মরক্কো ভ্রমণের গল্প: প্রথম পর্ব

ছবি: সংগৃহীত

গরমের দেশে যেতে খুব ভয় লাগে। কিন্তু বউ-ছেলে গরমকে তোয়াক্কাই করে না। তাদের দাবি, তাদের মরক্কো নিয়ে যেতে হবে। মরক্কো গরমের দেশ। সাহারা মরুভূমি যার ওপর শুয়ে আছে। কী আর করা। তাদের দুই ভোট, আমার এক ভোট। আমি সংখ্যালঘু। তাদের দাবি না মেনে উপায় নেই।

 হঠাৎ সস্তায় টিকিট ও ফ্ল্যাট পেয়ে গেলাম। বুকিং দিয়ে ফেললাম। ইজি জেট এয়ারলাইনসে। এখন অনলাইনে শুধু মরক্কোর তাপমাত্রা চেক করি। ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি। অসুস্থ হয়ে যাব না তো! খাওয়ার স্যালাইন সঙ্গে নিতে হবে! আর ছেলের ভয় মশা।

নির্দিষ্ট দিনে রওনা দিলাম। লন্ডন থেকে। আজ লন্ডনে তেমন গরম নেই। অনলাইনে চেক করে দেখলাম, মারাকেশের (মরক্কো) তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রি। এখন জানে শান্তি শান্তি লাগছে। বিমানবন্দরে চেকিং কাউন্টারে এসেই বউয়ের মেজাজ খারাপ। সে কিছু ফ্রোজেন ফুড নিয়েছিল সঙ্গে। বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা তার কষ্ট করে রান্না করা রোস্ট, মাছ ভাজি, চিকেন ভুনা, আমাদের চোখের সামনেই ফেলে দিল ডাস্টবিনে। কী আর করা। নিয়ম বলে কথা। ইমিগ্রেশন পার হয়ে গেলাম চেকইন করতে। গিয়ে পড়লাম মহাবিপদে। ইজি জেটের এক নারী কর্মকর্তা আমাদের তিনটি কেবিন ব্যাগকে আটকে দিল। বলল, ব্যাগের সাইজ সামান্য একটু বড়। প্রতিটি ব্যাগের জন্য ৪৮ পাউন্ড করে দিতে হবে। মানে ২২ হাজার টাকা। তিনজনের রিটার্ন টিকিটের দাম ৩৫ হাজার, আর ব্যাগের চার্জ ২২ হাজার। হলো! কী আর করা, রাগে মুখ লাল হলেও টাকা গুনতে হলো ঠিকই। বিমানের ভেতর ঢুকে পাশেই দেখি বাঙালি পরিবার। তাদের ছোট্ট একটি শিশু। নাক দিয়ে খাবার দিতে হয়। সে অসুস্থ। তাকে নিয়েই তাঁরা বেড়াতে যাচ্ছেন মরক্কো। জীবন কোনো কিছুর জন্যই থেমে থাকবে কেন!

চার ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে মরক্কো নামলাম। এই শহরের নাম মারাকাশ। এটা সাবেক রাজধানী। কালচারাল সিটি। প্রতিবছর প্রচুর পর্যটক আসেন এই শহরে। মারাকাশ বিমানবন্দরটা সুন্দরই। কিন্তু লাইট কম। আলো-আঁধার। সম্ভবত গরমের জন্যই এ ব্যবস্থা। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। লাইন শেষ করে এসে সিম কিনলাম। প্রতিটি তিন হাজার টাকা করে। পাউন্ড ভাঙিয়ে মরক্কো দিরহাম নিলাম। উবার নেই এখানে। তবে এ রকম একটা অ্যাপস আছে। ট্যাক্সি কল করলাম, ৮০ দিহরামে। পাঁচ মিনিট পর ট্যাক্সিচালক কল বাতিল করে দিল। তারপর ছেলে বলল, ‘বাবা, বিমানবন্দরে ট্যাক্সি দিয়ে চলে যাই।’ সেটার ভাড়া ১১৬ দিহরাম। ৩৬ দিরহাম বেশি। কী আর করা। এতক্ষণ জার্নি করে ক্লান্ত লাগছে। বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি চড়ে ফ্ল্যাটে এলাম। এখানকার মানুষজন আরবি ও ফ্রান্সের ভাষায় কথা বলে। লেখা ও ভাষা বোঝা কঠিন। তবে আমাদের ড্রাইভার ঠিক জায়গায় পৌঁছাল। সে মোটামুটি ইংরেজি জানে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মরক্কোর সমস্যা কী?’ ভাবলাম, অর্থনৈতিক কিংবা রাজনীতির সমস্যার কথা বলবে। কিন্তু না। সে বলল, বৃষ্টি।

মানে কী!

সারা বছর ধরে কোনো বৃষ্টি নেই।

একদম না?

বছরে তিন-চার দিন।

আহারে, আল্লাহ আমাদের কত বৃষ্টি দেন। বৃষ্টিতে আমরা অনেক সময় ভেসেও যাই। আল্লাহর খেলা বোঝা মুশকিল।

ব্যাগ, কাপড়চোপড় রেখে গেলাম পাশের দোকানে। এখন রাত প্রায় এগারোটা। দোকান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে পানি কেনা দরকার। টুকটাক বাজার করলাম। দোকানি ইংরেজি জানে না। আমার ছেলে গুগল ট্রান্সলেটে ইংরেজি থেকে আরবিতে শোনায়, তখন দোকানি বুঝতে পারে, ডিম আছে? আলু?

রুমে ফিরে খাবার খেলাম। লন্ডন থেকে আনা মিট বিরিয়ানি, ডিম ভাজি, রুটি। ফ্ল্যাটের ওয়াইফাই কানেক্ট করলাম। দুনিয়া খুলে গেল। ওই কয়েক ঘণ্টা যেন পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। যা-ই হোক, এশার নামাজ পড়ে শুয়ে পড়লাম রাত সাড়ে বারোটার দিকে। কাল মারাকাশ শহর ঘুরতে যাব ইনশা আল্লাহ। আরেকটা কথা, এখানে নাকি মুতা বিয়া করা যায়, অর্থাৎ হালাল ম্যারেজ। এক সপ্তাহ কিংবা এক মাসের জন্য। বউ অবশ্য ব্যাপারটা জানে না। জানিয়ে দেব কি না, বুঝতেছি না।...চলবে

*আগামীকাল পড়ুন: দ্বিতীয় পর্ব

 *দূর পরবাসে ভ্রমণ, ভিডিও, ছবি, ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]