হন্টেড হোটেল
বিশ্বাসের দিক দিয়ে আমি প্রচণ্ড আস্তিক হলেও ভূতপ্রেতের ব্যাপারে আমাকে নাস্তিক বলা যেতেই পারে। মুসলিম হিসেবে জিনে বিশ্বাস করি, তবে এ–ও জানি, আমাদের সমাজে জিনের নামে যেসব কাহিনি প্রচার করা হয়, এর ৯৯ অথবা ১০০ শতাংশই ভুয়া ও মনগড়া অথবা মানসিক রোগ কিংবা কোনো রোগের ভুল ব্যাখ্যা।
এরপরও ভূত আমার অত্যন্ত আগ্রহের একটি বিষয়। ভূতের ভালো গল্প পড়তে ভালো লাগে, ভূতের ভালো সিনেমা দেখতে ভালো লাগে এবং মানুষের ‘বাস্তব ভৌতিক’ অভিজ্ঞতা শোনার সুযোগ পেলে তো কথাই নেই।
তা নিজের জীবনে কিছু উদ্ভট ঘটনা ঘটলেও সেগুলোকে ঠিক ‘ভৌতিক’ বলার উপায় নেই। একটি ভৌতিক অভিজ্ঞতা হলে ভালো একটা গল্প বা উপন্যাস সেই কবেই লিখে ফেলতাম!
তা সেই ভৌতিক অভিজ্ঞতা পেতে সেদিন আমাদের টেক্সাসের দক্ষিণের একটি শহরে গেলাম। সংগত কারণেই নাম প্রকাশ করতে চাইছি না, তবে টেক্সাসের যে কেউ একটু পড়লেই বুঝবেন কোন শহরের কথা আমি বলছি।
শহরটা মেক্সিকো উপসাগরের কোলে একটি দ্বীপ। সমুদ্রসৈকত থাকায় পর্যটন নগরীও। যদিও আমেরিকার অন্য অতি বিখ্যাত কিছু সমুদ্রসৈকত নগরীর তুলনায় এটি সেভাবে জনপ্রিয় নয়। কিছুদিন আগেও পানিতে সামুদ্রিক শেওলার গন্ধ পাওয়া যেত।
এবার যে গেলাম, দেখলাম পানি বেশ পরিষ্কার। বাচ্চারাও সমুদ্রে সাঁতার কাটাকাটি করে বেশ আনন্দ পেয়েছে।
আমার জন্ম চট্টগ্রামে, পতেঙ্গা ছিল আমাদের ঘুরে বেড়ানোর জায়গা। পাহাড় থেকে সমুদ্রের বুকে বড় বড় জাহাজ দেখা ছিল আমাদের বৈকালিক বিনোদন। বঙ্গোপসাগর যখন দিন শেষে ক্লান্ত সূর্যটাকে কপ করে গিলে ফেলত, বাড়িতে ফিরতাম ঠিক তার পরেই।
বড় হয়েছি সিলেটে। আমার বাড়ির ছাদ থেকে লাক্কাতুরা চা–বাগান তখন দেখা যেত। পাশেই মিতালি আবাসিক এলাকা ছিল টিলার ওপরে। প্রায়ই বিকালে ও ছোট্ট পাহাড়ি টিলার ওপর ক্রিকেট খেলতে যেতাম। কিছুদিন পরপর পাহাড়, সমুদ্র ইত্যাদি না দেখলে মনটা কেমন হাহাকার করে। তাই আমার শহর ডালাস থেকে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার একটা রোড ট্রিপে বেরিয়ে যাই।
তা এবার ভাবলাম, একটু অ্যাডভেঞ্চারাস হওয়া যাক।
যে শহরে গেলাম, সেখানে একটি অতি বিখ্যাত ভুতুড়ে হোটেল আছে। কেননা এবার সেই হোটেলেই থাকা যাক!
খুব বেশি হলে কী হবে? ভূতের দেখাই তো পাব? তাহলে একটা গল্পও লেখা হয়ে যাবে। আর না হলে চুপচাপ সমুদ্রে গোসল করে শহরের দেশ বিখ্যাত কাবাবের দোকানে কাবাব-পরোটা খেয়ে বাড়ি ফিরে আসব।
বাসার কাউকে জানালাম না যে আমাদের হোটেলটি হন্টেড। বললে আর যাওয়া হবে না।
তা যাওয়ার জন্য রওনা দিতেই গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেল। আস্ত বড় একটা গজাল ঢুকেছে।
লক্ষণটা শুভ নাকি অশুভ বুঝতে পারলাম না। কারণ, সাধারণত গাড়ির এই রোগ নিয়ে ‘ফ্র্যাঞ্চাইজড’ টায়ার শপে গেলে ওরা টায়ার পাল্টে আস্ত নতুন টায়ার ধরিয়ে দেয়। কমসেকম দেড় দুই শ ডলারের ধাক্কা। সঙ্গে ওরা এমনভাবে ভয় দেখায় যে এই মুহূর্তে আমার চারটা টায়ারই না পাল্টালে ভয়াবহ বিপদে পড়ব। আর কিছুক্ষণ ড্রাইভ করলেই আমার বাকি তিন টায়ারও ফেটে যাবে। রাস্তায় তখন কোথায় টায়ারের দোকান খুঁজে পাব? তারপরে যখন বুঝে আমি আতঙ্কিত হয়েছি, তখন ওরা আশ্বস্ত করতে বলে, ‘আমাদের স্পেশাল অফার চলছে। আজকেই সেটা এক্সপায়ার করবে। আজকে তুমি চারটা টায়ার কিনলে এক শ ডলার ছাড় পাবে।’
এগুলো আসলে সবই সেলস টেকনিক। আমেরিকান ব্যবসায়ীরা এ ধান্দায় ওস্তাদ! ওদের সারা বছরই ‘বিশেষ ছাড়’ চলে। এমনভাবে আপনার সামনে প্রচার করবে যেন এখন এই মুহূর্তে না কিনলে আপনি আর জীবনেও এই দামে কিনতে পারবেন না। অথচ বাস্তব অভিজ্ঞতা হচ্ছে, বাতিল মাল ছাড়া নিজের পছন্দের জিনিস বছরের যেকোনো দিনই কিনি না কেন, দাম একই পড়ে।
তা পথের ধারে একটি অখ্যাত টায়ার শপে (স্থানীয় ভাসায় এমন দোকানকে ‘মামা-পাপা’স শপ’ বলে) গেলে ওরা বেশ গভীরভাবে সমস্যা পর্যবেক্ষণ করে বলে, ‘সারাই করতে দশ ডলার লাগবে।’
তা–ও এমনভাবে বলল যে আমি যদি বলি ‘এত দাম! ফাইজলামি পাইছো!’ তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আট ডলারে দিয়ে দেবে।
আমার আতঙ্ক ছিল দেড় শ-দুই শ ডলার না চলে যায়! আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, ‘তুমি নিশ্চিত যে এতেই সেরে উঠবে? টায়ার পাল্টানো লাগবে না?’
সে আরও অবাক হয়ে বলল, ‘শুধু শুধু টায়ার পাল্টাবে কেন? এই টায়ারে আরও কমসে কম তিরিশ হাজার মাইল চালাতে পারবে।’
‘ঠিক আছে।’
ওরা টায়ার সারাই করে দিল। সেই টায়ার আজও টিকে আছে।
আমি একটা ভালো টায়ার শপ পেয়ে গেলাম। ওসব বিখ্যাত টায়ার গ্যারেজগুলোতে আর যাব না। হাজারখানেক ডলার বেঁচে গেল।
যাত্রার শুরুতে এ ব্যাঘাতটা তাহলে খুব একটা মন্দ সংবাদ নিয়ে আসেনি।
তা সেই শহর পর্যন্ত যেতে পথে আর কোনো সমস্যা হলো না। বাকি’স নামের বিখ্যাত গ্যাস স্টেশনে গাড়ির জন্য তেল নিলাম। এত বড় গ্যাস স্টেশন যে হওয়া সম্ভব, সেটা এই গ্যাস স্টেশনগুলো না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। যেন আস্ত একটা সুপারশপ। যখনই যাবেন, দেখবেন লোকে গিজগিজ করছে। সেখানেই বাচ্চাদের বাথরুম করালাম। ওরা হালকা খাওয়াদাওয়াও করল। আমি কফি খেলাম না। আমার বউ দুর্দান্ত কফি বানায়। ওর কফি খাওয়ার পর বাজারি কফি খেতে অরুচি বোধ হয়। লং ড্রাইভে তাই ‘রেডবুল’ই আমার জ্বালানি।
শহরের অতি বিখ্যাত এক বাঙালি দোকানে ভাত খেলাম। ভাত, মাছ, মুরগি, মিষ্টি ইত্যাদি। যদিও এর চেয়ে মজাদার বাঙালি খাবারের দোকান আমার ডালাসেই আছে। আমার আশা ছিল নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস বা জ্যামাইকার বাঙালি রেস্টুরেন্টের মতো স্বাদ হবে। ধারে কাছেও না। শুধু শুধু সময় আর টাকা নষ্ট মনে হলো।
অবশেষে হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।
দেখে অবশ্য বোঝার উপায়ই নেই যে এটাই সেই কুখ্যাত ভুতুড়ে হোটেল। রসিক আমেরিকানরা থিম অনুযায়ী ব্যবসা সাজায়। হন্টেড হাউসগুলো এমনভাবেই সাজানো হয় যে দেখেই মনে হয় এখনই টেবিলের নিচ থেকে কোনো কাটা হাত উঠে এসে আমার হাত খাবলে ধরবে।
কিন্তু এই হোটেলটির মধ্যে তেমন কিছুই পেলাম না। যদিও দেখেই বোঝা যায় এর বয়স এক শতাব্দীর কম হবে না। ভেতরে ফ্লোরের ডিজাইন, আসবাব, স্যান্ডেলিয়ের ইত্যাদি সবই যেন পুরোনো যুগের গৌরবময় ইতিহাসের দীর্ঘশ্বাস। রিসিপশনে সুন্দর দুজন তরুণ তরুণী, হাসিমুখে চেক ইন/চেক আউট করছে। লবিতে অতিথির আনাগোনা। আমরা নাম বলতেই আমাদের রুম নম্বর বলে দিল। কোনো সমস্যাই হলো না।
বাচ্চারা ঘ্যান ঘ্যান করতে শুরু করল কখন সমুদ্রে যাব। তখন রাত হয়ে গিয়েছিল। বললাম যে সকালে উঠেই যাব। কিন্তু ওরা মানতে নারাজ। ওদেরকে এখনই নিয়ে যেতে হবে। ধমকধামক দিয়ে শান্ত করতে হলো।
খিদে পেয়েছিল প্রচুর। গেলাম শহরের বিখ্যাত কিছু বোট রেস্টুরেন্টে। এগুলো হচ্ছে বড় বড় বোট/জাহাজের মধ্যে স্থাপিত কিছু রেস্টুরেন্ট। নোঙর করা থাকে, র্যাম্প দিয়ে হেঁটে জাহাজে ঢুকলেই সেটা আস্ত একটা রেস্টুরেন্ট। বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন জাতের মানুষ দল বেঁধে কিংবা শুধুই দুজনে খেতে এসেছে। একদিকে চলছে লাইভ মিউজিক। সামনে আছে ডান্সফ্লোর। বিভিন্ন বয়সী নর–নারী সুরের তালে শরীর হাত পা দুলাচ্ছে, হুল্লোড় করছে।
আমরা ডেকের একটি টেবিলে বসে খেলাম। সমুদ্র থেকে ভেসে আসছে খোলা হাওয়া। নোনা জলের ঘ্রাণ মিশে আছে তাতে। সাগরের ঢেউ তালে তালে এসে আছড়ে পড়ছে বোটের দেয়ালে। ওয়েস্টার, চিংড়ি, লবস্টার, ক্র্যাব ইত্যাদি মিলিয়ে একটি সি ফুড প্ল্যাটার আছে, যার নাম ‘ক্যাপ্টেইনস স্পেশাল’—ওটাই অর্ডার করলাম। দাম একটু বেশি গেল। কিন্তু আমি তো আর প্রতিদিন এখানে খেতে আসছি না। এ খাবার আমি ডালাসে কোথায় পাব?
বাচ্চারা সাগর দেখেই খুশি। এই রাতেও সাগরের বড় বড় বিভিন্ন জাতের পাখি পানিতে সাঁতরে বেড়াচ্ছে। ওরা পাখি দেখেও মজা পাচ্ছে।
খাওয়াদাওয়া শেষে রাতে ফিরলাম হোটেলে।
এখন এই হোটেলের ব্যাপারে কিছু প্রচলিত ভৌতিক কাহিনি বলে ফেলা যাক।
হোটেলটি যে বছর নির্মাণ করা হয়, এর কয়েক বছর আগেই আস্ত শহরটি একটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এতে বহু মানুষ নিহত হন। প্রচুর নান এবং এতিম শিশুর কবর হয় এই ভূমিতে এবং সেই কবরের ওপরেই হোটেলটির একটি বড় অংশ গড়ে উঠেছে। লোকে বলে, আজও ওরা সেসব নান এবং এতিম শিশুর আত্মার দেখা পায়।
এ ছাড়া এখানে আরেক নারীর ‘অতৃপ্ত’ আত্মাও দেখা যায়।
শোনা যায়, সেই ভদ্রমহিলা নিজের বাগদত্তের জন্য এই হোটেলেই অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের বিয়ের কথা ছিল এই হোটেলে। খবর আসে, তাঁর বাগদত্তের জাহাজটি সাগরে ডুবে গেছে। কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তরুণী হবু বধূটি এর জানালা খুলে নিচে লাফ দেন। ট্র্যাজেডি হচ্ছে, ঘটনার পরেই সেই জাহাজটি তীরে ভেড়ে এবং বাগদত্ত যুবকটি সুস্থাবস্থায় নেমে আসে। জাহাজডুবির খবরটি আসলে গুজব ছিল।
তা এখনো নাকি হোটেলটিতে সেই মেয়েটির দেখা পাওয়া যায়।
আরও টুকিটাকি গল্পগুজব আছে হোটেলটিকে নিয়ে। তবে আমি এসেছি আজ নিজের কোনো গল্প লিখতে।
রাতে হোটেলে ফিরে নিজেদের রুমে ঢুকে শুয়ে পড়লাম। অন্যান্য স্বাভাবিক হোটেলগুলো যেমন হয়ে থাকে, এটিও তেমনই ছিল। কোনো আলাদা বৈশিষ্ট্য নেই, যা দেখে মনে হবে এটি ভুতুড়ে।
দীর্ঘ পথ ড্রাইভ করে গেছি, সবাই ক্লান্ত ছিলাম। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। আমার ঘুম আসে না। এটিও অস্বাভাবিক কিছু না। বিছানা–বালিশ ইত্যাদি বদল হলে আমার ঘুম আসতে দেরি হয়। ভাবলাম একটা গল্পের বই পড়া যাক। এমন সময়ের জন্য মোবাইল ফোনে কিছু বইয়ের পিডিএফ সেভ করা থাকে। সেগুলোর একটা খোলার জন্য মোবাইল ফোন হাতে নিতেই বউ জিজ্ঞাসা করল, ‘জেগে আছো?’
‘হু।’
‘বাবুর খাবারের ব্যাগ এনেছ?’
আমার ছোট ছেলের মাঝরাতে খুব ক্ষুধা পায়। ঘুম ভেঙে উঠলে সে কাঁদে। ওর জন্য ছোটখাটো স্ন্যাকসের ব্যবস্থা তাই রাখতে হয়।
‘না, গাড়িতে রয়ে গেছে।’
বউ এমন একটা নিশ্বাস ফেলল, যার মানে হচ্ছে ‘তোমাকে এতবার বলার পরেও গাড়িতে ফেলে এসেছ? একটা কাজও যদি ঠিকভাবে করতে!’
আমি উঠে দাঁড়ালাম। এমনিতেও ঘুম আসছে না। একটু বাইরের হাওয়া খেয়ে আসা যাক। আর কে জানে, হয়তো সেই মহিলার আত্মার সঙ্গেও করিডরে বা লিফটে দেখা হয়ে যেতে পারে।
‘কী হলো?’
‘ব্যাগ নিয়ে আসি।’
‘থাক, সকালে আনলেও চলবে।’
‘না, উঠেছি যখন, নিয়েই আসি।’
আমি পায়ে স্যান্ডেল চাপিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। পুরো হল খালি। যেন সব হোটেল ঘুমন্ত। রুম থেকে এলিভেটর পর্যন্ত বেশ খানিকটা পথ। নিচে রিসেপশনের সুন্দর তরুণ–তরুণী এখন নেই, এক বৃদ্ধা সেখানে বসে কম্পিউটার মনিটরের সামনে ঝিমুচ্ছেন। হলের দিকে চেয়ারে বসা কিছু মানুষকে দেখলাম। হয়তো হোটেলের অতিথি, সময় কাটাতে নিচে এসে বসেছেন। ঘুম পেলে কামরায় ফিরে যাবেন।
আমি পার্কিং লটে গাড়ি পর্যন্ত গেলাম। শহর এখনো জেগে আছে। আশপাশের হোটেল, দোকান, রেস্টুরেন্টগুলো থেকে আলো, মানুষের কোলাহল ইত্যাদি ভেসে আসছে। সাগরের বিরামহীন ছন্দময় গর্জনও শোনা যাচ্ছে। হোটেলের সামনেই সৈকত। আমার গোটা জীবনের শখ, বৃদ্ধাবস্থায় চাকরিবাকরি ইত্যাদি থেকে অবসর নিয়ে এমনই সাগরতীরবর্তী কোথাও ছোট্ট একটা বাড়ি নিয়ে সেখানেই শেষ জীবন কাটিয়ে দেব। বারান্দা থেকে, নিজের ঘরের জানালা থেকে সাগর দেখা যাবে। সকাল–বিকেল শুধু সমুদ্র দেখব। স্নায়ুর প্রশান্তির জন্য সমুদ্র আর পাহাড়ের কোনো বিকল্প নেই।
এখন মনে হলো বাড়ি না কিনে একটা হোটেল বা মোটেলেও থাকা যায়। বেশ কিছু আমেরিকান বৃদ্ধ–বৃদ্ধা এই কাজটাই করে। ঘর পরিষ্কার করার বা গোছানোর কোন যন্ত্রণা থাকে না, ইলেকট্রিক বিল, গ্যাস বিল, সকালের নাশতা ইত্যাদি নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। হোটেলে থাকো, সমুদ্র দেখো, একঘেয়েমি চলে এলে হোটেল পাল্টে ফেল।
আসল ঘটনা ঘটল রুমে ফেরার সময়ে।
লবি পেরিয়ে এলিভেটরে উঠেই মনে হলো এলিভেটরে আমার সঙ্গে অন্য কেউ আছে। যদিও খালি এলিভেটর, তবু মনে হচ্ছে কেউ একজন আছে। চোখ বন্ধ করলেও আমরা পাশের মানুষের অস্তিত্ব টের পাই না? ব্যাপারটা ঠিক তেমন।
এমন খেয়ালকে পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া ক্লান্ত মন। তার ওপর ভূতের হোটেল। মস্তিষ্ক একটু চাপ তো দেবেই।
নিজের ফ্লোরে এসে ডান দিক বরাবর হাঁটতে শুরু করেছি। মনে হলো কেউ একজন আছে আমার পেছনে। হাঁটছে না, কারণ তেমন পায়ের শব্দ পাচ্ছি না। কিন্তু উপস্থিতি টের পাচ্ছি। মনে হচ্ছে যেন ভেসে ভেসে কেউ আসছে।
পেছন ফিরে তাকালাম। কেউ নেই। নীরব, মানে একেবারেই নিস্তব্ধ। বাতাসেরও শব্দ নেই।
আবার ঘুরে হাঁটতে শুরু করলাম। আবারও একই অনুভূতি। মনে হলো কেউ খুব কাছে ঘেঁষে হাঁটছে।
আবারও পাত্তা দিলাম না। মনের ভূতই আসল ভূত। দেখা যাবে পেছন ফিরলে এবার কিছু একটা দেখব।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর হঠাৎ মনে হলো এই যে আমি এতক্ষণ ধরে হাঁটছি, আমার পথ কিন্তু ফুরোচ্ছে না। মানে এলিভেটর থেকে নেমে ডান দিকে পাঁচ কামরা পেরিয়েই আমার ঘর। যতক্ষণ ধরে হাঁটলাম, ততক্ষণে আমার পৌঁছে যাওয়ার কথা। আমি একের পর এক ঘর পেরিয়ে যাচ্ছি, অথচ আমার রুম পর্যন্ত আমি যেতে পারছি না। এমনও না যে আমার আশপাশের ঘরগুলো, দেয়াল, মেঝে, ছাদে ঝোলানো ঝাড়বাতি ইত্যাদি সব স্থির হয়ে আছে। আমি এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আবার পরমুহূর্তেই সেগুলো সামনে এগিয়ে আসছে। ঠিক যেন একটা লুপের মতো। বৃত্তাকারে আমি ঘুরছি। রুম নাম্বার ৭০৭ এই যে পার হয়ে এলাম, পরের ঘরটাই হওয়ার কথা ৭০৯, অথচ সেটাই আবার ৭০৭ হয়ে যাচ্ছে। থমকে দাঁড়ালাম। এমন কেন হচ্ছে? আমি পেছনে হাঁটা শুরু করলাম। একই কাণ্ড। ৭০৭ আবারও ৭০৭, আবারও ৭০৭। কিছুতেই লিফটের দেখা পাচ্ছি না। কোথায় লিফট? যেখানে লিফট থাকার কথা সেখানেও রুম দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই করিডরের কোনো শুরু বা শেষ নেই। সব ঘরই ৭০৭ নম্বর রুম।
উল্টো ঘুরলাম। নিজের রুম পর্যন্ত যেতে হবে। যেভাবেই হোক। বউকে ফোন দিতে হবে। পকেটে হাত দিয়ে দেখি ফোন নেই। অথচ এমনটা হওয়ার কথা নয়। ফোন যদি সঙ্গে না থাকত, তাহলে আমার গাড়ির দরজা খুলে খাবারের প্যাকেটটা আনতে পারতাম না। আমার গাড়ি লক–আনলক বা চালু হয় আমার ফোনের অ্যাপে বা ব্লুটুথে। আমার ফোনই আমার গাড়ির চাবি। এখনো স্পষ্ট মনে আছে গাড়ি থেকে ব্যাগ নামিয়ে ফোনের অ্যাপেই গাড়ি লক করেছি। তাহলে পকেট থেকে ফোন গায়েব হয়ে গেছে?
বিপদের সময়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। চোখ বন্ধ করে বড় করে একটা নিশ্বাস নিলাম। এই মুহূর্তে ব্রেনের জন্য প্রচুর অক্সিজেন দরকার। সারা দিনের ক্লান্ত উত্তপ্ত মস্তিষ্ক আমাকে নিয়ে খেলছে। যদিও এমন খেলাই আমি মনে মনে চাইছিলাম, তবু এখন চাইছি এটা বন্ধ হোক।
তিনবার গভীরভাবে নিশ্বাস নিয়ে ও ছেড়ে চোখ খুলে দেখি আমি সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। আমার পাশে রুম নম্বর ৭০৭, দেয়ালে ঝোলানো ভিক্টরিয়ান পেইন্টিংটাও একই এবং মাথার ওপরে ঝাড়বাতিও এক। সামনে–পেছনে অনন্ত করিডর।
এবার বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ড লাফাতে শুরু করল। আমি দৌড় শুরু করলাম। কিন্তু ঘটনা একই। আমি যতই সামনে এগোই না কেন, আমি ঠিক সেই একই জায়গাতেই থমকে আছি। এসির ঠান্ডাতেও আমি দরদর করে ঘামছি। বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছি, তবু মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব বাতাস দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
এমন সময়ে আমার সামনের দিকে কয়েক কামরা ছাড়িয়ে একটি ঘরের দরজা খুলে গেল। ভেতরের উজ্জ্বল আলো করিডরে এসে পড়ল।
আমি দৌড় থামিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। ঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারছি না। হাঁটুর ওপর দুই হাতের ভর দিয়ে দিলাম। দৃষ্টি সামনের খোলা দরজার দিকে। মুখ হাঁ করে শ্বাস নিচ্ছি।
খুবই ধীরস্থিরভাবে একটি কুকুর বেরিয়ে এল। কুকুরের ব্রিড সম্পর্কে আমার ধারণা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। জার্মান শেফার্ড, সাইবেরিয়ান হাস্কি, ডোবারম্যান, বুলডগ ইত্যাদি কিছু পরিচিত জাত ছাড়া তেমন কোনো কুকুর ব্রিড হিসেবে চিনি না। এই কুকুরটা বিশাল। কুচকুচে কালো চামড়া। নতুন কেনা চামড়ার জুতার মতোই চকচক করছে এর শরীর। মধ্যরাতে এই ভুতুড়ে হোটেলের রহস্যময় করিডরে এই কুকুরকে দেখেই মনে হচ্ছে যেন প্রেতপুরী থেকে উঠে আসা কোনো শ্বাপদ!
খুবই উদাস ভঙ্গিতে সে আমার দিকে তাকাল। জিব বের করে হাঁপাচ্ছে। জিবের পাশে এর তীক্ষ্ণ দাঁত স্পষ্ট উঁকি দিচ্ছে। চাইলেই আমাকে আস্ত চিবিয়ে খাবার ক্ষমতা এর আছে।
আমি অপেক্ষায় রইলাম এর মালিকের। সে–ও নিশ্চই ঘর থেকে বেরোবে। মালিক ছাড়া একটা কুকুর নিশ্চই এমন হোটেলের রুমে উঠে আসেনি।
কিন্তু এর গলায় কোনো কলার দেখতে পেলাম না। সাধারণত পোষা কুকুরের গলায় কলার বাঁধা থাকে। এর নেই কেন?
আমি জোরে আওয়াজ করলাম। ‘হ্যালো!’
কোনো উত্তর কেউ দিল না। কুকুরটা আমার দিকে তাকিয়ে এবার দৃষ্টি বদলাল। ভালো লক্ষণ না। চোখ জ্বল জ্বল করছে। এমনিতেও আমার কুকুরভীতি আছে। জন্মগত। আমাদের বাংলাদেশে রাস্তাঘাটে প্রচুর পাগলা কুকুরের দেখা মেলে। সেগুলোর কামড়ে লোকের জলাতঙ্ক হয়। নাভিতে চৌদ্দটা ইনজেকশন নিতে হয়। আমার পরিচিত বহু মানুষকেই চৌদ্দটা ইনজেকশন নিতে হয়েছে। এসবের মধ্যে বেড়ে উঠতে উঠতে কুকুরকে আমি বাঘের চেয়েও বেশি ভয় পাই। বইয়ে পড়েছি কুকুর নাকি মানুষের এই ভয়টা পড়তে পারে। এতে ওরা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। তাই বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, কুকুরের সামনে কিছুতেই ভীত হওয়া চলবে না।
কিন্তু এটা যে আমার কন্ট্রোলে নেই। আমি বাচ্চা কুকুর দেখলেই পাশের ব্যক্তির কোলে ঝাঁপিয়ে উঠি, আর এ তো বাঘের সাইজের সারমেয়। আমি আবারও জোরে ডাকলাম, ‘হ্যালো! এনিওয়ান দেয়ার?’
কোনো উত্তর পেলাম না। তবে কুকুরটা আমার দিকে এগোতে শুরু করল।
আমি আল্লাহর নাম নেওয়া শুরু করলাম। শুরুটা করলাম আয়াতুল কুরসি দিয়েই। যদিও নিশ্চিত না এই পরিস্থিতিতে আয়াতুল কুরসি কতটা কাজে দেবে। ওটা তো ইবলিস শয়তানের হাত থেকে রক্ষার কবচ। এইটা একটা জীবন্ত কুকুর। হিংস্র কি না এখনো নিশ্চিত না।
কুকুরটা হাঁ করল। বিশাল ভারী জিব বেয়ে মেঝেতে লালা ঝরছে। আমি আবারও ডাকলাম, ‘এনিওয়ান দেয়ার? প্লিজ হেল্প!’
কারও কোনো সাড়া পাওয়া গেল না।
কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে উঠল। আমি ভয়ে–আতঙ্কে জমে গেলাম। ভয়ংকর সেই ডাক! জোরে জোরে আয়াতুল কুরসি পড়তে লাগলাম। কেউ কি নেই এই ডাক শুনেও এসে দেখে যে একটা কুকুর কোত্থেকে হোটেলের লবিতে এল?
কুকুরটা এবার আমার দিকে দৌড় শুরু করল। চিতার দৌড়ের ব্যাপারে শুনেছি। কুকুরের গতিও যে এমন তা জানতাম না। চোখের পলক ফেলার আগেই সে আমার দিকে তিরের বেগে ছুটে এল। আমি জীবনের শেষ দিন ভেবে নিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।
এরই মধ্যে টের পেলাম কুকুরটি আমাকে অতিক্রম করে আমার পেছনে চলে গেছে। কারও সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে।
আমি দৌড়ে সামনের দিকে এগোলাম। যদিও জানি হয়তো কিছুই লাভ হবেনা, আমি একই জায়গায় থমকে থাকব।
৭০৭ নম্বর রুম পেরিয়ে ৭০৯; ৭০৯ পেরিয়ে ৭১১! আমি এগোচ্ছি! পেছনে কুকুরের হিংস্র গর্জন শোনা যাচ্ছে। হুটোপুটির শব্দও। সে একা নয়। কিছু একটার সঙ্গে লড়ছে সে। সেই প্রাণীরও একটা চাপা গর্জন শোনা যাচ্ছে। পেছনে ফিরে দেখার ক্ষমতা ও সাহস আমার নেই। অবশেষে নিজের রুমে পৌঁছালাম! কি–কার্ড দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলাম। প্রচণ্ড ভয়ে ও ক্লান্তিতে হাঁপাচ্ছি।
কী আশ্চর্য! মোবাইল ফোন আমার পকেটেই পাওয়া গেল।
বউ অবাক হয়ে বলল, ‘কী হলো? এমন হাঁপাচ্ছ কেন?’
‘কিছু না।’
বিস্তারিত বললাম না। সে ভুরু কুঁচকে জানতে চাইল, ‘কিছু ফেলে গেছ?’
‘না।’
‘তাহলে ফিরলে যে? তুমি যাও নাই?’
আমার হাতের ব্যাগ দেখিয়ে বললাম, ‘এই যে।’
সে বিস্মিত হয়ে বলল, ‘গাড়ি থেকে এনেছ?’
‘হু।’
সে আরও অবাক হলো। বলল, ‘তুমি মাত্রই গেলে, এক মিনিটও হবে না, এত জলদি পার্কিং লটে গিয়ে ব্যাগ নিয়ে ফিরলে কী করে?’
এবার অবাক হওয়ার পালা আমার। ওর ভাষায় আমি যাওয়ার পর সে বিছানা থেকে নেমে পানি খাওয়ার জন্য গ্লাসে পানি ঢেলেছে। পানি এখনো মুখে তোলেনি, এরই মধ্যে নাকি আমি ফিরে এসেছি।
অন্যদিকে আমাকে অনেকখানি পথ হেঁটে লিফটে চেপে নিচে লবিতে নেমে দীর্ঘ পথ হেঁটে পার্কিং গ্যারেজে নিজের গাড়ি পর্যন্ত গিয়ে আবার একই পথে ফিরতে হয়েছে। অনন্তকালের একটা লুপে যে আটকে গিয়েছিলাম, সেটার কথা বাদ দিলেও এত দ্রুত আমার পক্ষে ব্যাগ নিয়ে রুমে হাজির হওয়া সম্ভব নয়। কমসে কম বিশ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা সময়তো লাগবেই।
বেচারিকে বিস্তারিত কিছুই বললাম না। বললে ভয়ে আজকে রাতেই হোটেল ছাড়তে চাইবে।
আমি সাহস করে দরজা খুলে একবার করিডরে তাকালাম। একেবারেই স্বাভাবিক, নিস্তব্ধ, জনমানবশূন্য।
হচ্ছেটা কী এখানে? আমার কল্পনা ছিল? কিন্তু আমি যেভাবে হাঁপাচ্ছি, ঘামছি, আমার হাতে বাচ্চাদের স্ন্যাক্সের ব্যাগ ইত্যাদি সবই তো সত্য।
বাকিটা রাত বিছানায় শুয়ে জেগে জেগেই কাটিয়ে দিলাম। শেষরাতের দিকে শরীর আর নিতে পারল না। ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুম ভাঙল ভোরে। বাচ্চারা সাগরে যেতে অধৈর্য হয়ে উঠেছে। হোটেল রুমের জানালা দিয়ে দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি দেখেই উত্তেজিত। সাগরেরও নিজস্ব ভাষা আছে, সেই ভাষায় একটা ডাকও আছে। ওরা সেই ডাক শুনেছে, এখন আর তর সইছে না। সকাল থেকেই ওদের সাঁতারের পোশাক, লাইফ জ্যাকেট ইত্যাদি নিয়ে প্রস্তুত। রুমের ভেতর লাফালাফি উল্লাস শুরু করে দিয়েছে। নাশতাও খেতে আগ্রহী নয়। ওরা এখনই সৈকতে স্যান্ড ক্যাসেল বানাতে চায়। ঢেউয়ের সঙ্গে খেলতে চায়।
আমিও গত রাতের দুঃস্বপ্ন ভুলে যেতে চাই। নতুন দিন, নতুন যাত্রা ভালোভাবে শুরু হোক।
সকালে সবাইকে নিয়ে রওনা হলাম। বিস্ময়কর প্রশ্নটা করল আমার ছোট ছেলে, ‘বাবা, জেসন আমাদের সঙ্গে যাবে না?’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘জেসনটা কে?’
উত্তরটা দিল আমার বড় ছেলে, ‘আমাদের বন্ধু। সে হোটেলে আমাদের রুমে ছিল।’
আমি ভুরু কুঁচকে বললাম, ‘আমাদের রুমে তো কেউ ছিল না।’
ছোট ছেলে বলল, ‘ছিল। আমরা সকালে ওর সঙ্গেই খেলেছি।’
‘তোমরা দুজনই খেলেছো?’
‘হ্যাঁ।’
এরপরে আরও কিছু প্রশ্নোত্তর চলল। বলল যে ওরা নিজেদের বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল, এমন সময় জেসন ওদের ডেকে তুলেছে। একসঙ্গে খেলেছে। এরপরে আমরা ঘুম থেকে উঠতেই ও চলে গেছে।
বাচ্চারা বানিয়ে বানিয়ে অনেক কথা বলে সত্যি, কিন্তু আমার দুই বাচ্চাই এমনভাবে কনসিস্ট্যান্টলি কথাগুলো বলছে যে এটাকে বানিয়ে বলা কথা বলে মনে হচ্ছে না। জেসনের পোশাকের রং কী, চুলের রং কী, উচ্চতা কত ইত্যাদি বর্ণনায় দুই ভাইই সামঞ্জস্যপূর্ণ। এমনটা তখনই সম্ভব যখন কেউ বাস্তবেই কারও সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে। তা ছাড়া বাবার সঙ্গে ভৌতিক প্র্যাংক করার বুদ্ধিও ওদের মাথায় আসার বয়স হয়নি। ওরা তো জানেও না হোটেলটা ভুতুড়ে।
তাহলে কি হোটেলটা নিয়ে যেসব ভৌতিক কাণ্ডের কাহিনি শোনা যায়, ঘটনাগুলো সত্য? সেটাই বা কীভাবে সম্ভব? একটা ভুতুড়ে হোটেলে চেক ইন করলাম আর ভূত দেখে ফেললাম—ভূতের সাক্ষাৎ পাওয়া এত সহজ হলে তো দুনিয়ায় কোনো রহস্যই রহস্য থাকত না।
মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। গত রাতে কুকুরটা কি আমার ওপর আক্রমণ করছিল? ওকে অন্য কেউ (অশরীরী কেউ) সরিয়ে দিয়ে আমাকে রক্ষা করেছে?
নাকি অশরীরী কেউ আমার ওপর পেছন থেকে আক্রমণ করছিল আর কুকুরটা আমার হয়ে লড়েছিল?
অথবা এমন নয়তো যে কুকুর এবং অশরীরী দুজনই আমার ওপর আক্রমণ করতে গিয়ে নিজেরা নিজেরা লড়েছে?
এই জেসন নামের পিচ্চির ঘটনাটাই–বা কী? কে সে?
কে জানে! রহস্যগুলোর উত্তর জানার ইচ্ছাও নেই। যতদ্রুত হোটেল থেকে পালানো যায়, তত ভালো।
**দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]