সিঙ্গাপুর সংসদে কেন শ্রমিকেরা?

সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্ট ভবন
ছবি: রয়টার্স

সিঙ্গাপুর, বিশ্বের প্রথম শ্রেণির উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি। পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

১৯৬৫ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে শক্ত নীতি, সরকার কাঠামো ও নিজেদের শক্ত অবস্থান ও সিদ্ধান্তের কারণে এই দেশ খুব কম সময়ে উন্নত হয়েছে। অল্প জনসংখ্যার এ দেশে আধুনিক সিঙ্গাপুর গঠনের মূল বাহক হিসেবে ধরা হয় অভিবাসী শ্রমিকদের।

বর্তমানে প্রায় ১০ লাখের বেশি অভিবাসী শ্রমিক কাজ করেন এই দেশে। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকনির্ভর হলেও এই দেশে এখনো নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত শ্রমিকেরা। শক্ত আইন থাকার কারণে সরকার প্রায় শতভাগ বেতন নিশ্চিত করলেও ব্যয়বহুল এই দেশে জীবনযাপন অনেক দুরূহ হয়ে পড়েছে। দৈনন্দিন খরচ ও জীবনযাপনের সঙ্গে বেতনের নেই কোনো মিল, খাবারব্যবস্থায় রয়েছে বিশাল অব্যবস্থাপনা। পাশের দেশ মালয়েশিয়া থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি শ্রমিকদের কাজে আনা নেওয়ার জন্য রয়েছে বিশেষ যাতায়াত ব্যবস্থা। কিন্তু সিঙ্গাপুর রয়েছে এর ভিন্নতা, দুঃখজনক হলেও সত্য যে মালামাল বহনের গাড়িতে করেই অনিরাপদ ও অগ্রহণযোগ্যভাবে অভিবাসী শ্রমিকদের পরিবহন করে সিঙ্গাপুরের বেশির ভাগ কোম্পানিগুলো। অনিরাপদ এই যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ। এর দায়ভার নেবে কে?

দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত অভিবাসী শ্রমিকেরা তাঁদের আশা, আকাঙ্ক্ষা ও দাবিদাওয়ার কথা বিভিন্ন জায়গায় বলে আসছেন। কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এর সুফল।

সিঙ্গাপুরের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে থেকে ছবিটি তোলা
ছবি: সংগৃহীত

সিঙ্গাপুরের প্রবাসীদের সমস্যার কথা বেশ কয়েক বছর ধরে জাতীয় সংসদের উত্থাপন করে আসছে, নি সুনের সংসদ সদস্য লুইস অং। কয়েক বছর ধরে তিনি সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত অভিবাসী শ্রমিকদের এ অনিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা ও এর প্রতিকার নিয়ে সংসদের কথা বলে আসছে। গত বুধবার লুইস অং সংসদে সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের লরিতে পরিবহন নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তার এ দাবিকে সমর্থন জানাতে সংসদে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন বাংলাদেশি ও ভিনদেশি অভিবাসী শ্রমিকেরা, ছাত্র-শিক্ষকসহ সাধারণ নাগরিকেরা। সংসদ অধিবেশন শেষে সংসদ ভবনের সামনে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিবাসী বলেন, দুরূহ কষ্ট নিয়ে এ দেশে প্রবাসীরা লরিতে যাতায়াত করছে প্রতিদিন। সিঙ্গাপুর সরকারের এ ব্যাপারে একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সময়ের দাবি। আর কোনো প্রবাসীর প্রাণ ঝরে যাওয়া দেখতে চাই না আমরা।

একজন সিঙ্গাপুর নাগরিক বলেন, ‘এই অনিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়, আমরা চেষ্টা করব, অভিবাসীদের যথাসাধ্য সাহায্য করতে এবং তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলতে।’