নিউজিল্যান্ডে বিজয় দিবস উদ্যাপন, আয়োজক বাংলাদেশ কালচারাল সোসাইটি ক্যানটাবেরি
বাংলাদেশ কালচারাল সোসাইটি ক্যানটাবেরির উদ্যোগে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ওয়াইমারি রোড কমিউনিটি সেন্টারে বিজয় দিবস ২০২৫ উদ্যাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সান্ধ্যভোজের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক এস এম আকরামুল কবির ও চিরন্তন চৈতী সম্মানিত অতিথিদের সাদর আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু করেন। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সবার সম্মিলিত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত এবং শিশুদের কণ্ঠে নিউজিল্যান্ডের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। বিজয় দিবসের ওপর বিবিসির একটি প্রামাণ্যচিত্র সংক্ষিপ্তভাবে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার শিকার হওয়া একটি জাতি কীভাবে ৯ মাসব্যাপী একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ-সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে এনে একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করল, সেই ইতিহাস তুলে ধরে। এরপর আসিবুর রহমান বাংলাদেশ কালচারাল সোসাইটি ক্যানটাবেরির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উপস্থাপন করেন।
দূর পরবাসে জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সূচনা হয় শিশুদের কোরাস ‘আমরা সবাই রাজা…আমাদের এই রাজার রাজত্বে’ গানটির মাধ্যমে। এই গানে আইয়ান, ফাউজান, ইযহান, রুদ্র, নয়নিকা, ওয়াফি, মুনতাহা, মুহতাসিম, সারাফ, সামরিন ও আয়ানের প্রাণবন্ত পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে। এরপর নয়নিকা আইচ ‘ধীম তা ধারে ধানি’ নৃত্যের মাধ্যমে মঞ্চে নান্দনিকতা তুলে ধরেন। ওয়াফি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বীরপুরুষ’ কবিতাটি আবৃত্তি করে আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি করেন।
তারপর আইয়ান-অর-রশিদ ‘গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’ গানটি পরিবেশন করেন, যা দর্শকদের গ্রামীণ সৌন্দর্যের শিকড়ের কাছে ফিরিয়ে নেয়। রুদ্র আইচ ও নয়নিকা আইচ দেশাত্মবোধক দ্বৈত গান ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ পরিবেশন করেন এবং শিশু শিল্পীদের দলীয় নৃত্য ‘চলো বাংলাদেশ, চলো বিশ্ব উঠানে’ অনুষ্ঠানে তারুণ্যের উদ্দীপনা যোগ করে। মুনতাহা ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি আবৃত্তির মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার গভীর তাৎপর্য তুলে ধরেন।
পরবর্তী সময়ে নাদিম কাওসার ‘ভ্রমর কইও গিয়া’ গানটি অত্যন্ত আবেগের সঙ্গে পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা বিকাশের অংশ হিসেবে আমাদের আমন্ত্রিত নেপালি শিল্পী সাদিক্ষ্যা তাঁর নৃত্য ‘Darshan Gare’ পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেন। মারজান রহমান ‘সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি, ও আমার বাংলাদেশ’ গানটি পরিবেশন করে দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যান।
এরপর পর্যায়ক্রমে স্বরূপা কুন্ডু ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা’, অপু চৌধুরী ও মুনতাহা কারিনা দ্বৈতভাবে ‘আমি বাংলায় গান গাই’, চিরন্তন চৈতী ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ গানটি এবং পরে উদ্দীপন রায় চৌধুরীর সঙ্গে “নেশা লাগিলো রে” গানটি যুগলভাবে পরিবেশন করে অনুষ্ঠানে আনন্দের রেশ ছড়িয়ে দেন।
লায়লা আক্তার “সেই রেল লাইনের ধারে” গানটির মাধ্যমে ছেলে হারা মা’র বেদনা এবং কনকচাঁপার “সেদিন আর কত দূরে” গানটি সকলের মাঝে আশার আলো জাগিয়ে তুলে। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে সকল শিল্পীদের সম্মিলিত কোরাস পরিবেশনা “মুক্তির মন্দির সোপানতলে” গানটির মাধ্যমে, যা ছিল ঐক্য ও দেশপ্রেমের এক শক্তিশালী প্রকাশ। আমাদের সব থেকে খুদে শিল্পী আইযা রহমান তার ঘূর্ণিপাকে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন।
ক্যানটাবেরির বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি, সহযোগিতা, উৎসাহ ও অকৃত্রিম ভালোবাসা এই আয়োজনকে সফল করেছে। বাংলাদেশ কালচারাল সোসাইটি ক্যানটাবেরির কমিটি সদস্যদের নেতৃত্ব ও পরিকল্পনা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের নিরলস পরিশ্রমের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন এস এম আকরামুল কবির, জুয়েল আইচ, কনকচাঁপা কায়স্থগীর ও আসিবুর রহমান।
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাটি ছিল বিদেশের মাটিতে আমাদের আবেগ, দেশপ্রেম ও ঐক্যের এক অনন্য উদ্যাপন। এই সুন্দর আয়োজনটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে আমাদের শিল্পী, অভিভাবক, স্বেচ্ছাসেবক, কমিটির সদস্য এবং ক্যানটাবেরির স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। অনুষ্ঠানের পরে বাংলাদেশ কালচারাল সোসাইটি ক্যানটাবেরির আয়োজনে মজাদার দেশীয় খাবার পরিবেশন করা হয়।