মহাবীর টিপু সুলতানের সমাধি ভ্রমণ
নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ভ্রমণ এবং আত্মীয়স্বজনের চিকিৎসার জন্য বছরে ২–৪ বার আমাকে ভারতে আসতে হয় বিশেষ করে ২০২৫ সালেই আমি ৬ বার ভারত এসেছি আর ভারতের মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের স্থান হলো কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরু সিটি এখানকার চমৎকার আবহাওয়ার কারণে আমি বারবার ছুটে আসি। এখানে যারাই চিকিৎসা এবং ভ্রমণের জন্য আসেন, সবাই একবার টিপু সুলতানের সমাধিসৌধ এবং বিভিন্ন স্থাপনা দেখতে বেঙ্গালুরু সিটি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে মহীশূর যায়। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের বাস জার্নির বিরক্তিকর বিধায় আমার আর যাওয়া হয়ে ওঠে না।
এবার সাহস সঞ্চয় করে বিরক্তিকর যাত্রার মধ্যেও কিছুটা আনন্দ খুঁজে পেলাম। টিপু সুলতানের সমাধিসৌধ প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬-৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রবেশ ফি ৩০ ভারতীয় রুপি।
টিপু সুলতান (বা ফতেহ আলী সাহাব টিপুর জন্ম: ২০ নভেম্বর, ১৭৫০- মৃত্যু: ৪ মে, ১৭৯৯) ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসনকর্তা। তিনি একজন বীর যোদ্ধা ছিলেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি বীরত্বসহকারে যুদ্ধ করেন। তিনি তাঁর শৌর্যবীর্যের কারণে শের-ই-মহীশূর (মহীশূরের বাঘ) নামে পরিচিত ছিলেন। ভারতের স্বাধীনতাকামিতার জন্য তাঁকে ভারতের বীরপুত্র বলা হয়। তিনি বিশ্বের প্রথম রকেট আর্টিলারি এবং বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করেছিল। তিনি তাঁর শাসনকালে বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক উদ্ভাবন চালু করেছিলেন। একটি নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা এবং ক্যালেন্ডারসহ। পাশাপাশি একটি নতুন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা যা মহীশূরের রেশমশিল্পের বিকাশের সূচনা করেছিল।
দূর পরবাস-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
দক্ষিণ ভারতের মহীশূর রাজ্যের শাসক ছিলেন টিপু সুলতান। পিতা হায়দার আলী মহীশূর রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট তাঁর মিত্র ছিলেন এবং ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন। শ্রীরঙ্গপত্তনম গ্রামে কাবেরী নদীর একটি ব-দ্বীপে নির্মিত একটি দুর্গ থেকে রাজ্য শাসন করতেন। বর্তমানে শ্রীরঙ্গপত্তনম গ্রাম দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের মান্ডিয়া জেলার অন্তর্গত। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে ১৭৯৯ সালে নিহত হন। টিপুর এক সেনাপতি মীর সাদিক বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটিশদের সঙ্গে হাত মেলান। পরে তাঁর পরিবারের লোকজনকে ভেলোরের দুর্গে বন্দী করে রাখে ব্রিটিশ শাসকেরা।
জানা যায়, ভেলোরে রাজপরিবারের সদস্যদের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দী করার পর ১৮০৬ সালে একটি বিদ্রোহ হয়। সেই বিদ্রোহে ভিতর ও বাহিরের প্রচণ্ড আক্রমণে শতাধিক ইংরেজ সৈন্য সেদিন নিহত হন। এমন ঘটনা ইংরেজদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার করে। পরে মাদ্রাজ এবং আশপাশের সৈন্য নিয়ে তারা আবার দুর্গটি দখল করে নেয়। ইংরেজরা ওই সময় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। প্রতিশোধের নেশায় ছয় শতাধিক মানুষকে তারা হত্যা করে বলে জানা যায়। ইংরেজরা এই হামলার জন্য টিপুর পরিবার এবং রাজপুত্রদের সন্দেহ করে। কিন্তু বিদ্রোহে তাদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ তারা উপস্থাপন করতে পারেনি। পরে টিপু সুলতানের পরিবারের একটি বড় অংশকে কলকাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয় আর যাদের সন্দেহ করা হয়নি, তাদের ভেলোরে রেখে দেওয়া হয়। এখানে যাঁরা নিহত ও মারা যান তাঁদের দুর্গ থেকে দুই কিলোমিটার দূরের এই টিপু সুলতান গ্র্যান্ড মসজিদের প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। কলকাতা নিয়ে যাওয়ার সময় টিপু সুলতানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র শাহজাদা ওয়াহিদ উল্লাহ সুলতান সেখান থেকে পালিয়ে বর্তমান বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে পরিচয় গোপন করে ওয়াহিদ উল্লাহ নামে সেখানে আশ্রয় নেন। এভাবেই হত্যা, রক্ত আর বিভক্তির ক্ষত নিয়ে টিপু সুলতানের বংশধরেরা ধুঁকে ধুঁকে নিঃশেষ হয়ে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যায়।
*{বাদশাহ
নাসিব উদ-দৌলা
মির ফতেহ আলী বাহাদুর টিপু
Tipu Sultan
রাজত্ব
১৭৮২–১৭৯৯
পূর্বসূরি
হায়দার আলী
প্রাসাদ
মহীশূর
পিতা
Hyder Ali
মাতা
ফকির-উন-নেসা।}