বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে যেমন যাচ্ছে দিন

পড়ন্ত বিকেলে বাসটা যখন মৃদু বৃষ্টির মধ্যে ইলিনয় টার্মিনাল ছেড়ে বেরিয়ে যায়, ঠিক তখন আড়াই মাস আগের বৃষ্টিময় দিনটার কথা মনে পড়ে। চোখের সামনে ভেসে উঠে সব—কোনার ঐ বাসস্ট্যান্ডটাতেই তো তল্পিতল্পা নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিলাম, নতুন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য।

সেই দিন এ শহরে ছিল মুষলধারে বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিস্নাত গাছের সবুজ পাতাগুলো এখন বুড়িয়ে যাচ্ছে; ধীরে ধীরে বর্ণ পরিবর্তন করে তারা এখন হলুদ বা প্রায় লাল, আর কদিন পরেই ঝড়ে পড়বে। সেদিন বৃষ্টিতে ধুয়েমুছে সজীব হয়ে ওঠা পাতাগুলোকে মৃত্যুপথযাত্রী হিসেবে দেখতে কেমন যেন শূন্যবোধ হয়। সেটা পরিচিত পাতা ঝড়ে যাওয়ায়, নাকি আসন্ন গাছের কঙ্কালের কথা ভেবে, জানি না।

এ সবকিছুর সারমর্ম হলো এবারের মতো শরতের বিদায়, আর হিমশীতল ঋতুর আগমন। বাসে বসে এসব দেখতে দেখতে মাথায় ছেলেমানুষি চিন্তা খেলে যায়।
মনে হয়, আমার মত গুরুত্ববিহীন একজন মানুষের আগমনের নীরব সাক্ষী যেন ছিল এ পাতাগুলো। সেই স্মৃতিও কি একই সঙ্গে ঝড়ে যাচ্ছে না?
পরক্ষণেই হাসি পায়। মনে রাখলেই বা কী হতো?

নতুন ঠিকানায় ঘর বাঁধার ৮০ দিন হয়ে গেছে। সময়ের দৈর্ঘ্যটা বিশ্বাস হতে চায় না, তবে সহসা যখন মনে পড়ে যে ক্লাস টেনে পড়ার বছরটা ছিল ১০ বছর আগে, তখন বোধ হয় খানিকটা বিশ্বাস হয়। বিশ্বাসে ভর করে তখন তার চেয়েও বেশি জাগে বিস্ময়।

তবে বিস্মিত হওয়ার সময় কই। এই দেখি সোমবার, চোখের পলকে আরেক শনিবার চলে আসে। হাঁফ ছাড়তে না ছাড়তেই দেখি আবারও নতুন সপ্তাহের শুরু, অর্থাৎ পরের সোমবার চলে এসেছে। অথচ আমি তো আগের সপ্তাহের ক্লান্তি এখনো ঝেড়ে ফেলতেই পারিনি। সেই জমানো ক্লান্তিকে সাথে নিয়ে কড়া কফির ঘ্রাণে শুরু হয় নতুন সপ্তাহ। কোনো মানে হয়?

পিছে ফিরে তাকালে ফেলে আসা চতুর্মাত্রিক দূরত্বটা ভাবায়। ভাবনাগুলোর শেষ নেই বলে বেশিক্ষণ ডুবে থাকতে ইচ্ছা করে না। আগে করতো, যখন বাস্তবতার পাল্লাটা হালকা ছিল। এখন নানারকম কৃত্রিম ডেটলাইন আছে, সময়টা নেই।

বাস্তবতাকে মেনে মন খারাপ করব না ভেবে নস্টালজিয়ার জগতে চলে যাই। তাতে মন ভালো হয় না, কেমন যেন হয়ে যায়। সে ‘কেমন যেন’-এর সংজ্ঞা জানা নেই, অন্তত ভাষায় প্রকাশ করার মত যোগ্যতা তো নাই-ই। শুধু চুপচাপ অনুভব করে যাই।
ধুর, সবকিছু ছেড়ে কোনো পাহাড়ি চা-বাগানে আস্তানা গাড়তে পারলেই বোধহয় ভালো হতো।

*লেখক: অংকন ঘোষ দস্তিদার, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় আরবানা-শ্যাম্পেইন (ইউআইইউসি), যুক্তরাষ্ট্র