ডে হাসপাতাল

ছবি: লেখক

নিকিউ তিত, ছদ্মনাম। আমার ভালো বন্ধু। ইদানীং তার প্রস্রাব বেশ ফাজলামি শুরু করেছে। ঘন ঘন হওয়ার জন্য ছটফট করে। তিত তা ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। এটা হয়তো একটা বড় সমস্যা হতে পারে, এই ভেবে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক দেখানোর সঠিক সিদ্ধান্ত নিল সে। তিতের লাজলজ্জার গভীরতা একটু বেশিই। একজন নার্স বা চিকিৎসকের কাছে প্রস্রাবের সমস্যা লজ্জায় সে বলতে পারবে না। তাই আমাকে সঙ্গে নিল।

ডে হাসপাতাল। আমাদের দেশে উপজেলা বা অঞ্চলভিত্তিক যেমন হাসপাতাল আছে, ঠিক তেমনই দক্ষিণ আফ্রিকাতেও আছে। এসব হাসপাতালই হচ্ছে ডে হাসপাতাল। আবার এই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় দিনের বেলাতে। খুব ভোর থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত খোলা থাকে। তারপর এখানে আর কোনো ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয় না।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কি সাউথ আফ্রিকাতে ইমার্জেন্সি চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। হ্যাঁ, আছে। সামারসেট ওয়েস্ট, ভিক্টোরিয়া, শিশুদের জন্য রেড ক্রিসেন্টের মতো বেশ কয়েকটি হাসপাতাল আছে, যা ২৪ ঘণ্টা প্রয়োজনীয় কার্যক্রম থাকে। এ ছাড়া আরও একটা হাসপাতাল আছে, Groote Schuur Hospital বড় হাসপাতাল। এখানে যাবতীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। এটা কেপটাউনের অবজারভেটরিতে অবস্থিত। এটার চেয়েও বড় হাসপাতাল আছে, সেটা হচ্ছে জোহানেসবার্গের Chris Hani Baragwanath. অন্য দিকে আবার আলেকজান্ডার নামে মেন্টাল হাসপাতালও আছে।

নিকিউ তিত আর আমি রওনা দিলাম ডে হাসপাতালের দিকে। কেন ঘন ঘন প্রস্রাব হচ্ছে, চিকিৎসক দিয়ে তার একটা সুরাহা করতে হবে। হাসপাতালে সকাল সোয়া সাতটায় পৌঁছেও দেখতে পেলাম শত শত রোগী কয়েকটি লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারলাম, এখানে চিকিৎসার কার্যক্রম শুরু হয় খুব সকাল থেকে।

তিতের লাজ–শরম আছে, তা আগেই বলেছি। আমাকে জানিয়ে দিল যেকোনো মাধ্যম দিয়ে লাইনের আগের দিকে দাঁড়ানোর একটা সিস্টেম পাওয়া যায় কি না? আমি চেষ্টায় নেমে গেলাম। কিন্তু কোনো সুরাহা করতে পারলাম না। এখানে কোনো দালালের বীজ খুঁজে পেলাম না।

অবশেষে রিসিপশনের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে গেল তিত। আমি তিতের ডান পাশে দাঁড়িয়ে আছি ওর শক্তি সঞ্চয়ের জন্য। এক পা, দুই পা করে রিসিপশনের সামনে এসে গেলাম। খুব সুন্দর একটা মেয়ে রিসিপশনের দায়িত্বে। দেখে নয়নের তৃষ্ণা জুড়ায় না, বরং চোখের পলক থমকে গেল আমার। লাজুক তিতের মাথা নিচু। পক্ষান্তরে, আমার দুষ্টু বুক চওড়া হয়ে গেছে। ঠোঁট যেন ফরাসি আফিম, দেখলে ফুলগুলো ঝরে ঈর্ষায়।

রিসিপশনে তিতের কেপটাউনে অবস্থানরত অনুমতিপত্র লিপিবদ্ধ করে রোগবিষয়ক চিকিৎসক ঠিক করার জন্য নির্ধারিত একটা কাউন্টারে গেলাম। এ কাউন্টারে রোগীর সমস্যা জানাতে হয়। সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় রোগী কোন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেবে এবং রোগীর জন্য একটা চিকিৎসা কার্ড সরবরাহ করা হয়। ডে হাসপাতালে প্রথম গেলে প্রত্যেক রোগীকে এ চিকিৎসা কার্ড দেয়া হয়। পরবর্তী সময় আর কখনো এ কার্ড সংগ্রহের জন্য সময় অপচয় হয় না।

চিকিৎসা কার্ডে একটা নম্বর থাকে, হাসপাতালের কম্পিউটারে এ নম্বরে ক্লিক করলে রোগীর ডে হাসপাতালে চিকিৎসাসংক্রান্ত সব তথ্যবিবরণী চলে আসে। শুধু হাসপাতালে নয়, যেকোনো ক্লিনিক বা ফার্মেসিতে তাদের কম্পিউটারে ওই নম্বরের সাহায্যে রোগীর চিকিৎসার খবরাখবর পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে যেকোনো রোগের চিকিৎসা নিতে গেলে রোগীকে এ চিকিৎসা কার্ড সঙ্গে করে নিয়ে গেলে ফায়দা বা সুবিধা হয়।

যা–ই হোক, তিতকে নিয়ে চিকিৎসকের রুমের সামনে চেয়ারে বসে আছি। আমাদের আগে আরও ছয়টা রোগী। অবশেষে পৌঁছে গেলাম চিকিৎসকের চেম্বারে। এর মধ্যে তিতের দুবার প্রস্রাব সম্পন্ন করতে হয়েছে। চিকিৎসকের কাছে তিতের সমস্যা বলা হচ্ছে। তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। প্রশ্ন করছেন, প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছি। তবে নিজেদের পক্ষ থেকেও কিছু বলা হচ্ছে।

চিকিৎসকের কাছে সমস্যা বলার সঙ্গে সঙ্গে প্রেসক্রিপশন লেখা শুরু করেননি। অনেক চিকিৎসক আছেন, রোগী তাঁর সমস্যা বলে যাচ্ছেন, আর চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন লিখে ফেলেন। রোগীর কথা বলা শেষ হওয়ার আগেই প্রেসক্রিপশন রোগীর হাতে ধরিয়ে দেন।

বারবার প্রস্রাব হয়, প্রস্রাব ঠেকিয়ে রাখতে পারে না—এ জটিলতার কারণে তিতের আজ হাসপাতালে আসা। চিকিৎসক কয়েকটি টেস্ট দিলেন। টেস্ট সম্পন্নের পর ব্লাডপ্রেশার হাই, পেটের ভেতর গ্যাস সৃষ্টি, পায়ের স্কিনে সমস্যাসহ আরও কয়েকটি রোগের সন্ধান পাওয়া গেল।

তিতকে হাসপাতালে নিয়ে এলাম শুধু প্রস্রাবের সমস্যার কারণে, কিন্তু এখন আরও কয়েকটি রোগ ধরা পড়েছে। তখন আমার মনে পড়ে গেল দিদারের কথা। দিদার একজন রেডিও মেকার। আমাদের পাশের বাজারে তার ইলেকট্রনিকসসামগ্রী মেরামতের দোকান ছিল। এখন আছে কি না, জানা নেই আমার।
ছোটবেলায় আমার একটা রেডিও ছিল। সবাই এটাকে জাহান্নামের বাক্স বলে ডাকত। রেডিওটা একটু বড়সড় ছিল। সাউন্ডে বেশ গর্জন ছিল। সন্ধ্যার দুর্বার অনুষ্ঠানে পল্লিগীতি ছেড়ে দিলে আশপাশের বাড়িগুলোতে লম্পগুলো নিভে যেত। অর্থাৎ তারা বাড়ির আলো নিভিয়ে দিয়ে আবদুল আলিম, নীনা হামিদ, রথীন্দ্রনাথের পল্লি গান শুনত।

একদিন রেডিওটার ভলিউমে রোগ হয়ে গেল। ভলিউমে হাত দেওয়ামাত্র মেঘ চমকানোর মতো ছ্যার ছ্যার করে গর্জন করে উঠত। সেই সমস্যা ঠিক করতে পরদিন সকালে দিদারের কাছে নিয়ে গেলাম। দিদার রেডিওটা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে আরও তিনটা সমস্যার কথা আমাকে জানিয়ে দিল। একটা আইসি পুড়ে গেছে, একটা টেন্ডেস্টার দুর্বল হয়ে গেছে আর ভলিউম সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না।

ডে হাসপাতালে যখন চিকিৎসক তিতকে এতগুলো রোগের কথা জানালেন, তখন আমাকে ওই দিদার কর্তৃক রেডিও মেরামতের কথা মনে হচ্ছিল। দিদারের কাছে যখনই রেডিওর রোগ সাড়াতে নিয়ে গেছি, তখনই একাধিক রোগের চিকিৎসার সুপারিশ এসেছে।

চিকিৎসক দেখেশুনে কয়েকটি টেস্ট দিলেন। রক্তের কয়েকটি টেস্ট, প্রস্রাব টেস্ট আর থুতু পরীক্ষা। এসব টেস্টের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ডে হাসপাতালে আছে। মল পরীক্ষা করার কথাও বলা হয়েছে। তবে পরবর্তী তারিখে তিতকে বাসা থেকে সেটি নিয়ে হাসপাতালে আসতে হবে।

হাসপাতালে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কাজে–কর্মে কোনো প্রকার অবহেলা বা অলসতা দেখাচ্ছেন না। নেই কোনো মাতব্বরি হাবভাব। সব ধরনের চিকিৎসা ও টেস্ট কিন্তু ফ্রি। তবু তাদের কেউই রোগীর সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন না। বস বস ভাব নেই। ধনী, গরিব বা চেহারা দেখে চিকিৎসার পার্থক্য হয় না। ভাবটা এমনই যে চিকিৎসক ও নার্স হচ্ছে রোগীদের কর্মচারী। আঞ্চলিক নেতাদের তো হাসপাতালে পদার্পণ করতে দেখা যায় না।

এটা আমাদের রোগী, এমন দাবি করে কেউ সুপারিশ নিয়ে আসতে দেখিনি। নিয়ম অনুযায়ী, আগে এলে, আগে চিকিৎসা—এমন ভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
আজ শুধু টেস্টের জন্য নিকিউ তিতের কাছ থেকে আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।

একটা বা দুটি রিপোর্ট দ্রুতই পাওয়া গেল। এক মাস পর চিকিৎসক আবার যেতে বলেছেন। এদিন শুধু ব্লাডপ্রেশারের ওষুধ দিয়েছে। কেন ঘন ঘন প্রস্রাব হচ্ছে, আর কেনই–বা প্রস্রাব ঠেকিয়ে রাখতে পারছে না, তার চিকিৎসা বা ওষুধ দেবে টেস্টের রিপোর্ট দেখে আগামী দিনে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক যদি মনে করেন, এই রোগীকে দ্রুত টেস্ট শেষ করে চিকিৎসার প্রয়োজন, তবে তাকে চিঠি দিয়ে অন্য হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে ডে হাসপাতাল রোগীর রোগের ধরন ও রোগের গতিবিধির ওপর নির্ভর করে অন্য হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।

ডে হাসপাতালে আবার কবে আসতে হবে চিকিৎসক দিনক্ষণ নির্ধারণ করেন রোগীর রোগ কতটা খারাপের দিকে আছে, তার ওপর নির্ভর করে। কোনো রোগীকে আসতে বলা হচ্ছে এক মাস পর, আবার কাউকে ২০ বা ১৫ দিন পর। ১০ দিন বা এক সপ্তাহের সময় দেওয়া হচ্ছে। এমনও আছে, চিকিৎসকের পরামর্শে পরের দিনই আবার হাসপাতালে যেতে হয়।

যদি ডে হাসপাতালগুলোতে কোনো একটি টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকে, তবে সংগৃহীত আলামত নিয়ে কর্তৃপক্ষ সেসব টেস্ট নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই হাসপাতালগুলো থেকে করিয়ে থাকে। সুতরাং, পরবর্তী তারিখের আগেই রিপোর্টগুলো রোগীর নামে নম্বরকৃত ফাইলে পৌঁছে যায়। আবার চিকিৎসক তাঁর চেম্বারে থাকা কম্পিউটারে সার্চ দিয়ে রোগীর বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারেন।
আগে এলে আগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কেউ আগে যাওয়ার জন্য ব্যস্ততা দেখাচ্ছে না।

একটা বিষয় লক্ষণীয়, হাসপাতালকে কেন্দ্র করে পাশ দিয়ে কোনো প্যাথলজি গড়ে ওঠেনি। এমনকি কোনো ফার্মেসিও নেই। কাজে কাজেই, রোগী নিয়ে কেউ টানাটানি করে না। চিকিৎসকের কাছ থেকে কেউ প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিয়ে কোনো ওষুধের দোকানে বা প্যাথলজিতে নিতে বাধ্য করে না। কোনো চিকিৎসক কোনো রোগীকে তার পছন্দের দোকানে বা প্যাথলজিতে যেতে ইঙ্গিত করেন না। কোনো দালালের বা সুপারিশকারীর মুখ পর্যন্ত হাসপাতালে বা এর আশপাশে দেখা যায় না। এর কারণ তো আছেই বটে।

পাবলিক সেবা বলে একটা কথা আছে। যে সেবা একটা দেশের জনগণ সেই দেশের সরকার থেকে আশা করে। পাবলিক সেবাগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা একটা গুরুত্বপূর্ণ স্তর। এ দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ফ্রি দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের ফ্রি চিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যেকোনো রোগের জন্য চিকিৎসক, যেকোনো টেস্ট এবং সব ধরনের ওষুধ। চিকিৎসক এমন কথা বলেন না যে এসব টেস্ট অমুক প্যাথলজি থেকে করে নিয়ে এসো। হোক, সে রোগ যতই বড়।

চিকিৎসক শেষ পর্যন্ত লেগে থাকেন রোগীর সুস্থতার জন্য। যদি ডে হাসপাতাল মনে করে রোগী এখন তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তবে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য উপরে উল্লেখিত হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়। তখন ডে হাসপাতাল থেকে রোগীকে একটা লেটার দেওয়া হয়, যা নতুন হাসপাতালে অবশ্যই দেখাতে হয়। যেকোনো ধরনের অপারেশন করতেও এ দেশের হাসপাতাল প্রস্তুত। হাসপাতালের আইসিইউ, সিটভাড়া সবই ফ্রি করা হয়েছে রোগীদের জন্য। অন্যান্য দেশ থেকে এসে যাঁরা এ দেশে বসবাস করছেন, তাঁরাও এই ফ্রি চিকিৎসার আওতায় আছেন।

ছবি: লেখক

ইমার্জেন্সি কোনো রোগী এসে গেলে তারও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে ডে হাসপাতালে। হাসপাতালে বিশাল ফার্মেসি আছে। ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন ফার্মেসিতে জমা দিলে, সেখান থেকে ফ্রি ওষুধ দেওয়া হয়। শুধু কয়েকটি প্যারাসিটামল, হিসটাসিন আর অ্যান্টাসিড দিয়েই রোগীকে বিদায় দেওয়া হয় না। প্রেসক্রিপশনে যতগুলো আইটেম ও যত টাকার ওষুধ থাকে, তার সব কটিই দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে কখনো বলে দেওয়া হয় না, এগুলো দিলাম বাকি ওষুধগুলো বাইরে থেকে কিনে নিয়ো।

একটা দেশে পাবলিক সেবা দিতে চাইলে হাসপাতালে এভাবে গুরুত্ব দেওয়া ভালো। বিশাল বাজেট বরাদ্দ করে কিছু প্রকল্প হাতে নেয় অনেক দেশ। আমার মতে, এমন বিশাল বাজেট হাসপাতালে বরাদ্দ করা উচিত। বরাদ্দ দিয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থা পরিপূর্ণ করতে হবে সবার আগে। লোকদেখানো উন্নয়নের চেয়ে, লোকের হৃদয়ে প্রবেশের উন্নয়ন আগে দরকার। মানুষের সুস্থ দেহ সবার আগে প্রয়োজন। হাসপাতাল হযবরল করে রাখা উচিত নয়।

আমরা কখনোই ভাবতে পারি না যে একটা সরকারি হাসপাতালে টেস্টের জন্য যথাযথ যন্ত্রপাতি থাকবে না। চিকিৎসক তাঁর চেম্বারে আংশিক সময় বা সারা দিন থাকবেন না, অফিস চলাকালে তিনি বাজারে বসে চা-সিগারেট মজলিসে থাকবেন। কেন এক চিকিৎসকের সঙ্গে অন্য চিকিৎসক যুক্তি করে পালাক্রমে স্ব-ঘোষিত অপ্রয়োজনীয় ছুটি কাটাবেন? হাসপাতালের এসব ব্যবস্থা উন্নতি করে পাবলিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

তবে আমি জানতে পারিনি, কীভাবে হাসপাতালের টয়লেটসহ অন্যান্য স্থানে অকলঙ্কিত পরিষ্কার রাখে। নেই কোনো স্যাভলনের গন্ধ, নেই ব্লিচিংয়ের গন্ধ, নেই কোনো ন্যাপথলিন বা প্যারাসিটামলের গন্ধ।

নিকিউ তিতের যে সব টেস্টে সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আবার চিকিৎসকের কাছে গেলাম। চিকিৎসক সবকিছু দেখে ব্যবস্থাপত্র দিলেন এবং এক মাস পর আবার হাসপাতালে আসতে বললেন। হাসপাতাল ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে কর্মস্থলে ফিরলাম। ওষুধ গুছিয়ে সেগুলো কম্পিউটারে লিপিবদ্ধ করার জন্য সংগত কারণেই সময়ের সঙ্গে অধৈর্য যুক্ত হলো। আমাদের মতো শত শত রোগীকে নিয়মমতো ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

নিকিউ তিত আমার থেকে খুব একটা বেশি দূরে থাকে না। পরবর্তী তারিখ ছিল ২০। তিন দিন আগে তারিখ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য হাসপাতাল থেকে রোগীর ফোনে একটা মেসেজ আসে।

২০ তারিখে তিত সকাল সাড়ে ছয়টায় আমার কাছে এসে হাজির। এদিন টেস্ট করার জন্য তিতকে মল নিয়ে হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছিল। আমি ভুলে গেলেও ও কিন্তু ভোলেনি। কারণ, ব্যথা তো তার। কিন্তু তিতের কাণ্ড দেখে আমি হতভম্ব।

দেড় কেজি ওজনের একটা সুইটস বক্স ভরে প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে জড়িয়ে পায়খানা নিয়ে এসেছে। এতে বুঝতে পারলাম আগের দিন দুপুরে ও রাতে যতগুলো খাবার সে খেয়েছে, আজ সকালে পায়খানায় বসে যতটুকু ঝেরেছে, তার সবটুকু এই বক্সে ভরে নিয়ে এসেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কতটুকু এনেছ? উত্তর দিল, দেড় কেজি মতো হবে। তিত উত্তর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করল, এত টুকুতে হবে না?
আমার মেজাজ হয়ে গেল মেলেটারি। পুকুরে নিয়ে ঠান্ডা পানিতে চোবাতে ইচ্ছা করে।

অবশেষে একটা ম্যাচের বাক্সে সামান্য একটু নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছালাম। মল টেস্ট করে চিকিৎসক দেখিয়ে আগামী তারিখ ও নতুন করে ওষুধ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। সকালে না খেয়ে যাওয়াতে যথেষ্ট ক্ষুধার্ত হয়েছিলাম। ডে হাসপাতালে রোগীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা আছে বলে মনে হলো না। তবে বড় হাসপাতালে খাবারের ব্যবস্থা আছে, এমনই দেখেছি।

*লেখক: মাহফুজার রহমান, কেপটাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা