ছুটির দিনের গল্প
শোঁ করে ছুটে গেল গাড়িটা! এত জোরে এসব ছোট রাস্তায় কাউকে গাড়ি চালাতে দেখা যায় না। মনে হয়, ঘরে বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে বের হয়ে এসেছে। আচ্ছা, আমার এমন মনে হলো কেন লোকটি সম্পর্কে!
ভাবতে থাকে আনিস, আনিসের ভাবার একটা কারণ আছে, বেশ কিছুদিন আগে ট্রাফিক পুলিশ আরেক লোককে তার সামনে ধরেছিল দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। পুলিশ জানতে চেয়েছিল, এত বেপরোয়া গাড়ি কেন চালাচ্ছেন? জবাবে লোকটি বলে, বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে এসেছে, তাই মাথা ঠিক নেই। পুলিশ তিরস্কারের ভাষায় সাবধান করে দিয়েছিল।
আজকের লোকটিকে জোরে গাড়ি চালাতে দেখে আনিসের তাই একই কারণ মনে হলো। আনিস আবার ভাবতে শুরু করল, আচ্ছা, এমন না–ও তো হতে পারে। আমরা মানুষেরা আসলে অদ্ভুত; একজনকে দেখে আরেকজনকে বিচার করে ফেলি! দ্রুত।
এমনও তো হতে পারে, লোকটির বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়নি, বরং বউ সাবধানে গাড়ি চালাতে বলেছিল ঘর থেকে বের হওয়ার সময়। আচ্ছা, আমি কি লোকটার বউকে ঝগড়াটে বানিয়ে দিলাম! ভাবে আর হাঁটতে থাকে আনিস। এক অচেনা–অজানা মহিলাকে ঝগড়াটে বানিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি।
সামনে একটা খাবারের হোটেল, আনিস এখানে নাশতা করে মাঝেমধ্যে। এ হোটেলের পরোটা কিন্তু বেশ, দুটো খেয়ে আরও খেতে পারবে মনে করে, কিন্তু তিনটা শেষ করতে পারে না। তবু জোর করে খেয়ে নেয়। তাই কখনো বেশি খেয়ে, কখনোবা কম খেয়ে বের হয়। বরাবর হয়ে ওঠে না। এমন হয় আনিসের সঙ্গে।
রেডিমেড প্যান্ট কিনতে গেলে তাঁর প্রয়োজন হয় ৩৫ কোমর, কিন্তু মার্কেটে আছে ৩৪ আর ৩৬। ৩৬ পরলে কোমরের নিচে নামতে থাকে, কেউ না দেখলে টেনে ওপরে তুলে দেয় সে। তারপরও এটাকে স্টাইল হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু ৩৪ নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। ভুঁড়ি বোঝা যায়। তাই ৩৬ বেশি পরতে থাকে আনিস, এখানেও একটা সমস্যা দাঁড়িয়ে গেল গতকাল থেকে। গতকাল বাসা থেকে বের হওয়ার পথে পাশের বাসার রোহিণী ইয়া লম্বা একটা রশি ধরিয়ে দিল! বলে বেল্টে কাজ না হলে রশি ব্যবহার করে দেখতে পারেন! অন্তত দুই মিনিট পরপর প্যান্ট টেনে তোলা লাগবে না।
রোহিণীর সঙ্গে আনিস কথা বলতে চায়, পাত্তা দেয় না। অথচ আনিস দুই মিনিট পরপর প্যান্ট টেনে তোলে, সেটাও নজর এড়ায় না। আনিস অনেক গল্পে পড়েছে, এ ধরনের সম্পর্কগুলো প্রেমে রূপ নেয় একসময়। সে আশায় থাকে। পরোটা দুটো খাওয়া শেষ আনিসের। ভাবছে আরেকটা নেবে কি না। নাশতা শেষে টেইলারের কাছে যাবে সে, ৩৫ কোমরের প্যান্ট সেলাই করতে দেবে, এখন থেকে নো রেডিমেড।
হোটেলের বাইরে একটা গাড়ি এসে থামে। আরে সেই গাড়িই তো! তবে এবার আস্তে এসে থেমেছে। বের হয়ে আসে লোকটি। লোক না বলে ছেলে বলা ঠিক হবে। হয়তো সদ্য বিবাহিত। ছেলেটি হোটেলে এসে ছয়টা পরোটার অর্ডার দেয়।
-শুধু ছয়টা পরোটা আর কিছু লাগবে না? জানতে চায় ম্যানেজার।
-না, আপনাদের পরোটাটা ভালো, আর আমানত হোটেল থেকে পায়া নিয়ে এসেছি। অরিনের প্রিয়। সকাল সকাল না গেলে পাওয়া যায় না। ছুটির দিন তো।
আনিস ছেলেটির কথা শোনে আর ভাবে, অরিন বোধ হয় ছেলেটির বউয়ের নাম। পেছনের টেবিল থেকে একজন ছেলেটিকে ডাক দিয়ে বলে,
-আরে হৃদয় ভাই যে ছুটির দিনে সকাল সকাল!
-এই তো নাশতা কিনতে আসলাম।
-ভাবি নাশতা বানায় না? বউ থাকতে হোটেলের নাশতা! আমরা তো দায়ে পড়ে খাই, খাই বললে ভুল হবে, বলেন গিলি।
-আসলে সে রকম কিছু না, অরিন তো নাশতা বানায় প্রতিদিন। ভোরে উঠতে হয়, অফিসে যাওয়ার আগে নাশতা, দুপুরের খাবার সব রেডি করে সে।
আজ আমার ছুটির দিন। অফিসে যাওয়ার তাড়া নেই, তাই ঘরে নাশতা বানাতে মানা করি আমি। বাইরে থেকে নিয়ে নিই। সপ্তাহের জমানো ঘুমটাও একটু পুষিয়ে নেয় সে।
আনিস ছেলেটির কথা শুনতে শুনতে আজ তিনটি পরোটা খেয়ে ফেলেছে, বুঝতে পারেনি। আবার ভাবনার জগতে চলে যায় আনিস। না, এই ছেলের বউ ঝগড়াটে হতে পারে না। পারেই না।
পরোটা নিয়ে বের হয়ে যায় ছেলেটা। দেখেশুনে গাড়ি স্টার্ট দেয়। আচ্ছা, অরিন কি প্লেট নিয়ে বসে আছে হৃদয় ফেরার অপেক্ষায় নাকি ঘুম জমে থাকা ঘুম পুষিয়ে নিচ্ছে এখনো; হয়তো হৃদয় বাসায় গিয়ে ডাইনিংয়ে নাশতা সাজাতে সাজাতে ডেকে তুলবে অরিনকে। সপ্তাহে এক দিনই তো। বাকি দিন তো অরিনই করে।
আনিসের ভাবনা শেষ, চারদিকে তাকিয়ে প্যান্ট ওপরে টেনে তুলে সে টেইলার্সের দিকে পা বাড়ায়। কেন, তা তো আমরা জানিই; কী বলেন?
*লেখক: জাহেদুল আলম জাহেদ, শারজাহ, সংযুক্ত আরব আমিরাত
**দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]