লিসবনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশের ৫২তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এ উপলক্ষে ২০ মার্চ সন্ধ্যায় একটি অভিজাত হোটেলে (হোটেল ম্যারিয়ট, লিসবন) দূতাবাস এক অভ্যর্থনার আয়োজন করে। এ বছর মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২৬ মার্চ পবিত্র রমজান ও সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে হওয়ায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক্রমে দূতাবাস বাংলাদেশের ৫২তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসটি ২০ মার্চ উদ্যাপন করেছে।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী লিসবন ম্যারিয়ট হোটেলের অভ্যর্থনা হলটি ফুল, রঙিন ব্যানারসহ রোল আপ ব্যানার দিয়ে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশদ্বারে হোটেলের এট্রিয়ামে বাংলাদেশের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের দৃশ্যসংবলিত ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে দূতাবাস। পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান ও তাঁর সহধর্মিণী এবং দূতাবাসের প্রথম সচিব মো. আলমগীর হোসেন সস্ত্রীক আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানান।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে পর্তুগাল সরকারের সমতা ও অভিবাসনবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইসাবেল আলমেইদা রদ্রিগেস, পর্তুগাল-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের সহসভাপতি পেদ্রো আনাস্তাসিও এবং রাষ্ট্রদূত জর্জ সিলভা লোপেজ যোগ দেন। এই প্রথম পর্তুগালের কোনো প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার অতিথি লিসবনে আয়োজিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। এ ছাড়া পর্তুগালে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক মিশনের প্রধান, পর্তুগালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, সাংবাদিক, পর্তুগালে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নেতৃস্থানীয় ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা (লিসবন, পোর্তো এবং পর্তুগালের অন্যান্য অংশ থেকে আগত) এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পরিবারের সদস্যরা এ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ ও পর্তুগালের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান তাঁর স্বাগত বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের চরম আত্মত্যাগের কথা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
প্রতিমন্ত্রী ইসাবেল আলমেইদা রদ্রিগেস বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২তম বার্ষিকী ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের সব মানুষকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, পর্তুগালের বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান ছিল। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীরতর হবে।
রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান প্রতিমন্ত্রী ইসাবেল আলমেদা রদ্রিগেস, পর্তুগাল-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট পেদ্রো আনাস্তাসিও, রাষ্ট্রদূত জর্জ সিলভা লোপেস এবং কূটনীতিক কোরের ডিন আইভো স্কাপোলোকে সঙ্গে নিয়ে স্বাধীনতা দিবসের কেক কাটেন।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানের শেষ দিকে বর্ণাঢ্য নৃত্য পরিবেশনা করা হয়। আমন্ত্রিত বাংলাদেশি নৃত্যশিল্পীরা ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’, হাসন রাজার একটি লোকগীতি ও একটি দেশের গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করেন, যা অতিথিদের মুগ্ধ করে।
সাংস্কৃতিক পর্বের পর অভ্যর্থনায় আগত অতিথিদের বাংলাদেশি ও পর্তুগিজ ঐতিহ্যবাহী খাবারের মাধ্যমে আপ্যায়িত করা হয়। বাংলাদেশি দেশাত্মবোধক যন্ত্রসংগীতের আবহে অতিথিরা খাবার, বিশেষ করে বাংলাদেশের মিষ্টান্ন উপভোগ করেন। বুফে ডিনারের সময় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গানের ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অভ্যর্থনার পুরো আয়োজনটি লিসবনে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তির প্রতিফলন ঘটিয়েছে বলে অতিথিরা অভিমত ব্যক্ত করেন।