নতুন অতিথি এবং একটা সুন্দর পৃথিবীর আশায়
সাম্প্রতিককালে আমার বাসায় দুজন সদস্য যুক্ত হয়েছে, জুডো ও অ্যারিজোনা (এই নাম নিয়েই দুই ভাইবোন বিড়াল এসেছে)। বহুদিন ধরেই তাদের নতুন নামকরণ করা হবে শুনছি। পৃথিবীতে এত এত নাম থাকতেও এই রাজপুত্র ও রাজকন্যার নাম পাওয়া যাচ্ছে না। বললাম, ওদের নাম পুডিং আর কাপ কেক রেখে দে, ঝামেলা শেষ। শুনতেই আমার পুত্র–কন্যা তেড়েমেড়ে এল, মা ওরা ফুড নয়। তুমি অবশ্যই এসব উল্টাপাল্টা নাম সাজেস্ট করবে না।
তাদের ফুড ক্যানে পাওয়া যায়, সুতরাং ঝামেলা শেষ। তখন বুঝিনি, ঝামেলার আসলে শুরু সেটা। ওজন মেপে এক কাপের বেশি খাওয়া তাদের দেওয়া যাবে না। আমার জীবনেও পেট ছিল না। এই দুই বিড়ালশিশুর করুন চেহারা দেখে একটু–আধটু বেশি খাবার দিই, এক সপ্তাহ পর দেখি, ওজন করে বিড়াল ভেটের সঙ্গে কথা বলে আগুনচোখে দুই ভাইবোন দাঁড়ানো সাতসকালে আমার জন্য। আমি দ্বিতীয় কাপ হাতে নিতেই ওরা বিড়ালের প্লেট সরিয়ে নিয়ে গেল, এর বেশি খাবার দিবে না মা। রাগ করে ম্যাটের ওপর ওদের খাবার দিলাম, বেজায়গায় বিড়ালদের খাবার দেওয়ার কাজ থেকে ফায়ার্ড হলাম। আমি নাকি ওদের ডায়াবেটিস, হার্ট ডিজিজ আর আর্থ্রাইটিস করার চেষ্টা করছি। আমি ও তেড়েমেড়ে বললাম, তোরা ভেটের কাছ থেকে লিখিত নিউট্রিশনের কাগজ এনে দেখা।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]
যাক, বিড়ালের বাচ্চাদের ফুড সার্ভিং চাকরি থেকে ফায়ার হওয়ার পরদিন আবার চাকরিতে বহাল হলাম। নানাবিধ কারণ। বাচ্চারা তাদের রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমায়। আমার অভ্যাস দরজা খোলা রাখা। একদিন বন্ধ রাখলাম। রাত তিনটায় অ্যারিজোনা পা দিয়ে বাড়ি দিল দরজায়, মা, মা খোল। প্লাস সকাল সাড়ে ছয়টায় কে উঠে প্রতিদিন খাওয়াবে ওদের? ছেলেমেয়ে তো আমার মতোই রাত জাগে পারলে।
বিড়ালের বাচ্চা দুটার ঘাড়ে চিপ আছে। ওরা স্পে, নিউটার করা। হিউম্যান সোসাইটি বলে দিয়েছে, যদি আমরা কোনো কারণে ওদের দেখাশোনা না করতে চাই, ওরা ফিরিয়ে নেবে ওদের বিড়াল, কোনো প্রশ্ন করা ছাড়াই।
এই মানবিকতা আমেরিকানদের জন্য নতুন নয়। ক্যালিফোর্নিয়াতে নিজেকে কখনো ইমিগ্র্যান্ট মনে হয়নি। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়, হাত বাড়িয়ে দেয় সাহায্যে। আমার মালি স্প্যানিশ, বাসা পরিষ্কারের লোক স্প্যানিশ, সবচেয়ে কাছের বন্ধুরা বাংলাদেশি, চায়নিজ, ফিলিপিনো, জাপানি, সাদা–কালো। নিজের পরিবার কাছে নেই, ওরা আছে। অসুস্থ হলে ওরা দেখে, ওদের কিছু হলে আমি যাই।
এ রকম পরিবারকে নিজের কাছে রাখতে শান্তিপূর্ণ প্রটেস্ট সফল হোক লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে। নাশকতা দূর হোক। পাশের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে ইন্টার ডিপেন্ডেড দুনিয়ায় আমারা বেঁচে থাকি, এটুকুই আশা।