মোহ: সে তো প্রেম নয়
আজ আমার অন্ধকারে হাঁটতে ভীষণ ইচ্ছা হচ্ছে। ঘর থেকে বের হয়ে সামনের রাস্তা দিয়ে একাকী হাঁটতে শুরু করেছি। এখন মধ্যরাত। আকাশে শুক্লা পঞ্চমীর চাঁদ উঠেছে। ভেবেছিলাম একটা অন্ধকার রাত পাব। কিন্তু রাস্তার লাইট আর পঞ্চমীর চাঁদের আলোয় নিঃসঙ্গতা উপভোগ করতে পারছি না। আজ আমি একটা অন্ধকার রাত চেয়েছিলাম। এ শহরে মাঝেমধ্যে সোডিয়াম বাতিগুলো জ্বলে না, চাঁদ ওঠে না, তখন ভীষণ অন্ধকার হয়। এমন একটা রাত আমি আজ চেয়েছিলাম, যেখানে সমস্ত কষ্ট, যন্ত্রণা কিংবা অপ্রাপ্তি অন্ধকারে ডুবিয়ে আমি পালিয়ে আসতে চেয়েছিলাম।
অথচ এমন একটা অন্ধকার রাত পাচ্ছি না। আজ ডুবে যাওয়ার মতো একটা নিঃসঙ্গ বিষণ্ন অন্ধকার নেই। আমার মাঝেমধ্যে স্তব্ধ, নির্জনতায় একাকী ডুবে যেতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু আমার এ শহরে নির্জনতা নেই, অন্ধকার নেই, সন্ধ্যা নেই, ঝিঁঝি পোকার ডাক নেই, নিশুতি নেই, যেদিকে তাকাই, কিচ্ছু নেই।
এখানে অন্ধকার মানে কেবল নিঃস্ব হয়ে যাওয়া কিংবা হারিয়ে যাওয়া। এত দূর হারিয়ে যাওয়া, যেখান থেকে ফিরে আসা আর যায় না। আজ কি আমার মন খারাপ?
এমন এক রাতে শম্পার সঙ্গে মেসেঞ্জারে পরিচয়ের শুরু। অবশ্য আমার লেখায় সব সময় তার মন্তব্য থাকত। হুট করে এই মন-খারাপের রাতে সে নক দিয়েছিল। তারপর অনেক কথা।
আস্তে আস্তে শম্পার সঙ্গে কথা বলা বেড়ে গেল। দিন নেই, রাত নেই, কেমন যেন একটা নেশা হয়ে গিয়েছিল। শম্পার দিক থেকে পাগলামিটা বেশি ছিল। রাগ, অভিমান, মিষ্টি ঝগড়া রোজ হতো। কত গল্প, কত কথা, কত স্বপ্নে বিভোর ছিল মেয়েটি।
বৃষ্টি হলে অনেক পাগলামি করত। সেদিন সারা দিন ঝুমঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি একটা গল্প লিখছিলাম, তখনই মেসেঞ্জারের আওয়াজ।
শম্পাই মেসেজ দিয়েছে। বৃষ্টি হলে শম্পা অনেক রোমান্টিক হয়ে যায়...
—জানেন, বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। আমার বৃষ্টি দেখলে মন কেমন-কেমন করে। মনে হয়, বৃষ্টির জলে সমস্ত দুঃখ কষ্ট ধুয়ে মুছে দিই। আচ্ছা নীল, আপনার কি বৃষ্টি ভালো লাগে? চলেন, একটু ভিজি।
—উঁহু। শৈশবে ভালো লাগত। এখন বৃষ্টি ভালো লাগে না। একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার রাজ্যের জ্বর নেমে আসে। আর এমনিতে তুমি তো জানো, আমি বেশ অসুস্থ। আমি ভিজতে পারব না; বরং তুমি একা একা ভেজো।
—অদ্ভুত মানুষ তো আপনি। এত গল্প, এত কবিতা লেখেন। বৃষ্টি নিয়ে রোমান্সের কী ছড়াছড়ি লেখাগুলোয়, অথচ আপনি একটা আনরোমান্টিক মানুষ।
—তুমি রোমান্টিকতার কী বোঝো?
—অনেক কিছু বুঝি। আসেন ভিজি, তখন বুঝিয়ে দেব রোমান্টিকতা কী?
—বৃষ্টির সঙ্গে রোমান্টিকতার আলাদা কোনো ব্যাপার নেই, শম্পা। এসব শুধু কল্পনা। তেমনই গল্প-কবিতার সঙ্গে বৃষ্টির সম্পর্ক নেই। আমরা নিজেরাই লেখার প্রয়োজনে বৃষ্টি নামাই। কেবল এ ভাবনাই হয়তো বৃষ্টিতে রোমান্টিকতা নিয়ে আসে। খুব গভীরভাবে ভাবলে সম্পর্ক তেমন নেই। ভালোবাসা যদি উপচে পড়ে, তবে সব জায়গায় রোমান্টিকতা অনুভব করা যায়। আর ভালোবাসা না থাকলে বৃষ্টি, পাহাড়, সমুদ্র—কোনো কিছুই রোমান্টিক লাগবে না। তবে যেহেতু আমরা প্রকৃতি ভালোবাসি, তাই হয়তো আগে থেকেই মনে ভালো লাগা থাকে, তবে সেটা রোমান্টিক কোনো ব্যাপার নয়; স্রেফ ভালো লাগা। আমরা কেবল সবকিছু কল্পনা করে নিজেদের মনের মতো এসব ভাবতে পারি। আর গল্প-কবিতার সব লেখায় কেবল এসব উপমায় ব্যবহৃত হয়। মিথ্যা আর সত্যের মাঝে দেখিয়ে দিতে হয় বাস্তবতার চিত্র। কখনো জীবনের সঙ্গে মিলে যায়, কখনো অমিল থেকে যায়। এটা নিয়ে আলাদা রোমান্টিকতার কিছু নেই।
—বিশ্বাস করেন, আমার কাছে আপনি একটা রহস্য। আপনাকে আমি বুঝতে পারি না। কখনো মনে হয়, জগতের সবচেয়ে সুখী মানুষ আপনি। আবার কখনো মনে দুঃখ সযত্নে লালন করে থাকেন। আপনি এমন কেন, কবি? তবে এটা ঠিক যে আপনার ভাবনার জগৎ বেশ বিস্তৃত।
—আমি আমার মতো। আমি আসলে কারও সঙ্গে মেলাতে যাই না। যে যেভাবে ভাবে, আমি সে ভাবনার মতো। অবশ্য এতে আমার কিছু আসে-যায় না।
—আচ্ছা, লেখকেরা কি খুব মিথ্যাবাদী হয়? তারা মিথ্যার ছন্দে ছন্দে ভাবনার বিকাশ ঘটিয়ে লেখে। কিংবা ধরেন, লেখকেরা কাউকে কথা দিয়ে তা খুব সহজে ভঙ্গ করে। তাদের কাছে ভালোবাসা নাকি মূল্যহীন।
—অনেক ভুল জানো তুমি, শম্পা। সত্য আর মিথ্যার পার্থক্যটা খুব কঠিন। লেখালেখি হচ্ছে কল্পনা আর ভাবনার জগৎ থেকে কিছু সৃষ্টির প্রয়াস। এখানে মিথ্যা-সত্যের কোনো জায়গা নেই। বলতে পারো এসবের ঊর্ধ্বে। আর কথা ভঙ্গ সবাই করে না। লেখকেরা আলাদা কেউ নয়। তাদের ভাবনার জগৎ, চাওয়ার জগৎ অন্যদের মতোই। তবে এদের নিজস্ব কিছু চেনাজানা ভাবনার পথ আছে। সেই পথে সবাই সঙ্গী হতে পারে না। তখনই ঝামেলা ঘটে। একটা উদাহরণ দিই। ধরো, লেখক এই মুহূর্তে কোনো একটা লেখা নিয়ে খুব ভাবছে। তুমুল চিন্তাধারায় হয়তো সময় পার করছে। এ সময় সে কাউকে এন্ট্রি দিতে চাইবে না। তখন অন্যজন বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ভুল বুঝবে। হয়তো এভাবেই পার্থক্য তৈরি হয়। লেখকেরা আত্মমগ্ন, নিজেদের মতো।
—বাপরে, এত কিছু মাথায় ধরবে না। বরং আমি বৃষ্টিতে ভিজি। কিছু অনুভূতির মাতাল স্পর্শে একটু আন্দোলিত হয়ে আসি। তারপর এসে অনুভূতির জানান দেব আপনাকে।
—হু, ভেজো। তবে শোনো, সব অনুভূতির জানান দিতে নেই। কিছু কিছু অনুভূতি নিজের মধ্যে নিজেকেই বেশি অনুভব করতে হয়।
—আচ্ছা বুঝলাম।
—আরেকটা কথা, আমাকে কখনো কবি বলা যাবে না। যারে-তারে কবি বলতে হয় না। কবি শব্দটার ওজন আছে। আমি সেটার যোগ্য নই।
—হুম, বুঝলাম।
অভিমান কি না বুঝলাম না। প্রস্থান করল শম্পা। আমিও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।
এভাবেই রোজ রোজ শম্পার সঙ্গে কথা হতো আমার। সময়গুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছিল। ক্রমে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম।
একদিন আমরা দুজন হারিয়ে গিয়েছিলাম ভালোবাসায়। আমাদের দিনগুলো ছিল অন্য রকম আনন্দের। এক জীবনে এতটাই বিমোহিত ছিলাম যে বাস্তবতা ভুলে গিয়েছিলাম। কিছু কিছু প্রেম হারিয়ে যাওয়ার আগে খুব করে জড়ায়। এক জীবনে হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসার ডালি নিয়ে হাজির হয় প্রিয় মানুষটি। এফোঁড়-ওফোঁড় করে ভালোবাসার অত্যাচারে মাতাল করে সে। তাকে পাওয়ার পর মনে হয়, এক জীবনের সমস্ত পাওয়া সে নিয়ে এসেছে। জীবনটা অনেক রঙিন, ভালোবাসায় বিভোর মনে হয়। দিনগুলো দ্রুত হাসি-আনন্দে ভরে ওঠে।
কেউ হারিয়ে যাওয়ার আগে সবটুকু নির্যাস করে দিয়ে ভালোবাসে। তারপর একদিন সেই প্রিয় মানুষ হারিয়ে যায় খুব সংগোপনে। হারিয়ে যাওয়ার কারণ হয়তো সে নিজেও জানে না। একটা মানুষের ভালোবাসার ডালপালাগুলো আস্তে আস্তে যখন বিস্তৃতির জমিন ছাড়িয়ে আকাশে উঠতে থাকে, তখন সে চুপিসারে উড়তে থাকার স্বপ্নের সুতা কেটে হারিয়ে যায়।
আস্তে আস্তে আমার বদলে যাওয়াটা টের পেলাম। কেন জানি আগের মতো আর ভালোবাসতে পারছিলাম না, নাকি আগামীর চিন্তায় অস্থির হচ্ছিলাম। এদিকে শম্পার পাগলের মতো ভালোবাসা আমাকে বেশ ভয় পাইয়ে দিচ্ছে। বেশ কয়েক দিন এই ভাবনায় দিন যাচ্ছে। একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম, বেরিয়ে আসব এই সম্পর্ক থেকে। একটা মেয়েকে মিথ্যা ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখতে চাই না। কোনো এক সন্ধ্যায় তার মুখোমুখি হলাম মেসেঞ্জারে চ্যাটে...তাকে বলতেই সে কান্না জুড়ে দিয়ে বলল...
—নীল, শেষ পর্যন্ত তুমি ছেড়ে যাচ্ছ, এ-ই তো!
—ঠিক তা না।
—তাহলে কী বলো!
—আমি তোমাকে বোঝাতে পারব না, শম্পা। হাজার বললেও তুমি আমার মনের অবস্থা বুঝবে না। কোনো মেয়ে এসব সিচুয়েশন বোঝে না।
—বোঝাতে হবে না আর। আমি জানি, ছেড়ে যাওয়ার বাহানা খুঁজছ। আমাকে নিশ্চয় আর ভালো লাগার কথা নয়।
—কী বলো এসব!
—আচ্ছা নীল, আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে, তাই না।
—কী অদ্ভুত তুমি!
—হ্যাঁ, কিছুটা তো আছি। জানো নীল, তুমি ছেড়ে যাচ্ছ, কষ্ট সে জায়গায় নয়। এত এত বেশি স্বপ্ন দেখিয়ে ভেতরে যে একটা সৌধ তৈরি করেছ, তা হুট করে ভেঙে গেলে বেঁচে থাকা দায়। সেই কষ্ট আমাকে পোড়াবে আজীবন। কেন এত স্বপ্ন দেখালে তুমি, যদি চলেই যাবে!
—প্লিজ শম্পা, বুঝতে চেষ্টা করো। যে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নেই, তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া কি উচিত?
—উচিত-অনুচিত আগে ভাবা দরকার ছিল। জানো নীল, তুমি যখন দুই দিন পর অন্য কারও হবে, সে মানুষটা তোমার কাছে চব্বিশ ঘণ্টা থাকবে, যেখানে আমার থাকার কথা ছিল। এই কষ্টটা তুমি বুঝবে না।
—শম্পা, বাদ দাও না প্লিজ।
—আজই তো শেষ। আর কথা হবে না, দেখা হবে না। আজ একটু কথা বলতে দাও, নীল। জানো, দুই দিন পর বিয়ে করবে। নতুন মানুষটিকে ভালোবাসায় বিভোর করবে, এত দিন যেমন আমাকে বিভোর রেখেছিলে। পার্থক্য আমার বিভোর ভালোবাসা ছিল তোমার আবেগ কিংবা সময় কাটানো আর তারটা হবে শুদ্ধ খাঁটি।
—কী শুরু করলে তুমি!
—জানো নীল, তোমার অফিস থেকে ফেরার অপেক্ষায় অন্য কেউ একজন থাকবে। দরজা খুলে গিয়ে, স্নানের জন্য গামছা এগিয়ে দিতে দিতে চুমু খাবে। এসব ভাবলেই আমার ভীষণ কষ্ট হয়। তুমি কি তা বোঝো?
—জীবনে বাস্তবতা তুমি কখনো দেখোনি। একটা ছেলের দায়িত্ব সম্পর্কে তোমার আইডিয়া নেই। তাই এমন করে ভাবতে পারছ।
—কথা সেটা নয়, নীল। ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলে বাহানার অভাব হয় না। ছুটি দিয়ে দিলাম তোমাকে। শুধু মনে রেখো, তোমাকে আমার কারণে-অকারণে মনে হবে। বুকের ভেতর ধড়ফড় হবে, কানের কাছে হিমেল বাতাসে ধ্বনি, চোখের কোণে পানি না চাইতেই জমে থাকবে, তখন বুঝব...তুমিও আমাকে মনে করছ। যদিও জানি মনে করবে না, তবু ভেবে নেব।
—তুমি এত আবেগপ্রবণ কবে হলে? আগে তো ছিলে না।
—সব সময় ছিলাম। কিন্তু তোমার দেখার চোখ কিংবা বোঝার অনুভূতি ছিল না। তুমি জানো নীল, আমি তোমার চোখের কান্না, আকুতি ছুঁয়ে একদিন বলেছিলাম, খুব ভালোবাসি। একদিন তোমার দুঃখ ছুঁয়ে বলেছিলাম, কোনো দিন ছেড়ে যাব না। দেখো আজও যাইনি। তবে যেতে হচ্ছে, কারণ তুমি ছেড়ে দিচ্ছ। খুব কষ্ট হচ্ছে, নীল। স্পেসিফিক একটা কারণ বলে যাও।
—কোনো কারণ নেই কিংবা অনেক আছে। এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী, শম্পা। কিছুই নেই। সামনে দুঃখ পাওয়া ছাড়া কী আছে? আর আমার অনেক দায়িত্ব। আমি আর পারছি না। আমার মনের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করো।
—হা হা। ছেড়ে যাওয়ার বাহানা থাকে জানতাম। কিন্তু জানতাম না, এত দ্রুত ভালোবাসা হারায়। এক জীবনে এত এত শিক্ষা দিয়ে যাবে বুঝিনি। জানো নীল, রোজ রাতে আমার কষ্ট হবে। যখন তোমার ভবিষ্যৎ বউ রোজ রাতে তোমার বুকে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে থাকবে। কারণে-অকারণে চুমু, আদর দেবে, যা আমার করার কথা ছিল। এসব ভাবলেই আমার মরে যেতে ইচ্ছা করবে। কীভাবে তুমি পারবে বলো!
—আমাকে এখন যেতে হবে, শম্পা। তুমি আমার চেয়ে ভালো কাউকে ডিজার্ব করো। আমি তোমার যোগ্য নই। হ্যাঁ, চাইলে বদদোয়া দিয়ো। তবে তুমি ভালো থেকো, প্লিজ। ভুলে যেয়ো।
—ভালোবাসার মানুষকে কেউ বদদোয়া দেয় না, নীল। ভালো থাকব কি না, জানি না। তবে তোমাকে আর জ্বালাব না। ভুলে যাওয়ার কথা থাক। সেটা সময় বলে দেবে। তুমি যাও।
নীল ধীরে ধীরে চলে যায়। শম্পা অপলক চেয়ে থাকে, যদি একবার সে ফিরে তাকায়। কিন্তু সে যাত্রা পিছু ফিরে আর দেখেনি নীল। ব্যথা আর চোখের জলের সম্পর্ক যেমন, ঠিক তেমন বাস্তবতা মেনে নিয়ে দুপুরের তপ্ত রোদে-ঘামে ভিজে ঘরে ফেরে শম্পা। নীল ছাড়া বাকি জীবন কাটাতে হবে—এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কিছু নেই তার জীবনে। বুকের ভেতর অস্পষ্ট কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে, একটু আগের ঘটনা স্বপ্ন ছিল। জীবনের অফুরন্ত ভালোবাসা নিয়ে একদিন যে মানুষ এসেছিল, আজ কত সহজেই সে হারিয়ে গেল।
মানুষ কেন হঠাৎ এত ভালোবাসা নিয়ে আসে, আবার কেন একদিন কারণ না জানিয়েই হারিয়ে যায়।
শম্পা হয়তো সে প্রশ্নের উত্তর আজও পায়নি।
এভাবেই হয়তো কারও কারও একদিন মোহ ভাঙে। আমার যেমন ভেঙেছিল। আবেগ, অনুযোগ, অভিমান কিংবা ভালোবাসা কোনো একজনের আর কিছুই থাকে না। প্রতিশ্রুতির শিউলি কিংবা বেলি ফুলের মালা অবহেলায় পড়ে থাকে পথের ধুলোয়। একসঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করা দুটি মানুষ খুব সহজেই নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে চলে যায়। মন ভাঙার সমস্ত আয়োজন শেষে...আলাদা হয়ে যায় দুজনার পথ এবং স্বপ্ন।
কিন্তু তারপর? তারপরও কিছু কথা থেকে যায়, কিছু গল্প দুচোখের পাতাজুড়ে লেগে থাকে অনেককাল। সে তো কখনো স্মৃতির পাতায় ভুলে থাকা কোনো হারিয়ে যাওয়া প্রিয় নাম মনে করার গল্প।