যাঁর যেভাবে ইচ্ছা যাপন করবেন, সুখের সন্ধানে থাকুন, সমস্যা কী? শুধু নবীজিকে এসবের মধ্যে না টানলেই হবে। তাঁর জীবন সঠিকভাবে ফলো করলে মানুষকে অসম্মান করা, অসৎ পথে পয়সা আয়, লোকঠকানো; এসব কোনো কিছুই সামনে আসে না। ধর্ম নিজের সুবিধায় অপব্যবহারকারীকে কী বলার আছে? জাগিয়া ঘুমায় যে, তাঁহাকে জাগায় কে?

আরও ভয়ংকর কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা অন্য নারীতে আসক্ত তো আছেনই, সেই কারণে ঘরের বউ যদি ডিভোর্স দিয়ে চলে যান, তাহলে হেয় করার জন্য হাজারে যুক্তি আনেন।

বউ কাজ করলে কাজের দোষ। কিছু টাকা হাতে পেলেই মেয়েরা নাকি কোনো কিছুর সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে চান না। আমার বাবার হার্ট অ্যাটাক হয় ৪০–৪১ বছর বয়সে। আমরা তিন ভাইবোন ছোট তখন। মা মাস্টার্স করা ছিলেন, সরকারি চাকরির বয়স ছিল, সঙ্গে সঙ্গে জয়েন করেছিলেন একটি কলেজে। সেই থেকে দুজনের সৎ আয়ে আমরা বড় হয়েছি। আর নব্বইয়ের দশকে দেশ ওপেন হার্ট সার্জারিতে এত উন্নত ছিল না। মা একা বাবাকে ভারতে নিয়ে সার্জারি করিয়ে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। না আমাদের কোনো সমস্যা হয়েছে, না বাবা–মায়ের সংসারের কোনো সমস্যা হয়েছে। সুখে–দুঃখে সম্মান ও ভালোবাসার ছায়া হয়ে তাঁরা আছেন আমাদের মাথার ওপর। শিক্ষার আলোয় আলোকিত মানুষ সমাজের সম্পদ।

এসব মানুষই অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান নিয়ে ডিভোর্স দিলে (ইসলামী কাবিননামার এক নম্বর শর্তে মেয়েরা স্বামীকে ডিভোর্স দিতে পারে ইনফিডালিটির জন্য, যাঁদের সন্দেহ আছে, মিলিয়ে নিতে পারেন) সন্তানের মাথা নষ্ট করেন, ‘তোমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন’ ইত্যাদি বলে। ছোট শিশুকে মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেন। এতে ভয়াবহ চাপ পড়ে শিশুর কোমল মনে। খেলনার লোভে যে মাকে সে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে, বড় হয়ে সেই মায়ের জন্যই প্রচণ্ড কষ্ট হয়, যখন বোঝ আসে। তাঁর ক্ষমা চাওয়ার বয়স পর্যন্ত ঘাত–প্রতিঘাতে আহত মেয়েটা বেঁচে থাকবে কি না, সে গ্যারান্টি কে দিতে পারে?

আর যেসব মেয়ের বা করা হচ্ছে স্বামীকে একাধিক বিয়ে মেনে নিতে সেসব পুরুষদের একটা জিনিস বোঝা উচিত। স্বামী হার্ট বা হৃদয়ের মতো ভালবাসায় আর সম্মানে একজন প্রয়োজনীয় মানুষ। হার্ট যেমন শেয়ার করা যায় না, মৃত্যু হয় মানুষের, স্বামীও তা–ই। মেয়েদের সম্পত্তি হিসেবে না দেখে সম্পদ হিসেবে দেখলে, নিজের মতোই একজন মানুষ হিসেবে ভালোবাসা এবং সম্মানের আসনে বসালে (অসৎ মেয়েদের কথা এখানে অবশ্যই টানছি না, শুধু সৎ, সভ্য বেঁচে থাকতে চাওয়া মেয়েগুলোর জন্যই এ লেখা) এত সমস্যা হয় না। সময় এসেছে সততার আয়নায় সবার চেহারা দেখার।