ইথিওপিয়ায় ভ্রমণ অভিজ্ঞতা-৫
ইথিওপিয়ান সংস্কৃতি তার প্রাচীনতা এবং সমৃদ্ধির জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত। এর বিভিন্ন দিক যেমন খাদ্য, সঙ্গীত, নাচ, সামাজিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় প্রথা এবং ভাষা, ইত্যাদির মাধ্যমে এটি প্রকাশ পায়। ইথিওপিয়ান ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতিগুলোর অন্যতম। এর বিভিন্ন দিক বিশেষ করে খাদ্য, সঙ্গীত, নাচ, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। নিচে ইথিওপিয়ান ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির কিছু মূল বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো—
১. ইথিওপিয়ান খাবার
আদ্দিস আবাবার অন্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে স্থানীয় রেস্তোরাঁ, বাজার এবং আধুনিক শপিং মলও রয়েছে, যেখানে স্থানীয় খাবার ও সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়। এখানে আসার সময় স্থানীয় সংস্কৃতি ও আতিথেয়তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ নিতে ভুলবেন না!
আদ্দিস আবাবার খাবার, দর্শনীয় স্থান ও মানুষের মিষ্টি আচরণ—সবকিছুই আমাকে আনন্দ দিয়েছে। এখানকার খাবার খুব তাজা এবং মজাদার, বিশেষ করে ইনজেরা, যা ইথিওপিয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা তার স্বতন্ত্র এবং সুস্বাদু খাবারের জন্য পরিচিত। কিছু জনপ্রিয় খাবারের তালিকা দেওয়া হলো
ইনজারা: এটি একটি ধরনের খমির করা রুটি যা কাউন্টারে গরম গরম পরিবেশন করা হয় এবং অন্য খাবারের সঙ্গে সার্ভ করা হয়।
ডোরো ওট: এটি একটি মশলাদার মুরগির স্টু যা ইনজারার সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। এতে ক্রিমি সস ও কন্যা পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়।
নিটে: এটি কাঁচা গরুর মাংস যা মসলা দিয়ে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি অল্প রান্না করা হয়।
সিগা ওট: এটি মসলাদার গরুর মাংসের স্টু, যা আদা, রসুন এবং অন্যান্য মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়।
শেরা: এটি মসলাদার চনার ফ্লাওয়ার দিয়ে তৈরি একটি সেদ্ধ খাবার, যা ভাত বা ইনজারার সঙ্গে খাওয়া হয়।
বাইটাই: এটি একটি ভিন্ন ধরনের খাবার, যা বিভিন্ন রকমের মাংসের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। এটি ইনজারার ওপর সাজানো হয়।
কিপফা: এটি একটি প্রথাগত ইথিওপীয় খাবার, সাধারণত মাংস এবং বিভিন্ন স্টুর তৈরি করা হয়।
আদ্দিস আবাবাতে এসব খাবারের স্বাদ নিতে হলে সেখানে গিয়ে স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে যেতে হবে। খাবারগুলো সাধারণত শেয়ার করে খাওয়া হয় এবং স্থানীয় সংস্কৃতির একটি অংশ হিসেবে তা উপভোগ করা হয়।
২. সংগীত ও নাচ
ইথিওপিয়ায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব সংগীত এবং নাচের সংস্কৃতি রয়েছে। উৎসব এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে এ নাচ এবং সংগীতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
জাতিগত বৈচিত্র্য: ইথিওপিয়াতে ৮০টির বেশি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব সংগীত এবং নাচের স্টাইল রয়েছে।
কিরি-রি: এটি একটি বিশেষ নাচ, যেখানে নৃত্যশিল্পীরা সিংহাসনে নাচ করে। এ নাচটি সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে দেখা যায়।
৩. সামাজিক অনুষ্ঠান
তেঙ্গে আঞ্জালন: এ উৎসব ইথিওপিয়ায় মহৎ উদ্যাপিত একটি অনুষ্ঠান, যেখানে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হন।
নারেকিসো: ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন ঈদ এবং ক্রিসমাস ইত্যাদি এখানে বিপুল উৎসাহে উদ্যাপন করা হয়।
৪. ধর্মীয় প্রথা
অর্থডক্স খ্রিষ্টান ধর্ম: ইথিওপিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন খ্রিষ্টান রাষ্ট্র। এখানে ধর্মীয় নিদর্শন ও অনুষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ।
রমজান: এখানে মুসলিম সম্প্রদায়ও রয়েছে, যারা রমজান মাসে বিশেষ কার্যক্রম পালন করে। মুসলমানদের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক উৎসবও ইথিওপিয়ান সংস্কৃতির একটি অংশ। উদাহরণস্বরূপ, ‘এথিওপীয় নববর্ষ’ (ইরবে) একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।
পারস্পরিক সম্পর্ক: ইথিওপিয়ানে পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষায় বিপুল গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরিবার এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত থাকে।
৫. আতিথেয়তা
ইথিওপিয়ান সমাজে আতিথেয়তা খুবই গুরত্বপূর্ণ। অতিথীদের প্রতি ভদ্রতা এবং তাদের স্বাগত জানানো এখানে একটা ট্র্যাডিশন। ইথিওপিয়ান সংস্কৃতিতে অতিথিদের সম্মান জানানো এবং তাদের সেবা করা ইথিওপীয়দের কাছে একটি গৌরবজনক কাজ।
৬. পোশাক
টেবু: ট্রাডিশনাল পোশাক যেটি সাধারণত শাদা রঙের হয় এবং হাতে বোনা হয়। বিশেষ অনুষ্ঠানে এটি গর্বের সঙ্গে পরিধান করা হয়।
৭. ভাষা
ইথিওপিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ভাষা কথা বলা হয় তবে আমহারিক ভাষা অফিশিয়াল ভাষা এবং দেশের বেশিরভাগ লোক এই ভাষায় কথা বলে। এভাবে, ইথিওপিয়ান ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি তার বৈচিত্র্য ও বিশেষত্বের জন্য বিশ্বে একটি অনন্য স্থান অধিকার করেছে।
ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার
ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ক্যালেন্ডারগুলোর একটি। এটি প্রধানত ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়াতে ব্যবহৃত হয় এবং এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে উল্লেখ করা হলো—
ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডারের বৈশিষ্ট্য
মাসের সংখ্যা: ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার ১৩টি মাস নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে ১২টি মাস ৩০ দিনের এবং ১টি মাস (যা ‘পেগমে’ নামে পরিচিত) ৫ বা ৬ দিন (অধিবর্ষে) হয়।
প্রথম মাস: ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস ‘মাসকারাম’ (Mäggabit) এবং এটি সাধারণত ১১ সেপ্টেম্বর (গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার) থেকে শুরু হয়।
বছরের দৈর্ঘ্য: এ ক্যালেন্ডারটি সাধারণত ৩৬৫ দিনের (নিয়মিত বছর) হয়, কিন্তু অধিবর্ষ (লিপ ইয়ার) হলে ৩৬৬ দিনের হয়।
কাল্পনিক সময়: ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের থেকে প্রায় ৭-৮ বছর পিছিয়ে। ২০২৪ সালে ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তা ২০১৬ বা ২০১৭ হবে।
ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব: ক্যালেন্ডারটি খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইথিওপিয়ান গির্জার সাধু পাদ্রী ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো এই ক্যালেন্ডারের ওপর নির্ভর করে।
মাসগুলোর নাম: ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডারের ১৩টি মাসের নাম হলো মাসকারাম, তোকেমর, হদার, তাহত, তাহসাস, দেজেমর, জেন, গুত্তি, সিজন, সামেত, নেকুল, মাস্ক্যার।
পেগমে—
ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য ধারণ করে। এটি ইথিওপিয়ার ইতিহাস ও তাদের সমাজের জীবনযাত্রার অপরিহার্য অংশ। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের তুলনায় ভিন্ন হলেও, ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার সেখানকার সংস্কৃতির এক বিশেষ দিককে তুলে ধরে।
ইথিওপিয়ায় নতুন বছর উদযাপন অনুষ্ঠান
ইথিওপিয়ায় নতুন বছর, যা ‘এনকুটাতাশ’ নামে পরিচিত, প্রতিবছর ১১ সেপ্টেম্বর (গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে) উদ্যাপিত হয়। এ অনুষ্ঠান ইথিওপিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নতুন বছরের শুরু নির্দেশ করে, যা ১৩ মাসের একটি ক্যালেন্ডার।
উদযাপনের মূল বিষয়গুলো:
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি: নতুন বছরের উৎসবটি খাদ্য, সংগীত, নৃত্য ও অনেক ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উদ্যাপন করা হয়। মানুষ নতুন পোশাক পরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: ইথিওপিয়ায় সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে আবহাওয়া খুব সুন্দর থাকে, যা উদ্যাপনকে আরও আনন্দময় করে তোলে। বিভিন্ন এলাকার ফুল ফোটে এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য অপরূপ হয়ে ওঠে।
পারিবারিক উৎসব: মানুষ পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে একত্র হয়ে আনন্দ উদ্যাপন করে। বিশেষ করে, এ সময়ে মানুষ একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায় এবং উপহার বিনিময় করে।
ধর্মীয় উপাসনা: অনেক ইথিওপিয়ান এ সময়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে, বিশেষ করে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা গির্জায় প্রার্থনা করেন এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানান।
ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: নতুন বছর উদ্যাপনের এ চালচলন ইথিওপিয়ার দীর্ঘ ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে একাত্ম। এটি দেশের ঐতিহ্য ও আদর্শকে প্রতিফলিত করে।
ইথিওপিয়ার নতুন বছর উদ্যাপন অনুষ্ঠান একটি বিশেষ মুহূর্ত, যেখানে মানুষ আনন্দ ও সুখের সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়।
কফি পান অনুষ্ঠান ইথিওপিয়া
ইথিওপিয়ান কফি অনুষ্ঠান হলো একটি সুন্দর এবং গভীর সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা, যা ইথিওপিয়ার দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কফির উৎপত্তি ইথিওপিয়া থেকে এবং এই দেশটির মানুষের জন্য কফি শুধু একটি পানীয় নয় বরং এটি একটি সামাজিক এবং ধর্মীয় আচার যা মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
ইথিওপিয়ান কফি অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া—
প্রস্তুতি: অনুষ্ঠানটি শুরু হয় তাজা কাটা ঘাস বিছিয়ে এবং ধূপ জ্বালিয়ে যা অবাঞ্ছিত আত্মাদের তাড়ানোর প্রতীকী অংশ।
ভুনা করা: সবুজ কফির দানা খোলা আগুনে ধীরে ধীরে ভাজা হয় যতক্ষণ না তারা বাদামি হয়ে যায় এবং একটি সুগন্ধ বের হয়। এই ভাজা দানা তারপর একটি মোটর ও পেস্টেল দিয়ে গুঁড়া করা হয়।
কফি তৈরি: গুঁড়া কফি জেবেনা নামক বিশেষ একটি মাটির পাত্রে ঢেলে, তা খোলা আগুনে ধীরে ধীরে ফোটানো হয়। এটি করতে সময় লাগে, কিন্তু এই প্রক্রিয়াই কফির স্বাদকে উন্নত করে।
পরিবেশন: কফি ছোট কাপের মধ্যে ঢেলে পরিবেশন করা হয়, এবং এর সঙ্গে প্রায়ই পপকর্ন বা ভাজা বার্লির মতো স্ন্যাকস দেওয়া হয়।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব—
ইথিওপিয়ান কফি অনুষ্ঠান সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে। এটি শুধু কফি পানের ব্যাপার নয় বরং এটি মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন, গল্প এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটায়। এ অনুষ্ঠানটি প্রায়ই পরিবারের সদস্যদের, বন্ধুবান্ধব এবং সম্প্রদায়ের মানুষদের একত্র করে, যেখানে তারা কফির কাপে নতুন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় ধারনা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।
আধুনিক রূপ
যদিও ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি এখনো ব্যাপকভাবে প্রচলিত, আধুনিক সময়ে ইথিওপিয়ান কফি অনুষ্ঠানের কিছু পরিবর্তিত রূপ দেখা যায়, যেখানে বৈদ্যুতিক গ্রাইন্ডার এবং অন্যান্য আধুনিক উপকরণ ব্যবহৃত হয়। তবে মূল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ সম্প্রদায় ও একতার উদ্যাপন, তা এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। ইথিওপিয়ান কফি অনুষ্ঠান ইথিওপিয়ার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির প্রতিফলন, যা কফির মাধ্যমে আতিথেয়তা, সম্প্রদায় এবং বন্ধুত্বের মেলবন্ধনকে উদ্যাপন করে। এটি একটি অনন্য এবং অভিজ্ঞতামূলক অনুষ্ঠান যা ইথিওপিয়ান জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
ইথিওপিয়ান মুসলিম বিয়ের অনুষ্ঠান এবং রীতিনিতি—
ইথিওপিয়ায় থাকার সময়ে আমার সৌভাগ্য হয় মুসলিম বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার। একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত যা স্থানীয় ইসলামিক প্রথা ও আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে মিলিয়ে অনুষ্ঠান হয়। ইথিওপিয়ার মুসলিম সমাজের বিয়ের রীতি-নীতি অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিল আছে, তবে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রভাবও স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।
মুসলিম বিয়ের রীতি-নীতি ও প্রক্রিয়া:
প্রস্তাব এবং কোর্টশিপ: বিয়ের প্রাথমিক ধাপ হলো বিয়ের প্রস্তাব, যা সাধারণত পাত্র বা তার পরিবার দ্বারা পাত্রীর পরিবারকে দেওয়া হয়। প্রস্তাব গ্রহণের পর, পাত্র ও পাত্রীর পরিবার বিয়ের পরিকল্পনা শুরু করে। বিয়ের পূর্বে পাত্র ও পাত্রীর পরিবার একে অপরকে জানার জন্য সময় ব্যয় করে, যা ইসলামিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
নিকাহ (বিয়ে): মূল বিয়ের অনুষ্ঠান, যা ‘নিকাহ’ নামে পরিচিত, একটি মসজিদে বা কোনো ইসলামকেন্দ্রিক স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। একজন ইসলামিক ধর্মীয় নেতা (ইমাম) নিকাহ পরিচালনা করেন। পাত্র ও পাত্রীর সম্মতি নেওয়া হয় এবং দুই পক্ষের সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ের শর্তগুলো (মহর, দেনমোহর ইত্যাদি) নির্ধারণ করা হয়। ইথিওপিয়ান মুসলিম বিয়েতে মহর (পাত্রীর জন্য নির্ধারিত অর্থ বা সম্পত্তি) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা পাত্র কর্তৃক পাত্রীর কাছে প্রদান করা হয়।
আকদ (চুক্তি): নিকাহ সম্পন্ন হওয়ার পর, বিবাহ চুক্তি সই হয়। এতে উভয় পক্ষের সাক্ষী থাকে এবং বিবাহের আইনগত প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
উৎসব ও ভোজ (ওয়ালিমা): নিকাহ সম্পন্ন হওয়ার পর সাধারণত একটি বড় ভোজের আয়োজন করা হয়, যাকে ‘ওয়ালিমা’ বলা হয়। একটি উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় যেখানে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং সম্প্রদায়ের মানুষদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওয়ালিমাতে সাধারণত ঐতিহ্যবাহী ইথিওপিয়ান খাবার পরিবেশন করা হয় এবং এটি পুরো অনুষ্ঠানের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। বিশেষ আকর্ষণ হল তাজা কাঁচা মাংসের (গরু ও খাসি) সঙ্গে অন্তত ১০–১৫ রকমের ঐতিহ্যবাহী খাবার।
সাংস্কৃতিক সংযোজন: ইথিওপিয়ার কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রভাব দেখা যায়, যেমন নৃত্য, গান এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান। পাত্র ও পাত্রীর পরিবার সদস্যরা ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত হন এবং বিয়ের সময় স্থানীয় নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করা হয়।
পোশাক: পাত্র ও পাত্রীর পোশাক সাধারণত ঐতিহ্যবাহী ইসলামী পদ্ধতির সঙ্গে স্থানীয় ইথিওপিয়ান সংস্কৃতির মিশ্রণ থাকে। পাত্রী সাধারণত হিজাব বা ওড়না পরিধান করেন এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য ঐতিহ্যবাহী গাউন পরেন, যা ‘হাবেশা কেমিস’ নামে পরিচিত।
ইথিওপিয়ান মুসলিম বিয়ের অনুষ্ঠান ধর্মীয় অনুশাসনের সঙ্গে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। এটি শুধু পাত্র ও পাত্রীর মধ্যে নয়, বরং দুই পরিবারের মধ্যে একটি সামাজিক বন্ধনের সূচনা। এই অনুষ্ঠানটি ধর্মীয় নিষ্ঠা, সামাজিক সংযোগ এবং ঐতিহ্যবাহী ইথিওপিয়ান মূল্যবোধকে সম্মান করে পরিচালিত হয়, যা ইথিওপিয়ান মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চলবে...
** দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: dp@prothomalo. com