আটলান্টিস ইজ কলিং এসওএস ফর লাভ

অলংকরণ: আরাফাত করিম

ইরা থাকে আমেরিকার সানডিয়াগো শহরে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া যে বাড়িটাতে ও থাকে, সেটা পাহাড়ের চূড়ায়। ওর বেডরুমের পাশে একটা কাঠের ব্যালকনি। এ জায়গাটা ওর ভীষণ প্রিয়। সকালে সূর্যোদয় দেখে, বিকেলে সূর্যাস্ত। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখে দূরের ফ্রিওয়ে, গাড়ির সারি আর দূরে পাহাড়ে অন্য বাড়িগুলোর আলো। আকাশের তারা বা চাঁদের অপূর্ব আলো। পেশায় ও একজন আইনজীবী। মানুষের সেবা নিয়ে ব্যস্ত। জীবনটা খারাপ কাটছে না ওর। পরশু ওর মা–বাবা গেছেন সাত দিনের ক্রুজে। বাসায় ও একা। শনিবারের অলস মায়াময় একটা সকালের শুরু হয়েছে আজকে। মাত্র দিনের প্রথম চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছে ও।

এমন সময় শান্তার ফোন এল। শান্তা ওর দূর সম্পর্কের কাজিন। বয়সে দুজনই কাছাকাছি। শান্তা বলল ইরু আমার বন্ধুর বড় ভাই সানডিয়াগো আসবেন কাজে, আজকেই ল্যান্ডিং। বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসতে পারবি? হোটেলে থাকবেন উনি। একটু শপিংয়ে সহায়তা করিস। দেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উনি। ইরা বলল তো? আমি মাত্র দুই দিন ছুটি পাই। এতটুকু সময় ওনাকে দিয়ে দিলে আমার রেস্ট হবে? শান্তা বলল, যা না আইলসা। বেশি গুরুত্বপূর্ণ লোকজন ভাব ধরে থাকে, যা ইরার অসহ্য লাগে। বাবা থাকলে তিনিই আনতেন। যাক শান্তার কথা ফেলতে পারল না ইরা। জানাল গুরুত্বপূর্ণ কে আনতে যাবে ও।  

ইরা প্লেন ট্র্যাক করে দেখল দুপুর ১২টায় আসবেন ইশরাক সাহেব। বিমানবন্দর ডাউনটাউনে। বাসা থেকে ৩০ মিনিটের পথ। বের হয়েই দেখল ঝুমবৃষ্টি। শান্তা ইশরাক ভাইয়ের নম্বর পাঠিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে ইরা জানিয়ে দিল টার্মিনাল–২–এর সামনে এসে ইরা ওনাকে কল করবে। বৃষ্টিতে যেন বাইরে দাঁড়িয়ে না থাকেন। পৌঁছাতে ওর ৪০ মিনিটের মতো লাগল। টার্মিনাল–২–এর সামনে পৌঁছে কল দিতে যাবে, এমন সময় দেখল লম্বা শ্যামলা একটা ছেলে বৃষ্টিতে ভিজছে। কেন যেন মনে হলো এটা ইশরাক ভাই হতে পারেন। কল দিতেই ছেলেটা ফোন ধরলেন। বোকা নাকি বিশিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভদ্রলোক?

ইরা ছাতা হাতে নামল। গাড়িতে টাওয়েল ছিল ভাগ্যিস। সৈকতে যাওয়ার কথা ছিল গত সপ্তাহে। নামানো হয়নি টাওয়েলগুলো। ইরা নামতেই ইশরাক বললেন, শান্তা কষ্ট দিল তোমাকে ইরা। কোনো দরকার ছিল না আসার। ইরা একটু হেসে বলল আপনি বসুন, সমস্যা নেই। লাগেজ ধরতেই ইশরাকের হাতের সঙ্গে একটু হাত ছুঁয়ে গেল ইরার। আরে গা এত গরম কেন? জ্বর নাকি?

ইশরাক নিজেই লাগেজ তুললেন পেছনে। তারপর টাওয়েল বিছিয়ে মাথা মুছে বসলেন গাড়িতে। বললেন, যাওয়ার পথে একটা ফিলিং স্টেশনে একটু থামবে ইরা? টাইলেনল কিনব। হোটেলে যদি না পাই? এত ট্রাভেল করি, কখোনো জ্বর হয় না জান? ইরা বলল, তাহলে বাসায় চলুন, খেয়ে টাইলেনল খেয়ে জ্বর কমলে আমি হোটেলে নামিয়ে দিয়ে আসব। ইশরাক বললেন, আর কষ্ট দিতে ইচ্ছা করছে না ইরা। ইরা এই ঝুমবৃষ্টিতে কীভাবে নামাবে ওকে? মাত্র ৩০ মিনিটের পথ। উনি ঘুমিয়ে গেছেন গাড়িতেই। মানুষটা এতটা অসুস্থ?

বাসায় পৌঁছে গ্যারেজে গাড়ি রেখে উবার ইট–এ স্যুপ আর থাই খাবার অর্ডার দিল ও। তারপর ডাকল ইশরাক ভাই গাড়ি থেকে নামুন। ওষুধ আর ডিনার খেয়ে নিন, আপনাকে হোটেলে ড্রপ করব। ইশরাক নামলেন। ইরা ওর বাবার একটা ঘরে পরার কাপড় দিল। গেস্টরুম দেখিয়ে দিল ইশরাককে ফ্রেশ হয়ে নিতে। আধা ঘণ্টা পর খাবার এলে ইশরাককে ডাকল। উনি বললেন কোথায় বসব ইরা? ইরা বলল, আমার উল্টো দিকে বসুন। তেমন কিছুই খেতে পারছেন না উনি। ইরা টাইলেনল দিল। জ্বর মেপে দেখল ১০৩। বলল, আপনি একটু রেস্ট নিন। জ্বর কমলে আমি নামিয়ে দিয়ে আসব।

পরের দুই ঘণ্টা ইশরাক অনেকবার চেষ্টা করেছে উঠতে, কিছুতেই পারেনি। রাতেও আর কিছু খাননি। কোথায় আছেন বুঝতে পারছেন না যেন। মাঝরাতে আরেকটা ওষুধ ওকে খাইয়েছে ইরা। পরের দিন খুব ভোরে উঠলেন ইশরাক। জ্বর নেই, শরীর ঝরঝরে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলেন সূর্য উঠি উঠি করছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলেন ব্রেকফাস্ট বানাবেন অচেনা মেয়েটার জন্য। এক রাতে অনেক ভয় দেখানো হয়েছে। বহু বছর আগে পড়তে এসেছিলেন তিনি এ দেশে। তখন সবই পারতেন। দেখা যাক।

নিচে নেমে দেখলেন ইরা পরোটা বানাচ্ছে, গোল বা চারকোনার বদলে ত্যাড়াবাঁকা শেপের। ইশরাক বললেন, তুমি কষ্ট করছ কেন? ইরা বলল, রাতে কিছুই খেতে পারেননি। এখন একটু যদি পারেন। জ্বর কমেছে? ইশরাক বললেন জ্বর নেই। উনি মনে হয় খুব কম কথা বলেন, কিন্তু ওর চোখের মুগ্ধ দৃষ্টি ইরা কি বুঝে ফেলেছে? বললেন ইরা আমি হোটেলে যাব না। পরশু তো চলে যাব। তুমি আমাকে কাজগুলো শেষ করতে হেল্প কর। পরশু নামিয়ে দিয়ে এসে বিমানবন্দরে। ইরা একটু অবাক হলো, কিন্তু বলল আচ্ছা। ইশরাককে জীবনে ও কখনো দেখেনি। অথচ ওর সবকিছু এত পরিচিত লাগছে কেন?

ওরা বের হতে যাবে, এমন সময় শান্তা ফোন করল। বললাম, নামিয়ে দিয়ে এসেছিস ভাইয়াকে? ইরা বলল না। উনি এখানেই থাকবেন। শান্তা প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে বলল ইরা, উনি ভীষণ বদরাগী, একরোখা একজন মানুষ এবং উনি জীবনে কারও কথা কোনো দিন শোনেননি। রাগ করে আজীবন কারও কারও সঙ্গে উনি কথা বলেন না এবং ওনার একটা হিউজ ফ্যান ক্লাব আছে। জেনেশুনে এমন একজন মানুষের সঙ্গে জীবনে জড়াবি? তোর মূল্য ওর কাছে এক পয়সাও না। ইরা প্রচণ্ড বিরক্ত হলো শুনে। একজন মানুষের সঙ্গে দুই দিন থাকা মানেই ডেটিং না শান্তা। আমি এ দেশে মানুষ হয়েছি।

লইয়ার হিসেবে আমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এত বাজে কথা তুই কীভাবে বলিস?
ইরার মুখটা কালো দেখে ইশরাক জানতে চাইলেন কী হয়েছে তোমার? ইরা বলল কিছু না, চলুন। এরপর কয়েকটা অফিসে গেল ওরা। ইরা পার্কিং লটে বসে থাকল। কাজটা খুব বিরক্তিকর হওয়ার কথা; কিন্তু ইরা দেখল ও শুধু চিন্তা করছে ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে। গাড়িতে ওঠার পথে ইশরাক ভিজে যাবে না তো? ওর তো জ্বর ছিল। কী আশ্চর্য।

অনেক বছর পর এ রকম করে কারও জন্য ভাবছে। রাগী অহংকারী মানুষ ওর দুই চোখের বিষ, কিন্তু ইশরাকের সঙ্গে এসব কিছুই মিলছে না। দুপুরে ইশরাক বললেন, একটা মেক্সিকান দোকানে খাবেন। ডাউন টাউনে ওরা দোকানে ঢুকে দেখে কেমন কেমন লোকজন খাচ্ছে। একজনের কোমরে আবার ছুরি ঝোলানো। ইরার শুকনা চোখ মুখ দেখে ইশরাকের সে কী উইটি হাসি! ইরার রাগ করার কথা অথচ রাগ লাগছে না। ইশরাক খাবার অর্ডার করে সিলভার ওয়ার আর টিস্যু এনে দুজনের সামনে রাখলেন।

কোক দুজনের গ্লাসে ঢেলে দিলেন। খাবার এনে সামনে দিলেন আর কাঁটাচামচ দিয়ে ওর সালাদের একটা টুকরা ইরার মুখের সামনে ধরে বললেন খাও। ইরা খুব অবাক হয়ে চিন্তা করল ওই ভীষণ বদরাগী অহংকারী লোকটা কোথায়? ইরা খেল। ভীষণ মজার খাবার ছিল। ওর বারবার আড়চোখে ছুরি কোমরে রাখা ছেলেটার দিকে নজর দেখে ইশরাক হাসলেন। বললেন, আরে এত বছর এ শহরে আছ অথচ এ রকম কাউকে দেখনি? এত ভয় পাওয়ার কী আছে? ও হয়তো ওর প্রটেকশনের জন্য ছুরি রেখেছে সঙ্গে।

দুপুরের কাজ শেষ হতে বিকেল হয়ে গেল। ইশরাক বলল কাজ শেষ ইরা। এখন তুমি কোথাও নিয়ে গেলে যাব। ওরা সন্ধ্যা নাগাদ টোরি পাইন বিচে গেল। বিচে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ওরা নামল পাড়ে। একটু হাঁটতেই রাতের সানডিয়াগোর ঠান্ডা বাতাসে খুব বেশি ঠান্ডা লাগছিল ইরার। ইশরাক ওর কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটল, ইরার আসলেই কম ঠান্ডা লাগছিল এরপর। একজন অপরিচিত মানুষের সঙ্গে হাঁটছে ও, কেন সেটা মনে হচ্ছে না? রাতে খেতে গেল ওরা একটা জাপানিজ রেস্তোরাঁয়। ইশরাক ওর ছোটবেলার গল্প বলছে আর হাসছে। শান্তা কেন বলল, উনি অনেক কম কথা বলেন? এত সুন্দর করে কথা বলছেন, শুধু শুনতেই ইচ্ছা করছে ইরার। জাপানিজ খাবারগুলো একটুও মজা না। সুশি ছাড়া অন্য কিছু ইরা চেষ্টাও করেনি খেতে আগে কখনো। ইশরাক আবার চামচে করে খাইয়ে দিল ওকে। লোকটা এতটা কেয়ারিং কেন?
রাতে বাসায় ফিরে যে যার রুমে ঢুকে ঘুম। ইশরাক বলেছেন, পরদিন উনি শপিং করবেন। তারপরের দিন ফ্লাইট। সকালে একটু কফি খেয়ে ওরা বেরিয়ে পড়ল।

আউটলেট মলে তেমন পছন্দের কিছু পেল না ইশরাক। ইরার খুব ইচ্ছা করছে ওনার জন্য নীল একটা কিছু কেনে। ব্যাপারটা আজগুবি কিন্তু ইচ্ছা হচ্ছে। কয়েকটা শার্ট বা গেঞ্জি দেখল ও। ইশরাক কিছুতেই কিনবেন না। ওনার পচ্ছন্দ না। উনি তো ওর কেউ না। তাহলে রাগ হচ্ছে কেন? বেশি রাগ হলে ওর চোখে পানি এসে যায়। এই অহংকারী লোকটাকে সেটা ইরা কিছুতেই দেখাতে চাইছে না। তবু ওনার চোখে পড়ল। ইশরাক ভীষণ অবাক হয়েছে। বললেন, তুমি ছোট বাচ্চাদের মতো এত রাগ করছ কেন? এরপর ওরা আবার ওয়েস্ট ফিল্ড শপিং মলে গেল। ওর চেহারা দেখে ইশরাকের মনে হয় মায়া লেগেছিল। বলল, চল ‘আন টাক ইট’ দোকানটা আছে কি না খুঁজে দেখি। দোকানটা পেয়ে কাল রঙের একটা শার্ট উনি নিতে রাজি হলেন। কালো ওনার প্রিয় রং। ওনাকে দেখতে এত চমৎকার লাগছে ইরার। কিন্তু অন্য দোকানে গিয়েই পারফিউম কিনে দেওয়ার জন্য জিদ করলেন উনি। ইরা অনেক বোঝাল আমি তো এখানেই থাকি। তবু পচ্ছন্দ করল ও, ইশরাক কিনে দিলেন।

দুপুরে ওরা একটা আমেরিকান রেস্তোরাঁয় খেতে গেল। সব জায়গায় আগ বাড়িয়ে সবকিছু গিয়ে দিচ্ছে ইশরাক। ইরা মনে মনে ভাবছে লোকটা এ রকম কেন? স্টারবাকসে কফি খেতে গিয়েও একই অবস্থা হয়েছিল। অর্ডার দিয়ে ইরা খেয়াল করল স্ক্যান করে পে করে দেওয়া যাবে এ দোকানে, টেবিলে একটা স্টিকার আছে। দিব্বি পে করে দিল ও। খাওয়া শেষ করে ইশরাক পে করতে গিয়ে বুঝলেন ঘটনাটা। রাগ করে স্টিকারটা তুলে ফেলতে চাইলেন তিনি। আরে এত ছেলেমানুষ কেন উনি?
বিকেলে শপিং শেষ করে বাসায় এসে ইশরাক গোছানো শুরু করলেন সব। ইরা দেখল ইশরাক হোয়াটসঅ্যাপে একটা গান পাঠিয়েছেন মডার্ন টকিংসয়ের।
‘you can trust me anytime…
Lil queenee I am your fool come on, teach me the rule…
Atlantis is calling SOS for love’
গানটা ওর খুব প্রিয় একটা গান। ইরা অবাক হয়ে চিন্তা করল কী সমস্যা ওনার? কিন্তু ইশরাকের খুব ব্যস্ত হয়ে গোছানো দেখে মনে করল উনি হয়তো ভুল করে গানটা পাঠিয়েছেন ওকে। পাঠাতে হয়তো চেয়েছেন অন্য কাউকে। রাতে ওরা টাকো খেল পাশের দোকানে। ইরা বলল, আপনি টিভি দেখবেন? কালকে সকালে ফ্লাইট। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন। টিভি অন করতে গিয়ে দেখা গেল রিমোর্ট কাজ করছে না।

ইশরাক বলল, ইরা বাসায় ব্যাটারি আছে? ইরা ব্যাটারি এনে দিল, ব্যাটারি বদলে দেওয়াতে রিমোট কাজ করছে, কিন্তু বাসার ইন্টারনেটের সঙ্গে স্মার্ট টিভির কানেকশন হচ্ছে না। ইরা বিরক্ত হয়ে ইশরাকের পাশে বসল। ইন্টারনেটের পাসওয়ার্ড দিয়ে কানেক্ট করেই দেখল ওর হাত দুটি ইশরাকের হাতে। ইশরাক ওর ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। এ ব্যাপারটার জন্য ইরা একটুও প্রস্তুত ছিল না। ও মাথা নিচু করে বলে রইল। উনি আর কোনো কথাই বলেননি। ইরা নিজের রুমে চলে গেল শুতে। রাত ১০টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ইশরাক প্রচুর গান শুনলেন, ইরাও শুনল ওর রুম থেকে।
‘ওলিরো কথা শুনে বকুল হাসে
কই তাহার মতো তুমি আমার কথা শুনে হাস নাতো’
বা
‘Suzana, I’m so crazy loving you’

সেই কবে ইরা আরও একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চেয়েছিল। সে চলে গেছে অন্য কারও সঙ্গে। ভালোবাসার বিশ্বাস ওর তখনই উঠে গেছিল। ইশরাককে ওর ভালো লেগেছে কিন্তু উনি কি এসে ওর সঙ্গে থাকবেন? মায়া নিয়ে ভালোবাসা দিয়ে শক্ত করে ওর হাত ধরে রাখতে পারবেন?

সকাল সকাল উঠে টোস্ট করে খেতে খেতে ইশরাক বললেন, আমার বন্ধুর বউরা কেউ কাজ করে না। তুমি চাইলে দেশেই ল প্র্যাকটিস করতে পারো। আমার সঙ্গে তোমার বাংলাদেশে থাকতে হবে। ইরার স্বপ্ন ভেঙেছে তখনই। বলল, মা–বাবা, এ পরিচিত শহর এবং আমার নিজের গড়া ক্যারিয়ার ছেড়ে আমি কোথাও যাব না। আর আমার ভালোবাসার মানুষটার মুখটা আমি ঘুম থেকে উঠে বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে দেখব না, বিকেলে হাত ধরে এক কাপ চা খাব না, সুখে–দুঃখে তার পাশে থাকব না, এমনভাবে লং ডিস্টেন্স বিয়েও আমার পক্ষে করা সম্ভব না।

বিমানবন্দরের পথে ইশরাক অনেক কিছু বললেন। কিছু কথা খুব অপমানসূচক। যদি ভালোই ইরা না বাসবে, তাহলে এই তিন দিন কেন সঙ্গে থাকল? ইরার মাথায় কিচ্ছু ঢোকেনি। ও খুব মন খারাপ করে মনে মনে গাইছে—
‘আমার ভিনদেশি এক তারা…
যাও ঘুম হয়ে যাও চোখে
আমার মন খারাপের রাতে’।

ইশরাককে বিমানবন্দরে নামিয়ে দিয়ে ইরা বাসায় এসে অনেকগুলো গোলাপ পেল। সঙ্গে নোট ভালো এবং আনন্দে থেকো। ইরা মনে মনে বলল, আটলান্টিস ইজ কলিং এসওএস ফর লাভ জান। তুমি শুনতে কি পাও?