জুরিখ ভ্রমণে যা যা দেখলাম

ছবি: লেখক

২৩ জুলাই ২০২২। আমরা প্যারিস থেকে সুইজারল্যান্ডের জুরি শহর দেখতে বেরিয়েছি। ইচ্ছা করেই ট্রেন যাচ্ছি, যাতে অনেকক্ষণ ধরে ইউরোপের দেশগুলো দেখতে দেখতে যাওয়া যায়। কারণ, উড়োজাহাজ থেকে নিচে তাকালে বেশির ভাগ দৃশ্য প্রায় একই রকম লাগে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, আমাদের মাঝখানে দুবার ট্রেন বদল করতে হবে।

প্রথমে প্যারিস থেকে স্ট্রাসবো যাব। জায়গাটির ফরাসি ও ব্রিটিশ উচ্চারণ আলাদা। তবে আমেরিকান উচ্চারণ অনেকটা জার্মানদের মতোই—স্ট্রাসবার্গ। তারপর বদলি ট্রেনে স্ট্রাসবার্গ থেকে বা’যেল। এটি উত্তর-পশ্চিম সুইজারল্যান্ডের এক শহর, ভাষা সুইস-জার্মান। পরে তৃতীয় ট্রেনে বা’যেল থেকে জুরিখে।

প্যারিস থেকে স্ট্রাসবার্গ পর্যন্ত ট্রেনে রিজারভেশন পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু স্ট্রাসবার্গ থেকে বা’যেল (উচ্চারণ বাসেল বা বাজেল নয়) এবং বা’যেল থেকে জুরি (যুরিখ বলা উচিত, কিন্তু বাংলা ভাষায় জুরিখই চলে) পর্যন্ত সিট রিজারভেশন পাওয়া যায়নি। তবে তেমন ভিড় ছিল না বলে আমাদের সবাই একসঙ্গে বসে যেতে কোনো অসুবিধা হয়নি। আসলে বানান ‘Basel’ হলেও উচ্চারণটা কিন্তু ‘বাসেল’ বা ‘বাজেল’ নয়। তেমনি ‘Zurich’-কে আমাদের জুরি বা জুরি না বলে যুরিখ বলা উচিত, কিন্তু বাংলা ভাষায় জুরি—এই চলে আসছে, কোথাও যুরিখ দেখিনি।

প্যারিস থেকে স্ট্রাসবার্গ পর্যন্ত এলাকাটি বেশ বর্ধিঞ্চু। কেমন একটা শহর শহর ভাব। অথচ এই একই ফ্রান্সের যে দিকটা লন্ডন থেকে প্যারিসের যাত্রাপথে পড়েছে, তার দৃশ্য একেবারে আলাদা। যেন পুরো জার্নি একটা গণ্ডগ্রামের মধ্য দিয়ে এসেছে। ধু ধু মাঠ এবং বেশ দূরে দূরে একেকটা চাষির বাড়ি। খুব কম জমিতেই রবিশস্য চাষের লক্ষণ চোখে পড়ল। বিস্তীর্ণ ভূমিজুড়ে কেবল শুকনা ঘাস বা খড়ের মতো বাদামি রং। এমনও হতে পারে, তখনকার মতো শস্য উৎপাদনের মৌসুম হয়তো শেষ হয়েছে এবং পরবর্তী চাষের মৌসুমের জন্য তারা অপেক্ষা করছে।

ছবি: লেখক

একটা মজার ব্যাপার হলো, স্ট্রাসবার্গ নামটা শুনতে জার্মান লাগলেও জায়গাটা কিন্তু ফ্রান্সে। রাইন নদীর আড়াই মাইল পশ্চিমে ফ্রান্স ও জার্মান সীমান্তে অবস্থিত। এখানকার জমিগুলো সবুজ গাছপালা ও রবিশস্যে ভরপুর। আর বাড়িগুলো শুধু সুন্দরই নয়, বেশ মজবুত করে বানানো এবং সুন্দর, সারিবদ্ধভাবে সাজানো।

একসময় তিনজন পুলিশ কর্মকর্তার একটা দল ট্রেনের অন্যান্য কামরার মতো আমাদের কামরাও টহল দিয়ে গেল। আমাদের পাসপোর্ট বের করতে বলল চেক করার জন্য। তিনজনই কৃষ্ণবর্ণের। এরপর একজন টিকিট চেকারও এল। সে–ও কৃষ্ণবর্ণের। আমাদের কম্পার্টমেন্টে দেখলাম তিনজন জাপানি পর্যটক। আমরা আর তারা ছাড়া ট্রেনে বাকিরা সবাই সাদা।

জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে দেখা যায় একনাগাড়ে পাহাড়ের পাস দিয়ে যাচ্ছি, নাম জুরা মাউন্টেন। আল্পসের সহোদর হবে। পাহাড় খুব উঁচু নয়, অনেকটা লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো। কিন্তু ও রকম ন্যাড়াও নয়, সবুজে ঘেরা। ২২৫ মাইল বিস্তৃত পর্বতমালা ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের সীমান্তকে একটা বৃত্তচাপের মতো ঘিরে রেখেছে।

বা’যেল শহরে যখন পৌঁছালাম, তখন দুপুর ১২টা বেজে গেছে। আমরা কিন্তু আর ফ্রান্সে নেই, সুইজারল্যান্ডে ঢুকে পড়েছি। এখন বুঝতে পারলাম কেন ওই পুলিশ সদস্যরা আমাদের পাসপোর্ট দেখতে চেয়েছিল। কারণ, আমরা একটা দেশ পার হয়ে অন্য দেশে যাচ্ছি। তবে বা’যেল সুইজারল্যান্ডে হলেও অন্তত এ স্টেশন এলাকাটা ফ্রান্স থেকে একটুও আলাদা মনে হলো না। আর এক বদলি ট্রেনে বা’যেল থেকে জুরি যেতে আরও এক ঘণ্টা লাগবে।

জুরি রেলস্টেশনে নেমে ঝমঝম বৃষ্টির মধ্যে বনভয় ম্যারিয়ট হোটেলে পৌঁছে দেখা গেল, চেকইন করায় সময় বেলা তিনটায়, প্রায় দুই ঘণ্টা পর। তো লাগেজগুলো বেল ক্যাপ্টেনের কাছে জমা দিয়ে হোটেলের রেস্তোরাঁয় খেতে গেলাম। খাওয়া শেষ, কিন্তু ভীষণ বৃষ্টি বলে কোনো ট্যাক্সি পাওয়া যাচ্ছিল না। অথচ আমাদের প্রোগ্রামের মধ্যে জুরিখের জন্য সময় বাঁধা ছিল মাত্র এক দিন। বেরোতে না পারলে সব মাটি। আগামীকাল সকালের ট্রেনে রোমে চলে যেতে হবে।

এক ঘণ্টা পর হোটেলের কনসিয়েজ আমাদের ছয়জনের জন্য একটা বড় ট্যাক্সি জোগাড় করে দিল। ঠিক হলো ট্যাক্সি আমাদের সেন্ট্রাল পার্কে নামিয়ে দেবে। পার্কটি লিমমাট নদীর পাড়ে, গাছপালাওয়ালা খুবই সিনিক একটা সাইট।

লিমমাট নদী দক্ষিণের জুরি হ্রদ থেকে উত্তর–পশ্চিমে ৩৫ কিলোমিটার দূরে ‘আরে’ নদীতে গিয়ে পড়েছে। ‘আরে’ আবার ‘ব্রুগ’ নামের ছোট শহরের উত্তর দিয়ে ‘রিউস’ নদীর মোহনায় মিলেছে। সুইজারল্যান্ডের অন্যগুলোর মতো লিমমাট নদীতেও হাইড্রো–ইলেকট্রিক প্ল্যান্ট দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।

ওই ঝমঝমে বৃষ্টির মধ্যেই ট্যাক্সি থেকে পার্কে নেমে পড়লাম এবং ছাতা মাথায় দিয়ে পার্কের সারি সারি গাছ ও নদীতীরের সুন্দর সুন্দর অট্টালিকার ছবি তুলতে থাকলাম। এ সেন্ট্রাল পার্ক থেকে পুরোনো ও নতুন শপিং সেন্টার—দুটোই হাঁটা রাস্তার মধ্যে পড়ে।

প্রথমেই নতুন শপিং মলটায় যাব ঠিক করে আমরা সবাই ছাতা মাথায় সেদিকে রওনা দিয়ে তাদের যে মেইন স্ট্রিটায় পৌঁছালাম, তার সুইস নাম হলো বানহফস্ট্রাসে। সেটা নাকি দুনিয়ার সবচেয়ে দামি রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে সবচেয়ে দামি ঘড়ির দোকান—প্যাটেক ফিলিপ, রিচার্ড মিলি, জেকব অ্যান্ড কোং, ভ্যাশেরন কনস্ট্যানটিন, জ্যাকেট ড্রোজ, অওডেমারস পিগেট, ইউলিসি নার্ডিন, গ্রেইবেল ফোরসি, আ ল্যাং অ্যান্ড সহনি ও আমাদের জানা রোলেক্স, ওমেগা ইত্যাদি। এ ছাড়া দামি কাপড়চোপড় ও পারফিউমের দোকানও আছে।

কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, একটা উদাহরণ দিলে কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যাবে। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দামি যে ২০টি ঘড়ি আছে, তার মধ্যে ২০ নম্বর ঘড়িটির দাম হলো ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি ভ্যাশেরন কনস্ট্যানটিন কোম্পানির ট্যুর দ্য আইল। আর নাম্বার ওয়ান মানে এক নম্বরে আছে গ্র্যাফ ডায়মন্ডস কোম্পানির হেলুসিনেশন। তার দাম ৫৫ মিলিয়ন ডলার।

তবে কানে কানে বলি, কথাটা জুরিখের লোকেরা বলে থাকলেও বানহফস্ট্রাসে আসলে পৃথিবীর ৬ নম্বর সবচেয়ে ব্যয়বহুল রাস্তা। আগের পাঁচটার প্রথমটা হলো নিউইয়র্কের ফিফথ অ্যাভিনিউ, দ্বিতীয় হংকংয়ের কজওয়ে বে, তৃতীয় প্যারিসের অ্যাভিনিউ ডেস চ্যাম্পস ইলিসিস, তারপর লন্ডনের নিউ বন্ড স্ট্রিট এবং পাঁচ নম্বরে হলো ভিয়া মন্টেনেপোলিয়ন।

আসলে জুরিখের এ রাস্তার প্রতি  বর্গফুট হলো নিউইয়র্ক ফিফথ অ্যাভিনিউয়ের চার ভাগের মাত্র এক ভাগ (৩৫০০ ডলার বনাম ৮৯৫ ডলার)। ২০ নম্বরে পড়েছে টরন্টো, কানাডা (২৬০ ডলার প্রতি বর্গফুট)।

এরপর আমরা দুটি আলাদা গ্রুপ হয়ে গেলাম। বাচ্চাদের নিয়ে মেয়েরা গেল সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত চকলেট আর চিজ কিনতে। যে দশটা বিখ্যাত সুইস চকলেট আছে, তার মধ্যে এক নম্বর হলো লিন্ট চকলেট, যেটা ১৮৪৫ সালে শুরু হয়েছিল। তারপর আছে ১৯০৮ সালে প্রথম তৈরি তিনকোনা টোবলেরন। আর কিটক্যাট নির্মাতা নেসলের কথা তো আমরা সবাই জানি। স্প্রিংলি জুরিখের নিজস্ব ব্র্যান্ড।

আমি আর জামাই হাঁটতে হাঁটতে এদের ট্রাম ডিপোয় গিয়ে চেয়ারে বসলাম। জুরিখের ট্রাম সিস্টেম চোখে পড়ার মতো। প্রতি মিনিটে একেকটা ট্রাম আসছে। সেন্ট্রাল ট্রাম ডিপোয় বসে দেখলাম, একই মিনিটে চার রুট থেকে চারটি ট্রাম এসে সার্কেলের একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। থামা-চলার সিগনালগুলো সব অটোমেটিক। কোনো মানুষই কিছু গাইড বা কন্ট্রোল করছে না।

এ সেন্ট্রাল ট্রাম ডিপোর সামনেই দেখা গেল সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ব্যাংক, ইউবিএসের হেড কোয়ার্টার। এই ব্যাংকের অ্যাসেট ৩৯০ বিলিয়ন ডলার। অথচ ব্যাংকটির বয়স কিন্তু বেশি দিনের নয়।

এটি গঠিত হয়েছে হালে, ১৯৯৮ সালে, দুই বড় ব্যাংকের মার্জারের ফলে। দুই ব্যাংক নিজেরাই অবশ্য অতি পুরোনো। ইউনিয়ন ব্যাংক অব সুইজারল্যান্ড, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৬২ সালে এবং সুইস ব্যাংক করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৭২ সালে। মজার ব্যাপার হলো, ইউ বিএস সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হলেও পৃথিবীজুড়ে এর প্রধান প্রধান শাখা আছে মাত্র ৭টি। কিন্তু ১৮৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সুইস ব্যাংক হলো ক্রেডিট সুইস। পৃথিবীর ৫০টি দেশে এই ব্যাংকের শাখা আছে।

ছবি: লেখক

এসব ব্যাংকে বিশ্বের রাজারাজড়া, একনায়ক, ধনকুবের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা তাদের সৎ ও অসদুপায়ে অর্জিত মালামাল গচ্ছিত রাখেন। গচ্ছিত রাখার ব্যাপারে এ ব্যাংকগুলো একান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে চলে। অথচ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সুইজারল্যান্ড একটি নিরপেক্ষ দেশ ছিল। সে সময় তারা জেমস জয়েস, ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের মতো বুদ্ধিজীবীদের আশ্রয় দিয়েছিল।

কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, নাৎসি পার্টির লুট করা সোনাদানা ও অন্যান্য মূল্যবান বস্তুর হদিস গোপন করার জন্য জুরি ব্যাংক বিশেষ এ গোপনীয়তার আইন পাস করে। এত দিন পর, ১৯৯০ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ব্যাংকের গোপনীয়তার কথা প্রকাশ্যে আসে। ১৯৯৮ সালে জুরিখের সবচেয়ে বড় দুটি ব্যাংক, ক্রেডিট সুইস গ্রুপ ও ইউবিএস, আন্তর্জাতিক ইহুদি সংস্থা বা ইন্টারন্যাশনাল জুইস অর্গানাইজেশনকে ২ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয়।

কিছুক্ষণ পরে আমাদের অন্য গ্রুপটা ফেরত আসতে আমরা লেক জুরি দেখতে গেলাম। ওরা ঘুরে ঘুরে নামীদামি চার ধরনের সুইস চকলেট কিনে এনেছিল। কথায় আছে, সুইজারল্যান্ড যদি বিশ্বের সবচেয়ে ভালো চকলেট তৈরির দেশ হয়, তাহলে জুরি হলো সেই দেশের চকলেট তৈরির রাজধানী। কেবল একই রকম নয়, বরং একেক দোকানে একেক ধরনের স্পেশালটি চকলেট তারা সাজিয়ে রাখে। জুরিখে এ রকম সাত ধরনের স্পেশাল ব্র্যান্ডের চকলেট আছে, যেমন ম্যাক্স সকোলাটিয়ে, লিন্ট, স্প্রিংলি, টুশার, ভ্যানিনি, হনোড, ভলেনবাইডার ইত্যাদি।

জুরি লেকটি এত সুন্দর যে বর্ণনা করাও কঠিন। বরফের আচ্ছাদন দিয়ে ঢাকা পাহাড়বেষ্টিত লেকটির ওপর রাজহাঁস ও স্টিমার ভাসছে। বরফের চূড়ার দিকটা আবার মেঘে ঢাকা। সূর্যের আলো ও তাপ থাকলে মেঘ অনেকটা ফিকে হয়ে যায়। তবে আমাদের ভাগ্যে এটা বৃষ্টির দিন ছিল। বাচ্চারা অবশ্য রাজহাঁসগুলোকে অনেক পছন্দ করে তাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে খেলা করেছে। অনেকে দেখলাম খাবার কিনে তাদের সামনে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

জুরি সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর, কিন্তু এর রাজধানী নয়। অন্য বড় শহর জেনেভাও নয়। বার্ন নামে একটি ছোট শহর হলো সুইজারল্যান্ডের রাজধানী। জুরি শহর অবশ্য জুরি ক্যান্টনের রাজধানী। ক্যান্টন হলো যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট বা ভারতের প্রদেশের মতো। এ রকম ২৬টি ক্যান্টন মিলে সুইস কনফেডারেশন গঠিত হয়েছে। শহরটি লেক জুরিখের উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আরম্ভ করে প্রায় ৪০ মাইল দূর, আল্পস পাহাড়ের নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত। লিমমাট ও সিল—এই দুটি নদী শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। নগর এলাকা ৩৪ বর্গমাইল। জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৭৩ হাজার।

রোমানদের শাসনকালে জুরিখে একটা ছোট আর্মি ডিপো ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর প্রথমে জার্মানি ও পরে ফ্রান্স থেকে লোকজন এসে এখানে চিরস্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। ইউনিভার্সিটি অব জুরি ইউরোপের মধ্যে সর্ব নারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেয়। আর নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের একটা দীর্ঘ তালিকাই তো আছে এদের, যার মধ্যে রন্টজেন, আইনস্টাইন, উলফগ্যাং পাওলি, রিচার্ড আর্নস্ট, গটফ্রিড কেলার, ম্যাক্স ফ্রিশ ইত্যাদির নাম করা যেতে পারে।

জুরি শহরের এক-তৃতীয়াংশের মানুষই অভিবাসী। বেশির ভাগই ইতালি, বলকান, পর্তুগাল ও জার্মানি থেকে আসা। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মতো সিরিয়ান রিফিউজি সামলানোর ঝামেলা এদের পোহাতে হয়নি। অভিবাসীদের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র একটি নন-ইউরোপিয়ান গ্রুপও আছে। আর মুসলিম জনসংখ্যা এখানে খুবই কম। খুবই অল্প কিছু সাউথ এশিয়ানও আছে বলে জানতাম। তবে কোনো ভারতীয়, পাকিস্তানি, বাংলাদেশি বা শ্রীলঙ্কান চোখে পড়েনি।

যাহোক, এরপর আমরা শহরের পুরোনো দিকটায় বেড়াতে যাওয়া ও সেখানে একটা রেস্তোরাঁয় খাওয়া বিষয়টি ঠিক করলাম। আমরা যে রেস্তোরাঁর সন্ধান পেলাম, সেটা তখন তাদের ১২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করছে।

জুরি জার্মানির সীমান্তে হওয়ায় এদের খাবারগুলোর বেশির ভাগ জার্মান-প্রভাবিত, যার মধ্যে মাংস, আলু, মাশরুম, মাখন, ক্রিম ও বিয়ারই প্রধান। বিটকেল জার্মান নাম বাদ দিয়ে যেগুলো আমরা অর্ডার দিয়েছিলাম, তা ছিল স্লাইসড ভিল ইন গ্রেভি, ‘রাস্টি’ (কাটা কাটা আলু), ‘বার্লি’ (রুটির রোল), হট চকলেট ও চিজ ফন্ডু। চিজ ফন্ডুর মধ্যে আলু ও রুটির রোল চুবিয়ে খেতে যা মজা!

সবাই গলা পর্যন্ত খেয়ে আর হাঁটতে পারছিল না। ট্রাম ডিপোয় বসার সময় ট্রামে চড়ার যেসব টিকিট কেনা হয়েছিল, ডিনারের পর সেগুলো ব্যবহার করে আমরা হোটেলে ফিরে এলাম।

*প্রবাসীরা লেখা পাঠাতে পারবেন [email protected]