শেষ হলো তিন দিনের এনআরবি-পিবিও সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, সম্মাননা পেলেন ২৫ জন

সম্মাননা পেলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকারছবি: সংগৃহীত

এই প্রথম দেশে অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনব্যাপী এনআরবি-পিবিও সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলন শুরু হয় ২২ ফেব্রুয়ারি, শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে বিভিন্ন দেশে ‘বঙ্গবন্ধু কালচারাল সেন্টার’ খোলার পরামর্শ দেন সাংস্কৃতিক সংগঠক রামেন্দু মজুমদার। রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকেই আমরা সরকারকে এই কাজ করার আহ্বান জানিয়েছি।

আমরা বলেছিলাম, ব্রিটিশ কাউন্সিল, গ্যেটে ইনস্টিটিউট, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, নেহেরু সেন্টারের মতো করে বিভিন্ন দেশে বঙ্গবন্ধুর নামে কালচারাল সেন্টার খোলার জন্য। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে আমি একটি কাঠামোগত প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। কিন্তু এটার জন্য লিড মিনিস্ট্রি কারা হবে, এটা নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে টানাপোড়েন ছিল। সেখানে গিয়ে জিনিসটা থেমে যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমি এখনো মনে করি, এটা খুবই প্রয়োজন। বাঙালি সংস্কৃতিকে বিদেশে তুলে ধরতে চাইলে, এটা খুবই সময়োপযোগী কাজ হবে। সেন্টারটির নাম হবে বঙ্গবন্ধুর নামে। সরকারের পক্ষ থেকে এটা করার প্রয়োজনীয়তা আছে।’

প্রথমবারের মতো অনাবাসী বাংলাদেশি (এনআরবি) ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত (পিবিও) কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে তিন দিনব্যাপী এনআরবি–পিবিও সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন আয়োজন করেছে স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটি ও সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশন। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কবি কামাল চৌধুরী। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে প্রবাসী শব্দটা ব্যবহার করতে চাই না, তাঁরা আমাদের স্বজন। বাংলা ভাষার চর্চা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, কিন্তু তেমন প্রয়োগ হয় না। প্রবাসীদের নিয়ে সাহিত্য সম্মেলনসহ বিভিন্ন কাজ করায় আমি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই।’

সম্মেলনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেন, ‘নিজের দেশকে বুকের মধ্যে রেখে চলতে হবে। পৃথিবীর অন্য কেনো দেশে প্রবাসীদের নিয়ে এমন কোনো সংগঠন আছে কি না, আমার জানা নেই। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রগণ্য। এই সম্মেলনে এসে আমি জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেলাম। বাংলাদেশের যেকোনো অনুষ্ঠানে আসার জন্য আমি সব সময় এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকি।’ সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব খলিল অনুষ্ঠানে এনআরবি স্কলার্স পাবলিশার্সের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন।

সম্মাননা পেলেন যাঁরা: এই সাহিত্য সম্মেলনে দেশের বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাঁরা হলেন কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ড. আবদুন নূর (ওয়াশিংটন ডিসি), সাংবাদিকতায় সৈয়দ মোহাম্মদউল্লাহ (নিউইয়র্ক), রোকেয়া হায়দার (মেরিল্যান্ড), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা ড. নুরুন নবী (নিউজার্সি), তাজুল মোহাম্মদ (টরন্টো), শিল্প–সংস্কৃতিতে ড. পবিত্র সরকার (কলকাতা), রতন মজুমদার (কলকাতা), এস এম নূরুল আলম লাল (টরন্টো), সেলিমা আশরাফ (নিউইয়র্ক), চিত্রকলায় মনিরুল ইসলাম (স্পেন), নাটকে ঝর্ণা চৌধুরী (নিউইয়র্ক), কবিতায় শামস আল মমীন (নিউইয়র্ক), শিল্প–সংস্কৃতিতে শামস আহমেদ (যুক্তরাষ্ট্র), চিত্রকলায় তাজুল ইমাম (নিউইয়র্ক), সাংবাদিকতায় সৈয়দ নাহাস পাশা (লন্ডন), নাটকে গোলাম সারওয়ার হারুন (নিউজার্সি), সংগঠক কিরণ্ময় মণ্ডল (ফ্রান্স), গৌরী চৌধুরী (যুক্তরাজ্য), আহমেদ হোসেন (কানাডা), সিরাজুস সালেকীন (অস্ট্রেলিয়া), কামরুন জিনিয়া (লুইজিয়ানা), অনুবাদ সাহিত্যে আনিসুজ জামান (ক্যালিফোর্নিয়া), প্রবন্ধ/গবেষণা প্রবীর বিকাশ সরকার (জাপান), বাংলা ভাষার সাহিত্যে বিদেশিদের অবদান নাওমি ওয়াতানাবে (টোকিও), প্রবাসী লেখকদের বই প্রকাশে অবদান ওসমান গনি, আগামী প্রকাশনী (ঢাকা)।

প্রথম এনআরবি–পিবিও সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের ঘোষণা পাঠ করেন সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশন এবং স্কলার্স বাংলাদেশ সোসাইটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী দিলারা আফরোজ খান রূপা। সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর এনআরবি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি এম ই চৌধুরী শামীম।