জয়তু বাংলাদেশ!
বঙ্গবন্ধু–তনয়া শেখ হাসিনার কারণেই আজকের বাংলাদেশের এই চিত্র আমাদের দেখতে হয়েছে। তাঁর স্বভাবের অন্তর্গত আচরণ, বাচনভঙ্গি, বিচক্ষণতার অভাব, অপরিণাম দৃষ্টিভঙ্গি, অদূরদর্শিতা, একগুঁয়ে মনোভাব, পরমত–অসহিষ্ণুতা ও অহংকারই তাঁকে ঠেলে দিয়েছে এই অবধারিত নির্মম পরিণতিতে।
নম্রতা তাঁর মাঝে আমরা দেখতে পাইনি। তথাকথিত আওয়ামী স্তাবক দ্বারাই সব সময় তিনি পরিবেষ্টিত থাকতেন। দেশের প্রকৃত চিত্র, জনগণের বার্তা তাঁর কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্র আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয়নি—এ বাস্তবতার প্রমাণ তিনি নিজেও প্রত্যক্ষ করেছেন।
এবারের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুতেই উচিত ছিল তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একান্তে বসে বিষয়টার সর্বসম্মত গ্রহণযোগ্য সমাধান করা। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদেরও সেটাই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তাঁর পাশে অবস্থানরত কিছু ‘আওয়ামী নেতা’ নামধারী তাঁকে সঠিকভাবে অনুধাবন করার সুযোগ দেননি বা তাঁর ‘পরামর্শকেরা’ তাঁকে পরামর্শও দেননি। উল্টো বিষয়টাকে আদালত পর্যন্ত গড়িয়ে দিয়ে তাঁরা ‘রাজনৈতিক খেলা’ দেখতে চেয়েছিলেন। যার পরিণতিতে এতগুলো মানুষকে বেঘোরে প্রাণ বিসর্জন দিতে হলো! দেশের বিপুল সম্পদ, স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা এবং খেটে খাওয়া মানুষের অশেষ ভোগান্তি এবং তাঁর শাসনকালজুড়ে অভূতপূর্ব অর্থ পাচার, দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, লুটপাট, সিন্ডিকেটের স্বেচ্ছাচার, ডলারের দুষ্প্রাপ্যতা, বঙ্গবন্ধুর নাম যথেচ্ছ ব্যবহার করা ইত্যাদি শেখ হাসিনা সম্পর্কে মানুষকে বিরূপ মনোভাবাপন্ন করে তুলেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের অন্ধভক্তও চরম বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে দেখতে পাননি।
সাম্প্রতিক কালে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কিছু অতি উৎসাহীর হাতে বিটিভি ভবন, মেট্রোরেলসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয়, সরকারি স্থাপনা এবং সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত যান, সম্পত্তি ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধন, মানুষ হত্যা, সরকারিভাবে পুলিশকে দিয়ে যে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, তা জনগণ প্রত্যক্ষ করেছেন, যা সমর্থনযোগ্য নয়।
শেখ হাসিনার উদ্যোগে বাংলাদেশের যে অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত ও বৈষয়িক উন্নয়ন হয়েছে, দেশের মানুষের কাছে এখন তা গৌণ হয়ে গেছে। বিষয়টা ‘এক গামলা দুধের মধ্যে এক ফোঁটা গো-চনার’ মতোই।
এ জন্য এ দেশের মানুষের আক্ষেপ ও মনোবেদনা কোনো দিনই তিরোহিত হবে না। সাম্প্রতিক কালের বাংলাদেশের চিত্র এ দেশের মানুষ ভবিষ্যতে আর দেখতে চান না। আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম মানুষের দুর্দশা এবং দেশে চলমান সব অনিয়মে অতিষ্ঠ হয়েই দেশের কল্যাণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে এসেছে রাজপথে। জাতিকে এবং গোটা বিশ্ববাসীকে তারা তাদের ‘ক্যারিশমা’ দেখিয়েছে! এর ফলে তারা মানুষের স্বীকৃতি ও প্রশংসায় আপ্লুত হয়েছে।
আজকের বাংলাদেশ, যা আমরা এখন দেখছি, দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থনে এবং ঐকান্তিক সহযোগিতায় নিশ্চয় খুব শিগগিরই তার একটি ভিন্ন চিত্র দেখতে পাব। পেছনের যত জঞ্জাল, অপূর্ণতা ধুয়েমুছে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সবাই আমরা শরিক হতে পারব। দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, বর্ণ, ধর্ম (সংখ্যালঘু হিসেবে নয়) নির্বিশেষে সবাই প্রশান্তি নিয়ে এগিয়ে আসবেন দেশ গড়ার যজ্ঞে। সবার প্রত্যাশা, এ সময় আমরা সবাই চূড়ান্ত ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করব। রাজনৈতিক বিদ্বেষ নয়, নয় কোনো হানাহানি, নয় ধর্মীয় উন্মাদনা। দেশের পরিস্থিতিকে শান্তিপূর্ণ রাখতে সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করব।
দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক আবহ বজায় রাখতে ভ্রাতৃত্বের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসব। এই সোনার বাংলাদেশ আমাদের সবার।
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাসংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে দেশের চারটি মূলনীতি, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত এবং দেশের সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখেই এগিয়ে যাব সবাই। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, ভাষাশহীদ, মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদ, বীরাঙ্গনা, যুদ্ধাহতসহ সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে, জাতীয় নেতাদের অবদান নির্বিবাদে স্বীকার করে তাঁদের যথোপযুক্ত প্রাপ্য সম্মান দেখাতে কার্পণ্য করব না। একটি শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে একযোগে দেশবাসী সবাই আত্মনিয়োগ করব।
সত্যি, আমাদের একটি বাংলাদেশ জাগ্রত জনতার। সারা বিশ্বের বিস্ময় আমাদের সবার অহংকার।
এ সময় বুক উঁচিয়ে বলতে চাই, শাবাশ বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়।
জয়তু বাংলাদেশ!
**দূর পরবাসে ছবি, লেখা ও ভিডিও পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]