ঘুরেফিরে কেন প্রথম আলোতেই খুঁজি

শিল্পী তানজিনা আফরোজের করা ডুডল

এই ডিজিটাল যুগে বহু গণমাধ্যম, পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দাপট তো আছেই। এত সব মাধ্যম থাকতে কেন আমি প্রথম আলোতেই বারবার ফিরি। চলেন কারণটা খুঁজি।

নির্ভরযোগ্যতা

দেশের গতানুগতিক খবরাখবর চোখের সামনে আসে আর যায়, এ খবরগুলো যেকোনো মাধ্যমে চোখের সামনে উঠলে তা বিশ্বাস করা যায়। তবে অতি গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলোর ক্ষেত্রে সূত্র যাচাই না করে বলেন কীভাবে বিশ্বাস করা যায়। স্মার্টফোন ব্যবহার যখন থেকে শুরু আমার, তখন থেকেই অনলাইনে বা অফলাইনে কোনো একটা সংবাদ দেখার পর বেশির ভাগ সময় যাচাই করতাম প্রথম আলোয় এ বিষয়ে কিছু লেখা হয়েছে কি না। সেই পুরোনো অভ্যাস এখনো আছে আমার, দেশের বাইরে থাকলেও দেশের প্রতি টান সব সময়ই আছে। ডিজিটাল এ যুগে প্রতিমুহূর্তে খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করি, কী ঘটছে আমার প্রিয় মাতৃভূমিতে। এ খোঁজখবর রাখতে গিয়ে এখন পর্যন্ত যে গণমাধ্যমের প্রতি আমার ভরসা একদমই কমেনি, সেটি প্রথম আলো।

প্রথম আলো একটা তথ্য যাচাই–বাচাই না করে প্রচার করে না বললেই চলে। শুধু প্রথম আলোই না, দেশের প্রথম সারির সব গণমাধ্যমই এ কাজ করে। তবে প্রথম আলো ঘটনার ভেতরের ঘটনা খুঁজে বের করে নিরপেক্ষ একটা সংবাদ উপস্থাপন করে সবার মধ্যে। এই জায়গায় এসে দেশের অনেক গণমাধ্যমকে দেখেছি সূত্র ভালোভাবে যাচাই না করেই একটা পক্ষ নিয়ে সংবাদ প্রচার করে ফেলেন। অথবা লোভনীয় শিরোনাম দিয়ে পাঠকদের বিভ্রান্ত করেন, যা মোটেই কাম্য নয়।

নিরপেক্ষতা

দেশে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে সাধারণত ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি ঘটে সর্বত্র। রাজনৈতিক কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে তো কোনো কথাই নেই। ভুল তথ্যের আড়ালে সঠিক তথ্য চাপা পড়ে যায় নিচে। এ সময়গুলোয় প্রথম আলো সর্বদা চেষ্টা করে সত্য তথ্যটা তুলে ধরার জন্য। সব সময়ই খেয়াল করি কোনো একটা পক্ষকে সমর্থন না করে আসল ঘটনাটা তুলে ধরে এই পত্রিকা। আগামী দিনে এ নিরপেক্ষতা বজায় রাখলে আশা করি, প্রথম আলোর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস আরও বহুগুণে বাড়বে সবার।

নতুনত্ব

গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে দেশে যে কয়টা গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে, প্রথম আলো সেগুলোর অন্যতম। পত্রিকার ওয়েবসাইটের ডিজাইন থেকে শুরু করে প্রিন্ট পত্রিকা, সব জায়গায়ই যেন নতুনত্বের ছাপ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সব কটি সংযোজনের মধ্যে নাগরিক সংবাদের কলামটা সবচেয়ে মন কেড়েছে আমার। যেখানে নাগরিকেরা তাঁদের কথা লিখতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে। পাঠকদের কথা মাথায় রেখে প্রতিনিয়তই দেখি কিশোর আলো, বিজ্ঞানচিন্তা ইত্যাদি ম্যাগাজিনগুলোয় নতুনত্ব আনেন কর্তৃপক্ষ। প্রথম আলোর সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলো লক্ষ করলেও দেখা যায়, বাকি সব মাধ্যম থেকে আলাদা এ পত্রিকা। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন আয়োজনে মুখর থাকে এই চ্যানেলগুলো। যার কারণে অনলাইন ও অফলাইনে দুই জায়গাতেই পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে প্রথম আলো।

আমার স্মৃতি

ছোটবেলায় সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেতাম সোমবারের রস+আলো পড়ে। আর খেলার পাতা পড়ার পর খেলোয়াড়দের ছবি কেটে কেটে আলমিরায় লাগানোর দিন এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে আমার। হাইস্কুলে ভর্তির পর হাতে পেয়েছিলাম প্রথম বাটন ফোন। সেই বাটন ফোনে প্রায়ই প্রথম আলো অনলাইনে মগ্ন থাকতাম। বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচের দিন ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে হাতে ফোন নিয়ে রিফ্রেশ করতে থাকতাম, এই বুঝি কোনো একটা আপডেট এল। হাইস্কুলের দিনগুলোয় যখন মেগাবাইট কেনার পয়সা থাকত না, তখন ফ্রি ভার্সনে গিয়ে হলেও দেখতাম, কী আপডেট আছে অনলাইনে। এই স্মৃতিগুলো এখনো ভেসে বেড়ায় চোখের সামনে। প্রথম আলোর কুলাউড়া বন্ধুসভার সঙ্গেও অনেক স্মৃতি জমানো আমার। যেখান থেকে অনেক নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়, অনেক স্মৃতি। যা লিখে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

সবশেষে একটাই আশা, প্রথম আলো যেন তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখে আজীবন। বহুমুখী চাপ উপেক্ষা করে সত্যে অবিচল থাকলে কোনো দিনও হারবে না প্রথম আলো, হারবে না বাংলাদেশ।