কলম্বোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বর্ণাঢ্য উদ্যাপন
কলম্বোর বাংলাদেশ হাইকমিশন গতকাল বুধবার সকালে ঐতিহাসিক স্বাধীনতা চত্বরে প্রধানমন্ত্রী দীনেশ গুণবর্ধনের সদয় পৃষ্ঠপোষকতায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ উদ্যাপন করেছে। শ্রীলঙ্কার শিক্ষামন্ত্রী সুশীল প্রেমজয়ন্ত এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম ইউ এম আলী সাবরি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রীলঙ্কা সফররত বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ, কূটনৈতিক মিশন ও জাতিসংঘ সংস্থার প্রধান, শ্রীলঙ্কার সরকারি ভাষা কমিশনের চেয়ারম্যান, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারাসহ অন্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা। সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, স্কুলের শত শত ছাত্রছাত্রী এবং স্কাউটদের অংশগ্রহণে স্বাধীনতা স্কোয়ার বিভিন্ন ভাষাভাষীদের একটি বিশাল সমাবেশে পরিণত হয়েছিল। এ বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সেলিব্রিটিং মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ’।
বিশ্বের সব মাতৃভাষার প্রতি তাঁদের সংহতির প্রতীকীস্বরূপ প্রকাশের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁদের নিজস্ব ভাষায় ‘মা’ শব্দটি ক্যানভাসে রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের ভাষাশহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শ্রীলঙ্কার মুসলিম কোরাল এনসেম্বল অমর একুশের প্রভাতফেরির গানটি পরিবেশন করে।
এ উপলক্ষে হাইকমিশনের পৃষ্ঠপোষকতায়, শ্রীলঙ্কার শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুই মাস আগে শিশুদের জন্য একটি দেশব্যাপী রচনা এবং অঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানে নয়জন বিজয়ী হাইকমিশনার, প্রধান ও বিশেষ অতিথিদের কাছ থেকে পুরস্কার ও সনদ গ্রহণ করেন।
চিত্তাকর্ষক বহু-ভাষাভাষী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিল অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ। মুসলিম কোরাল এনসেম্বল, কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফর্মিং আর্টস বিভাগ; ভিজ্যুয়াল এবং পারফর্মিং আর্টস বিশ্ববিদ্যালয়; রয়্যাল কলেজ; স্বামী বিবেকানন্দ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, রাশিয়ান হাউস, মালদ্বীপের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, নিপ্পন বিজটেক ইনস্টিটিউট, রুটস অব লঙ্কা ফাউন্ডেশন এবং সার্ক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা তাঁদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনায় অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত করে তোলেন। তাঁরা নয়টি ভিন্ন ভাষায় (বাংলা, সিংহলি, তামিল, পালি, ভেদ্দা, হিন্দি, রাশিয়ান, জাপানি ও দিভেহি) গান, নৃত্য ও আবৃত্তির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং বহুভাষিক ঐতিহ্য তুলে ধরে।
শিক্ষামন্ত্রী প্রেম জয়ন্ত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাবরি এবং জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সমন্বয়ক আজুসা কুবোতা অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তাঁরা বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং মাতৃভাষা ও ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারেক মো. আরিফুল ইসলাম তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের জন্য দিবসটির তাৎপর্য, এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং মানবতাকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে মাতৃভাষার ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
কলম্বোর জাতিসংঘ অফিস, শ্রীলঙ্কার স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন এবং শ্রীলঙ্কার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ আয়োজন করা হয়।
এদিকে তিনটি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়—পেরাদেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রুহুনা বিশ্ববিদ্যালয় ও শ্রীজয়বর্ধনেপুরা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনের জন্য একটি একাডেমিক সম্মেলনের আয়োজন করে। বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারেক মো. আরিফুল ইসলাম সম্মানিত অতিথি হিসেবে সেখানে অংশগ্রহণ করেন ও বক্তব্য দেন।
শ্রীলঙ্কা স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন এবং জেনারেল স্যার জন কোটেলাওয়ালা ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের সহযোগিতায় হাইকমিশন একটি রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করে।
সকালে দূতাবাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হয়, এরপর এক মিনিট নীরবতা পালন ও ভাষাশহীদদের জন্য বিশেষ প্রার্থনা এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি