কাতারে এশিয়া কাপের আয়োজনে আলো ছড়াচ্ছেন বাংলাদেশি তরুণ স্বেচ্ছাসেবকেরা

কাতারে ১২ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৩। ইতিমধ্যে দোহায় পৌঁছতে শুরু করেছে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। ক্রীড়াপ্রেমীদের আগমনে আবার মুখরিত হচ্ছে রাজধানী দোহা। ছয়টি গ্রুপে ২৪ দেশের অংশগ্রহণে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এএফসি এশিয়ান কাপের ১৮তম আসর।

১২ জানুয়ারি কাতারের স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় ৮৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন লুসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে উদ্বোধনী ম্যাচ। এতে মুখোমুখি হবে বর্তমান এএফসি চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক দেশ কাতার এবং লেবানন। কাতারজুড়ে ৯টি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এফসির এবারের ম্যাচগুলো।

পুরো আয়োজন সফল করতে গত কয়েক মাসে এএফসি কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিয়েছে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। আর এই বিপুলসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, প্রশিক্ষণ, দায়িত্ব বণ্টনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দোহায় স্থাপন করা হয়েছে সুবিশাল অ্যাক্রেডিটেশন সেন্টার ও ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার।

দৃষ্টিনন্দন এ সেন্টারের সামনে যেতেই দেখা মিলল বাংলাদেশি প্রবাসী শাকিল আহমদের। কাতার সেনাবাহিনীতে কর্মরত সিলেটের এই তরুণ এখানে এসেছেন এএফসির স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজের ইউনিফর্ম ও অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড সংগ্রহ করতে। কথায় কথায় তিনি জানালেন, এর আগে ফিফা কাতার বিশ্বকাপেও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। শাকিল আহমদ আরও জানান, তাঁর মতো অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী তরুণ বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন কাতার বিশ্বকাপে। তাঁদের অনেকেই এবার এএফসি কাপেও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশগ্রহণ করছেন। এসব আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পারা যেমন আনন্দের, তেমনি বাংলাদেশি হিসেবে তা আমাদের জন্য গৌরবেরও, যোগ করেন শাকিল।

এ সেন্টারে দেখা পাওয়া গেল আরেক বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবক সত্যরঞ্জন রায়কে। তিনি বর্তমানে সেন্টারেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কুমিল্লার তরুণ সত্যরঞ্জন রায় জানান, প্রতিদিন যে স্বেচ্ছাসেবকেরা নিজেদের ইউনিফর্ম ও কার্ড সংগ্রহের জন্য এখানে আসেন, তাঁদের সহযোগিতা করছেন তিনি। সত্যরঞ্জন রায় বলেন, এবার শুধু কাতারে বসবাসরত বিদেশিদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, ফলে কাতারের বাইরে অন্য কোনো দেশ থেকে এবার স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হয়নি। এএফসি আয়োজনের বিভিন্ন কেন্দ্রে নানা রকম দায়িত্বে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে আরও রয়েছেন বুরহান উদ্দীন, ইবরাহিম, সুলতান আহমে, মামুনুর রশিদ, মঞ্জুরুল হাসান, আহসান হাবিব, মাহফুজুল হক, শাহীন আহমেদ, ওমর ফারুক, ইসমাইল হোসেন, সাকিব আহমেদসহ অন্য বাংলাদেশি প্রবাসী তরুণেরা।

এর আগে ২০২২ সালে কাতার প্রবাসী বাংলাদেশি শতাধিক তরুণ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজনে। পরে ফিফার পক্ষ থেকে তারা সবাই পেয়েছেন সম্মাননা সনদ ও পুরস্কার। এবার এএফসি আয়োজনেও বাংলাদেশি তরুণদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দৃষ্টি কাড়ছে আয়োজকদের। পাশাপাশি এর মাধ্যমে নতুন কিছু শেখার সুযোগও পাচ্ছেন তারা। শাকিল আহমদ বললেন, ‘চাকরির পর অবসর সময়টুকু ঘরে বসে না থেকে এসব বৈশ্বিক আয়োজনে কাজ করার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাচ্ছি, ফলে এর মাধ্যমে আমাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হচ্ছে।’

এএফসি কাপের সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য স্থাপিত মিডিয়া সেন্টারে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন আরেক বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবক নাহিদ ইসলাম। নওগাঁর এই প্রবাসী তরুণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাতারের রাজধানী দোহায় এখন নানা রকম আন্তর্জাতিক ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব আয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পেরে আমি আনন্দিত।’

কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই স্বেচ্ছাসেবক তরুণেরা নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যে ভূমিকা রাখছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। পাশাপাশি এর মাধ্যমে কাতারে এ ধরনের আন্তর্জাতিক আয়োজনগুলোয় প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে বলে আমি মনে করি। আমি তাঁদের সবাইকে সাধুবাদ জানাই এবং তাঁদের যেকোনো প্রয়োজনে দূতাবাস থেকে সাধ্যমতো সহায়তা করা হবে।’