মানুষ মানুষের জন্য, পৌরসভাগুলো কার জন্য
জুলাই–আগস্ট ২০২৪–এর কালজয়ী বিপ্লব, যা কিনা ‘৩৬ জুলাই’ বিপ্লব বলে বহুল পরিচিত, সে বিপ্লবের পর গত দুই মাস দেশের বেশ কটি জেলা ভ্রমণ করার সুযোগ হয়েছে। প্রবাসে বসবাস করি তবে বছরে একবার স্বদেশ বেড়াতে না এলে মন ভরে না। দেশের টানে, নাড়ির টানে, আত্মীয়তার টানে আসতে হয় বারবার ফিরে। এবারের দেশে আসাটা ছিল একটু ভিন্ন উত্তেজনায় ভরপুর। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান হয়েছে। বলা হচ্ছে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের প্রজন্ম ভৌগোলিক স্বাধীনতার লড়াই প্রত্যক্ষ করেছে ১৯৭১ সালে। এরও আগে ১৯৬৯ সালে দেখেছে ছাত্র আন্দোলন। আমরা দেখেছি স্বাধীনতা–পরবর্তীকালের বাংলাদেশ ও তার ভীত রূপ। এবারকার নতুন বাংলাদেশ দেখার উত্তেজনাটা একটু বেশি ছিল বলে চোখ–কান খোলা রেখে ভ্রমণ করেছি এখানে–সেখানে।
মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য
একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?
ও বন্ধু...
ভুপেন হাজারিকার লেখা ও কণ্ঠে গাওয়া গানটি শুনেছি বহুবার। দেশের যেখানে গিয়েছি, সেখানেই কানে বেজেছে গানটি, বারবার। বিস্ময়ে উপলব্ধি করেছি, গানটির আবেদন কখনো কোনো কালে শেষ হবে না। বরং আবেদনটি প্রতিনিয়ত দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব। দুর্ভাগ্য, আমরা প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হচ্ছি মানুষ হিসেবে। আমরা মানুষ হয়েও মানুষের জন্য হতে পারছি না—সেটা ব্যক্তিগতভাবে, পারিবারিক পরিবেশে, সমষ্টিগতভাবে এমনকি প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও সত্যি।
পৌরসভা কার জন্য
মানুষ যদি মানুষের জন্য হতো, তাহলে পৌরসভাও মানুষের জন্য হতো। কারণ, পৌরসভা মানুষ নিয়েই গঠিত, পরিচালিত এবং মানুষের তথা সমাজের কল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত।
কিন্তু হায়! অভাগা বাংলাদেশে মানুষ মানুষের জন্য নয়। পৌরসভাতো নয়ই! রাস্তাঘাটে, সড়কে, মফস্সলে, শহরে যে খানেই তাকিয়েছি, মনে হয়েছে পৌরসভা আছে। তবে সে প্রতিষ্ঠান গরু–ছাগল আর পশুপাখির জন্য।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে তোলা একটি ছবিটি যেন নীড় তৈরি করার জন্য পাখিদের আহ্বান জানাচ্ছে।
মানুষ মানুষের জন্য নয় বলেই নিচের ছবিগুলোতে দেখছেন রাস্তার পাশে মানুষের ফেলে রাখা ময়লার স্তূপ। আর পৌরসভা মানুষের জন্য নয় বলেই নির্বিকার। যেন এখানে পশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে অভয়ারণ্য, খাবার সংগ্রহের স্থান। সেটা করছি আমরা মানুষ নামধারী অমানুষেরাই। খালি জায়গায়, যত্রতত্র ফেলছি ময়লা–আবর্জনা। তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত পৌরসভা কর আদায় করেই খালাস। সরকারি রাস্তায় বাড়ি তৈরির ইট–বালু ফেলে চলছে কাজ। ধুলো–বালিতে সয়লাব এলাকা। বিধিনিষেধ আছে কিন্তু তদারকির জন্য প্রশাসন কোথায়?
রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম স্থান বায়তুল মোকাররমের উত্তর দিকে এই পথচারী পারাপারের ওভারব্রিজটি কী জানাচ্ছে? একগাদা ধুলো কখনো ঝাড়ুর বাড়ি খেয়েছে বলে মনে হয়নি। বাসস্থানবিহীন মানুষ তবুও সেথায় ঘুমোচ্ছে অঘোরে। সময়ে সময়ে ব্রিজের ওপর বসছে বাজার মেলা। পথচারীদের কসরত করে পার হতে হয় মেলা ভেঙে। আর ভিক্ষুক তো রয়েছেই।
ছবিতে দেখুন রাস্তা বন্ধ করে জমানো হয়েছে আবর্জনা। তদারকের দায়িত্ব পৌরসভার। কিন্তু কোথায় তারা? কোথায় বা এলাকার মানুষ? যারা দাবি তুলবে উচ্চ স্বরে!
রাজধানীর পল্টন, ফকিরাপুল, কমলাপুর ইত্যাদি এলাকায় আবাসিক পল্লির সঙ্গেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছাপাখানা। এই ছাপাখানা থেকে বাতাসে ছড়াচ্ছে অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিক গন্ধযুক্ত বাতাস। যা থেকে শরীরে দ্রুত ছড়ায় ক্যানসার। কিন্তু মাথাব্যথা আছে কারও? কোথায় এলাকাবাসী আর কোথায় প্রশাসন?
আসলে কোথাও কেউ নেই। নেই মানুষ, নেই পৌরসভা, নেই মানবতা। নেই একে অন্যের প্রতি দায়িত্ববোধ। চলছে, চলবে! এটাই এখন বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশিদের নীতিবাক্য।
সচেতনতা তৈরির করার দায়িত্ব যাদের, সেই প্রশাসন, সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ ও দায়িত্বশীল মানুষের বড়ই অভাব। পরিবর্তন চাই না আমরা, আর সেটা যদি ভালোর দিকে হয়, তাহলে তো কথাই নেই! প্রতিবাদ আর প্রতিবন্ধকতা। দুর্ঘন্ধ, ময়লা আর আবর্জনা নিয়েই আমাদের বাস! অথছ আমরা মানুষ! কোথায় আমাদের মনুষ্যত্ব্য! মানুষ আজ আর মানুষের জন্য নয়। তবে পৌরসভা তুমি কার?
*লেখক: কামরুল ইসলাম, সুইডেন
**দূর পরবাস-এ গল্প, ভ্রমণকাহিনি, ভিডিও, ছবি, লেখা ও নানা আয়োজনের গল্প পাঠান [email protected]এ