শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদফাইল ছবি: প্রথম আলো

ইদানীং ডে লাইট সেভিংসের জন‍্য সময় এক ঘণ্টা পিছিয়েছে। কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে আঁধার নেমে আসে। আজ ফেরার পথটুকুতে হুট করে ঘন কুয়াশা নেমে গেল, হাই বিম দিয়ে গতি কমিয়ে বাসায় ফিরছি। হুমায়ূন আহমেদের অতিপ্রাকৃত বইয়ের ঘটনা মনে পড়ে গেল, ‘মিসির আলি আপনি কোথায়?’ ‘ঠিক এমন কুয়াশা ভরা সকালে চা খাচ্ছেন মিসির আলি, দূর থেকে মাইন্ড কন্ট্রোল করছে তাঁর গল্পের নায়িকা। সে আসছে অতি সুন্দরী বা সাধারণ মেয়েরূপে। আমি এক নিশ্বাসে পড়ছি, কবে মিসির আলি শহরে নিজ বাসায় ফিরবেন এই তো সেদিন।’

পথের মাঝে কিছু মানুষকে ইভিনিং ওয়াক করতে দেখছি। এর মাঝে কেউ কি ‘কালো জাদুকর?’ ভিনগ্রহের কোনো মানবরূপী গাছ? মানুষের বেশে পৃথিবীতে এসেছে অন্ধ বোনের দৃষ্টি ফেরাতে।

কেউ কি আছে ‘কুটু মিয়া’র বেশে? অনন‍্যসাধারণ কোনো রাঁধুনি? কী রোগ হয়েছিল তার, যা চিকিৎসার অতীত?

টুপি পরা মানুষটা কি ‘ম‍্যাজিক মুন্সি’? গ্রামের মসজিদের ইমাম, নিজের বউকে ভালোবাসেন। কোনো অলৌকিক উপায়ে অপূর্ব সুগন্ধি গোলাপ হাজির করবেন বা চা–পাতার সুগন্ধি কোনো আতর? নিজ বাড়ির পেছনের পুলের পানিতে এই পূর্ণিমায় তিনি কি হেঁটে বেড়ান?

দূর পরবাস-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

একটা বাসার আবছা আলোয় দেখলাম একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে। সে কি ‘দেবী’? একা বাসায় কোনো অচিনপুর থেকে নূপুরের ধ্বনি শুনে, খিলখিল হাসি শুনে ও কি ভয় পাচ্ছে? ছোট্ট কাজের ছেলেটাও এসব শুনে হাপুস নয়নে কাঁদছে? অন‍্য বাসায় নীলু নামের কোনো মেয়ে আজকে কি তীব্র ভালোবাসাময় কোনো চিঠি পেয়ে চন্দ্রাহত? সবুজ রুমাল নিয়ে ওর ভালোবাসার পুরুষ কি ওকে বলবে, ‘মেয়ে, তুমি তো ভারি মিথ্যুক। তোমাকে দেখে মেঘের ভারে নত হওয়া কোনো আকাশ মনে হচ্ছে। কেন বললে তুমি সুন্দর না?’

একটু দূরে দেখছি একটা পুলিশ কার, পাশে একজন পুলিশ দাঁড়ানো। তিনি কি ‘হলুদ হিমু, কালো র‍্যাবের’ র‍্যাব? হিমু মাইন্ড কন্ট্রোল করে কুকুর দিয়ে আটক করে রেখেছে সন্ত্রাসীদের? অসীম ক্ষমতার অধিকারী র‍্যাব নিয়ে যাবে তাদের হাজতে। তারা যে প্রকৃতির কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে?

লেখক

হলুদ গেঞ্জি পরা এক লোককে দেখে মনে হচ্ছে হিমু, হাতে একরাশ নীলপদ্ম নিয়ে হেঁটে চলেছে রূপার জন‍্য। রূপা নীল শাড়ি পরে ব‍্যালকনিতে দাঁড়ানো। হিমু কি যাবে শেষ পর্যন্ত রূপার কাছে, নাকি বাদলের বসায় যাবে ওকে বোঝাতে, বাদল পরীক্ষা দিতে বসবে। বাদলের বোন রিংকি নতুন বরসহ জোছনারাতে রওনা হয়েছে কক্সবাজার। তীব্র জোছনায় নতুন জীবনে সুখের শুরু। নাকি হিমু যাচ্ছে বিদেশি মেহমান নিয়ে পানির পাইপে বসে বৃষ্টি দেখতে?

বাসায় পৌঁছে গেলাম ‘দারুচিনি দ্বীপ’–এর ছোট্ট শুভ্রর কাছে। এই তো সেদিন সে বালিশ হাতে একমাথা কোঁকড়া চুল নিয়ে মায়ের দরজায় দাঁড়িয়ে বলত, ‘মা, আমি কি তোমার কাছে শুতে পারি? খাটের নিচে কে যেন বসে আছে।’

রোমান্টিক কোনো গল্প বা ভ্রমণ, ভৌতিক কাহিনি, গ্রাম আর শহরের যেকোনো প্রেক্ষাপট কত সহজ–সুন্দর করে লিখেছেন হুমায়ূন আহমেদ। আমার ‘এই সব দিনরাত্রি’তে তিনি মিশে আছেন, থাকবেন আজীবন। শুভ জন্মদিন প্রিয় লেখক (১৩ নভেম্বর)। পৃথিবীতে আপনি না থাকলে সাহিত‍্যের প্রতি এত তীব্র ভালোবাসা আমার কোনো দিন হতো না। ভালো থাকুন ‘মেঘের ওপর বাড়ি’তে।