কানাডায় রেকর্ড জনসংখ্যা হ্রাস: মূল কারণ বিদেশি শিক্ষার্থী ও কর্মীদের সংখ্যা কমানো

কানাডায় বিদেশি শিক্ষার্থীছবি: সংগৃহীত

কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধির দীর্ঘদিনের ধারায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। প্রথমবারের মতো দেশটিতে জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য হ্রাসের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কানাডার জনসংখ্যা কমেছে ৭৬ হাজার ৬৮ জন। শতাংশের হিসাবে এই হ্রাসের হার শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

১৯৪৬ সাল থেকে জনসংখ্যার হিসাব রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই দ্বিতীয়বারের মতো কোনো প্রান্তিক হ্রাসের ঘটনা। এর আগে মাত্র একবার ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সামান্য জনসংখ্যা কমেছিল। তবে এবারের পতনকে নজিরবিহীন এবং ঐতিহাসিক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কেন কমছে জনসংখ্যা

কানাডার সরকারি সংস্থা স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার মতে, এই জনসংখ্যা হ্রাসের প্রধান কারণ হলো ‘অস্থায়ী বাসিন্দাদের’ সংখ্যা ব্যাপক হারে কমে যাওয়া। এক প্রান্তিকে এই সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৯ জন কমেছে, যা প্রায় ৬ শতাংশ পতন। ১৯৭১ সালে এ–সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে বড় পতন।

মূলত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্টাডি পারমিটের ওপর ফেডারেল সরকারের সাম্প্রতিক বিধিনিষেধ এবং কাজের অনুমতির কড়াকড়ি এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

কিছু পরিসংখ্যান

  • মোট জনসংখ্যা: ১ অক্টোবর পর্যন্ত কানাডার মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮৫ জন।

  • শিক্ষার্থী কমছে: গত প্রান্তিকে শুধু স্টাডি পারমিটধারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭৩ হাজার ৬৮২ জন।

  • কাজের অনুমতি: কাজ ও পড়াশোনা উভয় অনুমতি আছে—এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা কমেছে ৬৭ হাজার ৬১৬ জন।

কানাডার নতুন নীতি

২০২৪ সালের শুরু থেকেই কানাডার ফেডারেল সরকার অস্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়। দেশটির আবাসনসংকট ও জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আনতে এই পদক্ষেপ নেয় অটোয়া। সরকার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে যে ২০২৭ সালের মধ্যে মোট জনসংখ্যার অস্থায়ী বাসিন্দাদের হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এরই অংশ হিসেবে স্টাডি পারমিট ইস্যুর সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা করছে ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা (আইআরসিসি)।

বড় ধাক্কা অন্টারিও ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় প্রদেশে

কানাডার সব প্রদেশ ও ভূখণ্ডের মধ্যে অন্টারিও ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী বাস করেন। ফলে জনসংখ্যার এই বড় ধাক্কাও এসেছে এ দুই প্রদেশে। অন্টারিওতে জনসংখ্যা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় কমেছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। একমাত্র আলবার্টা ও নুনাভুত অঞ্চলে কিছুটা জনসংখ্যা বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। মূলত এ দুই এলাকায় অন্য প্রদেশ থেকে এসে মানুষ বসবাস শুরু করেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনের ফলে কানাডার আবাসন বাজারে কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে, তবে শ্রমবাজারে, বিশেষ করে সেবা খাতের স্বল্প মজুরিসম্পন্ন কাজে কর্মীর সংকট তৈরি হতে পারে। বর্তমানে কানাডা সরকার গুণগত মান নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আরও কঠোর বাছাইপ্রক্রিয়া এবং স্থায়ী হওয়ার পথ সংকুচিত করার দিকে মনোনিবেশ করছে।

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]