ব্রাসেলসে দেশি-বিদেশি বন্ধুদের অংশগ্রহণে স্বাধীনতা দিবসের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান

ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাস বিদেশি বন্ধু ও বাংলাদেশ কমিউনিটির অংশগ্রহণে ঐতিহ্যবাহী সের্কেল রয়্যাল গেলুয়া সেন্টারে গত ২৯ এপ্রিল মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৪–এর অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। গেস্ট অব অনার হিসেবে বেলজিয়াম সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দ্বিপক্ষীয় বিষয়াবলি) রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষে ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এশিয়া ও প্যাসিফিক) নিকলাস কাভার্নস্টর্ম অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

নিকলাস কাভার্নস্টর্ম অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, ন্যায়বিচার, সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে একসঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে, যা বিদ্যমান অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ককে আরও মজবুত করে চলেছে। তিনি শিগগিরই বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির (Partnership and Cooperation Agreement) বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে ইইউর আগ্রহের কথা জানান।

জেরোএন কুরম্যান অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে বাংলাদেশ ও বেলজিয়াম ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে আগামী দিনে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নতুন রূপ পাবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সবাইকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে এশিয়া এবং এর বাইরেও দ্রুততম বর্ধনশীল একটি অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে।

বেলজিয়ামকে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় বেলজিয়ামে উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য এসে দেশটির সমাজ, সংস্কৃতি এবং মানুষের সঙ্গে কাটিয়েছেন। ২০২৩–এর অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত সফল ব্রাসেলস সফরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশ জ্ঞান, দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করে ভবিষ্যতে বিস্তৃত অংশীদারত্বের লক্ষ্যে কাজ করছে। আগামী দিনে বেলজিয়াম এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, সংযোগ (কানেটিভিটি), সুনীল অর্থনীতি, বৃত্তাকার অর্থনীতিসহ নিরাপত্তার প্রচলিত এবং অপ্রচলিত ক্ষেত্রসমূহে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে বাংলাদেশ ইইউর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে, যাতে বিশ্বে কোথাও মানুষকে যুদ্ধের ভয়াবহতা সহ্য করতে না হয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায় এবং বিশ্বজুড়ে মানবতার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা যায়।

অনুষ্ঠানে বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে মিশন প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি রাষ্ট্র, সরকার ও বন্ধুদের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।

এরপর হাছান মাহমুদ, জেরোএন কুরম্যান, নিকলাস কাভার্নস্টর্ম এবং মাহবুব হাসান সালেহ কেক কেটে অতিথিদের সঙ্গে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫৩তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করেন। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার ও মিষ্টি পরিবেশনের মাধ্যমে আপ্যায়ন করা হয়, যা বিদেশি ও দেশি সবাই উপভোগ করেন।

অনুষ্ঠানে বেলজিয়াম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, রাষ্ট্রদূত/কূটনীতিকেরা, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য, বেলজিয়ামের রাজনীতিক, গণমাধ্যম, থিঙ্কট্যাংকস, একাডেমিয়া, ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যরা অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। বিজ্ঞপ্তি