ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের কাছে খোলাচিঠি
পত্রের শুরুতেই সালাম ও সংগ্রামী শুভেচ্ছা। শুভেচ্ছাটা কেন সংগ্রামী দিলাম, সেটা এই পত্রের শেষে পরিষ্কার হবে। শুরুতেই কিছু ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা করে নিই। দেশ ব্যাপারটি ঠিক কীভাবে ও কখন মাথায় ঢুকেছিল, সেটি আর মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে, আমাদের সময়ের প্রাথমিকের ‘পরিবেশ পরিচিতি সমাজ’ বইয়ে সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে পড়েছিলাম। সেখানে একটি পয়েন্ট ছিল, নিয়মিত ভোটাধিকার প্রদান। তাই নির্বাচনের সময় এলেই আমি মায়ের শাড়ির আঁচল ধরে টানতে টানতে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতাম।
এরপর অনেক বড় হয়ে যাওয়ার পর একদিন জানতে পারলাম, আমাদের একজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। শুনে অনেক ভালো লাগল। সেদিন অফিস থেকে মনে হয় উড়তে উড়তে বাসায় ফিরলাম। আসার সময় পাড়ার মোড়ের দোকান থেকে মিষ্টি কিনে নিয়ে এলাম। এরপর বাসায় পৌঁছে সবাইকে মিষ্টিমুখ করালাম। সবার মধ্যেই একটি সুখী সুখী ভাব লক্ষ করলাম। এরপর আমি বললাম, এত দিন বিশ্বদরবারে আমাদের দেওয়ার মতো কোনো পরিচয় ছিল না। এখন একটি পরিচয় দেওয়া যাবে। একটি স্বাধীন দেশের মাত্র ৩৫ বছর বয়সে নোবেল পুরস্কারের মতো প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক হয়ে দেখা দিয়েছিল।
এরপর একদিন অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক ২০০০–এর পাতায় পড়লাম আপনার বিশাল এক সাক্ষাৎকার। অনেক কিছুই তখন প্রথমবারের মতো জানতে পারলাম। সত্যি কথা বলতে কী, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না। আমাদের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরতলির বাড়াদী গ্রামে। গ্রামের জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করতেন। তখন গ্রামে গ্রামে ঋণের কার্যক্রম নিয়ে আসে ব্র্যাক। তারা অবশ্য এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি স্কুলও চালাত। সেখানে আমাদের পাড়ার অনেক ছেলেমেয়ে পড়ত। তাদের পাঠ্যপুস্তক ও পড়ানোর ধরন ছিল খুবই আকর্ষণীয়।
যাহোক, মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। সাপ্তাহিক ২০০০–এর সেই সংখ্যায় আপনার সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি একদম মাঝখানের দুটি পাতাজুড়ে আপনার যৌবনকালের একটি দারুণ স্টাইলিশ ছবি ছাপা হয়েছিল। আমি পত্রিকাটি পড়া শেষ করেই ছবিটি নিয়ে নীলক্ষেতে চলে গেলাম। এরপর একটি ফ্রেমে সেটাকে বাঁধাই করে নিয়ে এলাম। আমার কর্মকাণ্ড দেখে আমার স্ত্রী রীতিমতো অবাক হলো। কারণ, আমাদের বাসায় কারও ছবি ফ্রেমে বাঁধানো নেই। আমার শ্বশুর এটি দেখে প্রশ্ন করলেন, কেন আমি এটি করলাম। আমি বলেছিলাম, এখন বাংলাদেশি হিসেবে যেখানেই যাব, এই মানুষটির নাম বলে পরিচয় দিতে পারব। এরপর একবার অফিসের প্রশিক্ষণের কাজে ভারতের গোয়ায় গেলাম। সেখানকার মানুষ আপনার দেশের মানুষ বলে মনে হয় একটু বেশিই আতিথেয়তা করল।
এরপর এল আওয়ামী লীগের শাসনামল। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, আপনার নামে একের পর এক মামলা হতে লাগল। সরকারের মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রীরা তো আছেনই, স্বয়ং সরকারপ্রধানও নানা বাক্যবাণ ছুড়লেন। আমরা বলাবলি করতাম, আসলে আমরা সম্মানিত মানুষকে সম্মান দিতে জানি না।
এরপর ওয়ান–ইলেভেনের ঘটনাপ্রবাহে আপনার রাজনৈতিক দল গঠনকে আমার ভালো লাগেনি। আসলে আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত সমাজের সবচেয়ে বড় অশিক্ষা হচ্ছে আমরা রাজনীতি–সচেতন নই। আমরা দিন শেষে নিজেদের সব দুর্ভাগ্যের জন্য রাজনীতিবিদদের দোষারোপ করতে করতে ঘুমাতে যায়। রাজনীতিবিদদের কথাবার্তা থেকে শুরু করে সবই আমাদের বিনোদনের উপকরণ। কিন্তু আমরা ভুলে যায়, আমরাই নেতা তৈরি করি। ভালো লোক রাজনীতি না করলে ক্ষতটা সারাবে কে। এরপরের সময়টা আপনার জন্য আরও কঠিন হয়ে গেল। দ্রুতই মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেল। সেগুলোতে প্রতিদিন আপনাকে হেনস্তা হতে হলো। এত হেনস্তার পরও আপনি দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে লাগলেন। আপনার সংগ্রামী মনোভাব ছাড়া এটি সম্ভব হতো না বলেই আমার বিশ্বাস।
এরপর ৫ আগস্টে পটপরিবর্তন হলো। সবাই বলাবলি করছিল, আপনি অন্তর্বর্তী সরকারের হাল ধরবেন। আমি তাদের দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিলাম, আপনি কখনোই রাজি হবেন না। কারণ, এর আগে একবার রাজনৈতিক দল গঠন করে যে ভোগান্তি আপনাকে পোহাতে হয়েছে, সেটার দাগ তো এখনো মুছেনি। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। আপনি ছাত্রদের অনুরোধে রাজি হলেন। আমরা সবাই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই খুশি হলাম কিন্তু আপনি দেশে এসে সরকারিভাবে দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত মনের মধ্যে কত রকমের যে হিসাব–নিকাশ চলছিল, তার অন্ত নেই। মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল, আপনি কেন আরও আগে রওনা দিলেন না।
এরপর অফিস থেকে ফিরেই রাতের খাবার না খেয়ে টেবিলে বসে মুঠোফোনের ইউটিউবে বিমানবন্দরে আপনার সরাসরি ভাষণ শুনলাম। আমার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে আর ৯ বছর বয়সী ছেলে আমার মুখের অভিব্যক্তি দেখে আমাকে কিছু বলল না। অন্যান্য দিন হলে অফিস থেকে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগের ফিরিস্তি বর্ণনা করতে শুরু করে। আপনি বললেন, ‘মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ। জনসংখ্যার অধিকাংশ যুব সম্প্রদায়। জীবনে তারা কেউ ভোট দিতে পারেনি। সেই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই হবে প্রধান কাজ। ওখান থেকেই আমাদের শুরু করতে হবে। তাদের বলতে হবে, গণতন্ত্র ফিরে আসবে। তোমরা সবাই হবে তার অংশীদার।’
আপনি আরও বললেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর এটা দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস। ভাষণের এক পর্যায়ে আবু সাঈদের কথা বলতে গিয়ে আপনার গলা ধরে এল, তখন আমার দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে এল। আপনি বললেন, ‘আজকে আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে আমাদের। যে আবু সাঈদের ছবি বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের মনে গেঁথে আছে। এটা কেউ ভুলতে পারবে না। কী অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক! বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এবং তার পর থেকে কোনো যুবক-যুবতী আর হার মানেনি। সামনে এগিয়ে গেছে। বলেছে, যত গুলি মারো, মারতে পারো, আমরা আছি। যার কারণে বাংলাদেশজুড়ে এই আন্দোলন ছড়িয়ে গেছে। যার কারণেই এই বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করল।’
আমার সব আশঙ্কা তখন অমূলক প্রমাণিত হলো। মনে হলো, বুকের ওপর থেকে একটা বোঝা নেমে গেল। এরপর রাতে আপনি ও আপনার উপদেষ্টারা শপথ নিলেন। সারা দিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঘুম ভেঙে গেল। উঠেই মুঠোফোন হাতে নিয়ে পত্রিকার পাতায় আপনাদের শপথের ছবি দেখে মনটা নেচে উঠল। মনে মনে বললাম, আমরা একটা ঘোর ক্রান্তিকাল পার করলাম। উপদেষ্টাদের তালিকা দেখে খুবই ভালো লাগল। এই প্রথম দেখলাম বাংলাদেশের সব শ্রেণি–পেশার মানুষ থেকে প্রতিনিধি নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের বিবেক ছাত্রদের প্রতিনিধি আছে আপনার দলে, যাঁদের বয়স কেবল ২৫ বছর।
আমি ভীষণভাবে আশাবাদী আপনার অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে। আমি জানি, আপনাদের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। আপনাদের কর্মস্পৃহা অতুলনীয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি দেশে আসলে সৎ গুণাবলির সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের মনের ভাবটা পড়তে জানাও জরুরি। আপনারা সেটা পারবেন বলেই আমার বিশ্বাস। তবে একান্ত শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে কিছু বিষয় আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে করিয়ে দিতে চাই। আমাদের দেশের বয়স মাত্র ৫৩ বছর। এর আগে আমরা ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসন আর প্রায় ২৫ বছর পাকিস্তানের অধীন ছিলাম। আমাদের মন ও মননে তাই অন্যের প্রভাব এখনো প্রকটভাবে বিদ্যমান। তাই আমাদের মনস্তত্ত্বের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আমি আমার ক্ষুদ্র জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আমরা ভীষণভাবে আবেগপ্রবণ। কেউ যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, যখনই সে চোখের আড়াল হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার সব অপকর্মের কথা ভুলে যায়। একদল ক্ষমতায় এসে অপকর্ম করে চলে যায়। তখন আমরা ভাবি, আগেরজনই ভালো ছিল। এরপর আবার সে এসে আগেরজনের অপকর্মের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলে। স্বাধীনতার পর থেকে মোটামুটি এভাবেই চলে আসছে। আর যিনি চেষ্টা করেছেন এই বলয় ভাঙতে, তিনিই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। আমরা আসলেই খুবই আজব জাতি। আমরা নিজেরাই আসলে কখনোই নিজের ভালো চাইনি। আমাদেরকে অন্য কেউ বলে দেয় সব সময়। এভাবে আমরা গত ৫৩ বছর জ্বলন্ত উনুন থেকে ফুটন্ত কড়াইয়ে লাফালাফি করে কাটিয়েছি।
ব্যক্তি অভিজ্ঞতায় দেখেছি দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে বিচারব্যবস্থা, এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—সবকিছুই চলে ব্রিটিশ আইনে। চাকরির বিধিমালা এখনো পড়ে আছে সেই ১৯২১ সালে প্রণয়ন করা নীতিমালায়। আমাদের সরকারি কর্মকর্তারা তাই সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী না হয়ে মালিক হয়ে ওঠেন। দেশের যে আপামর জনসাধারণের টাকায় তাঁদের বেতন হয়, তাঁদের সঙ্গেই প্রভুর মতো আচরণ করেন। সরকারি অফিস থেকে সামান্য একটা সেবা নিতে গেলেও পদে পদে হেনস্তার শিকার হতে হয়। কোনো উপরি টাকা না দিলে নির্দিষ্ট সেবা পাওয়া যায় না। সরকারি কর্মকর্তাদের অভিযোগ ছিল, তাঁদের বেতন দিয়ে সচ্ছলভাবে চলা যায় না। একবার সে বেতন বাড়ানোও হয়েছে। জানি না, এতে অবস্থা কতটা বদলেছে।
সরকারি কর্ম কমিশনের যে পরীক্ষার কোটা বৈষম্যের জন্য এই আন্দোলন এবং যার পরিণতিতে এ নতুন সরকার, সেই জায়গাটাতে অনেক কাজ করার আছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে হবে। আর কীভাবে এ পরীক্ষাকে আরও যুগোপযোগী করা যায়, সেটা নিয়েও ভাবতে হবে। আর এই চাকরি একবার পেলে সেটা আর হারানোর ভয় থাকে না, তাই সরকারি চাকরিজীবীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। অস্ট্রেলিয়া এখনো ব্রিটিশদের অনেক কিছুই অনুসরণ, এমনকি অনুকরণ করে কিন্তু এমন স্থায়ী চাকরির কথা এখনো শুনিনি। এখানে প্রতি পদে পদে দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই সরকারি–বেসরকারি চাকরিতে টিকে থাকতে হয়।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বিশাল গলদ রয়েছে। আমরা প্রতিদিন অফিসার তৈরি করি কিন্তু আমাদের দক্ষ কর্মী নেই। অস্ট্রেলিয়ায় দেখেছি টাফ (TAFE—Technical and Further Education) বলে একটি প্রতিষ্ঠান আছে, অনেকটা বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মতো। এখানে দৈনন্দিন কাজগুলো হাতে–কলমে শিখিয়ে দক্ষ কর্মী তৈরি করা হয়। এখন সারা বিশ্বেই দক্ষ কর্মীর বিশাল চাহিদা রয়েছে। এভাবে প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী গড়ে তুলতে পারলে একদিকে যেমন আমরা তাদেরকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারব, অন্যদিকে তাদেরকে বিদেশে রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। তখন সত্যিকার অর্থেই আমাদের জনসংখ্যা জনসম্পদে রূপান্তরিত হবে। কারণ, বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যা আসলে বোঝা নয়, সম্পদ।
আমি সব সময়ই বলে এসেছি, আমাদের দেশের অর্থনীতি টিকে আছে তিনটি বিষয়ের ওপর—তৈরি পোশাকশিল্পের মেয়েগুলোর রক্ত পানি করা শ্রম, কৃষকের অবিশ্রান্ত শ্রম আর প্রবাসীদের কঠোর পরিশ্রম। কিন্তু জীবনমানের দিকে তাকালে দেখা যায়, সমাজে অনেক বৈষম্য বিদ্যমান। এটি নিয়ে গবেষণা জরুরি। একজন মানুষ বিদেশে যেতে জন্মনিবন্ধন থেকে শুরু করে পাসপোর্ট বানানো পর্যন্ত যে পরিমাণ ভোগান্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেটি অবর্ণনীয়। আর আমাদের বিমানবন্দের তাঁদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়, সেটা আমরা আমাদের বাড়ির পোষা কুকুরের সঙ্গেও করি না। এটি খুব দ্রুত ঠিক করা দরকার। একজন প্রবাসী বৈধ পথে দেশে টাকা পাঠাতে গেলেও ভোগান্তির শিকার হন, তাই বাধ্য হয়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান। এটা রোধ করা গেলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কখনোই কমবে না।
আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের নিয়ে অভিযোগ অনেক পুরোনো। একদিকে আমরা অভিযোগ করি তাঁদের অতি মুনাফালোভী মানসিকতার দিকে। অন্যদিকে তাঁরা বলেন ব্যবসার প্রতিটি ধাপে চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়, তাই সেবা বা পণ্যের দাম অবধারিতভাবেই বেড়ে যায়। এ জায়গাটা নিয়ে কাজ করে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। আমি ভীষণভাবে আশাবাদী আপনার উপদেষ্টাদের তালিকা দেখে। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে নবীন সদস্য নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদকে নিয়ে আমি বেশি স্বপ্ন দেখি। তাদের বয়স কম হলেও তারা একটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে। তাই আমি আশা করি, তারা যেকোনো সমস্যাকে দেখবে একেবারে মূল থেকে। আর আপনারা যাঁরা বয়োজ্যেষ্ঠ, তাঁরা সেটার অস্থায়ী সমাধান না দিয়ে বরং স্থায়ী সমাধান দেবেন। এভাবেই আপনাদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা হবে বলে আমার ধারণা।
দেশে বর্তমানে একটি অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, দেশে একটি গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ জেগে উঠেছে। পাড়ায়–পাড়ায় মানুষ দল বেঁধে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। কোনো জরুরি অবস্থা দেখা দিলে মসজিদের মাইকে সাবধান করে দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। কী চমৎকার একটা সামাজিক সাম্য কাজ করছে। আমি নিশ্চিত, নিয়মিত বাহিনী কাজ শুরু করলে দুর্বৃত্তরা আর সাহস পাবে না। এভাবেই সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশ একসময় সত্যিকার সোনার বাংলা হয়ে উঠবে।
পত্র অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। আপনার কথা দিয়ে পত্রটি শেষ করি—‘এই স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেক মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। তা না হলে এই স্বাধীনতার কোনো দাম নেই। এই স্বাধীনতাকে পৌঁছানোই হলো আমাদের শপথ, আমাদের প্রতিজ্ঞা। ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে। মানুষ যেন জানে যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অর্থ হলো তার নিজের পরিবর্তন, ব্যক্তির পরিবর্তন, সুযোগের পরিবর্তন। ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের পরিবর্তন। এটা যেন প্রত্যেকে বুঝে নেয়। আমরা একটা পরিবার। যেন আমাদের গোলযোগ না হয়। আমরা যেন একযোগে, একসঙ্গে চলতে পারি। আমরা ত্বরিতগতিতে একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যেতে পারি, সেটাই আমাদের কামনা।’
*দূর পরবাসে ছবি, লেখা ও ভিডিও পাঠাতে পারবেন দেশের পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]