কানাডার কড়াকড়ি: বাংলাদেশি ও ভারতীয়দের অবৈধ আমেরিকা-কানাডা সীমান্ত পারাপার কমছে, অটোয়ার দাবি
কানাডা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনকে জানিয়েছে যে, ভিসা সংক্রান্ত কড়াকড়ি আরোপের ফলে কানাডা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার কমেছে। ২০২৪ সালে কানাডাগামী ফ্লাইটে দুই হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিকদের বাধা দেওয়ার ফলে এই সাফল্য এসেছে বলে অটোয়া দাবি করেছে ।
কানাডার অভ্যন্তরীণ সরকারি নথি অনুযায়ী, জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছিল যে, কানাডা সীমান্ত সুরক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছে। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগে হুমকি দিয়েছিলেন, কানাডা থেকে মাদক ও অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ বন্ধ না হলে কানাডার পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে।
১৫ জানুয়ারির তারিখের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের নথি এবং ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিন আগেই তৈরি হওয়া বৈদেশিক সম্পর্ক সংক্রান্ত নথিতে (যা সম্ভবত পরবর্তীকালে হালনাগাদ করা হয়েছে) বলা হয়েছে, মেক্সিকো, ভারত ও বাংলাদেশের যাত্রীদের জন্য কঠোর ভিসা নীতির কারণে কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ পারাপার কমেছে। এছাড়াও, ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ভিসা জালিয়াতির বিষয়গুলো পুনরায় যাচাই করার ফলে ২,০০০ এর বেশি ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিককে কানাডাগামী ফ্লাইটে উঠতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন মাস থেকে উন্নত ভিসা যাচাইয়ের কারণে একই বছরের নভেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে পারাপার ৮৪ শতাংশ কমেছে এবং কানাডায় নতুন ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে।
কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (CBSA) জানিয়েছে, ২০২৪ সালে তারা প্রায় ১১,০৫০ জন যাত্রীকে ফ্লাইটে না তোলার সুপারিশ করেছে যাদের ভ্রমণ নথি সন্দেহজনক ছিল। এর মধ্যে ৩,২৫০ জন ভারতীয় নাগরিক (৩,১০৪ জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির সন্দেহ) এবং ৪৯৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক (৪৭৫ জনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির সন্দেহ) ছিলেন।
এখানে উল্লেখ্য কোভিড -১৯ পরবর্তী সময়ে কানাডা তার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য প্রচুর পরিমাণে ভিজিট ভিসা
প্রদান করে । কানাডা আশা করেছিল ভিজিট ভিসায় পৃথিবী বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ কানাডায় এসে , কানাডার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে এবং কিছুদিন কানাডায় থেকে আবার নিজ দেশে ফিরে যাবে।সে সময় বাংলাদেশ-ভারত সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন ভুয়া নথিপত্র দিয়ে কানাডার ভিজিট ভিসা গ্রহণ করে । সে সময় ভিজিট ভিসায় আসা অনেকেই কানাডায় এসে অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে আমেরিকায় চলে যায়। আর বড় একটি অংশ কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় দাবি করে কানাডায় থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। যাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের মামলা গুলি এখনো কানাডার আদালতে চলমান রয়েছে ।
মূলত, কানাডা সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে চাইছে যে তারা সীমান্ত সুরক্ষায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে, যাতে আরও মার্কিন শুল্ক আরোপের মতো পদক্ষেপ থেকে বাঁচা যায়। সেই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক মাস গুলিতে গৃহীত পদক্ষেপের ফলস্বরূপ অবৈধ অভিবাসন কমে আসার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
(লেখক কানাডা প্রবাসীর সাংবাদিক ও সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট ক্রিয়েটর)