প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্তুগালের জেরেস পার্কে বছরের প্রথম দিনে
জেরেস পর্তুগালের সবচেয়ে বড় ন্যাশনাল পার্ক। অনৈসর্গিক সৌন্দর্যের অন্যতম নিদর্শনে ঘেরা শহরটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। পর্তুগালের নর্থ শহর ব্রাগা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ উদ্যানটি। উঁচু উঁচু পাহাড়বেষ্টিত আঁকাবাঁকা সরু রাস্তায় পাইনগাছের দৃশ্যের পাশাপাশি লেক কিংবা ঝরনার সৌন্দর্য যে কাউকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। লেকের মধ্যে ছোট ছোট স্পিডবোট, স্বচ্ছ পানিতে মাছের ছোটাছুটি খেলা, ঠান্ডা শীতল বাতাসের সঙ্গে পাহাড়ের নির্জন শব্দ ও ছবির মতো আঁকাবাঁকা রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঘরগুলোর দৃশ্য যেন কল্পনার ছবির মতোই মনে হবে। ভ্রমণ শেষে এ যেন রূপকথার গল্প নয়, বাস্তবের মিনি সুইজারল্যান্ডে ভ্রমণের গল্প কাহিনিকেও হার মানাবে।
দিনটি ছিল বুধবার নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ২০২৫ সালের পয়লা জানুয়ারি। আমাদের বাসা জেরেস ন্যাশনাল পার্ক থেকে ২ ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত, শহরটি পর্তুগালের প্রথম রাজা আফনসো হেনরিকস–এর শহর গিমারাইস নামে পরিচিত। তাই আমাদের পরিকল্পনা ছিল বছরের প্রথম দিন জেরেস পার্কে ভ্রমণ করব।
সকালের হালকা নাশতা করে বের হলাম আমরা। যেহেতু বছরের প্রথম দিন সবকিছু বন্ধ থাকবে, সুতরাং সকালে বাসা থেকেই খাবার তৈরি করে সাথে নিয়েছিলাম আমরা।
ঘণ্টাখানেক ভ্রমণের পরই পৌঁছে গেলাম জেরেস পার্কে। আমাদের লক্ষ্য জিরো পয়েন্ট ও ছোট্ট লেকভিউর দৃশ্য উপভোগ করা। পথিমধ্যে মিলল ঘাসের বুকে স্নো ফলের কিছু দৃশ্য। হরিণ ও স্নো ফলের সাইন লাগানো রয়েছে জেরেসজুড়ে। জেরেসের শুরু থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার যাত্রার পর পৌঁছে গেলাম জেরেস জিরো পয়েন্ট। যেখানে ছিল পর্তুগালের শেষ সীমান্ত ও স্পেনের গালিসিয়া শহরে এক প্রান্ত। পয়েন্টটিতে রয়েছে পর্তুগাল ও স্পেনের ইমিগ্রেশন বিভাগের অনেক পুরোনো দাপ্তরিক অফিস, যা নামমাত্র সীমানার দুই পাশে তালা ঝোলানো দুটি দালান কক্ষ। আমাদের দেশের মতো বাস্তবে কোনো বর্ডার বা সীমান্তরক্ষীর দেখা মেলেনি সেখানে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে পর্তুগাল থেকে স্পেনের সীমানায় পা রাখতেই গুগুল থেকে বার্তা এল স্পেনে আপনাকে স্বাগতম।
অতঃপর আমরা জিরো পয়েন্টে ফিরে এলাম, লেক ভিউয়ের সন্ধানে বের হয়ে তার সৌন্দর্যও উপভোগ করলাম। এভাবেই ঘড়ির কাঁটায় কখন যে দুইটা হয়েছে টেরই পেলাম না। খাওয়ার পর্ব শেষ করে জেরেসের কেন্দ্র বিন্দু অর্থাৎ মূল মিউনিসিপ্যালিটির উদ্দেশে রওনা হলাম, যেখানে রয়েছে হোটেল–রেস্তোরাঁ, ট্যুরিস্ট দোকান, ব্যাংক ও অন্যান্য সুপারমার্কেট। মূলত কফি পানের জন্য সেখানে যাওয়া। সেখানে গিয়ে উর্জ জেরেসের ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের পাহাড়ি মৌচাকের আসল মধু সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে ক্রয় করলাম আমরা। যার মূল্য পড়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৫০০ টাকা। খাবার, ছবি তোলা, আড্ডা এবং ৪টি লেবু চুরির মধ্য দিয়ে একরাশ ক্লান্তি নিয়ে ইতি পর্তুগালের সবচেয়ে বড় পার্ক জেরেস ভ্রমণ।
*দূর পরবাস-এ গল্প, ভ্রমণকাহিনি, ভিডিও, ছবি, লেখা ও নানা আয়োজনের গল্প পাঠান [email protected]এ