লন্ডনে ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি আড্ডা: বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত রূপে চাই বাংলা নববর্ষ

১৪৩১ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখে লন্ডনের টেমসতীরে বসেছিল এক মিলন–আড্ডা, যে আড্ডায় সবার কণ্ঠেই ছিল একই চাওয়া, ‘বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত রূপেই আমরা চাই বাংলা নববর্ষ। এ চাওয়া সাময়িক সময়ের জন্য নয়, চিরকালের জন্য।’

গত রোববার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রগতিশীল চিন্তাচেতনায় বিশ্বাসী বন্ধু–স্বজনের উদ্যোগে ডকল্যান্ডের টেমসতীরে অবস্থিত মেম সাহেব রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এ আড্ডায় এমন আকুতিই বেরিয়ে আসে সবার কণ্ঠে। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিরতিহীন এই আড্ডায় যেমন ছিল খাওয়াদাওয়া, তেমনি ছিল ফেলে আসা দিনের বৈশাখী উৎসবের স্মৃতিচারণা, কবিতা আবৃত্তি ও গান। পাশাপাশি ছিল বাঙালির চিরায়ত এই সাংস্কৃতিক উৎসবের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে সৃষ্ট পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ।

শুরুতেই প্রদীপ প্রজ্বালন করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ষাটের দশকের প্রগতিশীল ছাত্রনেতা, বিলাতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হাবিব রহমান। তাঁকে সহায়তা করেন শান্তি দাস ও শ্রেয়া দাশ। এরে সমবেত কণ্ঠে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...’ গানটি গেয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানান অংশগ্রহণকারীরা।

এরপর চলে আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি ও গান।

মজাদার বৈশাখী ভোজে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে অনেকেই স্মৃতিচারণা করেন ফেলে আসা নববর্ষের অনুষ্ঠানগুলো নিয়ে। ওই দিনগুলো কেন হারিয়ে যাচ্ছে, এর কারণ খোঁজারও চেষ্টা করেন কেউ কেউ।

আলোচকেরা বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ পরমতসহিষ্ণুতা, সদ্ভাব, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং বিবেক ও মনুষ্যত্বের দীক্ষা দিয়ে যায় আমাদের। তাই তো আমরা বলে উঠি, “প্রাণে প্রাণে লাগুক শুভ কল্যাণের দোলা”, ‘নবআনন্দ বাজুক প্রাণে”, আজ “মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা”।’ তাঁরা আরও বলেন, তরুণ প্রজন্ম আজ ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা ভুলতে বসেছে। বিশ্বায়নের বিভ্রান্তি থেকে নতুন প্রজন্মকে হতে হবে শিকড়সন্ধানী। সংস্কৃতি ও নৈতিকতার চেতনা জাগ্রত করে বাঙালি হিসেবে গর্বের সঙ্গে নিজেকে তুলে ধরতে হবে। আঁকড়ে ধরতে হবে বাঙালির জাতীয় সংস্কৃতিকে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য দেন সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সত্যব্রত দাশ স্বপন, শাহাব আহমেদ বাচ্চু ও সৈয়দ এনামুল ইসলাম। এ ছাড়া ইমতিয়াজ আহমেদ, শামীম আহমদ খান, সৈয়দ হামিদুল হক, সত্যবাণী সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা, আইয়ুব করম আলী, আনসার আহমদউল্লাহ, রাজনীতিক হরমুজ আলী, নার্গিস কবীর, সৈয়দা ফেরদৌসি পাশা, বাসন্তী দাস, মৌনী চক্রবর্তী, রিয়া চক্রবর্তী, জলের গানের দীপ রায়, ধনঞ্জয় পাল, আয়শা রকিব, হাসনিন চৌধুরী, শামীম আরা বেগম হেনা, আফতাব আহমেদ, অসীম চক্রবর্তী, উতসা রায়, মাহমুদ হাসান মিঠু, হুসনা আলী, রম্য রহিম চৌধুরী, তানভির রুহেল, অজন্তা দেব রায় ও অপু রায় বক্তব্য দেন।

সংগীত পরিবেশন করেন বিলাতের খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী লুসি রহমান, আশ্রাফুল চৌধুরী মিঠু,  লন্ডনের নতুন সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অক্ষর’–এর হুমায়ূন ইলতুত ও জান্নাতইলতুত। বাদ্যযন্ত্রে সহায়তা করেন ধনঞ্জয় পাল, সুভাস দাস ও  শুভজিত সাহা শুভ।

আবৃত্তি করেন মৃদুল দাস, ধনঞ্জয় পাল, নীলুফা ইয়াসমিন হাসান ও টেলিভিশন উপস্থাপিকা ঊর্মি মাজহার।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ সাংবাদিক, সত্যবাণীর উপদেষ্টা সম্পাদক আবু মুসা হাসান। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম আজ ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা ভুলতে বসেছে। বিশ্বায়নের বিভ্রান্তি থেকে নতুন প্রজন্মকে হতে হবে শিকড়সন্ধানী। সংস্কৃতি ও নৈতিকতার চেতনা জাগ্রত করে বাঙালি হিসেবে গর্বের সঙ্গে নিজেকে তুলে ধরতে হবে। আঁকড়ে ধরতে হবে বাঙালির জাতীয় সংস্কৃতিকে।