অনন্য তীর্থে
প্রবাসের মাটিতে অন্যান্য দেশের মতো এ দেশেও বইমেলা হচ্ছে বেশ বড় পরিসরেই। দেখা যাচ্ছে তার বেশ জাঁকজমক আয়োজন! গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের এই আয়োজন বেশি বলেই মনে করছে রাজু। সে তিথিকে এবার বইমেলায় যাওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু তিথির গা-ছাড়া ভাব। বইমেলা নিয়ে সে খুব একটা মনোযোগী নয়। অবশ্য বিগত বছরের বইমেলায় তাকে যেতে রাজি করিয়েছিল। বইও কিনেছিল বেশ কয়েকটা। সেবারের বইমেলা বেশ উপভোগ্যও হয়েছিল তাদের জন্য। কিন্তু এবার তিথি উল্টে রয়েছে!
এবার রাজু বইমেলা নিয়ে বেশি মনোযোগী। তো তিথি সরাসরি ‘না’ বলে দিয়েছে! এ দেশের বাইরে থেকে রাজুর কয়েকজন বন্ধুও আসছে তাদের প্রকাশিত বই নিয়ে। অবশ্য রাজু-তিথি থাকে অন্য স্টেটে। বইমেলার ভেন্যুতে যেতে গাড়িতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার ব্যাপার। তাই হোটেল বুকিং দরকার। ওই স্টেটে আত্মীয়-বন্ধুও রয়েছে রাজুর। তিথিরও। সবাই তারা নিজেদের গণ্ডিতে অনেক ব্যস্ত। এ সময় রাজু তাদের ‘বিরক্ত’ করতে চায় না। সংগত কারণেই সে আগেই তার কর্মস্থলে ছুটি ম্যানেজ করে রেখেছে। তিথি যাবে না—বিষয়টা তাকে একরকম বিব্রতই করছে এখন। তার বন্ধু আসাদ, নোমান, সৈয়দ কবির, সুব্রত—এরা মুখিয়ে আছে, রাজু-তিথির সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দেবে। সবাই মিলে পানাহার করবে। হইচই করবে, যতটা পারবে। পছন্দমতো বই কিনবে! বইমেলায় সমাগত আরও অনেকের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হবে! সবার সান্নিধ্যে দুটি দিন কাটবে বেশ!
দেশের বাংলা একাডেমি চত্বরে আয়োজিত ‘একুশে বইমেলা’কে এ দেশের আবহে আত্মস্থ করবে রাজু। বলা যায়, এটা তার জন্য এক বাড়তি পাওনা! তিথিকে নিয়ে রাজু বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় দু–তিনবার গিয়েছে। রাজুদের স্টেটে, বাঙালি কমিউনিটির উদ্যোগে ‘শহীদ দিবস’, ‘বাংলা নববর্ষ’ আয়োজিত হয় বেশ ঘটা করেই। কিন্তু ‘বইমেলা’ হয়নি কখনো। অবশ্য তার স্টেটে বাংলাদেশের এবং পশ্চিম বাংলার বেশ কয়েকজন লেখক-কবি বসবাস করেন। তাঁদের লেখা এ দেশের এবং বাইরের বাংলা পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে নিয়মিতই দেখতে পায় সে। তার স্টেটের ফারুক, শরীফ, মিল্টন, শুভাশিস—এরাও যাচ্ছে বইমেলায়। তাদের প্রকাশিত বই নিয়েই ঘটা করেই অংশ নিচ্ছে তারা। তাই তাদের ব্যস্ততা বেশি।
আগামীকাল সকালেই বইমেলার উদ্দেশে রওনা হবে রাজু। তিথিও যাবে নিশ্চয়। সেটাই আশা করছে সে। নিজের আনুষঙ্গিক সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে। তিথি ‘ভাব’ দেখাচ্ছে বেশি! রাজু তাই বারবার তাগদা দিচ্ছে তিথিকে। অবশ্য চার দিনের ছুটিতে আছে এখন তিথি। তার কোনো সমস্যা নেই। রাজুও তার নিজের জন্য এ সময় তিথির ছুটিটা বাড়তি পাওনা হিসেবেই দেখছে। কী জানি, কী তার মতিগতি! মোবাইল হাতে ড্রয়িংরুমে অনেকক্ষণ বসে রাজু। নিবিষ্ট হয়ে ফেসবুকে বিচরণ করছে।
রাজু লক্ষ করল, এবারের বইমেলার আয়োজক ও লেখকেরা ফেসবুকজুড়ে প্রচারণায় ব্যস্ত বেশি। বইমেলার আকর্ষণ বাংলাদেশের এবং এ দেশের স্বনামধন্য শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে পশ্চিম বাংলার বেশ কয়েকজন শিল্পী-সাহিত্যিকও থাকছেন। আরও থাকছেন কানাডা-ইউরোপের জনপ্রিয় লেখক-কবি! নিশ্চয় এবারের বইমেলা অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি ব্যাপকতা লাভ করবে।
সে দেখছে, ‘যত বই, তত প্রাণ’—এই প্রতিপাদ্য-স্লোগান সমুন্নত রেখে আয়োজন করা হয়েছে এবারের বইমেলা। আসন্ন বইমেলা নিয়ে অনেকেই তাঁদের ওয়ালে পোস্ট দিচ্ছেন। এ দেশে এবং বাইরে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠিত এবং আরও অনেক উঠতি লেখক-কবি-সাহিত্যিক তাঁদের প্রকাশিত বই নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই বইমেলা নিয়ে অনেকে মুক্ত আলোচনা করছেন। তিন দিনব্যাপী ‘সকাল-সন্ধ্যা’র আয়োজনে কী থাকছে না! নতুন বইয়ের মলাট উন্মোচন, কবিতা আবৃতি, সাহিত্য–সম্পর্কিত আলোচনা, বিতর্ক, নাটক ছাড়াও শিশু-কিশোর, এ দেশের ও দেশ থেকে আগত আমন্ত্রিত প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক আয়োজন বইমেলায় বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। এ দেশের বাংলা পত্রিকার সম্পাদক, শিক্ষক, সরকারি আমলা, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, অনুবাদক, সংস্কৃত-নাট্যজনসহ অনেকের প্রকাশিত বইয়ের পসরা থাকছে। বাংলাদেশ এবং ওপার বাংলার স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা তাদের বই নিয়ে আসছে। বলা যায়, কোনো অজুহাত রাজুকে আটকাতে পারবে না এবং যেভাবেই হোক সঙ্গে তিথিকে নিয়ে যেতে হবে! দেখা যাক।
রাজুর পাশে এসে দাঁড়ায় তিথি।
গুছিয়ে নিয়েছ সব?
তার প্রশ্ন।
এই তো। তা তুমি কদ্দুর?
তিথিকে পাল্টা প্রশ্ন করে রাজু।
কদ্দুর মানে?
মানে, গুছিয়ে নিয়েছ তো সব?
আমি তো বলেছি, এই ছুটিটা ঘরে বসেই কাটিয়ে দেব।
ধুর! কী যে বলো! আগের চেয়ে এবার মজা হবে বেশি! বলেছি না, আসাদ, নোমান, কবির আর সুব্রত আসছে। চলো।
রাজু তিথিকে বোঝাতে চেষ্টা করে, ‘বারবার তোমার কথা বলল ওরা। তুমি যেন অবশ্যই থাকো ওখানে।’ চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস তার।
তথাস্তু!
শোনো, বইমেলা বলে কথা। তুমি তো জানো, ওই নাচানাচির অনুষ্ঠানে আমি রাজু যাই না।
আমি এই তিথিও কি যাই? সেই সময়ও কি আর আছে আমার?
আমার বেলায়ও সেই একই কথা। সময় নেই!
তা বইমেলা বলেই যাচ্ছ, তাই তো?
হ্যাঁ। যাচ্ছি তো!
তিথিকে ডান হাতের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাসে রাজু। তিথি লক্ষ করে, এবারের বইমেলা নিয়ে রাজুর বেশ আগ্রহ। রাজু বলে, ‘তুমি বউ যেমন আমার প্রিয়, তেমনই বইও আমার অনেক প্রিয়। এ দুটিকে আমি ভালোবাসি। অনেক! বোঝো তো?
বুঝব কীভাবে? বইকে তুমি অনেক ভালোবাসো, তা আমি জানি। কিন্তু বউকেও তেমন ‘অনেক ভালোবাসো’, তা আমার বিশ্বাস হয় না!’
বাঁকা দৃষ্টিতে রাজুর দিকে তাকায় তিথি।
হ্যাঁ, বলতে পারো, বউকেও অনেক ভালোবাসি। বিশ্বাস হয় না, কেন? আরে তোমাকে ভালোবাসি বলেই তো বইমেলায় যেতে তোমাকে এত ‘তেল মালিশ’ করছি!
হাসে রাজু।
কী! তেল মালিশ!
কৃত্রিম বিস্ময় দেখায় তিথি।
শোনো তিথি, বই ও বউ নিয়ে আমার নিজস্ব দর্শন রয়েছে।
ও আমার দার্শনিক! তা শুনি কী তোমার দর্শনের অভিসন্দর্ভ?
নড়েচড়ে বসে তিথি।
শোনো, বই ও বউ আমার কাছে অনেক মূল্যবান বিষয়।
এবং...
এবং বই ও বউ যথাসম্ভব মলাটে আবদ্ধ করে রাখাই বিধেয়। তাতে বই থাকবে পরিচ্ছন্ন এবং তার পৃষ্ঠাগুলোও থাকবে অক্ষত। ধুলো-ময়লা ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকেও পাবে সুরক্ষা। বউয়ের বেলায়ও তা–ই। ফলে বই ও বউয়ের প্রকৃত মালিক হবেন প্রীত। আশ্বস্ত।
তিথির প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা করে রাজু।
কী বলছ তুমি এসব! আমি তোমার ওই বইয়ের মতো নাকি? কিসের সঙ্গে কিসের তুলনা! কোথায় আগরতলা আর কোথায়...!
চোখে-মুখে বিস্ময় তিথির।
হ্যাঁ। তাই তো সত্যি দেখছি। মানুষের জন্য বই, সে এক মূল্যবান এবং অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বই একজন মানুষের সবচেয়ে উপকারী বন্ধু! আবার বউও নিশ্চিত তা–ই। একটি বই যেমন জ্ঞানের ভান্ডার, বউও তেমন।
রাজুর ঠোঁটে হাসি। তিথিও হাসে। তার এই হাসিতে কৃত্রিম ভাব ফুটিয়ে তুলতে সচেষ্ট হয় সে। সে প্রশ্ন করে, ‘তাই নাকি? বউ কি আবার তোমার ‘জ্ঞানের ভান্ডার? তা, কবে থেকে?’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে বলে, ‘তা বলতে পারো। শুনে অনেক খুশি হলাম মহাশয়! ধন্যবাদ!’
আমি তো বলছি তা–ই। জ্ঞানীজন বলে গেছেন, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।’ তেমনই আমি বলি, ‘বউ কিনেও কেউ দেউলিয়া হয় না।’
তো, আমি তোমার বউ, বইয়ের মতো ‘ক্রয়-বিক্রয়ের পণ্য’ নাকি? কী যে বলো তুমি!
আরে নাহ। এখানে ‘কিনে’ আনার অর্থ হলো এই তোমাকে আমার ঘরে তুলে আনা। এই আরকি। তবে হ্যাঁ। এক অর্থে তো ঠিক, কিনেই এনেছি! নাকি?
কিনে এনেছ মানে?
ধারালো প্রশ্ন তিথির।
মানে! আমাদের ওই বিয়েতে দেখেছ কতগুলো টাকা বেরিয়ে গেছে!
বেরিয়ে গেছে!
অবাক হয় তিথি।
আরে! তোমার ওই ‘বেরিয়ে গেছে’ মানে আমাদের বিয়ের খরচা বাবদ কতগুলো টাকাই তো...! ঠিক কি না?
বুঝেছি। বউকে দেখো তুমি তোমার ওই বইয়ের মতো। তো আমার বেলায় কী হতে পারে? অর্থাৎ আমি কী ভাবতে পারি? তোমার তথাকথিত ওই বইকে এবং এই তোমাকে নিয়ে আমি কী বলতে পারি? নিশ্চয় আমারও রয়েছে তোমার মতো দর্শনের নিজস্ব অভিসন্দর্ভ! তা ভেবেছ কি?
পাল্টা প্রশ্ন তিথির।
বলো, যা তুমি চিন্তা করো। যা ইচ্ছা করে মন্তব্য করো।
তিথির উত্তরের অপেক্ষা করে রাজু। একটু সময় নিয়ে তিথি বলে, ‘আমি বলি, পুস্তকে ও পুরুষেও বিশ্বাস করা ঠিক নয়।’
যেমন?
অবাক হওয়ার ভান করে রাজু।
যেমন পুস্তক যার কাছে যায়, তার কাছেই নিজেকে সে খুলে ধরে। নিজের অন্তর্গত সমস্ত কিছুই যাকে-তাকে অবগত করে। ঠিক?
রাজুর দিকে তাকায় তিথি।
আরে! কোথায় পুস্তক! এবং কোথায় পুরুষ! হা! হা!
রাজুর প্রলম্বিত হাসি, ‘এখানে আমিও তো দেখছি কোথায় আগরতলা আর কোথায়…! বেশ তো মিলিয়েছ তুমি! হা! হা!’
আমি বলি, পুরুষও তা–ই।
তিথি বলে, ‘সে যে নারীর কাছে যায়, তাকেই বলে, আমি তোমাকেই ভালোবাসি। তোমাকেই চাই।’
বাহ, দারুণ মিলিয়েছ তো!
হেসে রাজু বলে, ‘আমি তো বললাম, বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না। আর তুমি কী বলবে?’
আমি বলি, পুরুষকে ও পুস্তককে আপন করে নারী কিন্তু দেউলিয়া হয়! হ্যাঁ!
বাব্বা! তাই নাকি?
পুলকিত হয় রাজু।
হ্যাঁ তা–ই। সব পুরুষের মতো সব পুস্তকও কিন্তু ‘নারীবাদী’ নয়।
তিথি বলে, ‘সব পুস্তক আবার প্রকৃত উপকারী পুস্তক নয় কিন্তু! তা মানো?’
কেমন…?
এই যেমন পুস্তকমেলায় অগণিত পুস্তক বের হচ্ছে। দেদার। দেখেছ?
দেখেছি।
কী দেখি আমরা? যেমন বিষয়বস্তু। তেমন ছাপার মান।
তিথি বলে, ‘নেই ভাষার শুদ্ধ, তথা প্রমিত প্রয়োগ! নেই সম্পাদনা! যাচ্ছে তাই! যেমন বাঁধাই! তেমন প্রচ্ছদ! এই তো!’
তাই?
হ্যাঁ তাই। যে যা পারছে, তা–ই ‘প্রকাশ’ করছে। সব যেন জঞ্জাল!
তিথি যোগ করে, ‘তো, দাম দিয়ে এসব ‘জঞ্জাল’ কিনে পাঠক তো প্রতারিত ও দেউলিয়া হবেই। হচ্ছেও তা–ই। ওগুলো গিলে পাঠক অবধারিত বদহজমের শিকার হয়! কী বলো?’
তা তুমি কিন্তু ভালোই বলেছ। তো তুমি থাকো তোমার ওই ‘পুস্তক ও পুরুষ’ নিয়ে।
রাজু বলে, ‘আমি থাকি আমার ‘বই ও বউ’ নিয়ে। কী বলো?’
আচ্ছা দেখা যাবে আগামী ভোরবেলায়। কার ঘুম আগে ভাঙে।
মানে?
অতি সোজা।
তাহলে বইমেলায় যাচ্ছ তুমি!
রাজুর চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সে তিথির হাতে হাত রেখে বলে, ‘ইশ্! তিথি, কী যে ভালো তুমি! তোমার মতো বউ আগে আর পাইনি!’
আগে পাওনি মানে?
হাত সরিয়ে নেয় তিথি।
সরি। তোমাকে ওই বই ভেবেই বলে ফেলেছি! তোমাকে পাঠ করতেই তো আমার জীবন…!
তিথির হাত টেনে নেয় রাজু।
আমিও তোমাকে পুস্তকের মতই উল্টেপাল্টে পাঠ করছি। এযাবৎ করছি তো করছিই…!
তাই নাকি? তা বেশ।
আমিও। তুমি কি ভেবেছ বইমেলার খোঁজ আমি রাখি না?
সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় তিথি। সে বলে, ‘এবারের বইমেলা থেকে আমার পছন্দের অনেকগুলো বই সংগ্রহ করব।’
তা জানি, তিথি। চলো তো দেখি তুমি কী কী গুছিয়েছ?
তা তোমার দেখতে হবে না। তোমার হোটেল বুকিং ঠিক আছে তো?
আবার জিগায়!
সশব্দে হেসে ওঠে তিথি। সঙ্গে রাজুও।
আরও একটি ইনটারেস্টিং আয়োজন, তিথি। আমাদের জন্য সুখবরও বলতে পারো। তুমি জানো তো নিশ্চয়।
তা এমন কী ইনটারেস্টিং সুখবর, মহাশয়?
এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে আমাদের টাইগাররা তো চলে এসেছে! এ দেশে তারাও লড়বে কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধে! এটি আমাদের জন্য বিরাট গৌরবের বিষয়!
তা যান না কেন খেলা দেখতে?
আজ্ঞে! সে কি আর আছে মোর ভাগ্যে? তাই বইমেলা নিয়েই তৃপ্ত থাকতে চাই!
নিশ্চয় এ আমাদের জন্য অনেক বড় গৌরবের বিষয়। তা শুভেচ্ছা রইল আমাদের টাইগারদের জন্য।
ধন্যবাদ! নিশ্চয়, তিথি। আমাদের দল ভালো খেলবে।
ভালো তো খেলবেই! ‘বিশ্বকাপ’ও ছিনিয়ে নেবে!
কেন নয়? সেই স্বপ্ন তো লালন করি আমরা সবাই!
আমারও সেই একই কথা, রাজু!
ধন্যবাদ! অনেক ধন্যবাদ।
রাজুকে বেশ প্রাণবন্ত দেখাচ্ছে। সে বলল, ‘চলো লক্ষ্মীটি। রাতের খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি। কাল ভোরে কাঁটায় কাঁটায় ছয়টায় যাত্রা করব।’
ডাইনিং স্পেসের দিকে পা বাড়িয়ে বলে, ‘বন্ধুদের বলে রেখেছি, কাল বেলা দুইটায় দেখা হবে সবার সঙ্গে।’
চলো। টেবিলে খাবার রেখে এসেছি। এতক্ষণে নিশ্চয় ঠান্ডা হয়ে গেছে।
তিথিকেও বেশ সপ্রতিভ দেখছে রাজু। এ সময় তিথিকে দেখতে দারুণ লাগছে!
কী যে ভালো লাগছে আমার! তিথি, তুমিও যাচ্ছ বইমেলায়!
তিথির কাঁধে হাত রেখে সে বলে, ‘ভাবতেই আমার রাতের খাবারের ইচ্ছা উবে গেছে!’
আমারও! তবু চলো অল্প কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। তবে বিছানায় যাওয়ার আগে তোমার হোটেল বুকিংটা চেক করে নিয়ো।
সামনের দিকে পা বাড়ায় তিথি। সে বলে, ‘কাল ভোরে সময় হবে না। গাড়িতে তেল আছে তো?’
সবই ঠিক আছে। চলো, শুভস্য শীঘ্রম! তোমার ‘পুস্তকমেলা’ এবং আমার ‘বইমেলা’ বলে কথা!
রাজু, বলতে পারো এই ‘পুস্তকমেলা’ ও ‘বইমেলা’ আমাদের জন্য মননশীলতায় আলোকিত এক ‘জ্ঞানের তীর্থ’! আমাদের স্বীকার করতেই হবে, দেশে-বিদেশে আয়োজিত ‘পুস্তকমেলা’ বা ‘বইমেলা’ বাঙালিকে পৌঁছে দিয়েছে আরেক উচ্চতায়! আমার বিশ্বাস, এ যুগেও আমরা বাঙালি বইপুস্তক বুকে আঁকড়ে ধরে আছি। বাঙালি আমরা বইপুস্তক পাঠে অভ্যস্ত!
ভালোই বলেছ, তিথি! এই মেলা মননশীলতায় আলোকিত বাঙালির ‘জ্ঞানের তীর্থ’! তো আমাদের এই ‘জ্ঞানের তীর্থ’ আমার বইমেলা; সঙ্গে তোমার পুস্তকমেলাও বটে! আহা, কী আনন্দ...! চলো, আমরা দুই তীর্থযাত্রী আগামীকাল ভোরে এই ‘জ্ঞানের তীর্থ’র উদ্দেশে আমাদের যাত্রা শুরু করি! আমাদের এই তীর্থযাত্রা শুভ হোক!
রাজু, অবশ্যই সাফল্যমণ্ডিত হয়ে উঠবে আমাদের অনন্য এই তীর্থযাত্রা!
খাবার টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে রাজু-তিথি শব্দ করে হেসে ওঠে।