অবৈধ অভিলাষ

অলংকরণ: আরাফাত করিম

সারা শহর এখন ঘুমে। সত্যি নাকি পুরোপুরি সত্যি নয়। এই শহরে কেউ হয়তোবা জেগে থাকলেও থাকতে পারে। তবে এটা নিশ্চিত যে এই পাড়াতে সবাই ঘুমে। ঘুমে অচেতন বাড়িটি। ঘুমন্ত ভালো মানুষ প্রেমময় স্বামীও। এই সুযোগে আইভি হাঁটুর বয়সী এক যুবা পুরুষকে ভীষণ যত্নেœআগলে নিয়ে পালাচ্ছে। খুব শঙ্কিত সে। বাড়ি ছাড়ার আগে শোবার ঘরে ঘুমন্ত স্বামীর দিকে গভীর ভালোবাসা নিয়ে তাকাল। নিজেকে বড় অসহায় লাগছিল। বিবেকে বড় বাধছিল। এমন সজ্জন, সুহৃদ ভালো মানুষটিকে অপদস্ত হতে হবে, ভেবে কষ্ট হচ্ছে। পরিচিতজনদের শত প্রশ্নের মুখে বিব্রত হতে হবে স্বামীকে। শুধু বিব্রত নয়, রীতিমতো বিপর্যস্ত হতে হবে লোকটিকে। একবার মনে হলো স্বামীর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে সে তার শেষ প্রেম জানাবে। ভয় পেল ভেবে যদি জেগে যায়। ঠোঁটে আঙুল চেপে আকুল আকুতিকে শাসন করল। তারপর একটু ভেবে নিয়ে ভালো মানুষ স্বামীটির পায়ের পাতায় ওই আঙুলের স্পর্শে তার শেষ সম্মান জানাল।

ইনি আইভির তৃতীয় স্বামী, নিখাদ সোনার মতো তাঁর হৃদয়। তাঁকে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে ওর। খুব কষ্ট। তবু এক দুরন্ত অভিলাষের তাড়নায় দারুণ উতলা সে এখন।

মধ্য চল্লিশে পৌঁছে এই ছেলেটিকে সে পেয়েছে। এর সঙ্গে অদ্ভুত এক বাঁধনে জড়িয়ে পড়েছে। এমন সম্পর্কের বাঁধন কোনোমতে ছিন্ন করতে সে রাজি নয়। এই সম্পর্ক তাকে দিয়েছে নারীজীবনে পরম কাঙ্ক্ষিত তবে অনাস্বাদিত এক আনন্দ।

প্রথম স্বামীর সঙ্গে প্রেম ছিল দারুণ আবেগময়। মনে হয়েছিল জীবনে সব পাওয়া হয়ে গেছে। এই আনন্দঘন প্রাপ্তিকে ধরে রাখা, লালন করাই দুজনের জীবনের একমাত্র ব্রত ছিল। বাকি সব মিথ্যা, সব ফালতু। তবে স্বার্থের সংসার বড় নিষ্ঠুর। অল্প দিন যেতে না যেতেই বিষয়-সম্পত্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনের টানে স্বামী ফিরে গেল তার মা-বাবার কাছে। তাদের শর্ত মেনে বাধ্য সন্তানটি আইভিকে ত্যাগ করল উকিল নোটিশের মাধ্যমে। তখন আইভি বুঝল এ ছিল ঘোরলাগা এক উচ্ছ্বাস মাত্র, প্রেম নয়। ভালোবাসা তো অবশ্যই নয়।

প্রথম দিকে আইভির মা-বাবা কঠিন থাকলেও প্রায় খাদে পড়ে যাওয়ার সময়ে আইভিকে কাছে টেনে নিলেন। পড়াশোনা শেষ করতে উৎসাহ দিলেন। দেখেশুনে বিয়েও দিলেন। মৃতদার এক ব্যক্তি। বেপরোয়া গাড়ি চালাতে গিয়ে লোকটির স্ত্রী মারা গেছেন। বিত্তশালী পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকার ভদ্রলোক। প্রেম নয়, ভালোবাসা নয় এবারের বিয়ে একসঙ্গে জীবনযাপনের এক নিশ্চিত বন্দোবস্ত মাত্র। ভদ্রলোক বললেন, ‘আমরা দুজনেই বঞ্চনার শিকার, আমি তোমাকে সুখে রাখতে চাই, তবে একটি সন্তান এলে আমাদের মাঝে ভালোবাসা ও বন্ধুতা প্রগাঢ় হবে। আমার–স্ত্রী সস্তান বিষয়ে অনাগ্রহী ছিলেন।’

‘আপনি তাকে আপনার সন্তানের মা হিসেবেই শুধু চেয়েছিলেন?’

‘না, আমি তাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলাম; সে ছিল অপূর্ব সুন্দরী, তবে তুমিও খুব নম্র লাবণ্যময়ী; আমি এখনো বুঝতে পারছি না, তুমিও তার মতো সৌন্দর্যসচেতন কি না?’

‘এই সচেতনতা কি খুব দোষের?’

‘না। তবে আমার স্ত্রী ওই একটি বিষয়েই সব মনোযোগ ঢেলে দিয়েছিলেন, অন্য কোনো কিছুতে তার আগ্রহ ছিল না। আমরা দুজনে একান্তে বসে কোনো নাটক-সিনেমাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। একসঙ্গে গান শোনা, বই পড়া দূরে থাক। এখন আমার মনে হয় উনি আমাকে নয়, আমার টাকাপয়সাকেই বেশি ভালোবাসতেন।’

বিত্তবান লোকটিকে বড় দুঃখী দুঃখী মনে হয়েছিল আইভির। এই লোকটিকে সুখী করবে, এই ব্রত নিয়ে ফেলল আইভি। স্বামীও আইভির মমত্বে গভীরভাবে মোহিত যখন তখনই আইভি জানল সন্তানের স্বপ্ন তার দ্বারা কোনো দিনই পূর্ণ হবে না। সে একদিন চিঠিতে সব লিখে রেখে চলে এসেছিল। ভদ্রলোক কোনো দিন আর যোগাযোগ করেননি। আইভি বুঝেছিল সন্তানের আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল এক হৃদয়ে তার মতো বন্ধ্যা নারীর ঠাঁই হবে না।

তৃতীয় স্বামী পরিণত বয়সী উদার একজন মানুষ। অনঘ আনন্দে সদা ভরপুর চিত্ত। অকৃতদার মানুষটি আইভিকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। ‘দেখো, এই বয়সে প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া হবে না, তবে গভীর ভালোবাসায় ঘর বাঁধা যাবে।’

আইভি বলল, ‘কিন্তু আমার জীবনে সঙ্গীবদলের ঘটনা তো কম নয়। তা ছাড়া...।’

প্রাণখোলা হাসি ছড়িয়ে বললেন, ‘তুমি তো শখ করে পায়ের জুতা পাল্টানোর মতো সঙ্গী পাল্টাওনি আইভি; আর সন্তান? আমি তো রাজা নই যে সিংহাসনের জন্য আমার উত্তরাধিকার দরকার। আর শোন বালিকা, শুধু সন্তান নয়, আমার মনে হয় ভালো কর্ম দিয়ে পৃথিবীতে ভালো কিছু করাই হচ্ছে চিহ্ন রেখে যাওয়া।’

তাঁর ভালোবাসার দেবতা স্বামী যাকে মনে মনে আইভি কতবার বলেছে ‘যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালমন্দ মিলায়ে সকলি, এবার পূজায় তারি দিব আজ আপনারে বলি।’ সেই স্বামীকে আইভি আজ ছেড়ে চলে যাচ্ছে আচমকা তার জীবনে হঠাৎ আবির্ভূত আদরকাড়া মায়াবী তরুণটির জন্য!

বেশ কিছুদিন ধরে ছেলেটি তাকে অনুসরণ করছিল প্রায় ছায়ার মতো। নীরবে, নিঃশব্দে। আনন্দ অনুষ্ঠানে, মিলাদে, দাওয়াত-দোয়াতে—সবখানে। এই শহরে নতুন আসা ছেলেটি মানুষের চোখে পড়ল। ধীরে ধীরে আইভিকে অনুসরণ করার ব্যাপারটাও মানুষ খেয়াল করতে শুরু করল। যেদিন আইভির স্বামী বিস্মিত স্বরে বললেন,

‘ছেলেটিকে দেখলাম আজ আমাদের রাস্তায়!’

‘কোন ছেলেটি?’

‘মনে আছে গত দিন মিলাদ থেকে ফেরার পথে কয়েকজন বলছিলেন...’

‘কী বলছিলেন?’

‘বলছিলেন মিলাদেও ওই ছেলেটি ছিল, যে তোমাকে খুব খেয়াল করে দেখেছিল।’

‘মনে পড়ছে কয়েকজন বলছিলেন, কিন্তু আমি তো ছেলেটির দিকে চেয়েও দেখিনি, চিনিও না।’

‘এটাই রহস্য, কয়েকজন বললেন অন্যান্য নানা অনুষ্ঠানেও তারা বিষয়টা খেয়াল করেছেন।’

‘ছেলেটা কে, কোত্থেকে এসেছে?’

‘শুনলাম ছাত্র, পড়তে এসেছে এই শহরে, তোমার কোনো দূরের আত্মীয়টাত্মীয় হবে হয়তো।’

‘দূরের হোক কি কাছের হোক, কথা তো বলতে পারে এসে।’

‘হয়তো সংকোচ হয় বা লজ্জা পায়।’

‘কী যন্ত্রণা বলো তো!’

‘তুমিই একদিন ডেকে কথা বলো না কেন।’

‘বলব ভাবছি, কিন্তু কী বলব বলো তো?’

‘কী বলবে মানে? জানতে চাইবে কে সে, কীভাবে তোমাকে চেনে ইত্যাদি ইত্যাদি।’

স্বামীর উৎসাহে ছেলেটির সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী হলো আইভি। একদিন কাজ থেকে ফিরছিল যখন তখন সে নিজ বাড়ির গেটের কাছেই ছেলেটিকে দেখল। গাড়ি থামিয়ে নেমে ছেলেটির কাছে গেল।

‘কী ব্যাপার বলো তো? তুমি কে, আমাকে কি চেনো? কী চাও?’

‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]

ছেলেটি মনে হলো ভয় পেয়েছে। খুব নিরীহ, সততা ও সরলতায় ছাওয়া তরুণ অবয়ব। কাঁপছে যেন একটু। ভীষণ নিচু গলায় বলল—

‘আপনার কথা একজন বলেছেন আমাকে।’

‘কে বলেছে? কে সে?’

‘একদিন এসে বলব।’

‘ঠিক আছে, এই আমার বাড়ি। শুক্রবার দিন সকালে আসতে পারো। তুমি তো ভয় পাইয়ে দিয়েছ বাপু, ঠিক আছে পরশু শুক্রবারেই আসতে পারো।’

বলেই হনহন করে চলে এল। ফিরে একবারের জন্যও তাকানোর ইচ্ছা হলো না। তখনো সে জানে না এই রহস্যময় ছেলে কীভাবে তার হৃদয়ের গভীর কন্দরে এসে ঠাঁই করে নেবে। আর সে নিজেও এই হঠাৎ পাওয়া ধন আগলে রাখার জন্য কতটা ব্যতিব্যস্ত ও ব্যাকুল হবে।

কথামতো ওই শুক্রবারেই ছেলেটি এসেছিল। কথাবার্তা হলো। আইভির স্বামী ছিলেন না। শহরের বাইরে কাজে গিয়েছিলেন। আইভি একাই শুনল সব অবাক হওয়ার মতো বৃত্তান্ত। ছেলেটির বাবা একটি ভিনধর্মী মেয়েকে মা-বাবা ও আত্মীয়–পরিজনের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করে। এমনকি এই কারণে বন্ধুবান্ধবও তার শত্রু হয়েছিল।

স্বাধীনচেতা, চৌকস এবং কিছুটা খেয়ালি কিসিমের মেয়েটি সন্তানের জন্মের পর স্বামী–সন্তান ফেলে রেখে কোথায় যেন চলে যায়। মেয়েটির নিরুদ্দেশ হওয়া নিয়েও ছিল নানা রহস্যময় গল্পগাথা। কখনো শোনা গেছে ছেলেটির পরিবারই মেয়েটিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আবার এমন গুজবও রটেছিল যে মেয়ের পরিবারই তাকে দেশের বাইরে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীর বাইরে বা দেশের বাইরে কোন ঠিকানায় সে আছে, কেউই নিশ্চিত জানে না। তবে সেই নিখোঁজ খেয়ালি মেয়ের সন্তান হচ্ছে এই ছেলেটি। তার অসহায় বাবা তখন ছোট্ট বাবুটিকে নিয়ে তার সহোদর বোনের কাছে আশ্রয় চায়। ওই শিশুর মায়ায় কঠিন স্বভাবের নিঃসন্তান পিসি নরম হলেন। মা–হীন ভাইয়ের সন্তানকে আদরে আগলে রাখলেও ভাইকে কৃতকর্মের জন্য যথেষ্ট অবহেলা ও গঞ্জনার মধ্যে রাখলেন। স্বজনের অনাদর, স্ত্রী বেখবর, একমাত্র সন্তানের জন্য কী করণীয় ইত্যাদি ভাবনায় দিশাহারা লোকটি উধাও হয়ে যায় একদিন। পরে শোনা যায় কবে কোথায় যেন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে সে। তবে এই খবরও সঠিক কি না, তা–ও রহস্যে ঘেরা।

পিসিকেই মা জেনে আঁকড়ে ধরে বড় হয়েছে মা-বাবাহারা অভাগা ছেলেটি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে পিসি এক সন্ধ্যায় তাকে তার মায়ের ঘটনা শোনায়।

‘এমন পাষাণী মা বিশ্ব সংসারে হয় না!’

‘তার কোনো খবর জানো পিসি?’

‘নাহ্। কেন, খবর জানলে যাবি নাকি দেখা করতে? শোন সে ছিল জাতে মুসলমান; মুসলমান নারী-পুরুষ সবাই বিয়ে ভাঙতে পারে আবার বিয়ে করতেও পারে। শুনেছি সে বদ মেয়েটা বিদেশে কাকে বিয়ে করে যেন সুখে আছে। তবে স্রষ্টা তাকে এমন শাস্তি দিয়েছেন যে তার আর সন্তানাদি হয়নি।’

সব শুনে আইভি বলল, ‘অদ্ভুত ঘটনা তো! তা আমার কাছে কী কারণে?’

ছেলেটি হাতের ব্যাগ খুলে একটি সাদাকালো ছবি বের করে আইভির হাতে তুলে দিল। একটু সময় মন দিয়ে দেখে আইভি ছবিটা চিনতে পারল। তাদেরই ছাত্রজীবনের একটি গ্রুপ ছবি। তাদের সময়ের ঝড়তোলা প্রেমিক জুটি অরুণ-আরিফাও আছে এতে। একজনের মুখের ওপরই গোল করে ঘুরিয়ে কলমের দাগ। জিজ্ঞাসু চোখে ছেলেটির দিকে তাকাল। ওর হাত থেকে ছবিটা নিয়ে ছেলেটি যা বলল তাতে আইভি হতভম্ব।

‘আপনি সবাইকে চিনতে পেরেছেন তো?’

‘হ্যাঁ, চিনেছি।’

‘পিসি বলেছে কলম দিয়ে দাগ দেওয়া মুখটাই হচ্ছে আমার মায়ের মুখ।’

‘আর তোমার বাবা কী বলেছেন?’

‘বাবা তো মারা গেছেন আমার বয়স যখন দেড় বছর আর পিসিও পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন গত বছর।’

‘তুমি কি বিষয়টার সত্যতা যাচাই করবে না?’

ছেলেটি আবেগময় বিষাদ নিয়ে বলল—

‘ভয় পাবেন না। আমি অভিযোগ, অনুযোগ কোনোটাই করছি না, মায়ের কাজের বিচারও করব না, আপনাকে মা হিসেবে ভালোবাসি, শুধু এটুকু জানাতে এসেছি।’

পায়ের নিচে ভূগোলক দুলে উঠল আইভির। একটি সন্তানের জন্য আইভির মনে আকুতি ছিল বরাবরই। বিয়েও করেছে দু–তিনটা। গর্ভে সন্তান আসেনি কখনোই। গর্ভবতী নারীর কষ্টযন্ত্রণা অনুভব করা বা তার পৃথিবী কী সুখে উথালপাথাল হয়, তা আইভরির জানা হলো না এই জীবনে। অনাগত সন্তানের অপেক্ষায় থেকে থেকে কোন কালে কোন স্বপ্নের জাল বোনা হলো না তার। তার অঙ্গ মাতৃত্বের গর্বে বিরাট বিশাল হওয়ার সুযোগ পায়নি, সন্তানের আগমনী জানাতে বক্ষদেশ সুধায় স্ফীত হয়নি কোনো দিন। আজ আরিফা ও অরুণের সন্তান তাকে এ কী সংবাদ দিচ্ছে? এ কী অবাক কাণ্ড!

তবে এই সত্যটুকু হোক চিরন্তন। একে কোনো দিন ভেস্তে যেতে দেবে না আইভি। পালাচ্ছে সে পরিচিতজনদের কাছ থেকে, পালাচ্ছে চেনাজানা পরিবেশ থেকে। অন্য কোথা, অন্য কোনো জনপদে। সেখানে তারপর যা জানার তা জানবে শুধু সে আর ওই ছেলেটি। এই ছেলের সঙ্গে তার যে বন্ধন, তা হবে অবাস্তব এক নাড়ির বন্ধন। অমরাবতীর অনিলে ভেসে আসা অলৌকিক বন্ধন।