মোর বীণা ওঠে কোন সুরে বাজি

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর বক্তব্য রাখছেন

অপ্সরা কোমরে হাত রেখে দাঁড়ান। বর্ণনাটিও অপূর্ব। তরুপল্লবে ঘেরা উদ্যান। পাখির কিচিরমিচির। এক ফালি আলোর মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসেন নারী। সমস্ত দেহ তাঁর প্রকম্পিত। বীণা বেজে ওঠে। অনন্য পটভূমি এক। প্রকৌশলী এবং স্থপতিরা এক হচ্ছেন। আবুধাবির প্রবাসী তাঁরা। উপলক্ষ বনভোজন। তারিখ ২৮ জানুয়ারি। স্থান আল ওয়াদবা পার্ক। প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর। বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন।

অপ্সরা সামনে এগোন। দেখেন, প্রিয়জনের নামটি তাঁর মনের কন্দরে। নিভৃতে ভেতরে আরও ভেতরে। ছায়ার আড়ালে। আকুলতা প্রিয়জনের। তোমাকে জড়াতে চাই আমার মাঝে আমারই করে। শহর থেকে দূরের বন–বীথিকার আয়োজন। বন্ধুরা এলেন সপরিবার। প্রকৌশলী আফজাল হোসেন, প্রকৌশলী আহমেদ হোসেন বনভোজন ’২৩ ব্যানারটি তুলে ধরলেন সবার সামনে। তরুণেরা তথ্যগুলো সময়োপযোগী করছেন। প্রকৌশলী হামিদ, প্রকৌশলী হাবিব ওই টেবিলে। টাকা তোলা, র‍্যাফেল কুপন গুছিয়ে রাখার কাজগুলো সারছেন। সংখ্যায় দুই শ পৌঁছাল। জানালেন প্রকৌশলী রেজা। একই কণ্ঠে সবাই বললেন, চমৎকার! প্রকৌশলী সঞ্জয় দে সহযোগিতা করলেন তালিকায় আরও বন্ধুর নাম সংযোজন করে।

রাষ্ট্রদূত এবং টগবগে একদল তরুণ

পাখি ডাকে। সেই সুর মিলিয়ে নেন তরুণেরা। শিশুরা অঙ্কনে মনোযোগ দেয়। ভালোবাসা নিংড়ে দেয় প্রকৃতির জন্য। দেশ, মাটি আর মানুষের প্রতি টান থাকলেই কেবল এমনটি সম্ভব। ‘সিমপ্লিফাই’–এর তরুণ উদ্যোক্তা প্রকৌশলী শরিফুল আলম সন্তোষ প্রকাশ করলেন। যাক, শুরুটা তো হলো!

প্রাঙ্গণ জমে উঠেছে। অপ্সরা টের পান না কী হতে যাচ্ছে! মোর বীণা ওঠে কোন সুরে বাজি/ কোন নব চঞ্চল ছন্দে।

ভ্রাম্যমাণ চ্যানেল থেকে সংবাদ পড়া হবে। প্রকৌশলী আবাদা বুশরা তথ্যকেন্দ্রের সদস্য। তরুণী তথ্যকেন্দ্রে প্রেরণ করেন শিশুদের খবর।

প্রকৌশলীদের মধ্য বল প্রতিযোগিতা চলছে। এখানে তথ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন প্রকৌশলী আয়েশা খাতুন। লিখেন, পরস্পরের বন্ধুত্বকে গাঢ় করেছে খেলার এ পর্বটি। হইহুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে তাঁরা লক্ষ্যের ঠিক কেন্দ্রস্থলে বল পৌঁছে দিয়েছেন। এ আসর সবার মধ্যেই আনন্দের সঞ্চার করে। খেলাটি দেখাশোনার জন্য অন্যদের সঙ্গে ছিলেন প্রকৌশলী আওয়াদ আউয়াল, প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া।

হৃদয়ের কী ব্যাকুলতা! গল্পগুজব আর স্মৃতি রোমন্থনে কাটছে সময়। ভেতর থেকে এল মনের কথাটি। আমি তোমর সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ। তুমি জানো না। এর মধ্যে প্রকৌশলী ইকবাল সস্ত্রীক এলেন ঘরে বানানো মিষ্টি নিয়ে। মিষ্টিময় হয়ে উঠল চরাচর।

ঘাস–জুতা পায়ে অপ্সরা চোখ রাখেন এদিক-ওদিক। অন্তর তাঁর দোলায়িত। গাছপালা নড়েচড়ে ওঠে। তারা তাকায় নিজের দিকে। দেখে নারীকেও। অপ্সরার মুখ দিয়ে আসে মধুর পদাবলি। মম অন্তর কম্পিত আজি নিখিলের হৃদয় স্পন্দে।

সারা দিন কাটে আনন্দে

কত স্বপ্ন কত সাধনা কত চেষ্টা কত সময়ের প্রস্তুতিতে। টগবগে একদল যুবক–যুবতী ছিলেন এ কাজে। তাঁদের শ্রম–ঘামের জন্যই এই আয়োজন। প্রকৌশলী কামরুন্নাহার, প্রকৌশলী মোকলেসুর রহমান অবদান রাখেন সাংগঠনিক কর্মে। সব জায়গায় বসা যায় না। প্রকৌশলী জামাল ছেড়ে দিলেন তাঁর অফিস। আকর্ষণীয় হতে হবে আয়োজনের মূল ব্যানার। প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম তাতে ঢেলে দিলেন তাঁর মেধা এবং দক্ষতা।

কত–কী ঠেলা সামলাতে হয়! অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায় অনুষ্ঠানের তারিখ বদল। চলে ছুটির সুবিধা–অসুবিধার বিশ্লেষণ। দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অনলাইনে বিষয়টি তুলে ধরেন প্রকৌশলী আজহার উদ্দিন। সেটা শেষ হতে না হতে আসে প্রকৃতির কশাঘাত। বৃষ্টি হয়ে গেল। আগামীকাল কি আকাশ হাসবে? মুখ্য হয়ে পড়ে প্রশ্নটি। উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রকৌশলী আজিজুর রহমান।

একজন প্রার্থনা করলেন, আল্লাহ মেঘ দে পানি দে...তবে শনিবারে না...আল্লাহ। আশা আর নিরাশার দ্বন্দ্বে সেটারও সমাধান হলো। তরুণেরা গেয়ে উঠলেন, মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি। প্রকৌশলী ইজাজ কলিম ছিলেন আনন্দের খণ্ডাংশে।
দেখি, আলআইন থেকে এক বহর নিয়ে এলেন প্রকৌশলী আশরাফ। দুই বা ততোধিক পরিবার। আরও একটু পরে সপরিবার এলেন একই নগরীর প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম। চোখে পড়ে, পুরস্কারগুলো গুছিয়ে রাখা হয়েছে আগেই। প্রকৌশলী জাকির হোসেন সেগুলো মিলিয়ে দেখছেন কেবল।

প্রকৌশলী স্থপতির কয়েকজন

আবার উঠে আসে ভার্চ্যুয়াল প্রচার। বিজ্ঞাপনী আয়োজন যেন! সবকিছুর মধ্য দিয়ে আলাদা প্রস্তুতি চলে। নতুন পর্বে যাওয়ার সমাচার। অপ্সরা গেয়ে ওঠেন। আসে কোন তরুণ অশান্ত, উড়ে বনাঞ্চলাপ্রাপ্ত।

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর প্রধান অতিথির আসন নিলেন। তাঁকে জানানো হলো ফুলেল শুভেচ্ছা। তিনি আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। আবুধাবিতে বিপুলসংখ্যক প্রকৌশলী–স্থপতি দেখে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করলেন। শোনালেন মধুর বচন। বললেন, ‘সম্মিলিত এই সমাবেশ দেখে আমি আজ পুলকিত, উচ্ছ্বসিত, গর্বিত।’ যোগ করলেন, যে দেশে যত বেশি হবে যোগ্য এবং সম্মানিত পেশাজীবীর সংখ্যা, ততই বাড়বে তাদের বৈশিক সম্মান। কথায় তাঁর অমৃত ঝরে। মিশে যায় বকুল গন্ধ। মিলে যায় কবির ছন্দ। সবাই শুনলেন তাঁকে শ্রদ্ধায়, আনন্দে, বন্ধুত্বে।

অপ্সরা থেমে থাকেন না। তখন চরাচর আলাদা এক মহিমায়। বীণা বাজে আপন সুরে। আলোকের নৃত্যে বনান্ত/ মুখরিত অধীর আনন্দে।

থ্যকেন্দ্রে বার্তা পাঠান সাদিয়া হায়দার। গোল করে বসেন নারীরা। তাঁরা পিলো পাসিংয়ে অনেক বৈচিত্র্যের সম্মিলন ঘটিয়েছেন। গোটা সময় কাটে আনন্দ আর সৌহার্দ্যের মধ্য দিয়ে। তাঁরা প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় উদ্‌যাপন করেছেন। যাঁরা শুধুই অংশ নিয়েছেন তাঁরাও এ সময়কে ধারণ করেছেন পরম আন্তরিকতায়। এই মিলনকে স্মরণীয় বলেও উল্লেখ করেন তাঁরা।

অপ্সরার পায়ে ঘুঙুর। চলেন প্রাণময় ছন্দে। ছবি তোলেন তরুণ-তরুণীরা। কাল ছিল যা কল্পনায়, আজ তা সামনে। বন্ধুগো, তোমার অরূপ মূর্তিখানি ভাসে চোখের সামনে। আশা রয় মনে। শুধু একটুখানি সংস্পর্শ। একটুখানি দেখা। তোমারই জন্য উচাটন মন। গাছগাছালি ভরা এ উদ্যান। তোমাকে চেয়েছিলাম, পেলাম ও। ক্যামেরাবন্দী হলেন তাঁরা। দুজনে, বহুজনে। ছবির কবি প্রকৌশলী বিকো। অপ্সরা হাসেন। অম্বর প্রাঙ্গণ মাঝে নিঃস্বর মঞ্জীর গুঞ্জে।

শুভেচ্ছা আর ভালোবাসার ডালি নিয়ে আসেন প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি অনুষ্ঠানকে ব্যতিক্রমধর্মী বলে উল্লেখ করেন। প্রকৌশলী এবং স্থপতিরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে এ দেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশেও তাঁরা ব্যাপক অবদান রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। নতুন মুখকে সম্ভাবনাময় বলে তিনি তাঁদের পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন।

কথা শেষ হয়। পাখিরা ওড়ে। এ ডাল থেকে ও ডালে যায়। আনন্দ আনন্দ অনুভূতি। হাতে তালি পড়ে। গোচরে কিংবা অগোচরে প্রশংসা ধ্বনি উচ্চারিত হয়। অপ্সরা উপভোগ করেন মুহূর্তটি।

অশ্রুত সেই তালে বাজে/ করতালি পল্লবপুঞ্জে।

আনন্দে কাটে সারা দিন

অনুষ্ঠান তখনো চলছে। ভ্রাম্যমাণ চ্যানেলে তথ্যকেন্দ্রের সদস্য ইংকিং রায় বার্তা পাঠান। লেখেন, শেষ খবর শিরোনামে। আজকের শেষ এবং আড়ম্বরপূর্ণ আকর্ষণ ছিল সংবাদের জন্য অপেক্ষা। তরুণী মায়েরা ব্যাকুল ছোটদের খেলাধুলার ফলাফল জানার জন্য।

অবশেষে সংবাদপর্ব। সুর ভেসে এল। ভ্রাম্যমাণ চ্যানেল থেকে সংবাদ সম্প্রচার করা হচ্ছে। পড়ছি আমি নিমাই সরকার। আহা শুনছে সবাই! শ্রোতারা আরও কী চাচ্ছে! গভীর চোখ প্রচারকেন্দ্রে। কার পদপরশন আশা/ তৃণে তৃণে অর্পিল ভাষা।

ছোটদের–বড়দের সবার জন্য ছিল খেলাধুলা। প্রীতিভোজ। এরপর পুরস্কার। অন্য রকম আনন্দ! অন্য রকম অনুভূতি! অন্য রকম বৈচিত্র্য!

গাছপালা, প্রকৃতি, ঘাসের বিস্তীর্ণ চরাচর সবাইকে করেছে উন্মুখ। পাখপাখালি উড়ে বেড়ায়। উদ্যানটির তুলনা হয় না। নিসর্গ এক! আয়োজনটি শুরু থেকে চলেছে কাব্যময় দ্যোতনায়। খেলাধুলা বনভোজন বা আনন্দ উপভোগের এ ছিল এক বিপুল প্রয়াস।

বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানের মূল রশিটি নিয়ে দৌড়েছেন আরও অনেক বন্ধুর সঙ্গে প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন। আনন্দে আতিশয্যে উন্মনা তাঁরা। সমীরণ বন্ধনহারা/ উনমন কোন গন্ধে। কী চমৎকার!

অপ্সরী কোনো দিকে পা রাখেন ঠিক পান না। আবারও বেজে ওঠে, মোর বীণা ওঠে কোন সুরে বাজি/ কোন নব চঞ্চল ছন্দে।

জয়তু প্রকৌশলী–স্থপতি! জয়তু উদ্যান! জয়তু বনভোজন!