সিডনির ফেস্টিভ্যাল অব দ্য উইন্ডস যেন আকাশে রঙের মেলা
ফেস্টিভ্যাল অব দ্য উইন্ডসের যাত্রা শুরু সেই ১৯৭৮ সালে। বর্তমানে এটা বিশ্বের অন্যতম বড় ও পছন্দের উৎসবে পরিণত হয়েছে। এটি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব। ১৯৭৮ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জন সিল্ক ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু মিলে সিডনির বন্ডাই সৈকতে ঘুড়ি ওড়ানোর এই উৎসব শুরু করেন। বসন্তকালের সেই সময় ছিল ঘুড়ি ওড়ানোর একেবারে উপযুক্ত সময়। সে বছর ১০ সেপ্টেম্বর এই উৎসব শুরু হয়।
সিডনির ওয়েভারলি কাউন্সিলের মেয়র আর্নি পেজ আনুষ্ঠানিকভাবে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। সেই সঙ্গে তিনি বন্ডাই সৈকতের আকাশ ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য মুক্ত ঘোষণা করেন। জন সিল্ক ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে আগ্রহী ব্যক্তিরা মিলে অস্ট্রেলিয়ান কাইট ফ্লাইং সোসাইটি (একেএস) নামে একটা সংগঠন তৈরি করেন। তখন থেকেই এই সংগঠনের সদস্যরা তাঁদের ঘুড়ি উড়িয়ে আসছেন। এ উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে খাবারের স্টল, ঘুড়ি বানানোর ওয়ার্কশপ, ঘুড়ি প্রদর্শনীসহ আরও অনেক কিছু।
ফেস্টিভ্যাল অব উন্ডস প্রতিবছর সবার জন্য আনন্দময় একটা দিন বয়ে আনে। এটা সব বয়সী মানুষের উপযোগী একটা উৎসব। এ উৎসবে এসে ঘুড়ি বানানো, ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের খাবারের স্বাদ নেওয়া যায়। আর মূলমঞ্চে সারা দিনই চলে বিভিন্ন রকমের বিনোদনের আয়োজন। এটা সিডনির তথা অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় রঙিন ও ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব বলে বিবেচিত।
করোনার আগে ২০১৯ সালে শেষবার এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। করোনার প্রকোপ কমে আসাতে এ বছর থেকে আবার তা শুরু হয়েছে। এ বছর উৎসবের দিন বন্ডাই সৈকত লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছিল। ১১ সেপ্টেম্বর দিনটাও ছিল উৎসবের উপযোগী।
রৌদ্রোজ্জ্বল ও বাতাসময় দিনে বন্ডাই সৈকতের আকাশে উড়তে থাকে রংবেরঙের হাজারো ঘুড়ি। কী নেই সেই ঘুড়ির আদলে। একেবারে সামুদ্রিক তিমি, হাঙর, অক্টোপাস থেকে শুরু করে কোবরা সাপ, টিয়া পাখি, বাজ পাখি, পুতুল ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার পতাকার আদলের ঘুড়িও ছিল।
কাকতালীয়ভাবে সেদিন রানি ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর চার্লসের রাজা হওয়ার দিন। তাই সিডনির সব পরিবহনে ভ্রমণ ছিল পুরোপুরি ফ্রি। ফলে সিডনির বিভিন্ন প্রান্ত ও সারা অস্ট্রেলিয়া থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় করেন সৈকতে। বেলা ১১টায় শুরু হয়ে এ উৎসব চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
পাশাপাশি মূলমঞ্চে চলে বিভিন্ন প্রকারের আয়োজন। বহু সংস্কৃতির দেশ অস্ট্রেলিয়া সব সময়ই তার বৈচিত্র্য রক্ষায় উদ্যোগী। মঞ্চে চলে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের থেকে শুরু করে অন্যান্য দেশের ঐতিহ্যবাহী সব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সেগুলোও দর্শকদের বাড়তি আনন্দ দেয়। আর খাবারের স্টলগুলোয় ছিল বিভিন্ন দেশের সব ঐতিহ্যবাহী খাবারের পসরা।
এদিন যেন সিডনির বন্ডাই সৈকত প্রাণ ফিরে পায়। সৈকতে আছড়ে পড়ছে প্রশান্ত মহাসাগরের নীল জলরাশি আর আকাশে উড়ছে বাহারি রঙের ঘুড়ি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন ঢেউয়েরাও ঘুড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উড়তে চাইছে।
এদিন যেন মানুষের কল্পনা বাস্তব রূপ পায়। তাই তো গভীর সমুদ্রের নীল তিমি, হাঙর, অক্টোপাস যেমন আকাশে ওড়ে, তেমনি তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওড়ে কোবরা সাপের দল। আর পুতুলেরাও বাদ পড়ে না তাদের ওড়ার সাধ থেকে। পাশাপাশি টিয়া পাখি, বাজ পাখি তো আছেই। ফেস্টিভ্যাল অব দ্য উইন্ডস যেন সিডনির বন্ডাই সৈকতকে বাহারি রঙে রাঙিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে রাঙিয়ে দেয় সব বয়সী দর্শনার্থীর মন। খুলে দেয় তাদের কল্পনার সব কটি জানালা।