চাঁদরাত থেকেই খারাপ হয় মন
ঈদের আগের রাতটাকে ছেলেবেলা থেকে পালন করে এসেছি চাঁদরাত হিসাবে। ঈদ আনন্দের শুরুটা হয় চাঁদরাতের সন্ধ্যা থেকে। ঈদ এলে আমাদের প্রবাসীদের বেশি মন খারাপের শুরুটাও হয় এ রাত থেকে। যখন জানতে পারি ছোটবেলার খেলার সঙ্গী, বন্ধু কিংবা পাশের বাড়ির ভাই ঈদ উদ্যাপনে ঘরে ফিরেছে তখন নিজেকে সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ে। নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি চলে আসে। খুব ইচ্ছে হয় গ্রামে ফিরে যেতে। মা-বাবা, আত্মীয়–স্বজন আর বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে। বুকে বালিশ চাপা দিয়ে কত চাঁদরাতে যে অঝোরে কেঁদেছি, তার ইয়াত্তা নেই।
প্রায় আট বছরের প্রবাস জীবনে এক বার রোজার ঈদ পালনের সৌভাগ্য হয়েছে বাড়িতে। বাকি ঈদগুলো মালয়েশিয়ায় কেটেছে। কখনো ভিসা জটিলতা, কখনো পরিবারের চাহিদা মেটাতে বাড়ি ফেরা হয়নি। আমার আশপাশে লাখো প্রবাসী রয়েছে যারা বছরের পর বছর শুধুমাত্র পরিবারকে খুশি রাখতে গিয়ে বাড়ি ফিরে যায়নি। প্রবাস জীবনে এই প্রবাসীরাই আমার সান্ত্বনা। একজন প্রবাসী জীবনে কতটা ত্যাগ স্বীকার করে তা নিজে প্রবাসে না থাকলে হয়তো কখনোই বুঝতামনা।
খুব মনে পড়ছে ঈদের আগের সন্ধ্যায় বাজারের মধুর মোড় কিংবা হাইস্কুল মোড়ে সব বন্ধুরা একত্রিত হওয়ার দিনগুলোর কথা। আড্ডা দিতে দিতে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত সেলুনে একে একে সিরিয়াল দিয়ে চুল কাটাতাম কিংবা সেভ করায় ব্যাস্ত থাকতাম। সেই রাতে ঘুম খুবই কমই হতো। ঈদের নামাজ সকালে হওয়ায় খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হতো।
মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে। ঝলমলে কুয়ালালামপুর শহরেও নীরবতা নেমে এসেছে। বেশিরভাগ মালয়েশিয়ান গ্রামে ঈদ পালন করে থাকেন। শহর তাই অনেকটাই ফাঁকা থাকে। ঈদের মাঠে নামাজ আদায় করবেন বেশির ভাগই প্রবাসী। একে অন্যের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করেই কাটবে এবারের ঈদ।
দূর পরবাসে ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল অ্যাড্রেস [email protected]